শুরু হল অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা: লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি


  • January 9, 2021
  • (0 Comments)
  • 941 Views

কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকবিরোধী কৃষিবিল প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লিতে দেড় মাসের বেশি চলতে থাকা কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে ৯ জানুয়ারি ২০২১ কলকাতার ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দিনরাতব্যপী লাগাতার গণ অবস্থান কর্মসূচি ‘অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা’-র সূচনা হল। মূল উদ্যোক্তা অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির পশ্চিমবঙ্গ শাখা। সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ছাত্র-যুব-শ্রমিক-মহিলা সংগঠন। আসছেন ব্যক্তি মানুষেরা। গ্রাউন্ডজিরো অবস্থানস্থল থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আজ রইল সূচনার দিনের খণ্ডচিত্র। প্রতিবেদন সুদর্শনা চক্রবর্তী

 

বর্ধমান থেকে এসেছেন জাহানারা বিবি। জানতে চাইলাম, কৃষকদের আন্দোলন সফল হবে? “হতেই হবে। কৃষকেরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে রাজনীতির নেতারা খাবে কি? এই আন্দোলন সফল হবেই।” তিনি সারা ভারত বিপ্লবী মহিলা সংগঠনের সদস্য। এসেছেন বর্ষীয়ান ফতিমা বেগম, সারা ভারত ক্রান্তিকারী কৃষক সংগঠনের সদস্য। বর্ধমানের নানা প্রান্তে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই কৃষিবিলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কাজ শুরু করেন তাঁরা। লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছেন সভা, মিটিং, পথ অবরোধ ইত্যাদি, যাতে কৃষিবিল বিষয়ে কৃষকেরা শুধু নন, সাধারণ মানুষও জানতে পারেন, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। ফতিমা বললেন, “আমরা শুধু কৃষক নন, কৃষিশ্রমিক যারা তাদেরকেও এই বিষয়ে বোঝাচ্ছি ও আন্দোলনের শরিক করে তুলতে চাইছি। কারণ কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষিশ্রমিকেরাও তাদের পারিশ্রমিক পাবেন না। মহিলাদের যুক্ত করছি, কারণ কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা ছাড়াও, তাঁরাই বাড়ি সামলান। যখন কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন না, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তখন প্রথম ধাক্কাটা মহিলাদেরই সামলাতে হয়। এই সরকারের তো সব আইন, সব বিল-ই কর্পোরেট কেন্দ্রিক। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবাই শুধু ক্ষতির মুখেই পড়ছেন। তাই সব মিলিয়ে এখন রুখে দাঁড়াতেই হবে।”

 

শেখ সফিদুল এসেছেন কৃষকদের সংহতি জানাতে। কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। অবস্থানের খবর পেয়ে একজন ব্যক্তিমানুষ হিসাবে এসেছেন। চাকরি করতেন মহারাষ্ট্রে, তাও আবার আম্বানির আত্মীয়ের কোম্পানিতে। তার মতো আরও ৫০,৬০ জন কর্মীকে লকডাউনের সময় চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিরে এসে আপাতত কলকাতার তপসিয়ায় অনেক খুঁজে একটি চাকরি পেয়েছেন। বললেন, “আমার বাড়ি হাওড়া বাগনান। আমিও তো চাষি বাড়ির ছেলে। এটা তো আর শুধু দিল্লির কৃষকদের লড়াই নয়। এ দেশের সব জায়গার সব চাষিদের লড়াই। এই সরকার তো শুধু সবার খারাপই করছে। কিছুতেই একে এখানে আসতে দেওয়া যাবে না। আমি রোজ এখানে আসার চেষ্টা করব।”

 

 

ভাঙড় থেকে এসেছেন আমির আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, তারা ‘ভাঙড় জমি, জীবিকা, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা সমিতি’র সদস্য। নিজেদের এলাকায় এক দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী ও অংশগ্রহণকারী হিসাবে জানেন যে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই কতটা কঠিন হতে পারে। তাই দেশের কৃষকদের স্বার্থে এই যে দিল্লিতে জীবনপণ লড়াইতে বসেছেন কৃষকেরা, আজ যখন তা বাংলার বুকেও ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সেই আন্দোলনকে সর্বতোভাবে সমর্থন করে, তার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন এই কৃষিজীবী মানুষগুলি। নিয়মিতভাবে এই অবস্থানে অংশগ্রহণ করবেন এমনটাও জানালেন।

 

৯ জানুয়ারি অবস্থানের প্রথম দিন উপস্থিত সংগঠক ও সংহতিতে সমর্থন জানানো মানুষদের উৎসাহ থেকে স্পষ্ট সহজে ধরনা তুলে নেওয়ার জন্য এই অবস্থান শুরু হয়নি। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে টানা কর্মসূচি। দিনরাতের এই অবস্থানে পুরুষ, মহিলাসহ অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষের সমর্থনও ক্রমেই বাড়ছে। কাছের একটি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ তাদের হলের শৌচালয় ইত্যাদি খুলে দিয়েছেন মহিলাদের ব্যবহারের জন্য। ছাত্র, যুব ও মানবাধিকার সংগঠনের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সুতরাং কৃষকবিরোধী কৃষিবিল প্রত্যাহার ও সামগ্রিকভাবে ফ্যাসিস্ত বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এই অবস্থান কর্মসূচিতে আগামী কয়েক দিন কলকাতার রাজপথ আবারও উত্তাল হয়ে উঠতে চলেছে।

 

 

Share this
Leave a Comment