তু জিন্দা হ্যায় তো…


  • February 12, 2021
  • (0 Comments)
  • 1192 Views

গত ৬ ফেব্রুয়ারি আসাম ও ভুটান সীমান্তে সঙ্কোশ নদীর ধারে কুলকলি ফরেস্ট ভিলেজ – সঙ্কোশ চা বাগান থেকে শুরু হয়েছে শ্রমজীবী অধিকার অভিযান। ডুয়ার্স-তরাই-পাহাড়ের চা-সিঙ্কোনা বাগান, বনবস্তি তথা গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা-অস্তিত্ব-অধিকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শ্রমকোড, কৃষি ও বন আইন সহ নানা হামলার বিরুদ্ধে আয়োজিত এই প্রচার অভিযানের প্রথম পর্ব অর্থাৎ ডুয়ার্সের পর্ব শেষের মুখে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বাগ্রাকোট চা বাগানে এই পর্ব শেষ হবে।

 

 

গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন

 

আমরা যেভাবে ভাবি, ভেবে ভেবে তত্ত্ব সাজাই দেশটা সেরকম নয়। এই যে ছেলেমেয়ে দুটি দার্জিলিং পাহাড়ের, গান গাইছে আর খুঁচিয়ে বিদ্ধ করছে বিবেক — আজ আটদিন ভুটান-আসাম সীমান্ত থেকে ডুয়ার্স জুড়ে চা-বাগান, বনবস্তি, বহু জনপদ পেরিয়ে চলেছে। এর পর তরাই, অতঃপর পাহাড়।

 

শ্রমজীবী অধিকার অভিযানে এমন তরুণদেরই সংখ্যাধিক্য। চা-বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী চিনছে বনবাসী শ্রমজীবীদের, বনবাসী নেতৃত্ব বুঝে নিচ্ছেন চা-বাগিচার কথা। নদীপারের চরের মানুষদের সঙ্গে জমির অধিকারের প্রশ্নে সারা উত্তরবঙ্গের জল-জমি-জঙ্গল-নদীচর-পাহাড় যে একসূত্রে গাঁথা আর সেই অধিকারহীনতা যে তাঁদের এনআরসির প্রশ্নে গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সে কথা  মতুয়াপাড়া ছেড়ে আদৌ কি আলোচিত হয়? অন্তত দেড় ডজন প্রতিবাদী বুকলেটে তার তেমন কোনও লিখিত ছাপ্পা পড়েনি।

 

এই যোগসূত্র আবিষ্কার করছে শ্রমজীবী অধিকার অভিযান — এ এক বড় পাওনা। অনেকটাই এমনই বলছিলেন চা-বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী শমীক, বনাধিকার কর্মী লালসিং-রা। অশেষ কষ্ট, দীর্ঘ যাত্রাপথে ডাল-ভাত জোটাতে হিমসিম, শীত রাতে কোনওরকমে, কখনও স্রেফ মেঝেয় পেতে দেওয়া প্লাস্টিক শিট, কতিপয় কম্বল আর স্লিপিং ব্যাগ সম্বল করা অরুণ-বরুণ-কিরণমালারা একটিও প্রশ্ন না তুলে এক থেকে দুই, দুই থেকে চার হয়েই চলেছেন। বনাধিকার আন্দোলনের কর্মী লালসিং বলছেন, মানুষের সাড়া পাচ্ছি। এ সাড়াকে ধরে রাখা বড় কথা হবে।

 

আমরা যেভাবে ভাবি, তত্ত্ব সাজাই মহানগরে। শ্লোগান সাজাই। বর্শামুখ সাজাই। প্রকৃত প্রস্তাবে তা অমন সাদামাটা নয়। ধর্ম, ধর্মীয় আস্ফালন এখনও রুটি-রুজি-শ্রম-শ্রমজীবীর অধিকার ও দাবির গলা টিপে ধরতে পারেনি। ন্যূনতম প্রশ্ন তোলার অধিকার, সেই অধিকার ভাবনার বীজ মুঠো ভরে ছড়িয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্স-তরাই-পাহাড়ে। এই ঘাম, এই ধুলোমাখা ক্লেদাক্ত শরীর, এই তারুণ্য বার বার এভাবেই আমাদের তত্ত্বভরা ডালিকে প্রশ্নের মুখে হাজির করবে —

তু জিন্দা হ্যায় তো…?

 

আবারও ঝুঁটি নাড়িয়ে বলবে —

যদি বেঁচে থাকো, তবে
জীবনের উপর বিশ্বাস রাখো।

 

সেই কবে, আমাদের প্রাচীন কবি চণ্ডীদাস বলেছিলেন,

সবার উপর মানুষ সত্য।
তাহার উপরে নাই।।

 

Share this
Leave a Comment