নয়া বেতনকাঠামো, সেলের মেটেরিয়াল ডিভিশন তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ তথা অর্জিত অধিকার রক্ষা ও বিলগ্নীকরণের বিরুদ্ধে সফল ধর্মঘট করলেন ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকরা।
গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট, ৩০ জুন ২০২১
নয়া বেতনকাঠামো, সেলের মেটেরিয়াল ডিভিশন তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ তথা অর্জিত অধিকার রক্ষা ও বিলগ্নীকরণের বিরুদ্ধে সফল ধর্মঘট করলেন ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বোকারো, রাউরকেল্লা, ভদ্রাবতী ও সালেমে ধর্মঘট একশ শতাংশ সফল। সেইলের খনিগুলিতেও ধর্মঘটে সামিল হন ১০০ শতাংশ শ্রমিক। এ রাজ্যের বার্নপুর ইস্কোতে ধর্মঘটের সাফল্যের হার ৮৮ শতাংশ, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ও অ্যালয় স্টিল কারখানাতে যথাক্রমে ৭২% ও ৫৪%। রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগমের ভাইজাগ স্টিল প্ল্যান্টে ৭৫% শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেন।
এই সাফল্য আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ শেষ মুহূর্তে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিইউসি তাদের ম্যানেজমেন্টের কাছে আত্মসমর্পণের সংস্কৃতি বজায় রেখে ধর্মঘট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। বেতনক্রমের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়া সত্বেও এবং ভার্চুয়াল বৈঠকের ব্যর্থতা সত্বেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের পলায়নী মনোবৃত্তি শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বহু কারখানায় আইএনটিইউসি নেতাদের ফতোয়া অগ্রাহ্য করে তাদের ইউনিয়নের সদস্যরা ধর্মঘটে অংশ নেয়। মজার কথা হল কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপি সরকারের প্রভাবাধীন ভারতীয় মজদুর সংঘ (বিএমএস) এই ধর্মঘটে অংশ নেয়।
বার্নপুর প্ল্যান্টে ২০ বছর কাজ করছেন এমন এক শ্রমিক জানালেন তিনি এখানে এর আগে এত সর্বাত্মক হরতাল তিনি দেখেন নি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বার্নপুরে আইএনটিইউসির একটি গোষ্টী গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তা প্রতিরোধ করে। রাজ্যের শাসক দল অনুগত আএনটিটিইউসি বরাবর তাদের দলীয় অবস্থান অনুযায়ী ধর্মঘটের বিরোধিতা করে তবে খবর অনুযায়ী বার্নপুরের তারা এবার কোথাও ধর্মঘটের সক্রিয় বিরোধিতা করে নি।
আমরা এই ধর্মঘটের প্রভাব জানতে কথা বলেছিলাম দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের সিটু নেতৃত্ব মলয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তার মতে এই ধর্মঘট ঐতিহাসিক কারণ নিজ নিজ ট্রেড ইউনিয়ন পরিচিতিকে অতিক্রম করে বৃহত্তর শ্রমিক ঐক্যের সূচনা হয়েছে দেশ জুড়ে ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে। কর্পোরেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শ্রমিকরা, বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম আন্দোলন সফল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। যেহেতু ম্যানেজমেন্ট ও ইউনিয়নগুলির মধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে তাই শ্রমিকরা বুঝতে পেরেছে কোন ইউনিয়ন কি অবস্থান নিয়েছে। মোদি সরকারের ঘোষিত সিদ্ধান্ত হল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের অবলুপ্তি। স্বাভাবিকভাবে ইস্পাত শিল্পেও সেই আক্রমণ বড়োভাবে নামছে। এই অবস্থায় মলয় বাবুর মতে এই সফল ধর্মঘট থেকে অর্জিত শিক্ষা আগামী লড়াইকে দিশা দেখাবে।