আমরা এমএসপি গ্যারান্টি, বিদ্যুৎ বিল সংশোধন ও অন্যান্য যে দাবি রয়েছে … সেগুলি প্রত্যাহার করে তবেই ফিরব – কৃষক নেত্রী হরিন্দর কৌর বিন্দু


  • November 20, 2021
  • (0 Comments)
  • 1106 Views

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার করার ঘোষণার পর বিকেইউ উগ্রাহানের কৃষক নেত্রী হরবিন্দর কৌর বিন্দুর  মুখোমুখি গ্রাউন্ডজিরো-র সুদর্শনা চক্রবর্তী।S

 

প্র: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার করা হবে। কৃষক বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দীর্ঘ কৃষক আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই ঘোষণার পরে আজ আপনার মনের অবস্থা কীরকম?

হরবিন্দর: আজ আমি ভীষণ ভীষণ খুশি। এতদিন ধরে যে কালা কানুন ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করে চলেছি উনি যে সেটা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন তাতে আমরা খুবই খুশি। আমরা আমাদের বিশ্বাসে অনড় থেকেছি, যার জন্য ওরা পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বিজেপি সরকার কৃষকদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। আমরা কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়েছি। আমাদের ৭০০ জন সাথী শহীদ হয়েছেন। সমস্ত ঋতুতে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা আমরা রাস্তায় বসে আন্দোলন চালাচ্ছি। তাই এই বিল প্রত্যাহারের ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি তো হবই। ‘বহোত বঢ়িয়া জস্‌ন’ হয়েছে – গান-বাজনা, নাচ, দোকানদারেরা সবাইকে খাবার বিলিয়েছেন, মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে – আমরা জয় উদ্‌যাপন করেছি আজ।

 

প্র: আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই মহিলাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইবেন আপনি?

হরবিন্দর: মহিলাদের এই লড়াইয়ে শামিল হওয়া নিয়ে একটা কথাই বলতে চাই যে – যদি প্রথম দিন থেকেই মহিলারা আন্দোলনে না আসতেন, ঘর থেকে না বেরোতেন, তাহলে পুরুষেরা, কৃষকেরা এভাবে এই লড়াইয়ে জয় পেতেন না। জয়ের একটা বড় কারণই হল আমাদের মহিলারা বিরাট সংখ্যায় এসেছেন ও ‘কিষাণ ভাইদের’ সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। তাই এই জয় আমাদের।

 

প্র: আপনার কেন মনে হয় যে মহিলারা যদি বাইরে না আসতেন, লড়াইয়ে শামিল না হতেন তাহলে জয় এভাবে আসত না, এটা কেন মনে হচ্ছে আপনার?

হরবিন্দর: তার কারণ হচ্ছে আমাদের যে শক্তি তা ‘আধুরি’, অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। আমাদের শক্তির যে অর্ধেক অংশ – মহিলারা তারা আন্দোলনের সঙ্গে না থাকলে আমাদের ক্ষমতা কমে যেত। দ্বিতীয় হল – এ তো আমাদের পরিবারের বিষয়। জমির বিষয়, কৃষির বিষয় – এ আমাদের সবার পরিবারের বিষয় তো বটেই। যদি সবাই এতে শামিল না হন তা হলে জেতা যেত না। তাই আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই যে বিশাল সংখ্যায় আমাদের সমাজের অর্ধেক যে অংশ – মহিলারা – যোগ দিয়েছেন তার একটা বড় কারণ হল – তারা বুঝেছেন আমাদের জমি কেড়ে নেওয়া হবে, আমাদের রুটি ছিনিয়ে নেওয়া হবে, বাড়িতে আমাদের মা-বোনেদের যে ‘ইজ্জত’ থাকে তা থাকবে না, আমাদের বাচ্চারা খেতে পাবে না – সেইজন্য তারা পুরুষদের থেকেও বেশি ‘জোশ’ নিয়ে যেন এই লড়াইতে শামিল হয়েছেন। পুরুষদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছেন সমানভাবে পাশে থেকে।

 

প্র: আমাদের দেশে এখনও মহিলাদের জমির অধিকার নেই, তাদের নিজেদের জমি হয় না – আপনার কি মনে হয় যে এবার এই বিষয়টা নিয়েও কথা বলার সময় এসেছে?

হরবিন্দর: যে সমাজে আমরা বাস করি সেখানে যে ধাঁচা তা পুরুষতান্ত্রিক আর সেখানে তো মহিলাদের জমির অধিকার, রোজগারের সুযোগ কিছুই প্রায় নেই। যে মহিলারা চাকরি করেন, রোজগার করেন তারাও নিজেদের ইচ্ছে মতো নিজেদের উপার্জনের টাকা খরচ করতে পারেন না – ফ্ল্যাট কিনতে, গাড়ি কিনতে পারেন না। তার মাইনের উপরেও যেন তার স্বামী, তার ছেলের অধিকার রয়ে যায়! তেমনি আমরা যারা কৃষক পরিবারের মহিলারা তারা ক্ষেতে কাজ তো করি কিন্তু আমাদের নিজেদের জমি নেই। যদি ধরুন কোনও জমি পেয়েও যাই, তা স্রেফ কাগজ-কলমে থাকে, আমাদের এমন অধিকার থাকে না যে আমরা তা বিক্রি করতে বা স্বেচ্ছায় কাওকে দিতে পারব। এই লড়াই ভবিষ্যতের জন্য – আমাদের ‘হক্‌’, আমাদের অধিকারের লড়াই। যেমন আমরা এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়েছি, জমি বাঁচাতে লড়েছি – তেমন এই লড়াইও লড়তে হবে আগামী দিনে।

 

প্র: এই যে প্রধানমন্ত্রী মোদি কৃষি বিল প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন, ভয় পাচ্ছেন না তো যে এটা আবার কোনও নতুন চালাকি?

হরবিন্দর: দেখুন, সাফ কথা হল এই যে বিজেপি সরকার – দেশের মানুষের উপর রাজত্ব চালাচ্ছে – ওরা আসলে কর্পোরেটের হয়ে কাজ করছে, দেশবাসীর উপর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর নিয়ম-কানুন চাপাতে চাইছে – আমরা তো এমনিই ওদের বিশ্বাস করি না। আমরা জানি আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, আমাদের চোখ-কান খুলে রাখতে হবে, মাথা সজাগ রাখতে হবে। একটা কথা সত্যি যে আমরা আর আগের মতো নেই। মানুষ অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে, সচেতন হয়েছে, প্রশ্ন না করে কিছু মানতে চায় না মানুষ এখন আর। এখনও আমাদের গ্রামে মানুষ বলছেন – ‘মোদির উপর ভরসা করো না। এর কথার কোনও ঠিক নেই। যেকোনও সময়ে বদলে যেতে পারে। কারণ এ তো জুমলেবাজ, নাটক করে সারাক্ষণ’ – মানুষ এখন এগুলো জানে। আমরা মোটেও ওর মুখের কথায় ভুলছি না, আন্দোলন তুলছি না। এমন নয় যে উনি ঘোষণা করলেন আর আমরা দিল্লি থেকে যে যার জায়গায় ফিরে গেলাম। নেহি। আমরা এমএসপি গ্যারান্টি, বিদ্যুৎ বিল সংশোধন ও আরও অন্যান্য যে দাবি রয়েছে তার আইনি দিক স্পষ্ট করে, সেগুলি প্রত্যাহার করে তবেই ফিরব – অ্যায়সে তো নেহি যাতে। পঁচিশে নভেম্বর বিরাট সংখ্যায় মহিলারা বাসন্তি রঙের ওড়না নিয়ে আর অনেক অনেক তরুণ, কৃষক টিকরি সীমান্তে পৌঁছাচ্ছেন। ট্র্যাক্টর, বাস, গাড়ি সব ভর্তি করে মানুষ আসছেন। জবরদস্ত জোশ রয়েছে সকলের।

 

প্র: অনেক ধন্যবাদ হরবিন্দরজি। আবারও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন।

হরবিন্দর: হ্যাঁ, হ্যাঁ। নিশ্চয়ই। তবে আপনাকে আরও একটা কথা বলতে চাই – আপনাদেরও অভিনন্দন আমাদের তরফ থেকে। আপনাদের মতো যে ‘মানুষের মিডিয়া’ রয়েছে, যা আমাদের ভাইবোনেদের কথা দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে, আমাদের সাহস যুগিয়েছে। মোদির মিডিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের খবর করা, আমাদের কথা তুলে ধরা – এই কাজের জন্য আপনাদেরও কুর্নিশ, আমাদের তরফ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ। এভাবেই আন্দোলনের পাশে থাকবেন।

 

Share this
Leave a Comment