ধাঁধার মতোই জটিল পুরুলিয়ার জয়-পরাজয়ের হিসাব


  • April 1, 2021
  • (0 Comments)
  • 1409 Views

উন্নয়নের রাজনীতি কতটা নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে কিংবা কতটাই বা ভোটারদের প্রভাবিত করবে মাহাত-আদিবাসী-বাউরি সম্প্রদায়গত জটিল পরিচয়ের রাজনীতি, কিংবা দুর্নীতি-কাটমানি-দাদাগিরি-স্বজনপোষণ, শাসক দলের কতিপয় বিধায়কের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠার অভিযোগ কি ছাপিয়ে যাবে উন্নয়নের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে? প্রকৃতপক্ষেই এ এক চরম ধাঁধা। জানাচ্ছেন দেবাশিস আইচ



ভোটে জেতার কোনও সহজ-সরল অঙ্ক নেই। উন্নয়ন জয়ের সিঁড়ি হতে পারে, নাও পারে। উন্নয়নের ‘উষর মুক্তি’ বন্দি হতে পারে দুর্নীতির বেড়াজালে। আবার দুর্নীতির বেড়া টপকে দুর্নীতির শিকার মানুষও জোট বেঁধে ফেলতে পারে কৌমরক্ষার ডাকে। যা বদলে দিতে পারে ভোটের অঙ্ক। পুরুলিয়া জেলায় ন’টি আসনেই ভোট হয়েছে ২৭ মার্চ প্রথম দফায়। তারই জয়-পরাজয়ের সুলুকসন্ধান করতে গিয়ে মনে হলো — শেষ নাহি যে…, তাই শেষ কথাটা রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়া খুব জোরের সঙ্গে বলতে পারছেন না কেউ।

 

পুরনো হিসেব বলছে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ন’টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল সাতটি এবং কংগ্রেস দু’টি। এই ফলাফলে মনে হবে বামফ্রন্ট বুঝি ধুয়েমুছে গিয়েছিল। তা তো নয়। তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী আসনে গড়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ এবং কংগ্রেস গড়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেলেও বামফ্রন্ট (সিপিএম ও ফঃবঃ) ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। মনে রাখতে হবে ২০১৬ নির্বাচনে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট একসঙ্গে লড়াই করেছিল। অন্যদিকে, এই ন’টি আসনের মধ্যে আটটিতে বিজেপির ভোট শতাংশ ছিল ৪.৫৮ শতাংশ থেকে ৬.৯৯ শতাংশ। একমাত্র রঘুনাথপুর আসনটিতে বিজেপি দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছিল — ১২.৯২ শতাংশ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া আসনটি পায় বিজেপি। শুধু তাই নয় লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভাওয়ারি ফলাফল অনুযায়ী ন’টি বিধানসভাতেই বিজেপি জয়ী হয়। তার মধ্যে বিজেপি বান্দোয়ানে ২৯৭০ ভোটে এগিয়ে ছিল। কংগ্রেসের গড় বলে খ্যাত বাঘমুন্ডিতে এগিয়ে ছিল ৫২,৭০৮ ভোটে। রাজনৈতিক মহলের মতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিপুল ভোট বিজেপির দিকে না গেলে এই জয় সম্ভব ছিল না।

 

ওই একই মহলের বিশ্বাস বাম ও কংগ্রেস ভোট বর্তমান বিধানসভা নির্বাচনে আর ওইভাবে বিজেপির পক্ষে যাবে না। যদি তাই হয় তবে কি অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল কংগ্রেস? আবার সংযুক্ত মোর্চারও একাধিক আসনে জয়ের মুখ দেখতে পারে। এই মুহুর্তে অন্তত তিনটি আসনের ক্ষেত্রে জেলার ভোট বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ নিশ্চিত। এবং তা হলো বলরামপুরে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি। পুরুলিয়া কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী। এবং মানবাজার কেন্দ্রে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস।

 

বিগত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপি ভাল ফল করেছিল। এর মধ্যে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি দখলও করেছিল বিজেপি। কিন্তু অভিযোগ ছলে-বলে-কৌশলে তৃণমূল তা দখল করে নেয়। জয়ী বিজেপি প্রার্থী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিতাই মণ্ডলকে বাগে এনে সমিতির সভাপতি করা হয়। দু’বছর পরে পাশার দান উলটে যেতে বসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি ও বর্তমান প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ রয়েছে তাঁর জীবনযাত্রা থেকে দল পরিচালনা-সহ সর্বক্ষেত্রে। তাঁর ‘আয়েশি’ জীবনযাত্রাই কি শান্তিরাম মাহাতর পরাজয়ের কারণ হয়ে উঠবে? জয়ের সম্ভাবনা বেশি বিজেপি প্রার্থী বাণেশ্বর মাহাতর?

 

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবার পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ ছিল শহর তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। তাঁর ‘মেজাজি’ স্বভাবও জনপ্রিয়তার অন্তরায় বলে শহরবাসীদের দাবি। বিক্ষুব্ধদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন বৈদ্যনাথ মণ্ডল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শহরবাসীর মতে, বৈদ্যনাথবাবুর ‘রহনে-সহনে নেতার চেহারা’ ছিল না। আর শহরবাসীর কাছে তিনি পরিচিত মুখ। এমনই নানা কারণেই পুরুলিয়া কেন্দ্রটি পাওয়ার সম্ভাবনা সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন কোনও সম্ভাবনার কথা মানতে রাজি নন জেলা পরিষদের সহ সভাপতি অখিল সিং সর্দার। তাঁর মতে দলীয় দ্বন্দ্ব আলাপ-আলোচনায় মেটানো গিয়েছে। এছাড়াও পুরুলিয়া গ্রামীণ অংশের ভোট সুজয়বাবুই বেশি পাবেন বলে মনে করছেন অখিল। মানবাজারের প্রার্থী সন্ধ্যা টুডুর জয় সম্পর্কে আশাবাদীদের দাবি, আদিবাসী ভোট তো বটেই, বিজেপিকে হারাতে বামেরাও নাকি এই কেন্দ্রে সন্ধ্যা টুডুর হয়েই ‘খেলেছেন’।

 

পারা ও রঘুনাথপুরের অঙ্কে আবার ঢুকে পড়েছে পরিচিতির রাজনীতি। সমাজসেবী উজ্জ্বল বাউরির মতে পারা কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি? কেন? তার পিছনে তিনি যে যে কারণ দেখিয়েছেন তা হলো: এক, বাউরি সমাজের ভোটের বড় অংশই তৃণমূলের পক্ষে; দুই, সিপিএম তার হারানো জমি ফিরে পেয়েছে। কংগ্রেস-বাম জোট ভাল ভোট পাবে; তিন, মানুষ ‘বাংলার স্বার্থে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেবেন। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রেও একই বক্তব্য উঠে এসেছে। বাউরি সমাজের প্রতিনিধি এবং  পশ্চিমবঙ্গ বাউরি সমাজ উন্নয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ কিশোর বাউরিও জানান, রঘুনাথপুরে তৃণমূল কংগ্রেসকেই সমর্থন করছে বাউরি সমাজ। রাজ্যে বাউরি সমাজভুক্ত মানুষ প্রায় ১ কোটি ২২ লক্ষ। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় তাদের বড় রকমের উপস্থিতি রয়েছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাউরি সমাজ উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের পদক্ষেপ এই পিছিয়ে থাকা সমাজকে একজোট করে তুলেছে বলেই মনে করছেন সমাজকর্মী দেবব্রত গোস্বামী। তবে, একটি কাঁটা রয়েছে। এই কাঁটাটি হলেন রঘুনাথপুরের গত বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক পূর্ণ বাউরি। অভিযোগ, দলের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের নানা অভিযোগের কারণেই তাঁর টিকিট হাতছাড়া হয়েছে। তবে, তাঁর অনুগামীর সংখ্যাটি নেহাত কম নয়। অর্থাৎ, অনুগামীদের সব ভোট শত্রু শিবিরে জমা হলে তৃণমূল চাপে পড়বে। জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগ স্বীকার করছেন না। তাঁদের কাছে আরও আশার কারণ পারা ও রঘুনাথপুরের সংখ্যালঘু ভোট। সংযুক্ত মোর্চাও এই সংখ্যালঘু ভোটের দাবিদার। তবুও রঘুনাথপুরে যদি বিজেপির জয় হয় আর বামেরা দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেই কোনও কোনও মহলের মত।

 

কাশীপুর তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আর এক বিতর্কিত কেন্দ্র। বিতর্ক তৃণমূল প্রার্থীকে ঘিরেই। অভিযোগ জীবনযাত্রা থেকে স্বজনপোষণের। দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব তাই প্রবল। এই আসনে তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখছে ভোট বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব আশাবাদী আদিবাসী কুর্মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতর আশ্বাসে। ভোটের আগে তাঁর ঘোষণা ছিল, কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপিতে যাবে না। পুরুলিয়া জেলায় রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে কুর্মি মাহাত সম্প্রদায়ের প্রবল প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাবের জেরে কখনও বাঘমুন্ডিতে হারেননি কিংবদন্তী-সম কংগ্রেস নেতা দেবেন মাহাতোর পুত্র নেপাল মাহাতো। ২০১৯ সালে তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রে বিজেপি সবচেয়ে বেশি ‘লিড’ পেয়েছিল — ৫২ হাজার সাতশো আট। এবারও বিধানসভার জোট প্রার্থী তিনিই। ফিরিয়ে আনতে পারবেন কি সেই ভোট? তাঁর বিধানসভার অন্যতম এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চল। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী দেয়নি। দাঁড় করিয়েছে আজসু নেতা আশুতোষ মাহাতকে। তাঁর নাম নিজস্ব প্রভাব কম। যা নিয়ে আবার বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। তৃণমূলের প্রার্থী সুশান্ত মাহাতো। সাঁওতাল-মুন্ডা অধ্যুষিত পাহাড় অঞ্চলে বিজেপি বিরোধী ভোট এককাট্টা করতে ঝাড়খণ্ড উজিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ও বর্তমানে আদিবাসী সমাজকে ‘হিন্দু’ বানানোর প্রক্রিয়া বিরোধী, এবং সারনা ধর্মের সাংবাধানিক স্বীকৃতির দাবিদার সালখান মুর্মু। পুরুলিয়ায় প্রচারে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। এ কথা জানালেন, পাহাড় রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত সমাজকর্মী দেবব্রত গোস্বামী। তৃণমূলের এই রাজনৈতিক কৌশল কি বিপাকে ফেলতে পারে নেপাল মাহাতকে? অ্যাডভান্টেজ কি তৃণমূল কংগ্রেসের সুশান্ত মাহাতর? এই অ্যাডভান্টেজের কথা মানতে রাজি নন সংযুক্ত মোর্চা। সিপিআইএম নেতা কৌশিক মজুমদার জানালেন, অযোধ্যা পাহাড়ে আদিবাসী ভোট বেশি তবে নেপাল মাহাতর গণভিত্তি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে। আর এই বর্ষীয়ান নেতার পক্ষে যাঁরা বাজি ধরছেন তাঁরাও বলছেন সমাজের সব সম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর কাছে উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ ভাবে লকডাউনে তিনি সাধারণ মানুষকে প্রচুর সাহায্য করেছেন।

 

জয়পুর কেন্দ্রটিতে বিপাকেই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমত, তৃণমূল প্রার্থী রাজীব কুমারের মনোনয়ন বাতিল এক প্রধান কারণ। ফলত, নির্দল প্রার্থী দিব্যজ্যোতি সিং দেওকে সমর্থন জানিয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুব্ধ আড়ষা ব্লকের কুমার সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই ভোট কংগ্রেসে পড়েছে। জয়পুরে কংগ্রেস শক্তিশালী কিন্তু একই ভাবে ফরোয়ার্ড ব্লকেরও জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। জেলায় কংগ্রেস ও ফঃবঃ-এর মধ্যে এবার বনিবনা হয়নি। জয়পুর-সহ যেখানেই কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস সেখানেই গোঁজ প্রার্থী দিয়ে বসেছে ফঃবঃ। অন্যদিকে, ফঃবঃ থেকে আসা নরহরি মাহাতকে মেনে নিতে পারেননি বিজেপির স্থানীয়রা। তৃণমূল বলছে লড়াইটা কংগ্রেস বনাম তৃণমূল সমর্থিত নির্দলের মধ্যে। সংযুক্ত মোর্চাও জয়ের গন্ধ পাচ্ছে। এত জটিল অঙ্কের কী সমাধান করেছেন ভোটাররা তা তাঁরাই জানেন। বান্দোয়ান কেন্দ্রে গতবারের বিজয়ী তৃণমূলের রাজীব লোচন সোরেন তাঁর আদিবাসী ভোট ধরে রাখতে পারবেন কি? ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব? সংযুক্ত মোর্চার বাম প্রার্থী সুশান্ত বেসরা কতটা নিজেদের ভোট ফিরিয়ে আনতে পারেন — তার উপর নির্ভর করছে এই আদিবাসী প্রধান কেন্দ্রের জয়-পরাজয়ের হিসেব। কৌশিক মজুমদার মনে করছেন বান্দোয়ান আসনটি তাঁদের পক্ষেই যাবে। আবার জেলার বিজেপি দলের সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গার দাবি, অন্তত সাতটি অঞ্চলের আদিবাসী গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসকে দেওয়াল লিখতে দেওয়া হয়নি। এবং আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপির নিবিড় প্রচারের ফলে জয় হবে তাঁদেরই।

 

বিবেক রঙ্গা অবশ্য জানিয়ে দিলেন ন’টি আসনই তাঁরা জিতবেন। আরও জানালেন, নয় আসনে ৫-৭ হাজার থেকে ২০-২৫ হাজার পর্যন্ত তাদের মার্জিন থাকবে। কৌশিক মজুমদার অন্তত চারটি আসন পুরুলিয়া, জয়পুর, বান্দোয়ান, বাঘমুন্ডিতে সংযুক্ত মোর্চার জয় বিষয়ে আশাবাদী। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালে যে ভোট বামেরা পেয়েছিল তা আবার ফিরে পাবে বামেরা। তৃণমূল কংগ্রেসও অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ আসনগুলিতে — কাশীপুর, রঘুনাথপুর, জয়পুর, বলরামপুর — জয়ের জন্য সংযুক্ত মোর্চার ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

 

তরুণ রবিন মুর্মু, প্রবীণ বাবুলাল মুর্মু কিংবা শবর কল্যাণ সমিতির সংগঠক প্রশান্ত রক্ষিত প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়া রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, লকডাউনে বিনামূল্যের রেশন, দুয়ারে সরকারের কথা বলছিলেন। যা আসলে ‘দিদি’র জন্য ভোট। প্রশান্ত জানান, শবর জনজাতির জন্য দুয়ারে সরকার প্রকল্পে বরাবাজার, বান্দোয়ান, মানবাজার ১ ও ২ সহ সাতটি ব্লকে বিশেষ ক্যাম্প হয়েছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি। স্থায়ী রেশন কার্ড, বয়স্ক ভাতা, জোহার ভাতা, বিধবা ভাতার সুবিধা পেয়েছেন ১৮০০ শবর পরিবার। শবররা কোনও কেন্দ্রেই নির্ণায়ক শক্তি নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাত্র হাজার বারো জনসমষ্টি। কিন্তু, এই প্রকল্পগুলির সুবিধা মিলেছে সব সম্প্রদায়েরই যা ভোটে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করেন প্রশান্ত। তবে, এই উন্নয়নের রাজনীতি কতটা নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে কিংবা কতটাই বা ভোটারদের প্রভাবিত করবে মাহাত-আদিবাসী-বাউরি সম্প্রদায়গত জটিল পরিচয়ের রাজনীতি, কিংবা দুর্নীতি-কাটমানি-দাদাগিরি-স্বজনপোষণ, শাসক দলের কতিপয় বিধায়কের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা বা খোদ পঞ্চায়েত সমিতির বাড়িতে পাঁচ তারকা ‘আয়েশ রুম’ জীবনযাপনের অভিযোগ কি ছাপিয়ে যাবে উন্নয়নের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে? প্রকৃতপক্ষেই এ এক চরম ধাঁধা।

 

ছবি : দেবাশিস আইচ।

 

Share this
Leave a Comment