গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন।
২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে ‘কৃষক গণতন্ত্র প্যারেড’
এক নয়, দুই নয় স্রেফ দিল্লিতেই পাঁচটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে শুরু হবে কৃষক জনতন্ত্র প্যারেড। রাজধানী দিল্লিতে ট্র্যাক্টর প্যারেড শুরু হবে সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর, ভাসা ও চিল্লা সীমান্ত থেকে। এ ছাড়াও, একই অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে আরও চারটি প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা নেতৃত্ব। এই স্থানগুলি হলো, হরিয়ানা-রাজস্থান সীমান্তে শাহজাহানপুর, মানেসর, সুনেরা ও পলওয়াল। দিল্লি নিকটবর্তী নিজ নিজ অঞ্চলে হবে এই প্যারেড, যা দিল্লিতে প্রবেশ করবে না। ১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতের রাজধানীতে সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রথম ট্র্যাক্টর-সহ প্যারেড হয়েছিল। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৃষাণ মোর্চার নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, এবার দিল্লিতে কৃষক প্যারেডের মধ্য দিয়ে ‘পাবলিক তার রিপাবলিককে ক্লেম করবে।”
১ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের সংসদ অভিযান
মোর্চার বিশিষ্ট নেতা দর্শন সিং জানিয়ে দেন, কৃষক আন্দোলন এখানেই শেষ হচ্ছে না। যে লক্ষাধিক কৃষক ও ট্র্যাক্টর আসছে, তারা সকলে প্যারেডে অংশ নিতে না পারলেও, কেউ ফিরে যাবেন না। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে মোর্চার নেতৃত্বে কৃষকরা পদব্রজে সংসদ অভিযান করবেন এবং পুরো অধিবেশন-কালে অবস্থান করবেন। গণতন্ত্র প্যারেড শেষ হওয়ার পর ২৭ কিংবা ২৮ তারিখ থেকে সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হবে। দর্শন সিং আরও জানান, শুধু পঞ্জাব-হরিয়ানা নয়, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান থেকেও কৃষকরা আসছেন। মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশার কৃষকরাও এসে উপস্থিত হয়েছেন। ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, মুম্বাই শহরেও সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির আন্দোলনের সমর্থনে বড় সংখ্যায় কৃষকরা উপস্থিত হবেন। তিনি বলেন, “আমরা কেন্দ্রকে দেখিয়ে দেব এ শুধু পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের আন্দোলন নয়।”
২৬ জানুয়ারির ট্র্যাক্টর র্যালির নানান কর্মসূচি
কৃষক নেতৃত্বের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, গুজরাত থেকে প্রায় দেড় হাজার কৃষক বাসে-ট্রেনে অনেক আগেই দিল্লিতে রওয়ানা দিয়েছেন। সুরাত ও অন্য অঞ্চলে আন্দোলনের অনুমতি না মেলায় গুজরাত খেদুত সমাজের নেতৃত্বে হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে হরিয়ানা-রাজস্থান সীমান্তের শাহজাহানপুরে প্যারেডে যোগ দেবেন গুজরাতের ৫০০ কৃষক। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ২০০ জন মহিলা। ওড়িশার কৃষকরাও উত্তরপ্রদেশের পথে বার বার হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
ইতিমধ্যেই, কর্নাটকের কৃষকদের ব্যাঙ্গালোর ও বেলাগড়ি শহরে ১৫ হাজার গরুর গাড়ি, বাইক ট্র্যাক্টর-সহ কৃষক প্যারেডের প্রস্তুতি শেষ। উত্তর কর্নাটকের কৃষক নেতৃত্ব দিল্লিতে টেম্পো করে শ’খানেক কৃষক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। পাশাপাশি কৃষক র্যালি বানচাল করতে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর পুলিশ কৃষকদের গ্রেপ্তার, ট্র্যাক্টর আটক করে প্যারেড বানচাল করতে চাইছে বলে কৃষক নেতৃত্ব অভিযোগ জানিয়েছে। সংযুক্ত শ্বেতকারী কামগড় মোর্চার নেতৃত্বে ১৫ হাজার কৃষি শ্রমিক মিছিল করে কাসারঘাটের পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এসে গাড়িতে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে পৌঁছেছেন। আগামীকাল রাজভবনে কৃষকদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের উত্তরপূর্ব জেলার গোয়ালিয়র, ভিন্দ, মোরেনা, শিবপুরী থেকে কৃষকরা ৪০০ ট্র্যাক্টর নিয়ে দিল্লির কাছে পালওয়ালে আসছেন। এছাড়াও ওই রাজ্যের জেলায় জেলায় রাষ্ট্রীয় কৃষাণ মহাসঙ্ঘের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাবেন কৃষকরা। অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনমের ওঙ্গোলে এবং বিজয়ওয়ারায় হবে ট্র্যাক্টর র্যালি। এছাড়া, সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তামিলনাড়ু, কেরালা, ঝাড়খণ্ড, আসাম, ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীরের কৃষক সংগঠনগুলি রাজভবন অভিযান করবে।
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কৃষক, যুব-ছাত্র, মানবাধিকার সংগঠনগুলি একগুচ্ছের প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছে। বীরভূমের মুরারইয়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ২০০ ট্র্যাক্ট্রর ও ট্যাবলো নিয়ে র্যালি করবেন চাষিরা। উদ্যোক্তা ট্র্যাক্টর মালিক সুরক্ষা সমিতি। হুগলির উত্তরপাড়া থেকে চুঁচুড়া পর্যন্ত প্রতিবাদী র্যালির ডাক দিয়েছে জেলার ‘নয়া কৃষি আইন বিরোধী উদ্যোগ’। এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা এক জমায়েত ও পথসভা করবে।
কলকাতায় সিপিএম ও বামদলগুলির ডাকে হাজরা ও রাজাবাজার থেকে দুটি মিছিল পার্কসার্কাসে সমবেত হবে। ‘এনআরসি বিরোধী গণআন্দোলন’ মৌলালি থেকে ধর্মতলা চলোর ডাক দিয়েছে। বিভিন্ন গণসংগঠনের ডাকে উত্তর কলকাতার সিঁথির মোড় থেকে ডানলপের ভগৎ সিং মূর্তি পর্যন্ত কৃষকদের সঙ্গে সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার এইট বি বাস টার্মিনাস অঞ্চলে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ ও ‘নো ভোট টু বিজেপি’।
এক নজরে
- সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর, চিল্লা, ভাসা এই পাঁচটি স্থান থেকে ট্র্যাক্টর র্যালি রাজধানীতে প্রবেশ করবে।
- পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রুটে এই র্যালি দিল্লি প্রদক্ষিণ করে স্ব স্ব যাত্রাশুরুর জায়গায় ফিরে যাবে।
- এক -একটি পথের দৈর্ঘ্য একশো কিলোমিটার ও তার বেশি।
- পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকে ট্র্যাক্টর রওয়ানা পৌঁছচ্ছে।
- আরও চারটি ট্র্যাক্টর প্যারেড হবে হরিয়ানা-রাজস্থান সীমান্ত লাগোয়া শাহজাহানপুর, মানেসর, সুনেরা ও পালওয়ালে। যা রাজধানীতে প্রবেশ করবে না।
- মোট ট্র্যাক্টরের সংখ্যা হিসেব করে উঠতে পারেননি সংগঠকরা। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সংগঠকদের পূর্ববর্তী হিসেব ছাপিয়ে ট্র্যাক্টর আসছে। যা লক্ষাধিক।
- দিল্লি র্যালি শেষ হতে মোট কত সময় লাগবে তারও নির্দিষ্ট হিসেব কষা সম্ভব হয়নি। অনুমান র্যালি সম্পূর্ণ হতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাও লাগতে পারে।
- নিয়ম মেনে, নির্দিষ্ট রুটে, শান্তিপূর্ণ র্যালি হবে বলে জানিয়েছে কৃষক নেতৃত্ব।
- ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, গুজরাত থেকে বাসে-ট্রেনে দিল্লি পৌঁছেছেন কৃষকরা।
- ব্যাঙ্গালোর, বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়ারা, বীরভূমের মুরারইয়ে ট্র্যাক্টর র্যালি।
- মুম্বাইয়ে আজাদ ময়দানে অবস্থানরত ১৫ হাজার কৃষক।
- তামিলনাড়ু, কেরালা, ঝাড়খণ্ড, আসাম, ত্রিপুরা, জম্মু-কাশ্মীরে রাজভবন অভিযান।
- কলকাতায় সারাদিন রাজনৈতিক দল, গণসংগঠনের একগুচ্ছ কর্মসূচি।