সম্প্রতি চতুর্থ পিপলস লিটারারি ফেস্টিভ্যালে কলকাতা এসেছিলেন জেল থেকে সদ্য জামিনে মুক্ত শ্রমিক আন্দোলনের তরুণ দলিত নেত্রী নওদীপ কৌর। নওদীপ মজদুর অধিকার সংগঠন নামের শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য যারা সক্রিয়ভাবে দেশের চলমান কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করছে। গত ১২ জানুয়ারি নওদীপ দিল্লির প্রান্তে কুন্দলী ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় তিনি যে কারখানায় কাজ করেন তার বাইরে শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে এক প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। কুন্দলীতে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার পরেই তিনি মজদুর অধিকার সংগঠনের সদস্য হয়ে শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে একাধিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধে শামিল হন। তিনি কৃষক আন্দোলনের সমর্থনেও যোগ দেন ও এই কারণে এমনকি গত ডিসেম্বরে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করে। ১২ জানুয়ারি পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপরে আক্রমণ চালায় এবং পুরুষ পুলিশ কর্মীরা নির্মমভাবে মারতে মারতে, চুল ধরে টেনে নওদীপকে ভ্যানে তোলেন। পুলিশ লক-আপেও চলে মার, যৌন হেনস্থা। নওদীপের ঘটনা সারা দেশ নয়, আর্ন্তজাতিক স্তরেও শ্রমিক অধিকার, দলিত অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে সচেতন মানুষদের সোচ্চার করে তোলে। বেশ কিছুটা চাপান-উতোরের পর চাপের মুখেই তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভুয়ো মামলায় দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এতটুকু দমে যাননি এই তরুণ আন্দোলনকর্মী। গ্রাউন্ডজিরো-র প্রতিবেদক সুদর্শনা চক্রবর্তী-র সঙ্গে এক দীর্ঘ আলোচনায় নওদীপ কৌর।
প্র: নওদীপ আপনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলবন্দী হয়ে ছিলেন। এখন জামিনে বাইরে রয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে আসাও সেই বিষয়ে কথা বলতেই। জেল থেকে বেরোনোর পরে জীবনে, আন্দোলনে কী বদল এসেছে?
উঃ বদল তো নিঃসন্দেহে এসেছে। যদি আগের কথা বলি, আমরা একটু ছোট পরিসরে কাজ করছিলাম। আন্দোলন তো চলছিলই। আমাদের উপর নিয়মিত আক্রমণও হচ্ছিল। কিন্তু খুব কম লোক জানতেন। যে কোনও মজদুর (শ্রমিক) সংগঠনের উপরে এধরনের হামলা চলতে থাকে। কেউ আওয়াজ তোলে না, কেউ তাদের কথা প্রথমে শোনে না। কিন্তু যখন আমি জেলে গেলাম, তখন থেকে যেভাবে এই বিষয়টি নিয়ে কথা শুরু হল, মিডিয়া জানতে পারল, লোকজন জানলো, আর্ন্তজাতিক স্তরেও কথা শুরু হল – তখন তা শুধু একা আমার কথা রইল না, মজদুরদের কথাও হয়ে উঠল। প্রথমে কৃষকদের নিয়ে কথা হচ্ছিল, তারপর কোনও অন্য বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল, কিন্তু শ্রমিকদের কথা যেন কারওর কানেই পৌঁছচ্ছিল না। এখন একটা বড় পরিবর্তন এটা হয়েছে যে, এখন যখন আমি জেল থেকে বাইরে এসেছি, তখন সব জায়গায় এটা অন্তত বলা হচ্ছে যে আমি একজন শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী, মজদুরদের কথা হচ্ছে, মজদুরদের উপরে প্রচন্ড শোষন-নির্যাতন চলছে। যে নতুন শ্রম কোড আসছে, যে চারটি শ্রম কোড চালুও হতে চলেছে, তা রদ করার দাবি সেভাবে আগে উঠছিল না। এখন অন্তত এটা হয়েছে যে, শ্রমিক-মজদুরদের দিকেও জনতার দৃষ্টি কিছুটা হলেও পড়ছে। মানে, আগে কেউ শ্রমিকদের কথা বলছিলেন না, এখন যে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে, তা বাস্তবের মাটিতে তৃণমূল স্তরে নেমে এসেছে। কৃষক-শ্রমিকদের যৌথ শ্লোগান শোনা যাচ্ছে। অনেক শ্রমিক যোগ দিচ্ছেন এই জোটবদ্ধ আন্দোলনে যা একটা বড় পরিবর্তন।
আমার ব্যক্তিগত জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা হল আমি আগে শুধু কুন্দলি এলাকায় কাজ করছিলাম। কিন্তু এখন মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। তারা এখন চাইছেন যে আমি বৃহত্তর ক্ষেত্রে কাজ করি, জনগনের কন্ঠস্বর হয়ে উঠি, যার জন্য আমাকে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে, আরও ভালো ভাবে কাজ করতে হবে। এখন কাজ অনেক বেশি, সময় কম। শারীরিকভাবে আমি খুব দুর্বল এখনও, কিন্তু এত মানুষের সমর্থন পেয়ে মানসিকভাবে আমি খুবই চাঙ্গা হয়ে উঠেছি। আমি তো এও জানি না যে কে কোন সংগঠনের, কিন্তু মানবিকতার খাতিরে সবাই সমর্থন করছেন। কিছু মানুষ বিরোধীতা করলেও, সমর্থনকারী মানুষদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রচুর বিপ্লবী ভাবধারার মানুষ পাশে আছেন। সুতরাং আমাকে এখন এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে দম ফেলার ফুরসৎ না পাই, যাতে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি।
প্র: আপনি কাজে যোগ দেওয়ার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। এটা কি ঘটনাচক্রে হয়ে যায় না কি আপনি সব সময়েই এ ধরনের শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলি নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন?
উঃ না, এটা ঘটনাচক্রে হয়নি। আগে থেকেই আমি যখন যেখানে গেছি মানুষের অধিকারের বিষয়গুলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। পাঞ্জাবে যখন ছিলাম বা দিল্লিতে যখন এলাম তখন আমি এরকম অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছি। পাশাপাশি আমার কাজেরও খুব প্রয়োজন ছিল। লকডাউনে আমার বাবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। দিল্লিতে কাজ পাচ্ছিলাম না। আমার বোন রাজবীরের হরিয়ানাতে চেনাশোনা ছিল। আমি হরিয়ানাতে এসে কোম্পানিতে যোগ দিই, সেইসঙ্গে মজদুর অধিকার সংগঠনেও যোগ দিই। মানে আমার শুরু থেকেই এমনটাই ছিল যে, যেখানেই আমি যাই না কেন, সেখানে যেভাবেই হোক মানুষদের সাহায্য করি। কারণ ছোট থেকেই আমরা এটাই দেখেছি যে লড়াই ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। নিজের শুধু নয়, অন্য মানুষদেরও কন্ঠস্বর হয়ে উঠতে হবে। মৃত্যু তো একবারই আসে। একজন মানুষকে কেউ চেনে না। মৃত্যুর পরে কয়েক বছর পরিবারের মানুষেরা মনে রাখেন, তারপরে কেউ মনেও রাখে না। কিন্তু মার্কস, লেনিন, চ্যে গ্যুয়েভরা-ও তো আছেন। কত কত বছর পেরিয়ে গেছে, মানুষ তাঁদের ভোলেনি। এঁরা অমর, কোনও দিন মরেন না। তাঁদের চিন্তাধারা কোনও দিন মরে না। আমরা এরকম মৃত্যু তো চাই না যেখানে মরার পরে কেউ মনেও করবে না। আর আমরা যদি অন্যদের জন্য বাঁচি, তাহলে হয়তো চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকব। আমি এরকম মৃত্যু চাই, যেখানে আমি জনতার মধ্যে থাকি, মৃত্যুর পরেও। আমার চিন্তাধারা যেন কখনও না মরে।
প্র: যাঁদের কথা আপনি বলছেন, কী করে তাঁদের সম্পর্কে জানলেন? ছোট থেকে বাড়িতে কী এধরনের আলোচনার পরিবেশ ছিল? আপনি আলোচনা থেকে, পড়াশোনা করে – কীভাবে জানলেন?
উঃ ছোট থেকেই আমি আমার মা-কে দেখেছি। আশেপাশের পরিবেশ দেখেছি। শ্রমিকরা যে পরিবেশে থাকেন তা একদমই ভালো হয় না। আমার বাবা ‘বন্ডেড লেবার’ হিসাবে কাজ করতেন। আমাদের মাথার উপরে চার, পাঁচ লাখ টাকার ধার হয়ে গেছিল। আমার ঠাকুমা এই দেনার জন্য আত্মহত্যা করেছিলেন। আমার বাবা এক জনের বাড়িতে খেতের কাজ, গবাদি পশু দেখার কাজ, বাড়ির কাজ – সব কাজ করতেন। অনেক কষ্টে পাঁচ-সাত বছর পরে গিয়ে সেই ধার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারপরে তিনি গাড়ি চালানোর কাজ করতে শুরু করেন, এখন বাবার একটা রিপেয়ারিং-এর দোকান আছে। এখন যদিও বলা হয় যে ‘বন্ডেড লেবার’ নেই, কিন্তু বাস্তবে এখনও তা আছে। ছোট থেকেই জানতাম শ্রমিকদের উপর এরকম শোষন-অত্যাচার চলে। কিন্তু এর থেকে মুক্তির বা এর সঙ্গে লড়ার পথ জানতাম না। মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা তা বুঝতে পারতাম কিন্তু মাথার মধ্যে বেরোনোর পথ খুঁজে পেতাম না। আমার মা পাঞ্জাব খেত মজদুর ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মায়ের সঙ্গে প্রতিবাদ, ধর্ণায় যেতাম। যখন আমাদের গ্রামে থাকা অসুবিধাজনক হয়ে উঠল, তখন আমাদের সাত আট বছর অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়ে থাকতে হয়েছিল। ওখানে আমি ছোট ছোট পুস্তিকা পড়তাম – ভগৎ সিং, লেনিন, মার্কস, চ্যে গ্যুয়েভরা – মানে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিষয়ের উপরে পুস্তিকা পড়তাম। অনেক উপন্যাসও পড়েছি। যেমন ‘মা’ ( ম্যাক্সিম গোর্কি-র মাদার উপন্যাসের অনুবাদ) উপন্যাসটি, যা শ্রমিকদের নিয়েই লেখা, এরকম জিনিস পড়তে পড়তেই নিজের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট ও দৃঢ় হয়ে ওঠে। তার উপরে আমি বাড়ি থেকে করতামই বা কি। আমি তো কোথাওই যেতে পারতাম না। তারপর আমি কবিতা লিখতে শুরু করি, ফেসবুকে-ই অনেক কবিতা লিখতাম। অনেক ছোট বয়স, মনে হয় ক্লাস এইট-নাইন থেকে লিখতে শুরু করি। তারপর আমরা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পাঞ্জাব চলে আসি, আমি তারপর দিল্লি আসি আর ছাত্র না হলেও একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। আমি ওদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। তারপর হরিয়ানায় এসে আমি মজদুরদের সংগঠনে যোগ দিলাম। এগুলো হঠাৎ হয়নি। আমি বাস্তবে ঘটনাগুলো ঘটতে দেখছিলাম আর সঙ্গে সঙ্গে তার থিয়োরি/তত্ত্ব জানছিলাম, পড়ছিলাম। চিন্তাধারা এভাবেই দৃঢ় হয়ে ওঠে যে আমাকে কিছু করতেই হবে।
প্র: মজদুর ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পর আপনি বাস্তবে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করলেন? ধরুন একদিকে শ্রমিকদের সমস্যা, অন্যদিকে আবার মহিলা শ্রমিকদের সমস্যা। এমনকি ইউনিয়নের ভেতরেও অনেক সময়ে মহিলা সদস্যদের সঙ্গে বৈষম্যের ঘটনা ঘটে। আপনার অভিজ্ঞতা একটু বলুন।
উঃ দেখুন, সংগঠনের ভেতরে যেটা হয়, তা হল একজন মহিলার অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও, তার মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। অন্যদিকে একজন পুরুষ নতুন সদস্য হলেও, অনেক কম অভিজ্ঞতা থাকলেও তার মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হয়। আমাদের সংগঠনগুলি যদিও অনেক বড় বড় কথা বলে। মহিলা সংগঠনে অনেক বড় শ্লোগান তোলা হয় – মেয়েদের নিজেদের ইচ্ছে মতো পোষাক পরার স্বাধীনতা দাও, বিয়ে করার অধিকার দাও, ঘুরে বেড়ানোর অধিকার দাও। কিন্তু বাস্তবে কী মহিলাদের দাবি সত্যিই এগুলোই? আপনারা একটু বাস্তবের মাটিতে পা দিয়ে দেখুন। আপনারা পোষাক পরার স্বাধীনতা চাইছেন, অন্যদিকে এমন মহিলারা রয়েছেন যাদের পরার মতো যথেষ্ঠ পোষাকই নেই। আপনারা তাদের দাবি তুলে ধরবেন না কি অনেক ছোট ছোট দাবি তুলে ধরবেন? বড় পরিসরে দেখতে হবে যে মহিলাদের সমস্যা কি। আমি প্রথমে অ্যাডিসন কোম্পানিতে দিন পনেরো কাজ করি, তারপর ফেম কোম্পানিতে আসি। অ্যাডিসনে মহিলারা তুলনায় অনেক বেশি কাজ করলেও তাদের মাইনে ছিল ৭৫০০ আর পুরুষদের বেতন ছিল ৮৫০০ টাকা। মহিলাদের শোষন সব দিকেই বেশি। তারা উপযুক্ত মাইনে পান না, শারীরিকভাবে তারা শোষিত হন, মানসিকভাবেও তারা অত্যাচারিত হন। আর মহিলারা যেন বিনামূল্যের শ্রমিক (ফ্রি লেবার)। তাদের সারাক্ষণ মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে – ‘তুই একজন মহিলা’। যেমন থানায়, আমাকে যখন ধরল, তখন বারবার এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে ‘তুই একজন মহিলা’। মহিলারা যখনই কোথাও রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, তাদের এটা বলা হয় যে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। তিনি কাজের জায়গায় বেশি কাজ করে কম মাইনে পাচ্ছেন, বাড়িতে-পরিবারেই তাকে সব কাজ করতে হচ্ছে, দু’জায়গাতেই তিনিই গালি শুনছেন, বাচ্চারও জন্ম দিচ্ছেন – সবই করে যেতে হচ্ছে। তবুও তিনি বিনামূল্যের শ্রমিক। সবচেয়ে শোষিত ও পীড়িত শ্রেণী মহিলারাই, যাদের হয়ে কেউ কথা বলে না।
অন্যদিকে যদি শ্রমিকদের কথা বলেন, যারা কোম্পানিতে কাজ করেন, কেউ কাজ করতে গিয়ে মারা যান, কারওর হাত বা পা বাদ চলে যায়, কেউ কিচ্ছু পান না। কোম্পানি, সরকার – দু’জনের তরফ থেকেই সাহায্য পাওয়ার কথা। এমন শ্রমিকদের পরিবারকে কেউ দেখে না। কম বয়সী মেয়েরা যখন কোম্পানিতে চাকরি খুঁজতে যায়, তখন তাদের বলা হয় যে তোমাদের কাজের বয়স হয়নি, কিন্তু তোমাদের অন্যভাবে সুযোগ দেওয়া হবে। তারপর তাদের এমনকি ধর্ষণও করা হয়। এগুলো আমি আগে জানতাম না। যখন আমরা ইউনিয়নের তরফ থেকে শ্রমিকদের বলেছিলাম যে যদি ঠিকাদার টাকা না দেয়, তাহলে আমাদের কাছে অভিযোগ করুন, তখন এরকম বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলার, তাদের বাড়িতে যাওয়ার, তাদের কলোনীতে যাওয়ার, প্রতি রবিবার মিটিং করার সুযোগ হয়েছিল। তখন বহু মেয়ে, মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে অনেক মেয়ের সঙ্গেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ও তাদের বাইরেও আসতে দেওয়া হয় না। আর এখন তো আইনও এমন করা হচ্ছে – ৪৪টা আইনকে ৪টে কোডে নিয়ে আসছে – যে আপনি ইউনিয়নও করতে পারবেন না। আপনি ‘বন্ডেড লেবার’ও হয়ে যেতে পারেন। কোম্পানি মালিক আপনার সঙ্গে যাই করুক না কেন, আপনি কোত্থাও যেতে পারবেন না। যা ইচ্ছে করতে পারে কোম্পানি, আপনাকে হয়তো চুক্তিতে রেখেছে, যখন ইচ্ছে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারে। নতুন নতুন মেশিন এসে যাওয়ায় ক্রমশই শ্রমিকের সংখ্যা কমছে, শ্রমিকেরা তাহলে কোথায় যাবেন? শুধুই পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধি হচ্ছে। তারা নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু যারা উৎপাদন করছে, তাদের শুধুই যন্ত্রের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা যে মানুষ, তাদের যে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন তা এরা বোঝার চেষ্টাও করে না। যখনই শ্রমিকরা নিজেদের অধিকারের জন্য কোনও আন্দোলন করেন, তখনই তা অত্যন্ত খারাপভাবে দমন করা হয়। তৃণমূল স্তরে এরকম আরও অসংখ্য সমস্যা-অসুবিধা রয়েছে, যা আমিও এখনও সবটা বুঝে উঠতে পারিনি।
প্র: যে দাবিগুলি নিয়ে আপনাদের সংগঠন আন্দোলন চালাচ্ছিল সংক্ষেপে একটু বলুন।
উঃ কৃষি বিল রদ করা নিয়ে কৃষকদের যে আন্দোলন, তার সমর্থনে আমরা তো ছিলামই। ১২ তারিখ আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচী দেখাচ্ছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, নতুন লেবার কোড রদ করে পুরনো লেবার কোড-ই চালু রাখতে হবে। নতুন লেবার কোডে যেমন বলা হচ্ছে আমরা ইউনিয়ন করতে পারব না, কাজের সময় ৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করে দেওয়া হবে। আমাদের দাবি ছিল যে শ্রমিকেরা লকডাউনে কাজ করেছেন, তাদের বেতন দিতে হবে, কারণ তারা দিন-রাত কাজ করেছেন, ওভারটাইম করে রাতেও কাজ করেছেন। ন্যূনতম বেতন এখনও হরিয়ানাতে চালু হয়নি। সেখানে ৯৫০০ হল ন্যূনতম বেতন, কিন্তু দেওয়া হয় ৫০০০-৭০০০ টাকা, সেক্ষেত্রে পুরো টাকা দিতে হবে। যার যেরকম কাজ সেই অনুযায়ী বেতন হতে হবে, একেক জনের ১০-২০ বছর হয়ে গেলেও বেতন বাড়ছে না। দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের বেতনও আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়। অথচ একজন অদক্ষ থেক দক্ষ হয়ে উঠলেও, তাকে দিয়ে অনেক বেশি কাজ করালেও, তার বেতন বাড়ে না। ১৫ মিনিট দেরি হলে অর্দ্ধেক বেতন কেটে নেয়, একদিন ছুটি করলেও তাই, তিন-চারদিন ছুটি করলে তো মাইনেই দেবে না বা কাজ থেকে বের করে দেবে। এগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্যই আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলন চলছিল, আজও আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। আমি জামিনে স্রেফ জেলের বাইরে এসেছি। কিন্তু এখনও সেই সব শ্রমিকদের একটা লম্বা তালিকা পড়েই রয়েছে, যাদের বেতন এখনও বাকি, এখনও ন্যূনতম বেতন চালু হয়নি, অথচ নতুন লেবার কোড লাগু হতে চলেছে। এগুলোই ছিল আমাদের দাবি।
প্র: ১২ তারিখের ঘটনা নিয়ে এখনও চাপান-উতোর চলছে। পুলিশ এখনও নিজেদের পিঠ বাঁচাতে চাইছে। আপনি যদি বলেন, সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল।
উঃ আমরা নিয়মিত প্রতিবাদ-আন্দোলনে যেতাম। আর নিয়মিত আমাদের উপরে গুন্ডা, পুলিশের আক্রমণও হত। একবার এমনকি গুন্ডারা আমাদের উপর গুলি চালিয়ে আমাদের মারারও চেষ্টা করে। তখন বাধ্য হয়েই সেল্ফ ডিফেন্সে আমরাও তাদের মেরে সরাতে বাধ্য হই।
প্র: পুলিশের তরফ থেকে এমন দু’টো ভিডিও দেখানো হচ্ছে, যেখানে একজন মহিলাকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে যে তিনি আপনি, যিনি সেদিন পুলিশকে মারার জন্য অন্যদের উসকোচ্ছেন।
উঃ না, কখনওই এরকম হয়নি। আমি কখনওই পুলিশের গায়ে হাতও তুলিনি আর পুলিশের নাম নিয়ে তাদের মারার জন্য বাকিদের উশকাইওনি। একটা ভিডিও পুলিশ ছড়াচ্ছে যেখানে দেখা যাচ্ছে আমি বলছি, “তখনও মেরে তাড়িয়েছিলাম, এবারও মেরে তাড়াবো।” আমরা এর আগে কুইক রেসপন্স টিমের গুন্ডাদের মেরেছিলাম, যারা গুলি চালিয়েছিল। পুলিশ কোনও তদন্ত করেনি। তারা এসে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু। যদি আমি বা আমরা আগেই পুলিশকে মেরে থাকতাম, তাহলে তারা আগে কেন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি আমাদের বিরুদ্ধে? আমরা যারা শ্রমিক-মজদুর, আমাদের কি এত ক্ষমতা আছে যে আমরা থানায় গিয়ে পুলিশকে মারতে পারি? যদি আমাদের পুলিশকে মারতেই হতো, তাহলে আমরা কোম্পানির চৌহদ্দির বাইরে যেতাম না। আমরা নিজেদের বেতন চাইবার জন্য সেখানে গেছিলাম। নিজেদের ন্যায্য বেতন চাওয়া কি কোনও জোর-জবরদস্তি? গুন্ডামি? অথচ যে গুন্ডা আমাদের উপর গুলি চালিয়েছিল, আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর নেই। আমরা যখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছি তখন তা হামলা হয়ে গেল!
১২ তারিখ আমরা কোম্পানির সামনে যাই। আধ ঘন্টা অপেক্ষা করি। ঘোষনা করতে থাকি যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যেন বাইরে আসেন, যেসব শ্রমিক-মজুরের বেতন বাকি আছে, তা যেন মিটিয়ে দেওয়া হয়। না হলে আমরা কোম্পানির বাইরেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করব আর কোম্পানির গেটে তালা লাগিয়ে দেব। কিন্তু আধ ঘন্টা কেটে গেলেও কেউ বাইরে আসেন না, কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুন্ডারা এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমি, আমরা তাদের বলি – তোমরা যা ইচ্ছে করে নাও আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব, যতক্ষণ না আমাদের বেতন পাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ চলে আসে আর কোনও কথা না বলে, কিচ্ছু না বলে, এসেই আমাদের বেমক্কা বেদম মারতে শুরু করে দেয়। টেনে টেনে আমাদের নিয়ে যেতে শুরু করে। আমি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করি। তাদের মনে আমার জন্য সম্মান আছে। তো তারা যখন দেখছেন মহিলা কনস্টেবল ছাড়াই গলা চেপে ধরে, চুল ধরে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা চুপ করে থাকেননি। নিজেদের আর আমাকে বাঁচানোর জন্যই তারা পাল্টা আক্রমণ করেন। পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল, শ্রমিকদের মারছিল, আমাকে প্রচন্ড মারতে মারতে আর বিশ্রীভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল – এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে শ্রমিকেরা আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। একেই পুলিশ বলছে হামলা।
প্র: আপনার সঙ্গে আর কতজন মহিলা ছিলেন? না কি একা আপনাকেই পুলিশ আটক করেছিল?
উঃ সেদিনের বিক্ষোভে অনেক মহিলাই ছিলেন, প্রায় ৪০-৫০ জন। কিন্তু একা আমাকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। যখন গুলি চালানো হয়, তখন সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যান, পালাতে থাকেন। আমি সবাইকে বলার চেষ্টা করছিলাম যে ভয় পাবেন না, হুড়োহুড়ি করবেন না, একসাথে থাকুন। সবাই একটু এগিয়ে গেছিলেন। আমি কিছুটা পেছনে থাকায় আমাকে ধরতে সুবিধা হয়েছিল। ধরে ফেলে বলতে থাকে, ‘এই নেতা, একে ধরতে পারলেই সবাইকে ধরা যাবে’, নোংরা নোংরা গালিগালাজ করতে থাকে। এখনও পর্যন্ত ৪০-৫০ জনের উপরে এফআইআর করা হয়ে গেছে, আর ১২ তারিখ মহিলা কনস্টেবল ছাড়াই আমাকে আটক করা হয়, খুবই ভয়ানকভাবে আমাকে মারা হয়, আমার উপর অত্যাচার করা হয়। কোনওরকম মেডিক্যাল পরীক্ষা না করেই জেলে বন্দী করা হয়, দেখানো হয় নর্ম্যাল মেডিক্যাল টেস্ট। আরেক সাথী শিব কুমারের উপর অকথ্য অত্যাচারের কথা তো এখন সকলেই জানেন। মানে, শ্রমিক-মজুরের উপর যেন সহজেই অত্যাচার করা যায়, তাদের কন্ঠস্বর কেউ হয়ে ওঠে না। এটা তো সত্যিই আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে যে এত মানুষ আমাদের হয়ে কথা বলেছেন। তা না হলে আমরা এখনও জেলেই থাকতাম। এখন যদিও পুরো মামলাটা সুপ্রীম কোর্টের অধীনে এসে গেছে, তারাই সবটা দেখবেন। কিন্তু ৪০-৫০ জনের নাম কুন্দলি পুলিশের তালিকায় আছে, তাদের বাড়িতে হঠাৎ হঠাৎ নোটিস যাচ্ছে। কুন্দলি পুলিশ সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশও মানছে না, এদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্র: শ্রমিক-মজুর আন্দোলনে থাকা, সিঙ্ঘু সীমান্তে যাওয়া এক রকম। কিন্তু সরাসরি পুলিশি নৃশংসতার শিকার হওয়া এক রকম। আপনাকে প্রচন্ড মারা হয়েছিল, আপনার উপর যৌন হেনস্থা হয়েছে, আপনি মরেও যেতে পারতেন। ঠিক সেই সময়ে কী চলছিল আপনার মাথার মধ্যে? কোনও রকম ভয় পেয়েছিলেন কি?
উঃ না, ভয় তো আমি পাইনি। যদি আমরা ইতিহাস পড়ি তাহলে দেখব সমস্ত বিপ্লবীদেরই জেলে যেতে হয়েছে। ভগৎ সিং-ও জেলে গেছেন। একজন সাথী বলেছিলেন যে বিপ্লবীদের আরেকটি বাড়ি হল জেল। আমরা যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি, জনতার কন্ঠস্বর হয়ে উঠছি, আমাদের টার্গেট করা হচ্ছে। রাষ্ট্র, সরকার আমাদের ভয় পাচ্ছে। যে আইনগুলো দিয়ে জনতাকে শোষন করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা জনগনকে সচেতন করছি, তাই জেলে তো যেতেই হবে। ভয় তো পাইনি, কিন্তু আমাকে কী কেস দেওয়া হবে না হবে কিছুই জানতাম না। সোনিপত পুলিশ কিছুদিন আগেই নাবালিকা একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা, তার দিদির উপর অত্যাচার করা, কীভাবে করেছে তা জানতাম। যৌন অত্যাচারের একটা আশঙ্কা ছিল। কারণ মহিলা হওয়াটাই যেন এদেশে একটা অপরাধ, সারাক্ষণ মনে করিয়ে দেওয়া যে ‘তুমি একজন মহিলা, তোমার অউকাত তোমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।’ এটা অবশ্যই ভাবছিলাম যে এমন কিছু যেন আমার সঙ্গে না হয়। আমার উপরেও অত্যাচার চালিয়েছে লক আপে। মেরেছে। আমার উপর উঠে বসে পুলিশ আমাকে দিয়ে সই করিয়েছে। আমি বাধ্য হয়েছি কাগজে সই করতে। কারণ সোনিপত পুলিশ তো ধর্ষণ করেও দিব্যি বাইরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই একটা বিষয়ে ভয় পেয়েছি। মহিলা হওয়ার জন্য এক্ষেত্রে আমাদের দ্বিগুন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
প্র: পরিবার নিয়ে আপনার কোনও চিন্তা ছিল?
উঃ পরিবার নিয়ে আমার কোনও চিন্তা ছিল না। আমার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, সবাই-ই আমার পরিবার। আমার পরিবার এক দিকে আমাকে পুরো সমর্থন করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য, আবার অন্য দিকে আমি যে ঠিকভাবে চাকরি করছি না, তা নিয়েও তারা বলতেন। কিন্তু আমি ১৫ দিন কাজ করছি, দু’মাস কাজ করছি, তারপর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি। পরিবারকে নিয়ে ভাবছি না। কারণ সব মানুষ নিজের লড়াই নিজেই লড়তে পারেন। তাই আমি যখন মানুষের হয়ে লড়ছি, তখন আমার পরিবার নিজেদের আত্মরক্ষার লড়াইটাও লড়ে নিতে পারবে। চিন্তা ছিল যে আমি বা অন্য সাথীরা গ্রেপ্তার হয়ে গেলে আমাদের সংগঠন যেন শেষ না হয়ে যায়, মজদুর সাথীরা যেন ভয় না পেয়ে যান। কিন্তু বুঝলাম দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়, একটা নেতৃত্বকে আটক করলে আপনা থেকেই আরেকটা নেতৃত্ব তৈরি হয়ে যায়। জেল নিয়েও আলাদা করে কোনও ভয় ছিল না, জেলই তো! কত লোকই তো জেল দেখেছেন, আমিও না হয় দেখলাম।
প্র: আপনার আর একটি বড় লড়াই হল জাতপাতের বিরুদ্ধে। তাও আবার এখন হরিয়ানার মতো রাজ্যে। এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের বলুন।
উঃ প্রথম কথা হল, মহিলাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করা হয়। যবে থেকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে এসেছে তবে থেকে মহিলাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, ঘরের সম্পত্তি বলে মনে করতে শুরু করে, যা ইচ্ছে করা যায় তাদের সাথে এটাই মনে করা হয়। তারপরে হল এই জাতপাতের ভিত্তিতে বৈষম্য করা, দলিত বলে কাওকে দেগে দেওয়া, কার কী জাত, কে কী কাজ করে তার ভিত্তিতেও বৈষম্য। একে তো তিনি মজদুর, অসম্ভব পরিশ্রম করছেন, তার শ্রমের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না, তার উপরে রয়েছে এই জাতপাতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বৈষম্য ও অত্যাচার, অস্পৃশ্যতার ভিত্তিতে বৈষম্য। কোনওভাবেই আমাদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। না হলে এই যে এখন কৃষকদের আন্দোলন চলছে, সেখানে শ্রমিকরা কেন যোগ দিচ্ছেন না? তার কারণ হল তাদের সব সময়েই বলা হচ্ছে যে তোমরা শ্রমিক, তোমরা আলাদা, তারা হয়তো মনে করছে যে এটি কোনওভাবে ধনীদের আন্দোলন। এরচেয়েও সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, পীড়িত সম্প্রদায় হচ্ছে মহিলারা। একে তারা মজদুর, তায় রয়েছে জাতপাতের ভিত্তিতে বৈষম্য এবং সবচেয়ে বড় কথা তারা মহিলা। জনসংখ্যার অর্ধেক হল নারী, অথচ সেই নারীর ১০%-ও সামনে নেই। আমাদের লক্ষ্য হল সেই অর্ধেক জনসংখ্যাকে আগে সামনে বের করে আনা, তাহলেই আমরা নিজেদের লড়াই লড়তে পারব। শ্রমিক আর কৃষক একজোট না হলে এই লড়াই জিতব না।
প্র: শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও আমরা দেখে থাকি যে সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের লড়াইতে কোথায় যেন একটা দূরত্ব থেকে যায়, তারা যেন ঠিক মিলতে পারে না। এর বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
উঃ শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে আমরা দেখে থাকি কারা তাদের সমস্যাগুলিকে তুলে ধরেন? যখনই শ্রমিকদের ইস্যু তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, তখনই খুব সহজে তাদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, তাদের পিষে দেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদ সবার আগে মজদুরদের দাবিয়ে দেয়, কারণ তারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আপনি যদি উৎপাদনের দিকে দেখেন, যা কিছু উৎপাদন হচ্ছে, সারা দেশ যে চলছে, তা শ্রমিকদের জন্যই চলছে। খুব জেনেবুঝেই লড়াইগুলোকে আলাদা করে দেওয়া হয় – কৃষকদের, শ্রমিকদের, মুসলমানদের, শিখদের – আলাদা আলাদা লড়াই। কিন্তু আসলে তো সবার লড়াই-ই এক, সবারই তো খিদে পায়, সবাইকেই রুটি খেতে হয়, আসলে সবাই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। কারণ সবাই যদি একজোট হয়ে যায় তাহলে এই ফ্যাসিবাদী শক্তি ভেঙে পড়তে পারে। দু’টো আলাদা শ্রেণী রয়েছে। শোষক আর শোষিত। শোষকেরা সর্বদাই ভয় পায় যে শোষিতরা যদি তাদের দমিয়ে দেয়! সেইজন্যই ইচ্ছে করে জাতের নামে, ধর্মের নামে লড়াইগুলোকে আলাদা করে দেয়, এভাবেই প্রচার করে ‘হিন্দু খতরেঁ মে হ্যায়’। চলে আসে ‘ভারত মাতা কি জয়’ শ্লোগান – মুসলমানরা যা না বললে তারা দেশদ্রোহী হয়ে যাবে। তাদের জয় হিন্দ বলে, দেশের তেরঙ্গাকে প্রণাম করে প্রমাণ করতে হবে যে তারা দেশকে ভালবাসেন। অথচ এর মধ্যেই এনআরসি এসে যাবে, লকডাউনে শ্রমিকরা মরে যাবেন। আসলে রাষ্ট্র সর্বত্র একটা বিভেদ তৈরি করে রেখেছে, যাতে কিছুতেই শ্রমিক, মজুর, দেশের শোষিত মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করতে না পারেন।
প্র: এই মুহূর্তে হরিয়ানাতে বিজেপির সরকার। একজন মহিলা, একজন দলিত, একজন শ্রমিক যিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত – কতটা কঠিন বিজেপি শাষিত রাজ্যে এই লড়াইটা চালিয়ে যাওয়া?
উঃ যেটা আগেই বলেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি একজন মহিলা হওয়ার কারণে বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে শোনা হয় না। নিজেদের কথা শোনানোর জন্যই অনেকটা লড়াই করতে হয়। কোনক্রনে যদি সে এরপর নেতৃত্বে চলে আসে, তাহলে তার পোষাক কেমন হবে, সে কীভাবে কথা বলবে, এই সব পুরুষেরা ঠিক করে দেয়। যদি তাকে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-ও করে দেওয়া হয়, তবুও সে কি করবে না করবে সব সিদ্ধান্ত পুরুষেরাই নেয় – সে কখন বেরোবে, কখন বেরোবে না – সব কিছু। সবচেয়ে বড় কথা হল এই যে এত বড় গলায় বলা হয় মেয়েরা সব করতে পারে, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে – যা পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, আমি আজ রাত ১২টার সময়ে বেরোলে, আমি বাঁচব? আমি যেই হই না কেন, যে কাজই করি না কেন, যেহেতু আমি একজন মহিলা, সমাজ ঠিক করে দিচ্ছে আমি বাইরে ঘুরব কি ঘুরব না, আমি কি করব বা করব না। মহিলাদের জন্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া আছে যে পরিবারে, সমাজে সর্বত্র তাদের এটাই বলা হয় যে ‘তোমরা মহিলা, তোমরা কিছুই করতে পারো না আর যদি কিছু করতে চাও তাহলে তোমাদের ‘অউকাত’ বুঝিয়ে দেব। আর যদি একজন শ্রমিক মহিলা অধিকারের জন্য দাঁড়ান, তাহলে তো তাকে খুব সহজেই দাবিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই মহিলাদের মধ্যে, শ্রমিকদের মধ্যে এই ভাবনা তৈরি হয়ে যায় যে আমরা কিছুই করতে পারব না। অন্যদিকে জাত নিয়েও তাদের এমন গালি দেওয়া হয় যে – একে তো তুমি দলিত, তায় মজদুর, চুপচাপ নিজের কাজটুকু করে যাও। যেমন পুলিশ আমাকে বলেছিল, কোম্পানির মালিকরা বলেছিল – তোমার কাজ হল নর্দমা পরিষ্কার করা, সেটাই করো, নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করো না। তাছাড়া যে অনেক বড় বড় মহিলা সংগঠন রয়েছে, যারা হয়তো অনেক কাজও করেন, সেখানেও নিজেদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। মহিলা আর পুরুষের বৈষম্য তো কোনও দিন ঘুচবে না। মহিলারা বাড়িতে কাজ করবেন, বাইরে কাজ করবেন, তারপর যখন অধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবেন, তখনও নিজেদের মতামতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করতেই হবে। একজন মহিলা হয়ে, একজন মজদুর মহিলা হয়ে কাজ করা খুব কঠিন। আমার এখনও বিয়ে হয়নি। আমি এখন বিয়ে করতে রাজি না। গ্রামে সব সময় শুনতে হয় – ও ছেলেদের সঙ্গে কাজ করে, ৫০/১০০ জন লোকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলে! এই সবকিছু অগ্রাহ্য করে আমাদের কাজ করে যেতেই হবে, দিন বদলের চেষ্টা করতেই হবে।
প্র: বিজেপি শাষিত রাজ্যগুলিতে মেয়েদের অবস্থার কথা উঠলে সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশের কথাই সামনে আসে। হরিয়ানাতে আপনার অভিজ্ঞতার কথা একটু বলুন।
উঃ আমি যখন হরিয়ানাতে যাই, তখন গ্রামে গিয়ে দেখেছি সেখানে বিরাট বিরাট ঘোমটায় মুখ ঢাকা মহিলারা। তাদের নিজেদের মুখ কাওকে দেখানোরও অনুমতি নেই। যখন বাড়িতে কেউ আসেন, মহিলারা ঘরে লুকিয়ে পড়েন। তারা পরিবারে কোনও কথা বলতে পারেন না। বিজেপির যে চিন্তাধারা তা মনুবাদী, পিতৃতান্ত্রিক। তারা মনে করে মহিলাদের কথা বলার কোনও অধিকার নেই, তারা শুধুমাত্র ঘরেই থাকবে। তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে বাচ্চা প্রতিপালন করার, তারা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিন, সেই কাজটাই শুধু করবে, আগে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
আমাদের নতুন শিক্ষানীতিতেও দেখতে পাচ্ছি যে, পুরনো দিনের ধ্যানধারণাকে ফিরিয়ে আনারই চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের একটা চেষ্টাই হচ্ছে পুরনো সময়কে ফিরিয়ে আনতে চাওয়া, পিছিয়ে দিতে চাওয়া, প্রাচীণ সময়ে নিয়ে যাওয়া। যেমন মহিলারা হল ব্যক্তিগত সম্পত্তি, তাদের ধর্ষণ করো আর যাই করো, কেউ কিছু বলবে না। যোগী, শাহ্-এর মতো মনুবাদী, পিতৃতান্ত্রিক মানুষেরা মহিলাদের সম্পর্কে এটা বলার চেষ্টা করে যে, তারা সীতার মতো বাড়িতে থাকুক, সব সহ্য করুক, কিন্তু কিচ্ছু যেন না বলে। আমরা এর সবরকম ভাবে বিরোধিতা করি। আমরা বলি যে আমরাই হলাম অর্ধেক জনসংখ্যা, আমরাও মানুষ, আমাদের নিজস্ব পরিচিতি আছে, নিজেদের চিন্তাভাবনা আছে। আমরা বিজেপিকে খারিজ করছি, সম্পূর্ণভাবে সর্বস্তরে বিজেপি-র বিরোধিতা করছি, তার জন্য যতদূর যেতে হয় যাব। কারণ বিজেপি মহিলা-বিরোধী, তারা ভারত মাতা কি জয় বলে আর মহিলাদের ধর্ষণ করে – এর থেকে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? বিজেপি মহিলা বিরোধী, জন বিরোধী, শ্রমিক বিরোধী।
প্র: ফ্যাসিবাদকে রুখতে শ্রমিক-কৃষকের যে জোটবদ্ধ আন্দোলনের কথা আপনি বলছিলেন, আপনার ভাবনায় তার রূপরেখাটা ঠিক কেমন?
উঃ আমি যদি আমার সংগঠনের তরফ থেকে বলি, তাহলে আমরা মনে করি খুব বেশি রকম পিছিয়ে পড়া যে শ্রেণী রয়েছে, তাদের এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কারণ তাদের হারানোর কিছু নেই। রয়েছে শুধু এই শরীরটা। যা দিয়ে অসম্ভব পরিশ্রম করে তারা নিজের ও পরিবারের পেট ভরেন। যদি শ্রমিক-কৃষক এক হয়ে যায়, শোষিত শ্রেণী এক হয়ে যায়, মহিলাদেরও অংশগ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা, রেলওয়ে কর্মীরা, বেকাররা – আলাদা প্রতিবাদ কেন করছেন? তারা একটা যৌথ মঞ্চ তৈরি করতে পারেন, যেখানে সবার দাবি-দাওয়া নিয়ে একটা মিলিত দাবিপত্র তৈরি হবে। যেখানে থাকবে – বেকার তরুণদের কাজ দিতে হবে, শ্রমিক মহিলাদের তাদের অধিকার দিতে হবে, জাতের নামে যে শোষন হচ্ছে তা বন্ধ করার দাবি তুলতে হবে, শ্রমিক-কৃষক সবার দাবি থাকতে হবে, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক যারা আলাদাভাবে প্রতিবাদ করছে, তারা সবাই এক জায়গায় হয়ে প্রতিবাদ করুক, তাহলেই আমরা মুক্তির পথে যেতে পারব। নাহলে তো আমরা আলাদা আলাদা দাবি নিয়ে লড়ে চলেছি। আমি চাই একটা বৃহত্তর জন আন্দোলন গড়ে উঠুক, যেখানে সমস্ত শোষিত-পীড়িত শ্রেণী একজোট হবেন।
প্র: একটু নিজের কথা বলুন। শারীরিকভাবে কেমন আছেন? কী চিকিৎসা চলছে?
উঃ চিকিৎসা তো তেমন কিছু করাতে পারছি না। জেল থেকে বেরোনোর পর থেকে শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছি। জেলের খাবার খেয়ে এখন বাইরের খাবার আর খেতে পারছি না, খেলেই বমি হচ্ছে। বাইরে বেরোলে শারীরিকভাবে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আমার উপরে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তার জন্য আমি কখনওই বিশ্রাম নিতে পারব না। আপাতত দু’তিন মাস টানা কাজ করব। তার মধ্যেই জানি একটু বিশ্রামও নিতে হবে। যারা এত সমর্থন করেছেন, আমার হয়ে প্রতিবাদ করেছেন, ট্যুইটারে ঝড় তুলেছেন, সেই মানুষগুলো আমাকে ডাকছেন, আমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইছেন – আমাকে তো যেতেই হবে, কারণ তাদের জন্যই আজ আমি জেলের বাইরে আসতে পেরেছি। আর জানেন তো কবি পাশ একটা কথা বলেছিলেন – বিপ্লবীরা কখনও জ্বর হয়ে মারা যান না। ভেতরে মনোবল দৃঢ় থাকলে শরীরে ঠিক যুঝে যেতে পারব। ভেতর থেকে মনে হচ্ছে আমাদের এখন লম্বা লড়াই লড়তে হবে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে, শরীরও অভ্যস্ত হয়ে যাবে, শারীরিক ক্ষমতা আরেকটু বাড়াতে হবে।
প্র: আপনার সংগঠন কীভাবে আপনার পাশে আছে?
উঃ সংগঠন তো প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ২৬ তারিখ ভারত বনধ আছে। ইউনিয়ন চেষ্টা করছে সব শ্রমিক-কর্মীদের বোঝাতে যে তারা যাতে হরতাল পালন করেন, কোম্পানিতে কাজে না যান, নিজেদের দাবি সামনে রাখব। কিন্তু শ্রমিকদের উঠে দাঁড়ানো খুব কঠিন। হয়তো কোথাও দেড় লাখ শ্রমিক আছে, মাত্র ৫০০-৬০০ জন সচেতন, হরতালে হয়তো প্রচার করে ২০০০ জনকে শামিল করানো যাবে। আমি নিজে তৃণমূল স্তরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, কোম্পানি শ্রমিক বা পরিযায়ী শ্রমিকদের চোখে-মুখে একটা অদ্ভূত ভয় থাকে, তারা বলতে পারেন না। তারা প্রচন্ড কষ্ট ও সমস্যার মধ্যে থাকলেও আপনি যখন জিজ্ঞেস করবেন তখন তারা হেসে দেবেন, বলবেন ‘সব ঠিক আছে’। অত্যন্ত বেশি রকম যন্ত্রণার মধ্যে তারা থাকেন, অথচ ব্যক্ত করতে পারেন না। তাদের চেহারা-চোখ-মুখ থেকে আপনাকে বুঝতে হবে। এই যে তারা উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন না, এরজন্য অনেক দিন ধরে দীর্ঘ লড়াই লড়তে হবে। আমাদের অলিগলি, মজদুর কলোনির প্রতিটি ঘরে গিয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলেই শ্রমিকদের জোটবদ্ধ আন্দোলন তৈরি হবে।
প্র: আপনি কৃষক আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। সিঙ্ঘু সীমান্তে গিয়ে থাকছেন। আগামী দিনে এই আন্দোলন সম্পর্কে আপনার কী ভাবনা?
উঃ এই কৃষক আন্দোলন রাষ্ট্র আর সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকারের লড়াইতে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। এতদিন পর্যন্ত এটা শুধু কৃষক আন্দোলন ছিল। এখন এতে ট্রেড ইউনিয়নগুলিও যোগ দিয়েছে। তারা বলছে – আপনারা যাই করুন না কেন, যে পদক্ষেপই নিন না কেন আমরা আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, আমাদের সব মজদুর সাথী আপনাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মজদুররা সেখানে একত্রিত হচ্ছেন। এটা আগে ছিল না। আগে কিছু মজদুর সংগঠন প্রতিবাদে যোগ দিচ্ছিল। কিন্তু যখন এই বিষয়টি অনেক বড় হয়ে গেল, যখন আর্ন্তজাতিক স্তরে চলে গেল, তখন একটা বড় বদল এল যে সংগঠিতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন এতে শামিল হতে শুরু করল। সময় লাগলেও কোথাও সরকারের উপর চাপ তৈরি হচ্ছে, তারা ঠিকভাবে আলোচনার কথাও ভাবতে বাধ্য হবেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গে কৃষক নেতারা এসে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বলছেন – বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না। আশা তৈরি হচ্ছে যে জনগনের জয় হবে আর যদি এই আন্দোলনে জয় আসে তাহলে কোথাও গিয়ে আরও অনেক শোষিত-নিপীড়িত মানুষদের মধ্যে জোশ তৈরি হবে, তারাও প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন, নিজেদের দাবি নিয়ে উঠে দাঁড়াবেন। জনতা মুক্তির পথে পা বাড়াবেন।
প্র: অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেকটা ভরে উঠলেও, বয়সে আপনি তরুণ। নিজের আগামী দিনগুলো কেমন দেখতে পান?
ঊঃ আমি জানি যে কোনও দিন আবার গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারি, কারণ এখন যারাই শোষিত-নিপীড়িতের কন্ঠস্বর হয়ে উঠতে চাইছেন তাদেরই কারাবন্দী করা হচ্ছে। মেরে ফেলতে পারে। কোম্পানি মালিক, পুলিশ-প্রশাসন, বিজেপি-আরএসএসএস ভক্তরা, এবিভিপি-র সমর্থকরা। সামনের দিনের লড়াই অনেক বেশি কঠিন। ভালবাসর মানুষ যত বাড়ে, শত্রুও তত বাড়তে থাকে। আমার কেমন যেন মনে হয়, আমার জীবন খুব দীর্ঘ নয়। বিপ্লবীদের জীবন তো খুব বড় হয় না। আমি জানি না, আমি কবে মরে যাব, শুধু এটুকু জানি আমি বৃদ্ধ হয়ে মরব না। আমাকে হয়তো খুব সহজেই মেরে ফেলবে। তাই খুব দ্রুত লড়তে হবে। যতদিন আছি অধিকারের জন্য লড়াই লড়ে যাব।
Unique history of labour movement.