দ্বিতীয় ঢেউ প্রমাণ করে ছেড়েছে সারা দেশের পাশাপাশি মডেল রাজ্য গুজরাটের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। পাশাপাশি কোভিড–১৯ মোকাবিলায় প্রশংসিত হয়েছে কেরালা মডেল। নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্ক প্রসূত নীতি আয়োগ বোধহয় তাই সূচকের বদল ঘটিয়ে সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে গুজরাটকে শ্রেষ্ঠ আসনটি পাইয়ে দিল। একটি গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন।
গুজরাটকে শ্রেষ্ঠের শিরোপ দিতেই কি বদলে ফেলা হল এসডিজি-র সূচক। সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন বিভাগে (এসডিজি — ৩) রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে বসেছে গুজরাট। মোট স্কোর ৮৬। কেরালা, গোয়া ও হরিয়ানার সঙ্গে নবম (৭২) স্থানে এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থান সপ্তম (৭০)। ২০১৯-২০ সালে এই বিভাগে কেরালার স্থান ছিল প্রথম (৮২), পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চম (৭০) এবং হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে গুজরাটের স্থান ছিল ষষ্ঠ (৬৭)। ২০২০-২১ সালে ১৬টি বিভাগ মিলিয়ে কেরালা অবশ্য প্রথম স্থানটি অধিকার করে রয়েছে। তেলেঙ্গানা ও গুজরাট যুগ্ম ষষ্ঠ এবং পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশ যুগ্মভাবে একাদশ স্থানে রয়েছে।
২০২০-২১ সালে রাজ্যগুলির মধ্যে সব বিভাগ মিলিয়ে প্রথম পাঁচটি স্থানে রয়েছে মোট ৯টি রাজ্য। প্রথম কেরালা (৭৫) দ্বিতীয় হিমাচল প্রদেশ ও তামিলনাড়ু (৭৪), তৃতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, গোয়া, উত্তরাখণ্ড (৭২), চতুর্থ সিকিম (৭১), পঞ্চম মহারাষ্ট্র (৭০)।
শেষ পাঁচটি স্থানে রয়েছে ১০টি রাজ্য। ছত্তিশগড়, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা (৬১), অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ (৬০), আসাম (৫৭), ঝাড়খণ্ড (৫৬), এবং সবচেয়ে নীচে বিহার (৫২)।
২০১৮ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহায়তায় নীতি আয়োগ বিভিন্ন সূচকের সাহায্যে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বা সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ শুরু করে। এসডিজি-র মোট উন্নয়ন লক্ষ্য ১৬টি। এর মধ্যে আমাদের আলোচ্য বিষয় সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যটি। প্রথমে আমরা চোখ বুলিয়ে নিতে পারি এসডিজি ২০১৯-২০ এবং এসডিজি ২০২০-২১ এর সূচকগুলি এবং আলোচ্য রাজ্যগুলির প্রাপ্য মান।
(১) মাতৃমৃত্যুর হার (প্রতি লক্ষ জীবিত জন্মে)
২০১৯-২০
কেরালা – ৪৩, পশ্চিমবঙ্গ – ৯৪, গুজরাট – ৮৭
২০২০-২১
কেরালা – ৪৩, পশ্চিমবঙ্গ – ৯৮, গুজরাট – ৭৫
(২) সব ধরনের প্রসবের মধ্যে কত শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়েছে
২০১৯-২০
কেরালা – ৭৪, পশ্চিমবঙ্গ – ৬৫.৩, গুজরাট – ৬৬
২০২০-২১
কেরালা – ৯৯.৯, পশ্চিম্বঙ্গ – ৯৮.৬, গুজরাট – ৯৯.৫
(৩) অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সি শিশুমৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)
২০১৯-২০
কেরালা – ৭, পশ্চিমবঙ্গ – ৩২, গুজরাট – ৪৪
২০২০-২১
কেরালা – ১০, পশ্চিমবঙ্গ – ২৬, গুজরাট – ৩১
(৪) অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে কত শতাংশের পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে
২০১৯-২০
কেরালা – ৭২.৮, পশ্চিমবঙ্গ – ৬৬.২, গুজরাট – ৫৯.৬
২০২০-২১
কেরালা -৯২, পশ্চিমবঙ্গ – ৯৭, গুজরাট – ৮৭
(৫) প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার কত জন যক্ষা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা জানানো হয়েছে
২০১৯-২০
কেরালা – ৭১, পশ্চিমবঙ্গ – ১০৬, গুজরাট – ২২৮
২০২০-২১
কেরালা – ৭৫, পশ্চিমবঙ্গ – ১১১, গুজরাট – ২৩২
(৬) মূল জনসংখ্যা অনুসারে প্রতি হাজার অসংক্রমিত মানুষের মধ্যে নতুন এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
২০১৯-২০
কেরালা – ০.০৩, পশ্চিমবঙ্গ – ০.০৯, গুজরাট – ০.০৭
২০২০-২১
কেরালা – ০.০২, পশ্চিমবঙ্গ, ০.০৮, গুজরাট – ০.০৫
(৭) প্রজনন সক্ষম নারীদের (১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি) মধ্যে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে সন্তুষ্ট জনগোষ্ঠীর হার
২০১৯-২০
কেরালা – ৫০.৩, পশ্চিমবঙ্গ – ৫৭, গুজরাট – ৪৩.১
২০২০-২১
সূচকটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
(৮) প্রতি ১০,০০০ জন জনগোষ্ঠীর বিপরীতে স্বাস্থ্যকর্মীর ঘনত্ব ও বণ্টন (চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ)
২০১৯-২০
কেরালা – ১১২, পশ্চিমবঙ্গ – ২৭, গুজরাট – ৪৩
২০২০-২১
কেরালা – ১১৫, পশ্চিমবঙ্গ – ২৭, গুজরাট – ৪১
(৯) আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর হার (প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যা পিছু)
২০১৯-২০
এই সূচকটি যুক্ত ছিল না
২০২০-২১
কেরালা – ২৪.৩, পশ্চিমবঙ্গ – ১৩, গুজরাট – ১১.২
(১০) সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার (প্রতি লক্ষ জনসংখ্যা পিছু)
২০১৯-২০
এই সূচকটি যুক্ত ছিল না
২০২০-২১
কেরালা – ১২.৮২, পশ্চিমবঙ্গ – ১০.৮৮, গুজরাট – ৫.৮৯
(১১) সংসারে মাসিক ব্যয়ের অনুপাতে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয়ের অনুপাত (সংসারে মোট ব্যয় বা আয়ের > ১০%)
২০১৯-২০
এই সূচকটি যুক্ত ছিল না
২০২০-২১
কেরালা – ১৭, পশ্চিমবঙ্গ – ৯.৫, গুজরাট – ১৬.৯
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রাক্তন সচিব দিলীপ ঘোষ এই ফল বিশ্লেষণ করে ট্রেন্ডসওয়েস্টবেঙ্গল ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে মন্তব্য করেন যে, “যে তথ্যটি অবাক করে তা হ’ল প্রতি ১০,০০০ জনসংখ্যার ৪১ জন সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী থাকা সত্ত্বেও গুজরাট বেশ কয়েকটি সূচকে ১০,০০০ প্রতি ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকা পশ্চিমবঙ্গের পেছনে।”
তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন সূচক নির্বাচন নিয়ে। যা নীতি আয়োগের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাঁর প্রশ্ন, “আগের বারের সূচকের সঙ্গে কি কেবল বেছে বেছে সেই সূচকগুলিকেই নেওয়া হ’ল, যা গুজরাটকে ভারতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন দেবে?” তাঁর মতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ২৫টি সূচক ধরা হয়। এই সমস্ত সূচকের নিরিখে নীতি আয়োগের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গুজরাটকে উন্নয়নের সেরা মডেল হিসেবে তুলে ধরেন বহু অর্থনীতিবিদ ও শিল্পপতিরা। প্রায় সব প্রথম শ্রেণির মিডিয়াই এই ‘গুজরাট মডেল’-কে দেশের উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ পথ এবং নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাটের সার্বিক উন্নয়নের রূপকার হিসেবে তুলে ধরে। অন্যদিকে, বহু অর্থনীতিবিদই গুজরাটের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিশুকল্যাণ, সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নিরিখে গুজরাট যে একটি মধ্যমানের রাজ্য তা নানা সূচকের মাধ্যমে তুলে ধরেন। আমরা সেদিকটি একবার দেখে নিতে পারি।
কেন গুজরাট কোভিড-১৯ হটস্পট? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আহমেদাবাদের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভস-এর ইন্দিরা হীরওয়ে এবং আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শিনী মহদেবিয়া এনএসএসও সমীক্ষা এবং বিশেষ বিশেষ এলাকায় জনঘনত্ব, ২০০২ সংখ্যালঘু গণহত্যার পর শহর ও আধাশহর এলাকায় মুসলিমদের পূর্ণ ঘেটোকরণ ও বিচ্ছিন্নায়ন, দলিত ও শ্রমিক বস্তির অনুন্নয়ন এবং সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পুষ্টি কর্মসূচির হালও খতিয়ে দেখেন। দেখা যাচ্ছে, গুজরাট সরকার এসডিপির মাত্র ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে। যার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ চলে যায় ডাক্তারি শিক্ষায় ও বিমায়। জেলা ও ব্লকস্তরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর পোস্ট খালি। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ব্যয়বরাদ্দ কম হওয়ায় একজন নাগরিককে সরকারি চিকিৎসার সুযোগ নিতে হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খরচ নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়। কেননা স্বাস্থ্যখাতে গুজরাট বছরে মাথাপিছু ব্যয় করে ২,৩২৯ টাকা, অর্থাৎ, দৈনিক ৬.৩৮ টাকা। মা ও শিশুদের পুষ্টি প্রকল্পগুলি যেমন অঙ্গনওয়ারির শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, মিড ডে মিল প্রকল্পগুলির বরাদ্দের মাত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। (দ্য ওয়ার, ২৯ এপ্রিল ২০২০।)
এবার যদি তাকাই “চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স” বা শিশু উন্নয়ন সূচকের দিকে, শিশু কল্যাণ, অর্থাৎ, ১২-২৩ দিনের শিশুর পূর্ণ টিকাকরণের অনুপাত; ১০-১৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে সাক্ষরতার হার; পাঁচ বছরের নীচের শিশুরা, যারা স্বাভাবিক বা বাঞ্ছিত ওজনের কম নয় তাদের অনুপাত, জন্মের আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার অনুপাত —এ জাতীয় চারটি বুনিয়াদি সূচকের মিলিত হিসেবেও গুজরাট একটি নিম্নসারির রাজ্য। যার নীচে রয়েছে পাঁচ বিমারু রাজ্য রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। এই সূচকের নিরিখে ২০০৫-০৬ সালে প্রথম কুড়িটি রাজ্যের মধ্যে গুজরাটের স্থান ছিল ১৪তম। ২০১৩-১৪ সালে তা নেমে হয় ১৫তম। দুই ক্ষেত্রেই প্রথম পাঁচটি রাজ্য ছিল যথাক্রমে, কেরালা, তামিলনাড়ু, হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র। দুটি ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল অষ্টম। (কেরালা টপস, গুজরাট ফ্লপস, বিহার হপস, জঁ দ্রেজ, সেন্স অ্যান্ড সলিডারিটি, ২০১৮।)
এই বইয়ের অন্য একটি প্রবন্ধে — দ্য গুজরাট মাডল — জঁ দ্রেজ একের পর এক উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন গুজরাট সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা জালের নানা সূচকে আসলে একটি মধ্যমানের রাজ্য। মানব উন্নয়ন সূচকে তার স্থান ২০টি রাজ্যের মধ্যে নবম; ‘অ্যাচিভমেন্টস অফ বেবিজ অ্যান্ড চিলড্রেন (এবিসি) ইন্ডেক্স’-এও নবম। এই সূচকটি শিশুদের পুষ্টি, বেঁচে থাকা, শিক্ষা ও টিকাকরণ — এই চারটি সূচককে ভিত্তি করে নির্মিত হয়। “মাল্টি-ডাইমেনশনাল পভার্টি ইন্ডেক্স” (এমপিআই)-এ দেখা যাচ্ছে হুবহু একই ছবি। এমপিআই-এর ধারণাটির সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে দ্রেজ জানাচ্ছেন, দারিদ্র নানা রকমের বঞ্চনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। যেমন, খাদ্যের অভাব, বাসস্থান, নির্মলতা, বিদ্যালয়-শিক্ষা, স্বাস্থ্যের যত্ন ইত্যাদি। একটি পরিবারকে দরিদ্র ধরা হবে যদি দেখা যায় তারা এই বুনিয়াদি বঞ্চনার তালিকার একটি জ্ঞাত অনুপাত অনুযায়ী (ধরা যাক এক তৃতীয়াংশ) বঞ্চনার শিকার।
এই সার-সংক্ষেপিত সংখ্যাতাত্ত্বিক সূচকের অন্যতম রঘুরাম রাজন কমিটি উদ্ভাবিত “কম্পোজিট ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স”। এই সূচকে রয়েছে মাথাপিছু ভোগ, পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের বন্দোবস্ত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নগরায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি (ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন) ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত দশটি উপাদান। আশ্চর্যজনক ভাবে এক্ষেত্রেও গুজরাট সেই মধ্যমানে, অর্থাৎ, নবম স্থানে। রঘুরাম রাজন কমিটি-কৃত আরও একটি সূচক হচ্ছে “পারফরমেন্স ইন্ডেক্স”। কম্পোজিট ডেভেলপমেন্ট সূচকের নির্দিষ্টতায় একটি সময় ব্যাপী অগ্রগতির হার কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা মাপতে পারফরমেন্স ইন্ডেক্সকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন দ্রেজ। এই মাপকের নিরিখে ২০০০-এর যুগে কেমন অগ্রগতি ছিল গুজরাত-সহ অন্যান্য ১৯টি রাজ্যের? এ ক্ষেত্রে ‘মডেল’ খ্যাত গুজরাট নবম স্থান থেকে হড়কে দ্বাদশে গিয়ে পৌঁছয়। দ্রেজ বলছেন, গুজরাট যদি মডেল রাজ্য হয় তবে কেরালা, তামিলনাড় ‘সুপার মডেল’। মহারাষ্ট্র এই যাবতীয় সূচকে গুজরাটের চেয়ে ঢের এগিয়ে এবং হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটক, হরিয়ানা, পঞ্জাবও এই সূচকগুলি অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুজরাটের তুলনায় ভালো স্থানে রয়েছে। দ্রেজের মতে ‘গুজরাট মডেল’ একদমই বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, গুজরাটের উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যা উন্নয়ন হয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রেই নরেন্দ্র মোদীর কোনও ভূমিকা নেই। তৃতীয়ত, এই প্রচারে হালকাভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গ। কিন্তু, ব্যাপক পরিমাণ পরিবেশ ধ্বংস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মতো অন্ধকারময়, কদর্য দিকটি অনালোচিত রয়ে গিয়েছে। (অতিমারি, গুজরাট মডেলের অতিকথা ও বাস্তবতা, দেবাশিস আইচ, গ্রাউন্ডজিরো, ১১ মে ২০২০।)
নরেন্দ্র মোদীর সাত বছরের রাজত্বকালে অর্থনীতির হাল বেহাল। অতিমারির প্রথম ঢেউ এবং হঠকারী লকডাউনে তা আরও তলানিতে ঠেকেছে। দ্বিতীয় ঢেউ প্রমাণ করে ছেড়েছে সারা দেশের পাশাপাশি মডেল রাজ্য গুজরাটের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রশংসিত হয়েছে কেরালা মডেল। নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্ক প্রসূত নীতি আয়োগ বোধহয় তাই সূচকের বদল ঘটিয়ে সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে গুজরাটকে শ্রেষ্ঠ আসনটি পাইয়ে দিল।
চমৎকার বিশ্লেষণ।