Groundxero Report, 10 August, 2021
by সুদর্শনা চক্রবর্তী
গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ৪ আগাস্ট পর্যন্ত টানা ১৮৮ দিন কলকাতার সল্টলেকে সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নম্বর গেটের সামনে দিনরাতের অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) স্বচ্ছ ও নিয়মানুগ নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত এসএসসি উত্তীর্ণ মেধাতালিকাভুক্তরা। নবম থেকে দশম ও একাদশ থেকে দ্বাদশ অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২০১৮ সালে যাঁদের ফল প্রকাশিত হয় তাঁদের যাতে মেধা তালিকায় র্যাঙ্ক অনুযায়ী নিয়োগ হয় সেই দাবি নিয়েই প্রায় ৩৫০ জন পিটিশনারকে নিয়ে চলছিল অবস্থান বিক্ষোভ। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে একটা দীর্ঘ সময় এই আন্দোলনকারীরা কলকাতার প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন বিক্ষোভ চালিয়েছিলেন। তারপরেও বেরোয়নি কোনও সমাধানসূত্র। সেইজন্যই আবারও ধর্ণা।
কথা হচ্ছিল ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি আন্দোলনকারীদের এই অরাজনৈতিক মঞ্চের সদস্য অভিষেক সেনের সঙ্গে, “২০১৮ সালে আমাদের মেধা তালিকায় নাম আসার পরে দেখি ১:৪ রেশিওতে নিয়োগ হচ্ছে না বা অনেক জায়গায় র্যাঙ্ক জাম্প করা হচ্ছে। ২০১৯-এ স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতেই প্রেস ক্লাবের সামনে আমাদের অনশন আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সেখানে মুখ্যমন্ত্রী আসেন, বলেন আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের সকলের নিয়োগ হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রতি এতদিনেও পালন করা হয়নি। বরং দেখা যায় সেই সময় সরকারের তরফ থেকে যে কমিটি তৈরি করা হয় তার সদস্য চার জনকে ২০১৯-এর জুলাই-অগাস্ট নাগাদ চাকরি দিয়ে দেওয়া হয়, যাদের র্যাঙ্ক ছিল অনেক পেছনে।”
তাছাড়াও র্যাঙ্ক না মেনে প্রচুর নিয়োগ, এসএমএস-এ নিয়োগের খবর পাঠানো ইত্যাদি যাবতীয় অনিয়ম চলছে রাজ্য সরকারের চোখের সামনেই। তাঁদের তরফ থেকে কোনও রকম নিয়ম মানার উদ্যোগই নেই। সেইজন্যই ৩০ জানুয়ারি থেকে হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে আবারও লাগাতার ধর্ণা শুরু করে এই মঞ্চ। গত ৪ অগাস্ট ঝড়বৃষ্টির রাতে বিধাননগর (নর্থ)-এর আইসি-র নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী গিয়ে ধর্ণামঞ্চ ভেঙে দেয় ও ১৩ জন অবস্থানকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন পিটিশনাররা বসতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয় ও বসতে দেওয়া হয়নি। ৯ অগাস্ট আবারও যখন ধর্ণাকারীরা সেন্ট্রাল পার্কে পৌঁছান তখন তৎক্ষণাৎ আবারও বিধাননগর পুলিশ ৭০-৮০ জন পিটিশনারকে গ্রেপ্তার করেন। রাত ন’টা পর্যন্ত আটক করে রাখার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ অগাস্ট আন্দোলনকারীরা ছাড়াও বেশ কিছু গণ সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
আপাতত আন্দোলনকারীরা আরেক বার আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন, কারণ হাইকোর্টের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ধর্ণাস্থলে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের হস্তক্ষেপ ও তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তাঁরা সব সময়েই প্রস্তুত। “১৮৮ দিনেই সরকারের তরফে কেউ যোগাযোগ করেনি, ফলে গ্রেপ্তারের পরে যে করবেন না, তাতে আর আশ্চর্য কী!” বক্তব্য অভিষেকের। এই আন্দোলনকারীদের কাছে এসএসসি-র নিয়োগে দুর্নীতির প্রায় ৪০টি প্রমাণ আছে, যাতে তাদের দাবি কতটা ন্যায্য তা সহজেই বোঝা যায়। আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে জানা যাচ্ছে, আন্দোলন নিঃসন্দেহে জারি থাকবে, যতদিন সরকার নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত মেধাতালিকা অনুযায়ী স্বচ্ছ ও নিয়মানুগ নিয়োগের দাবি মেনে নিচ্ছেন।