ব্রিটিশ যুগ থেকেই বাংলার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, লেখক-শিল্পী, মেধাজীবীদের উপস্থিতিতে ধন্য ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কফিহাউসে হামলা বাগগা ও ‘টিম মোদী’-র ‘অনন্য’ কুখ্যাত কীর্তির সঙ্গে যুক্ত হল।
গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন।
এল বসল গুন্ডামি করল — ঘটল দিল্লির বিজেপি নেতা তজিন্দর পাল সিং বাগগার উপস্থিতিতেই। সাক্ষী থাকল কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস। এর আগেও অবশ্য বাগগা এবং তার যুবদলের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সুপ্রিম কোর্টে ঢুকে আইনজীবীদের মারধর ও হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, দলবল নিয়ে যত এমন কাণ্ড এই যুবনেতা ঘটিয়েছেন, ততই তিনি দিল্লি বিজেপি নেতৃত্ব এমনকি ‘টিম মোদী’র প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন।
কফিহাউসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধেবেলা এক এক করে তজিন্দর এবং গেরুয়া গেঞ্জি পরা ‘টিম মোদী পারা’-র প্রায় ৩০-৪০ জন কফিহাউসে দোতলার হলে প্রবেশ করে। স্বয়ং তজিন্দরের পোস্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, হলের ডানদিকে বিভিন্ন টেবিলে শুধুই গেরুয়া গেঞ্জির উপস্থিতি। আধঘণ্টার মতো কফিহাউসে থাকার পর এক একজন করে বেরিয়ে যেতে থাকে। এই সময় উপস্থিত ছাত্রী ও আইসার কর্মী মধুরিমা বক্সি জানান, “নামতে নামতে ওরা কালো মার্কার দিয়ে ‘নো ভোট টু বিজেপি’-র ‘নো’ শব্দটি মুছে দিচ্ছিল। আমি বলি কেন মুছছেন? ওরা বলে, মুছব। বেশ করব। এর পর আরও লোক বেরিয়ে আসতে থাকে। ভয়ঙ্কর শ্লোগান দিতে থাকে। তখন আমরা মাত্র দু’তিনজন ছিলাম।”
প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী সীতাংশুশেখর আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, “কেন পোস্টার মুছছেন জিজ্ঞেস করলে ওরা হুমকি দেয়। বলে, নেমে আয়। সিঁড়ি জুড়ে তখন ওরাই। কফিহাউসের কর্মীরা শ্লোগান, চিৎকার করতে বারণ করলে তাঁদের ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি করে। ওদের সঙ্গে ছিল তেজিন্দর সিং বাগগা। ওর বিরুদ্ধে দিল্লি দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।”
এই দুই প্রতক্ষ্যদর্শীর মতেই তজিন্দরের নেতৃত্বে ‘টিম মোদী’ পরিকল্পনা মাফিকই এসেছিল। ওরা রং-তুলি, মার্কার সব নিয়েই এসেছিল। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় পোস্টারে কালি দাগাচ্ছে কিছু যুবক। ছেঁড়া পোস্টারও পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। তজিন্দর এক ট্যুইটে এই ঘটনার উল্লেখও পাওয়া গিয়েছে। তজিন্দরের ট্যুইটে লেখা হয়েছে:
“ইন্ডিয়ান কফিহাউস যাকে কমিউনিস্টদের ঘাঁটি বলা হয়ে থাকে সেখানে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ পোস্টার লাগানো হয়েছিল। টিম মোদী পারার কর্মীরা ওখানে নিজেদের পোস্টার মারতে যায় তখন বামপন্থীরা হাল্লা শুরু করে দেয়।”
इंडियन काफी हाउस कोलकाता जिसे कम्युनिस्ट हब कहा जाता है में "नो वोट 2 बीजेपी" के पोस्टर लगे थे, जब टीम मोदी पारा के कार्यकर्ता अपने पोस्टर लगाने लगे तो वामपंथियो ने हल्ला शुरू कर दिया । उसके बाद क्या हुआ आपके सामने है@narendramodi @JPNadda @AmitShah @blsanthosh @KailashOnline pic.twitter.com/AdjPrWyPMb
— Tajinder Pal Singh Bagga (@TajinderBagga) March 15, 2021
বিভিন্ন ভিডিও পোস্টে যে ছবি উঠে এসেছে সেখানে কোথাও অবশ্য টিম মোদীর সদস্যদের হাতে কোনও পোস্টার বা পোস্টার লাগানোর চেষ্টার কোনও ছবি দেখা যায়নি। দলটি প্রায় নেমে যাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের সিঁড়ির উপর থেকে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাজমাধ্যমে কুৎসিত পোস্ট, সাংবাদিক, সমাজকর্মী কিংবা বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ হলেই ট্যুইট করে চরম হুমকি দেওয়া থেকেই তেজিন্দরের উত্থান। হিন্দুত্ববাদী যুবকদের মধ্যে এভাবেই তার তুমুল জনপ্রিয়তা গড়ে ওঠে। অবশেষে ‘টিম মোদী’ ট্যুইটার গোষ্ঠীর প্রধান হয়ে ওঠেন এই যুবক। এমনকি স্বয়ং মোদীর ‘কাছের’ হয়ে ওঠেন। ‘মোদী পারা’ এমনই প্রচারের লক্ষ্যে তৈরি একটি ফেসবুক পেজ। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টে ঢুকে তৎকালীন আপ নেতা বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রশান্তভূষণকে মারধর করেন তিনি। লেখক অরুন্ধতী রায়ের বই ‘ব্রোকেন রিপাবলিক’ প্রকাশের অনুষ্ঠান এবং দিল্লির সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এ সৈয়দ আলি শাহ ইরানির অনুষ্ঠান বানচাল করার জন্য তজিন্দরের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ যুগ থেকেই বাংলার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, লেখক-শিল্পী, মেধাজীবীদের উপস্থিতিতে ধন্য ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কফিহাউসে হামলা বাগগা ও ‘টিম মোদী’-র ‘অনন্য’ কুখ্যাত কীর্তির সঙ্গে যুক্ত হল। ২০১৭ সালে দিল্লি বিজেপির অন্যতন মুখপাত্র নির্বাচিত হন। ২০২০-র দিল্লি নির্বাচনে তার ‘জনপ্রিয়তা’-র জন্য বা নিন্দুকের ভাষায় দুর্মুখের জন্য হরিনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবং আপ প্রার্থী রাজকুমার ধীলনের কাছে হেরে যান।
এই হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ দুপুর দুটোয় কফিহাউসের সামনে প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে বিভিন্ন গণসংগঠন।
এর তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে। ওদের যেভাবেই হোক দেশ থেকে তাড়াতে হবে।