“আমরা এখনও জানি না, সরকার কোন আইনে জমি অধিগ্রহণ করবে। কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণ ২০১৩ সালের অধিগ্রহণ আইনে না-ও হতে পারে, তার জন্য ১৯৫৭ সালের একটি ও ২০১৫ সালের একটি বিশেষ আইন আছে। এই সব আইনে জনমত বা গণশুনানির বা পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের ততটা ভুমিকা নেই যতটা ২০১৩ সালের আইনে আছে। যতক্ষণ না কোন আইন প্রযোজ্য হবে সেটা জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ বোঝা সম্ভব নয় আইন কতটা মানা হচ্ছে।” এমনই এক গুচ্ছ জানা-অজানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করলেন স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য।
দেউচায় যে মাটির নীচে কয়লার বিপুল ভান্ডার আছে, তা তো ভারত সরকার সেই নব্বই-এর দশকেই জানত। কিন্তু দেশের মূল কয়লা উৎপাদনকারী সংস্থা, কোল ইন্ডিয়া, দেউচায় কাজ করতে চায়নি। কারণ এখানে কয়লার স্তর চাপা আছে পুরু ও কঠিন ব্যাসল্ট পাথরের আস্তরণে। মোট চারটি ‘সিম’ বা স্তরে আছে কয়লা, যে প্রতিটা স্তরের মাঝে আবার পুরু ও কঠিন ব্যাসল্টের স্তর আছে। সেই ব্যাসল্ট কেটে কেটে কয়লা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তাদের হাতে ছিল না আর সেরকম ঝুঁকিবহুল ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ কাজে কোল ইন্ডিয়া হাত দিতে চায় নি।
তাই, সেই নব্বই-এর দশকেই, কোল ইন্ডিয়া দেশের কয়লা মন্ত্রককে তাদের আগামী দেড়-দুই দশকের পরিকল্পনা জানানোর সময় দেউচাকে তাদের চিন্তা-ভাবনার বাইরে রেখেছিল। পরবর্তীতে, নতুন শতকে, দেশে কয়লার চাহিদা বাড়তে থাকায় কয়লা মন্ত্রকের নজরে আবার ফিরে আসে দেউচা, এবার তারা দেখতে চায় রাজ্যগুলিকে এই ব্লক দেওয়া যায় কিনা। সেই ভাবে, ছয় রাজ্যকে মিলিত ভাবে এই ব্লক দেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালে, রাজ্যগুলির একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি বানানো হয়। কিন্তু রাজ্যগুলি একে একে সরে আসতে চাওয়ায় সেই জয়েন্ট ভেঞ্চারও হয়নি। শেষে, পশ্চিমবঙ্গ নিজেই গোটা ব্লকটা চাওয়ায় কয়লা মন্ত্রক এক সময় রাজি হয়ে যায়। সেটা ২০১৮ সাল। বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার পর তিন বছর গড়িয়ে এখন দেউচায় জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদে নিযুক্তির আবেদনপত্র বিলি করা শুরু করেছে সরকার। গোটা তিনেক সমাবেশ, বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে গত দুই মাসে। স্থানীয় আদিবাসী জনতার একাংশ মাঠে নেমেছেন তির-ধনুক, কাস্তে হাতে। সেই সিঙ্গুরের মতো দৃশ্য। আগামী দিনে সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট বা ইউএপিএ-র প্রয়োগ করে কিনা, ভাঙর অথবা নোনাডাঙার মতো, তা এখনও দেখা বাকি।
ঘটনা হল, এখান থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রযুক্তি ভারতে আজও নেই। না আছে কয়লা তোলার প্রযুক্তি কোল ইন্ডিয়ার হাতে, না ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের হাতে আছে অত পুরু ব্যাসল্টের স্তর ভেদ করার প্রযুক্তি। চিন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ডের কিছু অভিজ্ঞতা আছে পুরু কয়লার স্তর ও পাথরের আস্তরণ খননের জন্য, কিন্তু সেখানেও এরকম জটিল খনিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কম বলে এদেশের কয়লা মন্ত্রকের এক প্রাক্তন কর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এদিকে, রাজ্য সরকার জানিয়েছে কত কর্মসংস্থান হতে পারে – ১ লাখ। বিনিয়োগ হবে ৩৫,০০০ কোটি। এর মধ্যে ১০,০০০ কোটি টাকা উচ্ছেদ হতে যাওয়া প্রায় একুশ হাজার মানুষ, বর্তমান পাথর খাদান ও ক্রাশারের মালিক ও কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য। আগামী একশো বছরের জন্য রাজ্যকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কয়লা কিনতে হবে না, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। নিজের উৎপাদিত কয়লার স্বল্প মুল্য রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাবে দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিতে। সেদিক থেকে দেখলে, রাজ্য সরকারের চিন্তা ভাবনা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শক্তি উৎপাদন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার ক্রমবর্ধমান দামের কারণে আমাদের কয়লার আমদানিতে বিদেশি মুদ্রার খরচ বেড়েই চলেছে। তাই সারা দেশেই নতুন নতুন কয়লার ব্লক খোলা ও দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানো ও ক্রমশ বন্ধ করাই ভারত সরকারের নীতি। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নানান চাপের মুখেও ভারত ও চীন জানিয়ে দিয়েছে, তাদের পক্ষে এখনই কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার কথা বলা সম্ভব না, তারা ধাপে ধাপে কমানোর কথা ভাবছে। কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানি কমানোই ভারত সরকারের নীতি, ব্যবহার ও চাহিদা কমিয়ে আমদানি বন্ধ করা নয়। কারণ, সরকারের মতে, এখনই এক লাফে পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে চলতে শুরু করা অর্থনৈতিক ভাবে সম্ভব নয়। তাই, পরিবেশবিদ/প্রেমীরা চান বা না চান, আগামী কয়েক বছর দেশ জুড়ে বেশ কিছু নতুন খনি তৈরি হবে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শুধু এই রাজ্যেই মাত্র খনি প্রকল্পের বিরোধিতা করা হচ্ছে কেন? এই খনি অন্য রাজ্যের খনিগুলির চেয়ে কি বেশি বিপজ্জনক, নাকি এখানে ক্ষতিপূরণ কম? নাকি এই রাজ্যে ‘প্রগতির বিরোধিতা’র একটা ঐতিহ্য আছে?
অন্য কোথাও কোন খনি নিয়ে কতটা বিরোধিতা হচ্ছে তা এই লেখার বিচার্য নয়। স্থান থেকে স্থানে মানুষের প্রতিবাদের বিষয় ও চরিত্র পাল্টে যায়। ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে এলে, দেউচা-পাচামির প্যাকেজ অন্তত খাগড়া-জয়দেব প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিভিসি’র ঘোষিত প্যাকেজের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। সরকারি প্যাকেজের বিস্তারিত বিবরণ এখানে নিষ্প্রয়োজন, তা ইতিমধ্যেই বহুল প্রচারিত, সরকারও তার বিশেষ প্রচার করছে। এই খনি অন্য খনিগুলির থেকে বেশি বিপজ্জনক কিনা তা বলার মতো কোনও প্রামাণ্য তথ্য আমাদের হাতে নেই। আগামী একশো বছর কেন, ত্রিশ বছর পরেও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে আজকের মতো কয়লার প্রয়োজন থাকবে কিনা সে প্রশ্ন তোলার উদ্দেশ্যও এই লেখার নয়।
এই প্রতিবেদনের উদ্দ্যেশ্য এমন কিছু বিষয় প্রকাশ্যে আনা যা, সরকারি তথ্য হলেও, এখনও প্রায় আড়ালেই আছে। যেমন, বিহার সরকার যখন জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জিএসআই) মতামত নেয়, তখন কী জানানো হয়েছিল? বিহার সরকারের ২০১৬ সালের একটি নথিতে জিএসআই-এর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে নিম্নোক্তগুলি গুরুত্বপুর্ণ:
১) এত পুরু কয়লার স্তরের নিজে থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। নিজে থেকে উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ার অর্থ, হঠাৎ আগুন লেগে যাওয়া সম্ভাবনা। এখানকার একটি কয়লার স্তর এত পুরু, যার উদাহরণ ভূভারতে নেই। ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ মিটারের থেকেও পুরু কয়লার স্তর আছে, যেখানে ৪.৮মিটারের বেশি পুরু কয়লার স্তরকেই ‘থিক’ বা পুরু হিসাবে গণ্য করা হয়।
২) ব্যাকফিলিং, অর্থাৎ খোঁড়া শেষ হয়ে গেলে বুজিয়ে দেওয়া, সম্ভব হবে খনির জীবনের শেষ স্তরে। ফলে, কোল ব্লকের বাইরে আরও বিপুল এলাকা প্রয়োজন হবে বর্জ্য পাথর ও মাটি স্তুপ করে জমা করার জন্য।
৩) খনির চূড়ান্ত গভীরতা হবে প্রায় ১,২০০ মিটার।
৪) এমনকি এখানে প্রকৃতই কতটা কয়লা তোলা সম্ভব, তা বোঝার জন্য যে ড্রিলিং প্রয়োজন, তার জন্যও বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন।
৫) ব্যাসাল্টের স্তর ৯০ থেকে ২৪৫ মিটার পর্যন্ত পুরু। তা খনন আদৌ সম্ভব কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন।
মোদ্দা কথা, এখানে পরিস্থিতি এমন, যে বোর হোল-এর ড্রিলিং থেকে ব্যাসাল্টের স্তর সরানো, সব কিছুতেই বিদেশি প্রযুক্তি প্রয়োজন। কয়লার প্রথম স্তরের পর ব্যাসাল্টের আরেকটি স্তর পেরিয়ে এক জায়গায় কয়লার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর মিশে গেছে। সেখানে ১৫৬ মিটার পর্যন্ত পুরুত্বের কয়লার স্তর আছে। এই স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টাও সম্ভাব্য আগুন আটকানোর সব পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই স্তরে পৌঁছানোর আগে, ব্যাসাল্টের প্রথম স্তর পেরিয়ে কয়লার প্রথম স্তরে পৌঁছাতেই বছর পাঁচেক লাগা উচিত বলে খনি বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এর বাইরে, এই ধরণের খনি সম্পর্কে অভিজ্ঞরা বলছেন, সরাসরি খনিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। যেমন, শক্তি বিশেষজ্ঞ স্বাতী ডি’সুজা — যিনি মনে করেন ভারত সরকারের কয়লা নীতির প্রেক্ষিতে দেউচার মত বড় খনি প্রকল্প খুবই সময়োপযোগী — এই প্রতিবেদককে বলেন যে, এখানে মূল খনিতে বিশেষ কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, কারণ খনন হবে মূলত অত্যাধুনিক যন্ত্র নির্ভর।
হতে পারে, এই সব বিষয়গুলি সম্পর্কে রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলির সম্যক ধারণা আছে, এবং কীভাবে এগুলি কাটিয়ে তোলা যায় সেই ভাবনা চিন্তা করেই সরকার এগোচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক যেমন বললেন, “কোল ব্লকের বাইরে পাথর ও অন্যান্য খনিজ বর্জ্য জমা করার জন্য কোনও অতিরিক্ত জায়গা লাগবে না। ব্যাসাল্ট তো সব ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চলে যাবে।” অর্থাৎ যেখানে ক্রাশার ইউনিটগুলিকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। ওই ব্যাসাল্টকে সরকার তার ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের অংশ করে নিয়েছে। খনির গভীরতা ও অন্যান্য জটিলতার বিষয়গুলি মাথায় রেখেই বিদেশি সংস্থাকে নিয়োগ করা হবে বলেই তিনি জানালেন।
২০১৯ সাল থেকে বেশ কয়েক বার দেউচা-পাচামি এলাকায় যাওয়ার সূত্রে বুঝেছি, জমি বাড়ি ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মানুষের আপত্তি আছে। আর তার প্রধান কারণ পুনর্বাসন নিয়ে সরকারি প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবে ফারাক থাকা সম্পর্কে মানুষের পূর্ব অভিজ্ঞতা। পুরুলিয়াতে দেখেছি, অযোধ্যা পাহাড়ের ওপর থেকে একটি গ্রামকে নামিয়ে আনার জন্য নতুন সব বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এক শীত থেকেই পরের গ্রীষ্মে অধিকাংশ মানুষ আবার পাহাড়ের উপরে ফিরে গেছিলেন। বাড়িগুলি, আদিবাসী মানুষ যেভাবে থাকতে অভ্যস্ত, আদৌ সেভাবে বানানো নয়। শহুরে, পায়রার খোপের মতো। এভাবেই উত্তরবঙ্গের বক্সায় ভুটিয়া বস্তি থেকে স্থানান্তরিত অধিকাংশ মানুষ আবার ফিরে এসেছিলেন।
এখানেও, মানুষ আগে তাঁদের পুনর্বাসনের পরিস্থিতি চাক্ষুষ না দেখে জমি বাড়ি ছাড়তে রাজি হবেন বলে মনে হয় না, যদি বা তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিতে রাজি হন। এছাড়া, রানিগঞ্জ-আসানসোল অঞ্চলে খনি এলাকার বাইরে ধস নামার যে প্রবণতা আছে, তা-ও অনেকের কাছে উদ্বেগজনক। সেই সব খনি অনেক কম গভীরতা সম্পন্ন। দেউচায় খনি এলাকার বাইরে ধস নামা আটকাতে সরকার কি চিন্তা ভাবনা করছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
আমরা এখনও জানি না, সরকার কোন আইনে জমি অধিগ্রহণ করবে। কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণ ২০১৩ সালের অধিগ্রহণ আইনে না-ও হতে পারে, তার জন্য ১৯৫৭ সালের একটি ও ২০১৫ সালের একটি বিশেষ আইন আছে। এই সব আইনে জনমত বা গণশুনানির বা পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের ততটা ভুমিকা নেই যতটা ২০১৩ সালের আইনে আছে। যতক্ষণ না কোন আইন প্রযোজ্য হবে সেটা জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ বোঝা সম্ভব নয় আইন কতটা মানা হচ্ছে।
কিন্তু আইনে কি বলছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপুর্ণ সরকার কোন পথে চলার চেষ্টা করছে। দেশ জুড়ে প্রভাব বিস্তারের স্বপ্নে মগ্ন একটি দলের সরকার কি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মত হাই-ইমপ্যাক্ট ঘটনা ঘটতে দেবে? আগে দেখা গেছে, ভাঙরে এই সরকার প্রায় দু’বছর ধরে তথাকথিত ‘লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট’ চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পিছু হঠেছে, কিন্তু ওই দু’বছরে তা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বিশেষ প্রচার পায়নি। ভাঙরে, দৃশ্যতই, তৃণমূলের কায়দা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের বাম কায়দার চেয়ে একটু আলাদা ছিল।
দেউচায় তা আরও একটু পালটেছে – এ এক উন্নততর কায়দা। হরিণশিঙ্গার ‘মাঝি হারাম’ জোসেপ মারান্ডি দীর্ঘদিন খনির বিরুদ্ধে কথা বলার পর হঠাৎ খনি সমর্থক হয়ে গেছেন। উচ্ছেদ বিরোধী কর্মসূচির অন্যতম সংগঠক, বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার একাংশের নেতা, বিজেপির সঙ্গে থাকা সুনীল সরেনকে ‘সসম্মানে’ নিজেদের দলে টেনে নিয়ে তারা তাঁকেই মানুষকে জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সুনীলের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতার কারণে গাঁওতার আরেক অংশের নেতা রবীন সরেনও আগে থেকেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে খবর। গাঁওতার নেতৃত্বকে খনির পক্ষে মাঠে নামিয়ে দিতে পারলে বিরোধিতার প্রচেষ্টা প্রথমেই শক্তি হারাবে বলে সরকারি দলের ধারণা। এ অনেকটা পাহাড়ে বিমল গুরুং-বিনয় তামাং-কে এক দিকে নিয়ে আসার মতো, যদিও তাতে পাহাড়ের মানুষের মন ও ভোট কোনটাই তৃণমূল পায়নি। কিন্তু পাহাড়ে তৃণমূলের কোনও সংগঠন ছিলনা, দেউচায় বিরোধীদের প্রায় কোনও সংগঠন নেই।
স্থানীয় ভাবে গড়ে ওঠা দু’টি কমিটি – মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় দেউচা-পাচামি জমি রক্ষা কমিটি ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দেউচা-পাচামি আদিবাসী জনজাতি জমি রক্ষা কমিটি – বিক্ষোভকারীরা এখনও পর্যন্ত নানান সংগঠনের, অন্তত নৈতিক সমর্থন পেয়েছেন। যেমন, সেভ ডেমোক্রেসি, প্রজেক্ট অ্যাফেক্টেড পিপলস অ্যাসোসিয়েশন, সিপিআইএমএল (লিবারেশন), সিপিআইএমএল (রেড স্টার), এপিডিআর, স্বরাজ ইন্ডিয়া, ইয়ং বেঙ্গল ইত্যাদি। কিন্তু এদের অধিকাংশেরই প্রকল্প এলাকায় বিশেষ কোনও সংগঠন বা প্রভাব নেই।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে তৃণমূলের যথেষ্ট পোক্ত সংগঠন ছিল, সেই সাথে ছিল এসইউসিআই-এরও উপস্থিতি। প্রায় রাজনৈতিক বিরোধী শূন্য দেউচায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইটা আরেকটু জটিল হবে বলেই এখনও পর্যন্ত ইঙ্গিত।
লেখক একজন স্বাধীন সাংবাদিক।
এই ব্যাসল্ট তোলার খরচ কে বইবে? ওভারবার্ডেন যুক্ত কয়লার দাম যা হবে তাতে বিদ্যুতের দাম কী দাঁড়াবে? বেঙ্গল বীরভূম কোলফিল্ডস লিমিটেড কোম্পানিটি কী গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে? তাদের হাত থেকে খনি প্রকল্প বিদ্যুত উন্নয়ন নিগমকে কেনই বা দেওয়া হল?