কলকাতা : স্নাতকোত্তরে আসন বৃদ্ধি এবং ইচ্ছুক ও যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির দাবীতে গত ১৭ই জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে চার ঘন্টা অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মঞ্চ Occupy CU।
এর আগে গত ৭ই ও ১১ই জানুয়ারি ছাত্রছাত্রীরা এই একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেও, দুদিনই অনুপস্থিত ছিলেন ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। ফলে গত ১১ই জানুয়ারী বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস সম্পাদককের ঘরে অবস্থানে বসে ছাত্রছাত্রীরা। শেষ অবধি ক্যাম্পাস সম্পাদকের ফোনে রেজিস্ট্রার ১৭ই জানুয়ারী দেখা করার জন্য সময় দেন। কিন্তু ১৭ তারিখে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দেখে সময় দেওয়ার পরও ক্যাম্পাসে হাজিরই হননি রেজিস্ট্রার। ফলে তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আটকে অবস্থানে বসে পড়ুয়ারা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ আসন বৃদ্ধির দাবি কেন! তথ্য পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ২০১৯ সালের অফলাইনে পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। কিন্তু পরের দুই বছরের অনলাইন পরীক্ষায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ শতাংশে। ২০১৯ সালে যেখানে বাণিজ্য, কলা ও বিজ্ঞান শাখা মিলিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণের সংখ্যা ছিল ৫৩৫৯ জন, সেখানে ২০২১ সালে শুধু বাণিজ্য শাখাতেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৯৮০ জন। কলা ও বিজ্ঞান শাখা মিলিয়ে এই সংখ্যা ২০১৯ সালের অন্তত আড়াই গুণ। তাই স্বাভাবিক কারণেই স্নাতকোত্তরে আবেদনকারীর সংখ্যাও অন্যান্য বছরের থেকে কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই ২০১৭ সাল থেকে মেন ক্যাম্পাসে স্নাতকোত্তরের আসন সংখ্যা একই রেখে দিয়েছে।
২০২১ সালের পাশাপাশি অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেয় ২০২০ সালে স্নাতক ছাত্রছাত্রীরাও। সেমিস্টার সিস্টেম ও ১+১+১ সিস্টেমে মূল্যায়নের পদ্ধতি ভিন্ন। সেমিস্টার সিস্টেমে যে মেধায় ৭০ শতাংশের নম্বর পাওয়া সম্ভব, ওই একই মেধায় ১+১+১ সিস্টেমে ৬০ শতাংশ নম্বর পাওয়াও কঠিন। ফলে কোনভাবেই এই দুই সিস্টেমে উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীদের একই মাপকাঠিতে বিচার করা সম্ভব নয়। কিন্তু স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটাই করেছে। দুই সিস্টেমে উত্তীর্ণদের ভিন্নভাবে বিচার করার বদলে তারা উভয়ের জন্য অভিন্ন কাট-অফ, অভিন্ন মেধা তালিকা প্রস্তুত করেছে। ফলে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ১+১+১ সিস্টেমে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় গেটে চার ঘন্টা অবস্থান চলার পর রেজিস্ট্রারের অফিস মারফৎ ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলে লিখিতভাবে প্রো-ভিসির অফিসে দাবিপত্র জমা দেওয়া হয়।
অবিলম্বে ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সকলের ভর্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামীদিনে লড়াইকে আরও তীব্রতর করবে Occupy CU। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে AIRSO, CSA ও অসাম্প্রদায়িকের সদস্যরা। ছাত্রছাত্রীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারাদিন অবস্থানে অংশ নেয় তাঁরা।