গ্রাউন্ডজিরো । ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
৫টি রাজ্য থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যোগ দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের জিআইসি মাঠে সংগঠিত ঐতিহাসিক কিষাণ মজদুর মহাপঞ্চায়েতে। শুধু অন্যতম বৃহত্তম কৃষক জমায়েত হিসেবেই নয়, ধর্ম ও জাতি ভেদাভেদকে ভিত্তি করে মানুষকে ঘৃণা ও হিংসার পথে উস্কে তোলার রাজনীতির বিরুদ্ধেও এই দিনটি দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রইল। সভায় বিজেপি-আরএসএস-এর ভেদনীতিকে ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন ও শাসন নীতির সঙ্গে তুলনা করা হল।
সভায় বক্তব্য রাখলেন রাকেশ ও নরেশ টিকায়েত, ধর্মেন্দ্র মালিক, রাজেশ সিং চৌহান, রাজবীর সিং জাদৌন, অমৃতা কুণ্ডু, বলবীর সিং রাজেওয়াল, জগজিৎ সিং ডালেওয়াল, দর্শন পাল, যোগিন্দর সিং উগ্রহন, শিবকুমার শর্মা, , যোগেন্দ্র যাদব, মেধা পাটকর, যুধবীর সিং, গুরনাম সিং চদুনি, বলদেব সিং নিহালগড়, রুলদু সিং মনসা, কুলওয়ান্ত সিংহ সন্, মনজিৎ সিং ধনের, হরমিত সিং কাদিয়াঁ, মনজিৎ রায়, সুরেশ কোথ, রঞ্জিত রাজু, তেজিন্দর সিং বির্ক, সত্যবান, সুনীলম, আশিস মিত্তল, সতনাম সিং অজনালা, সোনিয়া মান, জসবীর কৌর, জগমতী সাঙ্গওয়ান ছাড়াও বিভিন্ন খাপের প্রধানরা। তিন কৃষি আইন রদ ও সামাজিক ভেদনীতি ছাড়াও এঁদের বিভিন্ন বক্তব্যে কড়া সমালোচনা ও প্রতিবাদ উঠল বিজেপি সরকারের লাগাতার বেসরকারিকরণ ও বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়ে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম) থেকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। মঞ্চ থেকে এসকেএম সেইসব লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধন্যবাদ জানাল যারা সরকারের তরফে প্রবল বাধা সত্ত্বেও এই মহাপঞ্চায়েতে যোগ দিতে মুজফ্ফরনগরে পৌঁছেছেন।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে বিশেষ করে নারী ও যুব কৃষকরা বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছিলেন। নানান সংগঠনের পতাকা ও হাজার হাজার জাতীয় পতাকায় শহরটি রঙিন হয়ে উঠেছিল। জমায়েতের দু’দিন আগে থেকেই শহর জুড়ে খুলে গিয়েছিল খাদ্যভান্ডার – প্রায় ৫০০টি লঙ্গরে পাওয়া যাচ্ছিল সুস্বাদু খাবারদাবার – খাচ্ছিলেন হিন্দু-মুসলমান সকলে, সমস্ত খাপ ও এলাকার মানুষজন মিলে। একশো মেডিকাল ক্যাম্প ও বহু মোবাইল ক্লিনিকেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
গোরক্ষা ও লাভ জিহাদ নিয়ে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের যে উৎসাহ, কৃষকদের কাছে প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমনটি নয়। ২০% ফসল ক্রয় প্রতিশ্রুতি এবং ৮৬ লাখ কৃষকের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি – এ দুয়ের কোনোটাই সরকার পূরণ করতে পারেনি। আখের কুইন্টাল প্রতি দামে কৃষকদের লোকসানের ক্ষেত্রে (৩৮৩ টাকার জায়গায় কৃষকরা পাচ্ছেন ৩২৫ টাকা) এবং কৃষকদের কাছে আখ মিলগুলির ৮৭০০ কোটি টাকা বকেয়া থাকার ক্ষেত্রেও সরকার কিছু করে উঠতে পারেনি। সভায় কিষাণ মজদুর মহাপঞ্চায়েত থেকে আখের দাম প্রতি কুইন্টাল ৪৫০ টাকা করার দাবি তোলা হল। ফসল বীমার ক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতি ও বীমা কোম্পানিগুলির ফুলেফেঁপে ওঠা নিয়েও প্রতিবাদ উঠল।
ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশ্নে মুজফ্ফরনগর শহরটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যে শহরে কাল কৃষক নেতাদের বক্তৃতায় একই মঞ্চে আল্লাহু আকবর ও হর হর মহাদেব রব উঠল, সেই শহরেই ২০১৩-র অগাস্টে শুরু হয়েছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যার ফলে সরকারি হিসেব মতো ৬২ জন (৪২ জন মুসলমান ও ২০ জন হিন্দু জাঠ) মারা যান ও প্রায় ৫০,০০০ মানুষ ঘরছাড়া হন। গত মাসে যোগী সরকার এই দাঙ্গায় অভিযুক্ত হিন্দু জাঠেদের মধ্যে বিজেপির ঘনিষ্ঠ ৭৭জনের নামে মামলা কোনো কারণ না দেখিয়েই তুলে নিয়েছে।
জাত-ধর্ম-শ্রেণি ভেদাভেদকে দূরে রেখে লক্ষ লক্ষ কৃষকের এই সমাবেশে আওয়াজ উঠল, যদি সরকার তিন কৃষি আইন বাতিল না করে এবং কৃষিপণ্য ক্রয়ের আইন রূপায়ন না করে, তাহলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। এসকেএম-এর নেতারা জানালেন, বেকারত্বের প্রশ্নেও শীঘ্রই সংগ্রামের পরিকল্পনা করা হবে।
কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল থেকে মহাপঞ্চায়েতের সমর্থনে বক্তব্য রাখা হলেও বিজেপি এই সভাকে ‘ইলেকশন মিটিং’ বলেই মনে করছে। রাজ্যের অ্যাসেম্বলি পোলে এই আন্দোলন ও মহাপঞ্চায়েতের কী প্রভাব হবে, সে নিয়ে দর্শন পাল, হান্নান মোল্লা, রাজেশ টিকায়েতরা শাসক দলের দিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন।