প্রিয় মুক্ত বাজারের প্রবক্তাগণ (Champions of Free Market),
এগুলি হল সেই পাঁচটি কারণ যার জন্য আমি, একজন ‘প্রকৃত’ সর্দার কৃষক, বিশ্বাস করি যে আপনারা কৃষির আসল রূপ ও পাঞ্জাবের একজন কৃষকের জীবনকে বুঝতে পারেননি (যদিও তা আপনাদের দোষ নয়)।
১. শস্য ফলানোর ধরন বদল করা:
গম ও ধান কম ফলিয়ে অন্য ধরনের শস্য বেশি ফলাতে বলে আমাদের জ্ঞান দেবেন না – ধান বা গমের প্রতি আমাদের কোনও গোপন আবেগ নেই। অনেক দশক ধরেই আমরা সর্দার কৃষকেরা শস্য ফলানোর ধরনে বদল আনতে চেয়ে এসেছি। কিন্তু শস্য ফলানোর ধরনে বদল আনা সুনিশ্চিত করার একমাত্র সৎ উপায় হল, অন্য শস্যের ক্ষেত্রেও এমএসপি (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস / ন্যূনতম সহযোগ মূল্য) চালু করা। ভারত অত্যন্ত বেশি পরিমাণে গম ও চাল উৎপাদন করছে – ৫০ মিলিয়ন টন! অন্য দিকে, এর ঘাটতি আবার অন্যান্য শস্যের মূল্যবৃদ্ধি ডেকে আনে – যেমন পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে, আমাদের দেশে কোন কোন শস্য প্রয়োজন তার ভিত্তিতে এমএসপি নির্ধারণ করা হোক। তারপর দেখুন শস্য ফলানোর ধরনে কী বিরাট বিপ্লব ঘটে যায়! আমার প্রিয় মুক্ত বাজারের প্রবক্তারা, আপনারা যদি আশা করেন যে মুক্ত বাজার শস্য ফলানোর ধরনে এক বিরাট পরিবর্তন ডেকে আনবে, তা আসলে কল্পনার দুনিয়ায় বাস করার সমতুল্য।
২. অনিশ্চয়তা কমানোই প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন:
বিশ্বের অন্য যেকোনো কৃষি সম্প্রদায়ের তুলনায় ভারতের কৃষি অনেক বেশি অনিশ্চিত, অস্থিতিশীল – প্রকৃতির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল; শস্য বপনের সময়ে বর্ষা, কুয়াশা ও বৃষ্টি ও নানান পোকামাকড়ের উপর নির্ভরশীল। স্নায়ুতন্ত্রের উপর রীতিমতো চাপ তৈরি করা এক অবস্থা। ঝুঁকি এতটাই বেশি যে, এর প্রভাব আমাদের সিদ্ধান্তের উপরেও পড়তে থাকে ও আমাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। সব শস্যের জন্য একটা যুক্তিসঙ্গত এমএসপি ব্যবস্থা চালু করাই অনিশ্চয়তা কমানোর একমাত্র পন্থা হতে পারে এবং কৃষকদের ধান ও গম থেকে অন্য শস্য ফলানোর দিকে যাওয়া নিশ্চিত করতে পারে।
৩. এই তিনটি বিল-কে প্রত্যাহার করুন, এখনই:
আমাদের ঝুঁকি কমাতে দরকার দামের ক্ষেত্রে এমএসপি-র মাধ্যমে অধিক মাত্রায় সরকারি হস্তক্ষেপ, যাতে অনিশ্চয়তা কমে ও শস্য ফলানোর ধরনও বদলায়। অন্যভাবে বললে, আমাদের প্রয়োজন নতুন এই তিনটি সরকারি আইনের সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু। এই আইনগুলি তৈরি করা হয়েছে আরও বেশি অনিশ্চয়তা ও বাজারে অস্থিরতা তৈরির জন্য। ইতিহাস থেকে শিখুন; আমাদের সবুজ বিপ্লব এফএমসি(Free Market Champions)-দের দ্বারা তৈরি হয়নি। সবুজ বিপ্লব ছিল বিরাট মাত্রায় ঘটা সরকারি হস্তক্ষেপের ফলশ্রুতি। প্রায় সব রাষ্ট্র, এমনকি উন্নত দেশগুলিও, তাদের কৃষি অর্থনীতি ও তাদের কৃষকদের মুক্ত বাজারের মুখাপেক্ষী করে রেখে দেয় না। বিশ্বব্যাপী, প্রতিটি দেশের কৃষিক্ষেত্র হল সবচেয়ে বেশি ভর্তুকিযুক্ত ও নিয়ন্ত্রিত, অর্থনীতির অন্য সব ক্ষেত্রের তুলনায়।
৪. পাঞ্জাবের কৃষকেরা কি ধনী?
আমাদের প্রায়শই বলা হয় যে আমরা ‘স্বভাবদোষে দুষ্ট’, আমরা ‘ধনী’, আমরা ভারতের কৃষকদের মধ্যে সবার উপরে থাকা ‘১০ শতাংশ’ – সুতরাং আমাদের আরেকটু ভালো থাকার দাবি তোলা উচিত নয়। প্রথমত, স্বচ্ছল হওয়ার মধ্যে ভুলের কি আছে? ভারতের কি এমন কোনও নীতির প্রয়োজন আছে যাতে কৃষকদের উপার্জন কমে যাবে ও যা আমাদেরও গরীব করে দেবে? দয়া করে এটার জন্য গর্বিত হোন যে, পাঞ্জাবের কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জন করেন – অন্য রাজ্যে আমাদের সব কৃষক ভাই ও বোনেদের জন্য এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। এবং যখন আপনারা এফএমসি-রা আমাদের ‘ধনী’ বলেন, এটাও দয়া করে স্বীকার করুন যে বিশ্বজনীন পরিমাপে এখনও বিশ্বের সমস্ত কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র ২৫ শতাংশের মধ্যে আমরা পড়ি।
৫. এরপর কী? বিষয়টি সহজ ও বাস্তবসম্মত রাখুন:
আমাদের দ্রুত এই তিনটি ঝুঁকি-বৃদ্ধিকারী আইনকে রুখতে হবে। তৎক্ষণাৎ একটি নতুন বিল পাস করাতে হবে যাতে ঘোষণা করা হবে একটি যুক্তিপূর্ণ ব্যবস্থা, যার ফোকাস থাকবে সমস্ত শস্য ও সব্জির জন্য এমএসপি নির্ধারণ করা, এমন একটি এমএসপি ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য হবে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কমানো, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও শস্য ফলানোর ধরনে বৈচিত্র্য আনা, যা আমাদের দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে মিলবে।
To read the original article in English click
Open Letter From A Sardar Farmer To Free Market Champions