খনিজ সম্পদ লুঠের খেলা রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত অবধি ছড়িয়ে পড়ছে। সাথে ছড়িয়ে পড়ছে গণবিক্ষোভ-ও। সম্প্রতি গ্রানাইট উত্তোলনের জন্য রাজ্য সরকার একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে পুরুলিয়ার তিলাবনি পাহাড়কে তুলে দিয়েছে। তার প্রতিবাদে গত রবিবার চারটি গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন ‘তিলাবনি পাহাড় রক্ষা কমিটির’ নামে। গ্রাউন্ডজিরোর জন্য পীযূষ দত্তের রিপোর্ট।
পুরুলিয়া জেলার হুড়া ব্লকের কলাবনি পঞ্চায়েত অঞ্চলের চারটি গ্রাম, তিলাবনি, পড়শিবনা, লেদাবনা এবং মাধবপুর। আর এই চারটি গ্রামের মাঝে অবস্থিত তিলাবনি পাহাড়। গ্রামবাসীদের মারফত জানা যায় যে সম্প্রতি গ্রানাইট উত্তোলনের জন্য রাজ্য সরকার একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে এই তিলাবনি পাহাড়কে তুলে দিয়েছেন। তার প্রতিবাদে গত রবিবার, অর্থাৎ, ২৭/০৩/২০২২ তারিখে এই চারটি গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে তিলাবনি শিব মন্দির থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করেন ‘তিলাবনি পাহাড় রক্ষা কমিটির’ নামে। সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ কুমার মাহাতো জানান যে এই মিছিলে ওই চারটি গ্রামের মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দেন এবং যোগদান করেন।
এই চারটি গ্রামের জনসংখ্যা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। এই গ্রামগুলির কম করে হলে ৫০ শতাংশ মানুষের জীবন সরাসরি এই পাহাড়ি বনের উপর নির্ভরশীল। স্বরূপ কুমার মাহাতো জানান, “গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ছে গ্রামের গরিব মানুষের পক্ষে গ্যাস কেনা অসম্ভব। তার বদলে তাঁরা বনের থেকে কাঠ নিয়ে আসে জ্বালানির জন্য। এছাড়াও একাধিক ভাবে এই বন, আমাদের গ্রামবাসীদের জীবন জীবিকার সাথে জড়িয়ে রয়েছে”।
শেষ কয়েক বছরে এই পাহাড় পর্যটকদের চোখ টানতে সক্ষম হয়েছে। প্রতি বছর বহু মানুষ এই তিলাবনি পাহাড়ে বেড়াতে যান। অন্যদিকে রকক্লাইম্বিং-এর মতো একাধিক অ্যাডভেনচার স্পোর্টসের প্রস্তুতি চলে এই পাহাড়ে। শেষ কয়েক বছরে গ্রামের বহু ছেলেরা এই রকক্লাইম্বিং দলগুলির সাথে গাইডের কাজে যুক্ত হয়েছে। এখন এই পাহাড় কেটে ফেললে সেই সমস্ত গ্রামবাসীদের পেটে কোপ পড়বে এবং স্বভাবতই তাঁদের জীবিকা ধ্বংস হবে।
তিলাবনি পাহাড় রক্ষা কমিটির সভাপতি স্বরূপ কুমার মাহাতো আরো জানান যে, “২০১৯ সালে এই পাহাড় সরকার একটি বেসরকারি সংস্থাকে লিজে দেয়, তখন আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছিলাম। পর্যটন দপ্তর থেকে বিডিও। কোথাও কোনো সাড়া মেলেনি। তারপর লকডাউনের জন্য কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে।”
আগামি দিনে এই আন্দোলনকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন জানতে চাওয়ায়, স্বরূপ বাবু স্পষ্ট জানান, “গতকাল আমরা মিছিল করেছি, এরপর আমরা আবার বিডিও-র কাছে যাব। ডেপুটেশন দেব। এই আন্দোলন আমাদের চালিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। এর সাথে আমাদের জীবন জড়িয়ে রয়েছে।”
একদিকে দেউচা পাচামি, আরেকদিকে তিলাবনি। রাজ্যে আদিবাসীদের জীবন জীবিকার উপর বারবার আঘাত আনছে রাজ্য সরকার। খনিজ সম্পদ লুঠের খেলা রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত অবধি ছড়িয়ে পড়ছে। সাথে ছড়িয়ে পড়ছে গণবিক্ষোভ-ও।