গণতন্ত্র ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা তাঁদের ভাষণে দুটি উদাহরণ দিয়ে থাকেন। এক, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বলবৎ করা জরুরি অবস্থা। দুই, ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দেশজুড়ে শিখনিধন, বিশেষ করে দিল্লিতে। কিন্তু বিগত সাত বছর ধরে দেশের অভ্যন্তরে যে পুলিশি রাজ চলছে তা কি অঘোষিত জরুরি অবস্থা নয়? প্রশ্ন তুললেন আশিস গুপ্ত।
বিশ্বের বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ হিসাবে পরিচিত ভারতে, মানবাধিকার রক্ষার দৈনন্দিন লড়াইয়ে কে কত বড় যোদ্ধা তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাকযুদ্ধ ও কলমযুদ্ধ শুরু হয়েছে। যুদ্ধের অংশীদার শাসক ও বিরোধী, সকলেই। যুদ্ধের শুরু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ দিয়ে। গত ১২অক্টোবর, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কিছু মানুষ তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের নিজস্ব উপায়ে মানবাধিকার ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে। তারা একটি ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখে, কিন্তু একই প্রকৃতির অন্য ঘটনায় তা দেখতে পায় না। এই ধরনের মানসিকতা মানবাধিকারের অনেক ক্ষতি করে।”এইটুকু বলেই থামেননি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে রাম জন্মভূমি উদ্ধার আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক নরেন্দ্র মোদী। মানবাধিকারের সঙ্গে একটু জাতীয়তাবাদ মিশিয়ে তিনি বলেছেন, “কেউ কেউ মানবাধিকারের নামে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে … রাজনৈতিক লাভ এবং ক্ষতির দিকে নজর দিয়ে মানবাধিকারের দিকে তাকালে মানুষের অধিকারগুলির পাশাপাশি গণতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
প্রধানমন্ত্রীর ঐ ভাষণের পরেই আসরে নেমে পড়লেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা পি চিদাম্বরম। তিনি দিল্লি থেকে প্রকাশিত এক ইংরেজি দৈনিকে প্রধানমন্ত্রীর মানবাধিকার সংক্রান্ত বক্তব্য খণ্ডন করে একটি প্রবন্ধ লিখে ফেললেন। যে প্রবন্ধের প্রায় পুরোটাই দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের বক্তব্যের সমার্থক। প্রবন্ধের শুরুতে লেখকের নাম ও ছবিটা যদি নজর এড়িয়ে যায়, তাহলে পাঠক বিশ্বাসই করতে চাইবেন না যে লেখাটা লিখেছেন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, যিনি ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি বা এনআইএ-র মত একটা ‘গেস্টাপো’ বাহিনীর জনক। সেই চিদাম্বরম তাঁর লেখার প্রায় শুরুতেই উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ঘোষণাপত্রের। তিনি লিখেছেন, “১৯৪৮ সালে, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্রে সেই অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে যা প্রতিটা মানুষ সমানভাবে এবং অবিচ্ছেদ্য অধিকারী।” চিদাম্বরম লিখেছেন, “ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবনায় ১৯৪৮ সালে বিশ্বের বাস্তবতাকে গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সনদ নথিভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাকে ন্যায্যতা দিয়েছিল, কারণ ‘মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননার ফলে যে বর্বরতার প্রকাশ ঘটেছিল তা মানবজাতির বিবেককে ক্ষুব্ধ করেছে …’ ১৯৪৮ সালে যা সত্য ছিল তা ২০২১ সালেও সত্য; এটি (মানবাধিকার) কিছু দেশে উন্নত হতে পারে কিন্তু ভারত সহ আরও কিছু দেশে এটি আরও খারাপ হয়েছে।”
আসলে, মানুষের অধিকার বা প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী ও পি চিদাম্বরমের মধ্যে বিশেষ কোনো ফারাক নেই। চিদাম্বরম ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রের বা সনদের উল্লেখ করেছেন। অথচ ঐ সনদ গৃহীত হবার ঠিক দশ বছর পর ১৯৫৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সংসদে বিল পাশ করিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা তৈরি করে কংগ্রেস। যে আইন ভারত ছাড়ো আন্দোলন দমনে ১৯৪২ সালের ১৫ অগস্ট ব্রিটিশরাজের বলবৎ করা সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা অর্ডিন্যান্সের আধারে তৈরি। যে আইনের বৈধতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘর মানবাধিকার কমিশন বা কমিটি। ১৯৯১ সালে যখন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিটির কাছে ভারত তার দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে, তখন কমিটির (ইউএনএইচআরসি) সদস্যরা আফস্পা-র বৈধতা সম্পর্কে অসংখ্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা ভারতীয় আইনের অধীনে আফস্পা-র সাংবিধানিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল কীভাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর)-র অনুচ্ছেদ ৪-এর আলোকে এটিকে ন্যায্যতা দেওয়া যেতে পারে। ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনার নভানেথম পিল্লাই ভারতকে আফস্পা বাতিল করতে বলেন। তিনি আইনটিকে “ঔপনিবেশিক যুগের আইন বলে অভিহিত করেন যা সমসাময়িক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান লঙ্ঘন করে।” ২০১২ সালের ৩১ মার্চ রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারতকে আফস্পা প্রত্যাহার করতে বলেছিল, ভারতীয় গণতন্ত্রে এর কোন স্থান নেই। বিচারবহির্ভূত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক ক্রিস্টোফ হেনস বলেছিলেন, “আমার কাশ্মীর সফরের সময় আফস্পাকে আমার কাছে ‘ঘৃণিত’ এবং ‘কঠোর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। এটি স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। জাতিসংঘের কয়েকটি চুক্তি সংস্থা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে।” চিদাম্বরমের দল কংগ্রেস, দেশের অভ্যন্তরেও বার বার আফস্পা বাতিলের দাবি উঠলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপিও কোনো ভনিতা না করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে আফস্পা বাতিল তাদের অ্যাজেন্ডায় নেই , আগামী দিনেও থাকবে না।অর্থাৎ মানুষের অধিকার, গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাষ্ট্র নামক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ কংগ্রেস ও বিজেপি।
বিগত এক দশক বা আরও কিছু বেশি সময় ধরে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) বা উপা দেশের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। কারণ মানুষের আন্দোলন, প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিতে এই দানবীয় আইনকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে সরকার।লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় ইউএপিএ-র অধীনে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৭২% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আইনটাও চিদাম্বরমের দল কংগ্রেসের তৈরী। আফস্পা-র ঠিক ন’বছর পরে ১৯৬৭ সালে জন্ম নেয় ইউএপিএ। গত পাঁচ দশক জুড়ে অন্তত সাতবার সংশোধন, সংযোজন করে ইউএপিএ আইনের ফলাটা সুতীক্ষ্ণ করে তোলা হয়েছে গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে ক্ষতবিক্ষত করতে। সাতটা সংশোধনীর ছ’টাই তো কংগ্রেস সরকারের আনা। ২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদীর সরকার শেষ সংশোধনী সংসদে পাশ করিয়ে গণতন্ত্রের কফিনে আর একটি পেরেক পুঁতে দিয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে, এখন আর শুধু সংগঠন বা গোষ্ঠী নয়, একজন ব্যক্তিকে এককভাবেই সরকার চিহ্নিত করতে পারবে সন্ত্রাসী হিসাবে। যদি তদন্ত জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) একজন কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য এনআইএ -এর মহাপরিচালকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আগে আইনে ছিল অনুমোদন নিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালকের কাছ থেকে। আগে আইনে ছিল সন্ত্রাসী মামলার তদন্ত ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট বা সহকারী পুলিশ কমিশনার বা তার উপরে পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হবে। ২০১৯-এ তা সংশোধন করে এনআইএ -র ইন্সপেক্টর বা তার উপরে পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরও মামলার তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ইউএপিএ মামলার ক্ষেত্রে জামিন ব্যতিক্রম হিসাবেই দেখা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত উপদেশাবলীর বিপরীতে, যারা এই আইনের অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন তারা এই প্রক্রিয়াটিকেই শাস্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বহু চর্চিত, কুখ্যাত ভীমা-কোরেগাওঁ ষড়যন্ত্র মামলা ইউএপিএ-র অধীনেই। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর কে জি কান্নাবিরন স্মারক বক্তৃতায় বিশিষ্ট আইনজীবী মিহির দেশাই বলেছিলেন, “এই আইনগুলির দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যা নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রভূত ক্ষমতা প্রদান করে — তাদের গ্রেপ্তার করা, আটক করা, তাদের বিরুদ্ধে এমন অপরাধের অভিযোগ আনা যে অভিযোগ তারা অন্য আইনি পথে আনতে সক্ষম নাও হতে পারে, এবং নাগরিকদের কারাগারে রাখতে পারে বছরের পর বছর একসাথে। আর এসবই করা হয় এটা নিশ্চিত করার জন্য যে সকল প্রকারের মতবিরোধ চূর্ণ করা হয়েছে।” কংগ্রেসের তৈরি আইন আরো বেশি ধারালো করে তা যথেচ্ছ ব্যবহার করছে বিজেপি সরকার। অর্থাৎ মানুষের অধিকার, গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাষ্ট্র নামক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ কংগ্রেস ও বিজেপি।
গণতন্ত্র ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা তাঁদের ভাষণে দুটি উদাহরণ দিয়ে থাকেন। এক, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বলবৎ করা জরুরি অবস্থা। দুই, ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দেশজুড়ে শিখনিধন, বিশেষ করে দিল্লিতে। দেশের প্রত্যেক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ওই দুটি ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এসেছে, করছে, আগামী দিনেও করবে। কিন্তু বিগত সাত বছর ধরে দেশের অভ্যন্তরে যে পুলিশি রাজ চলছে তা কি অঘোষিত জরুরি অবস্থা নয়? কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিকী কাপ্পান। উত্তরপ্রদেশের জেলে তাঁর বন্দিদশার এক বছর পূর্ণ হল গত ৫ অক্টোবর। অপরাধ, এক বছর আগে কেরল থেকে উত্তরপ্রদেশের হাতরাসে যাবার চেষ্টা করেছিলেন একটি মর্মান্তিক ও নৃশংস ধর্ষণ-হত্যা ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে। কাপ্পানের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আরও তিনজনকে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহে জড়িত থাকার কঠোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৪ সালের মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে, “আমরা যদি বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দিতে না পারি তবে ভারতের গণতন্ত্র টিকবে না।” বিজেপি প্রতিবছর ২৬ জুন ঘটা করে ‘জরুরি অবস্থা’ বিরোধী দিবস পালন করে কংগ্রেসের স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে দেশের নব প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়। অথচ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বলবৎ করা জরুরি অবস্থা আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘গণতন্ত্র’ মিলেমিশে একাকার। স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যম সম্পর্কিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ভারতে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার, আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং এর মধ্যে ৪০ শতাংশ মামলা শুধুমাত্র ২০২০ সালেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল। ‘বিহাইন্ড বারস: অ্যারেস্ট অ্যান্ড ডিটেনশন জার্নালিস্টস ইন ইন্ডিয়া ২০১০-২০’ নামে এই গবেষণাটি করেছেন স্বাধীন সাংবাদিক গীতা শেশু। গত এক দশকে সাংবাদিক ও লেখকদের বিরুদ্ধে সমন, আটক, গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ এবং কারণ দর্শানোর নোটিশের বিশ্লেষণ করা হয়েছে ঐ গবেষণায়। ২০১৪-২১, এই সাত বছরে খুন হয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক ও লেখক। ২০২১-এর জানুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৫ জন সাংবাদিক। একমাসে সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে এটা তিন দশকের রেকর্ড। সরকারিভাবে ভারতবর্ষে এখন জরুরি অবস্থা বলবৎ নেই। বিশিষ্ট সমাজসেবী ৮৪ বছর বয়স্ক ফাদার স্ট্যান স্বামী প্রায় বিনা চিকিৎসায় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে মারা গেলেন। গৌতম নভলখা – আনন্দ তেলতুমড়ে’র মতো বুদ্ধিজীবী, সুধা ভরদ্বাজ-সুরেন্দ্র গ্যাডলিং-এর মতো আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা সোমা সেন-রা বছরের পর বছর জেলবন্দি হয়ে আছেন সরকারের সাজানো মামলায়, এটা জরুরি অবস্থা ছাড়া আর কি? ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা আর নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-র জরুরি অবস্থার মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু প্রয়োগ কৌশলে। অর্থাৎ মানুষের অধিকার, গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাষ্ট্র নামক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ কংগ্রেস ও বিজেপি।
লেখক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।