‘সহি’ মা হব না


  • May 22, 2021
  • (1 Comments)
  • 2886 Views

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল। অধিকাংশ মানুষই আবেগে গদগদ। এক মধ্যবয়সী মহিলা নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রান্নাঘরে পরিবারের জন্য রান্না করছেন। সঙ্গে লেখা নিঃশর্ত ভালবাসা = *মা*, যিনি কখনোই ‘অফ ডিউটি’ নন। মাতৃত্বের কি অসাধারণ বর্ণনা। এবং মারাত্মক। বিবামিষা উদ্রেককারী। একজন মহিলা মা হওয়া মানে তাকে মহামারির সময়ে অক্সিজেনের অভাবে মুখে কৃত্রিম অক্সিজেনের নল লাগিয়েও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। এই ছবি শুধু নিষ্ঠুর ও অমানবিক নয়, এই ছবি মহিলাদের বাড়ির কাজের নামে প্রতিদিনের শোষনের ‘গ্লোরিফিকেশন’, যাতে মাতৃত্বের নামে তাদের শেষ জীবনিশক্তিটুকুও নিংড়ে নিতে পারে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। লিখছেন সুদর্শনা চক্রবর্তী

 

 

এই লেখা ব্যক্তিগত এবং তাই রাজনৈতিক

 

যে মেয়েরা জৈবিকভাবে মা হওয়া থেকে বিরত থাকেন বা নিজে সন্তানের জন্ম না দিয়ে সন্তান দত্তক নেন বা যে মেয়েরা একলা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন – সমাজের চোখে তারা যে কখনওই ঠিক পুরোপুরি মা হয়ে উঠতে পারেন না, সে বিষয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই।

 

মহিলা মানে তাকে মা হতে হবে। মানে, হতেই হবে। ইচ্ছে থাকুক আর না-ই থাকুক, সমাজ তাকে মাতৃরূপেণ-ই দেখতে চায়। আর যে সে মা হলে হবে না। হতে হবে ঐ এখন খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শব্দ অনুসরণ করে ‘সহি’ মা। মা হয়ে ওঠার কিছু মাপকাঠি পূর্ব নির্দ্ধারিত। সে নতুন কথা নয়, কয়েক শতক পুরনো সে সব কথা। যাইহোক, বছরের পর বছর ধরে সেই মাপকাঠি ছুঁয়ে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে নির্দিষ্ট একটি বয়স থেকে আজীবন একজন মহিলাকে সঠিক, সম্পূর্ণ মা হয়ে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করে যেতে হয়। গর্ভে ধরেছেন যখন তখন সেই সন্তান ‘সু’ হল না ‘কু’ তার দায় নিয়ে আমৃত্যু থাকতে হবে মা-কেই। আবার মুশকিলের কথা হল কিছু ক্ষেত্রে গর্ভে ধরা সত্ত্বেও সেই সন্তানকে মা জন্ম দিতে পারবেন কি না, না কি পরিবার, সমাজের মুখরক্ষায় জন্মানোর আগেই সন্তানটিকে মেরে ফেলা হবে – সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে মা ছাড়া পরিবারের আর সকলে। কী আশ্চর্য, সমাজটাকে তো বাঁচাতে হবে না কি! সবকিছু কি মেয়েমানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া যায়? আর যে মায়েরা এইসব সঠিক মাতৃত্বের বাক্সগুলোর মধ্যে নিজেদের আঁটিয়ে নিতে চান না বা পারেন না, মোটামুটি তার নারীজন্ম যে প্রায় ব্যর্থ বা অসম্পূর্ণ তা মনে করিয়ে দেওয়ার উপায়ের অভাব নেই, ছিলও না কখনও। এক্ষেত্রে যে মেয়েরা জৈবিকভাবে মা হওয়া থেকে বিরত থাকেন বা নিজে সন্তানের জন্ম না দিয়ে সন্তান দত্তক নেন বা যে মেয়েরা একলা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন – সমাজের চোখে তারা যে কখনওই ঠিক পুরোপুরি মা হয়ে উঠতে পারেন না, সে বিষয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই।

 

মা-মেয়ে-দিদি/বোন-প্রেমিকা-স্ত্রী-শাশুড়ি-দিদা/ঠাকুমা – এই সব চরিত্রে একজন মেয়েকে কেমন হতে হবে তার কপিবুক উদাহরণ তৈরি করে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। যারা সারা জীবন এই চরিত্রগুলিতে প্রাণ ঢেলে দিতে পারছেন তাদের জন্য রয়েছে দেবীর তকমা, নারীত্বের পূর্ণতা অর্জনের জন্য বাহবা।

 

আসলে পুরোটাই এক দুর্দান্ত ছক। আলাদা করে আলোচনার যেমন আজ এই ২০২১-এ দাঁড়িয়ে কিছু নেই, তেমনি আবার ক্রমাগত যে এই কথাগুলো বলে যেতেই হবে, ক্লান্ত লাগলে চলবে না, অধৈর্য হলেও চলবে না সেটা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের কিছু কিছু ভূমিকায় নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে আটকে দিতে পারলে তার উপরে কর্তৃত্ব ফলানোর, তাকে দাবিয়ে রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারে। সেই ভূমিকার থেকে বাইরে বেরোতে চাইলেই নিয়ম-নীতিই শুধু নয়, বেরোতে চাওয়াটাই যে একজন নারীর জন্য ‘অবমাননাকর’ সেটাও তার মাথার মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে রাখা হয়। মা-মেয়ে-দিদি/বোন-প্রেমিকা-স্ত্রী-শাশুড়ি-দিদা/ঠাকুমা – এই সব চরিত্রে একজন মেয়েকে কেমন হতে হবে তার কপিবুক উদাহরণ তৈরি করে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। যারা সারা জীবন এই চরিত্রগুলিতে প্রাণ ঢেলে দিতে পারছেন তাদের জন্য রয়েছে দেবীর তকমা, নারীত্বের পূর্ণতা অর্জনের জন্য বাহবা। প্রতিটি ভূমিকার জন্য আলাদা করে ‘গ্লোরিফিকেশন’। তার থেকে বিচ্যুত হয়েছেন কি হননি গেল গেল রব উঠে যাবে, কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে চলবে সেই মেয়ের চরিত্রের কাটাছেঁড়া। মেয়েটি যদি শিরদাঁড়াটি সোজা আর মাথাটি উঁচু রেখে নিজের জায়গা থেকে এতটুকুও না সরেন, তাহলে যে পরিমাণ অপমান, হেনস্থা সহ্য করতে হয় পরিবারে, সমাজে প্রত্যক্ষে, পরোক্ষে তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয় আর লড়ে যেতে হয় – যে লড়াইটা বহু মেয়েরা সরবে বা নিশ্চুপে শহর-গ্রাম-মফস্বলে করে চলেছেন, চলেইছেন।

 

একটা বিপদকালীন, জরুরি অবস্থাকালীন পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকুক বা মহামারী চলুক মহিলাদের নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে বন্দী করে রাখার, তাদের পরিবারে নিবেদিতপ্রাণ থাকার গল্পটি থেকে বেরোতে সমাজ বেজায় অনিচ্ছুক। বরং এই কঠিন সময়ে, যেখানে মানুষ বাঁচবে না মরবে তাই অনিশ্চিত, সেখানেও মেয়েদের প্রান্তিক করে রাখার, তাদের উপর ক্রমাগত কাজের বোঝা চাপিয়ে যাওয়ার, তাদের দায়িত্ব পালনে যাতে কোনও রকম গাফিলতি না থাকে তা নিশ্চিত করার, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের নিংড়ে নেওয়ার অভ্যাস থেকে পরিবার ও বৃহত্তর সমাজ কিছুতেই বেরোতে পারছে না। বরং গত এক বছরেরও বেশি সময়ে তার শিকড় আরও গভীরে পৌঁছেছে।

 

লকডাউনে ঘরের কাজ ও ঘরবন্দী হয়ে পেশাগত কাজ কি দারুণ দক্ষতায় সামলাচ্ছেন মেয়েরা তার ‘গ্লোরিফিকেশন’ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কর্পোরেট বিজ্ঞাপন ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টে। এবং সেখানেও অনিবার্যভাবে উঠে আসছে মা হিসাবে তারা কি অসামান্য কাজ করছেন সেসন উদাহরণ।

 

কোভিড, লকডাউন এই সবকিছু নিঃসন্দেহে মেয়েদের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থানকে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের সামনে ঠেলে দিয়েছে। লড়াইটা এখন আর শুধু নিজেকে টিঁকিয়ে রাখার, লিঙ্গ পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করার নয়। তারসঙ্গে জুড়ে গেছে অনেক অতিরিক্ত দায়-দায়িত্ব, নিজের ও পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার চাপও হয়তো নিতে হচ্ছে বহু মেয়েকেই। আর এরই মাঝে যাতে তারা ‘মাল্টিটাস্কিং’-এর নামে এই বছরের পর বছর ধরে চলে আসা শোষনটিকে খুব শান্ত মনে মেনে নেন তারজন্য বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার কিছুই বাদ থাকছে না। লকডাউনে ঘরের কাজ ও ঘরবন্দী হয়ে পেশাগত কাজ কি দারুণ দক্ষতায় সামলাচ্ছেন মেয়েরা তার ‘গ্লোরিফিকেশন’ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কর্পোরেট বিজ্ঞাপন ও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টে। এবং সেখানেও অনিবার্যভাবে উঠে আসছে মা হিসাবে তারা কি অসামান্য কাজ করছেন সেসন উদাহরণ। অবশ্য আমরা নিশ্চয়ই ভুলিনি গত বছর লকডাউন শুরুর সময়ে গৃহবন্দী থাকলে মেয়েদের চেহারা, মন, মস্তিষ্ক, মেজাজ সবটাই কতটা খারাপ হয়ে যেতে পারে সেসব নিয়ে তৈরি হওয়া পুরুষতন্ত্রের দুর্দান্ত নমুনা হিসাবে প্রচার পাওয়া জোক ও মিমগুলো। আর নিশ্চিতভাবেই ভুলিনি বাড়ির রান্নাবান্না ও ঘরের কাজ কে সামলাবে সেই দুঃশ্চিন্তায় কোভিড আক্রান্ত গৃহবধূর চিকিৎসা না করানোর খবরটি।

 

কে বানিয়েছেন এই ডিজিটাল পোস্টারটি? তার লিঙ্গ পরিচিতি কী? কেন তিনি একজন মহিলাকে শুধু ও শুধুমাত্র এই রূপে দেখছেন? কোন শিক্ষায় (পুঁথিগত নয় সামাজিক শিক্ষার কথা বলতে চাওয়া হচ্ছে এক্ষেত্রে) তিনি বড় হয়েছেন এবং কী শিক্ষা তিনি দিতে চাইছেন?

 

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে অবস্থা এবার আরও ভয়াবহ। সংক্রমণ যতটা মারাত্মক তার থেকেও ভয়াবহ অবস্থা সামাল দিতে রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসনের ভূমিকা। স্রেফ নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না বলে মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আর দেখে বিবমিষা জাগছে যে এহেন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে সেই ছবি যেখানে দেখা যাচ্ছে মুখে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে বাড়িয়ে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে পরিবারের জন্য রান্না করছেন এক বিবাহিতা মাঝবয়সী মহিলা। সঙ্গে ইংরেজি লেখাটির বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় – নিঃশর্ত ভালবাসা = *মা* তিনি কখনওই ‘অফ ডিউটি’ নন বা ডিউটি থেকে ছুটি নেন না। কোন্‌ সমাজে বাস করছি আমরা? কে বানিয়েছেন এই ডিজিটাল পোস্টারটি? তার লিঙ্গ পরিচিতি কী? কেন তিনি একজন মহিলাকে শুধু ও শুধুমাত্র এই রূপে দেখছেন? কোন শিক্ষায় (পুঁথিগত নয় সামাজিক শিক্ষার কথা বলতে চাওয়া হচ্ছে এক্ষেত্রে) তিনি বড় হয়েছেন এবং কী শিক্ষা তিনি দিতে চাইছেন? শরীরের প্রতিটি রোমকূপ থেকে এক তীব্র রাগের বিস্ফোরণ ঘটতে চাইছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে একজন মহিলা = প্রজনন যন্ত্র নন। মা হওয়া বা না হওয়াটা কেবল ও কেবলমাত্র সেই মহিলার ইচ্ছানির্ভর। এবং অবশ্যই খুব স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়া দরকার – কেমন মা হবেন সেটাও তিনি ছাড়া তার হয়ে কোনও পরিবার, কোনও সমাজ স্থির করে দেবে না।

 

সংসারের ঘানি টানতে টানতে, রান্না করতে করতে অক্সিজেনের নল নাকে লাগিয়ে মা বেঁচে থাকবেন বা মরে যাবেন। বেঁচে থাকলে তাকে একটু প্রশংসা করে দেওয়া যাবে, যাতে তিনি বিনা প্রশ্নে আমৃত্যু এভাবেও বিনামূল্যে পরিশ্রম করে যাবেন আর যদি মরে যান, তাহলে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজো করে ‘সহি’ মায়ের আসনে প্রতিষ্ঠা করে, পরের প্রজন্মের মহিলাকে এরকম মা হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।

 

মহিলাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণে এখন যেন এক স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই পোস্টারটি সম্ভবত শালীনতার সীমা পেরিয়ে গেছে। হ্যাঁ, শালীনতা মানে একজন মহিলা তার শরীরের কতটা উন্মুক্ত করছেন, তার আচার-ব্যবহার কেমন, তার সামাজিক অবস্থান কী তা নয়। শালীনতা মানে একজন মহিলার পোশাক, ব্যবহার যেমনই হোক না কেন তার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা, তাকে তার শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেবে না নেওয়া এবং তাকে শুধুই একজন মহিলা বলে সম্মান করা। সমাজে, পরিবার তার বিভিন্ন সম্পর্কের নিরিখে কী পরিচয় তা দেখে নয়। আর অশালীনতা মানে অসুস্থ বা মরণাপন্ন হয়েও একজন মহিলাকে ‘মা’ হিসাবে তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান থাকতে হবে, ‘ডিউটি’ পালন করতে হবে এটা প্রচার করতে চাওয়ার কদর্যতা। অদ্ভূতভাবে এই ছবিটা সামনে আসায় সমালোচনা যেমন হচ্ছে তেমনি লাইক বা লাভ রিঅ্যাকশন-ও কম নয়, মানে বিষয়টি এভাবে দেখতেই বহু মানুষ অভ্যস্ত এই ছবিটা তারা বদলাতে চান না। সংসারের ঘানি টানতে টানতে, রান্না করতে করতে অক্সিজেনের নল নাকে লাগিয়ে মা বেঁচে থাকবেন বা মরে যাবেন। বেঁচে থাকলে তাকে একটু প্রশংসা করে দেওয়া যাবে, যাতে তিনি বিনা প্রশ্নে আমৃত্যু এভাবেই বিনামূল্যে পরিশ্রম করে যাবেন আর যদি মরে যান, তাহলে ধূপ-ধুনো দিয়ে পুজো করে ‘সহি’ মায়ের আসনে প্রতিষ্ঠা করে, পরের প্রজন্মের মহিলাকে এরকম মা হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।

 

কিন্তু এখন আর এই ‘গ্লোরিফিকেশন’-এর গল্পটা বিশেষ কাজে আসবে না। এতদিনের বদভ্যাস অবশ্য সহজে দূর হবে না। তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মায়েদের এই ভূমিকাতেই অভ্যস্ত করে তোলা হয়েছে। যারাই এই চেনা ছবির বাইরে গেছেন, তাদেরই খারাপ বা অন্যরকম বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তখন মায়েরা, মায়েদের মেয়েরা ‘না’ বলছেন। এই খোপে বসে যেতে তারা আদপেই রাজি নন ও বসছেনও না। বাতিল করে দিচ্ছেন এই বস্তাপচা ভাবনাগুলো আর করছেন বলেই তাদের বাগে আনতে এইসব পোস্টার, ভাবনা সবকিছুর প্রচার করতে হচ্ছে। মায়ের সনাতন রূপ তুলে ধরে মেয়েদের পেড়ে ফেলার পুরনো পুরুষতান্ত্রিক পন্থা। কিন্তু মুশকিল হল মাতৃত্ব নিয়ে মেয়েদের মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ঘুচেছে। যেকোনও ভাবেই মা হওয়া এক সুন্দর, সুখকর অনুভূতি যদি তা কোনও মহিলা স্বেচ্ছায় চান। এবং তা একান্ত ব্যক্তিগত। এইসব ‘ডিউটি’, দায়িত্ব-কর্তব্যের কাঁটার মুকুট মাথায় পরতে তারা এখন নারাজ। কেউ যদি মা হন এবং তিনি যদি কোভিড আক্রান্ত হন তাহলে প্রশ্নই ওঠে না জীবন বাজি রেখে পরিবারের জন্য পঞ্চব্যাঞ্জন চার বেলা রান্না করার। মায়ের ভালবাসা নিঃশর্ত হতে হবে, অথচ একজন মহিলা প্রকৃত মা কি না নির্ভর করবে তিনি প্রাণ দিয়েও পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন কি না এই অমানবিক শর্তের উপর! একজন মায়ের ‘ডিউটি’ স্থির করে দেওয়ার দায়িত্বও তো সমাজ বা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। ফলে, এই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবনাটি প্রচারকেও কোনওভাবেই স্বীকার করার প্রশ্ন নেই।

 

একজন মহিলা মা হবেন কি না, কীভাবে হবেন এবং ঠিক কতটা মা হবেন সেটা তিনি ছাড়া আর কেউই স্থির করতে পারবে না। অন্তত এই ছবিটা সামনে আসার পর তো নয়ই এবং মহামারি-উত্তর সময়ে এই শেখাটুকু যেন সব মা ও সন্তানদের জন্য রয়ে যায়। একজন মা না হওয়া মহিলা হিসাবে এইটুকু চাওয়া রইল।

 

Share this
Recent Comments
1
  • এই ঢ্যামনামোর( হ্যাঁ, সচেতনভাবেই এই বাক্যবন্ধটি ব্যবহার করছি, আপামর বিশ্বের সমস্ত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি) মূলসুরটি কিন্তু লুকিয়ে আছে বিশ্বের সমস্ত ধর্মবিশ্বাস মধ্যেই। প্রায়শই ধর্মবিশ্বাসগুলির উৎপত্তি সেইসব পুরুষদের হাতধরেই যারা কিনা নিজেদেরকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই মুক্ত করতে পারে নি। তাই মনুষ্যসমাজের (প্রকৃতির অন্যান্য জীবজগতের কথা ধরা অপ্রাসঙ্গিক) অর্ধেক আকাশকে বেহেশতে নন্দনকানন বানাতে গিয়ে, বাকি অর্ধেক অবলীলায় নরকের দ্বার বানাতে পারে।
    আমাদের ভারতের তথাকথিত সনাতন ধর্ম ও দুর্গার মাহাত্ম্য বর্ণনার সময় তার দশ হাতের দ্বারা কাজের মাহাত্ম্যই প্রচার করে, পুরুষদের যুদ্ধের অক্ষমতাকে ঢাকতে।
    বেশি আর কি লিখব।

Leave a Comment