ক্ষুধার হাহাকার ক্রমশ বাড়ছে – এমনই অভিমত হাঙ্গার ওয়াচ সমীক্ষা(পশ্চিমবঙ্গ)-র


  • December 10, 2020
  • (0 Comments)
  • 1576 Views

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যৌথভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলছে যে, যেহেতু লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল হচ্ছে তাই সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। হাঙ্গার ওয়াচ –এর পশ্চিমবঙ্গে করা প্রাথমিক সমীক্ষা কিন্তু সে কথা মানতে পারছে না, বরং তারা প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মনে করছে বাস্তব অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

 

২০ টি সামাজিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং এনজিওর ১০০-রও বেশি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের ২৯০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার নিয়ে এই সমীক্ষা করেছেন, দেশব্যাপী সমীক্ষার একটি অংশ হিসেবে। এই সমীক্ষা ভারতের ১১টি রাজ্য জুড়ে পরিচালিত হয়েছিল, যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ আছে। (http://www.righttofoodcampaign.in/media)

 

পশ্চিমবঙ্গে সমীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে –

 

  • রাজ্যের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন ( ১৮.৭%) পেটে খিদে নিয়ে শুতে যান।
  • পরিবারে সদস্যরা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হন, এমন পরিবারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
  • খাবারের সংস্থান করতে ৪৪% উত্তরদাতাকে বর্তমানে আরও বেশি পরিমাণে ঋণ করতে হচ্ছে।
  • ২৭% উত্তরদাতা আশঙ্কা করছেন যে, তাঁদের খাদ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
  • প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৭%) মনে করেন যে, তাঁদের খাদ্যে পুষ্টির পরিমাণ দিনে দিনে কমছে।
  • ৮০% উত্তরদাতা মনে করেন, খাদ্যে আমিষ খাবারের পরিমাণ – যেমন ডিম, মাংস, মাছ – আগের তুলনায় কমছে।
  • গত ৩০ দিনে, ৬৮% উত্তরদাতা মনে করেন ডালের পরিমাণ কমেছে, ৬৯% মনে করেন শাকসব্জির পরিমাণ কমছে, ৬৬% মনে করেন চাল ও গমের পরিমাণ কমেছে।
  • ৩২% উত্তরদাতা মত প্রকাশ করেছেন যে, তাঁদের আয় গত ৩০ দিনে অর্ধেক কমে গেছে।
  • প্রায় ৩০০০ প্রান্তিক পরিবারের মধ্যে জাতীয় স্তরে ১১টি রাজ্যে সমীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ।
  • ২০টি সামাজিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং এনজিও থেকে ১০০ জন সমীক্ষাকারী এই সমীক্ষাটি করেছেন।

 

উপরিলিখিত তথ্যগুলি ছাড়াও দেখা যাচ্ছে যে, রাজ্যে সমীক্ষার উত্তরদাতা পরিবারগুলির মধ্যে ১১% পরিবারের কোনও রেশন কার্ড নেই, ৬৯% পরিবার অগ্রাধিকার পরিবার বা অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনাভুক্ত, যার মধ্যে ৮৩% রেশন দোকান থেকে প্রতি মাসে তাদের বরাদ্দ খাদ্য শস্য পায়। ৭৩.৪১% উত্তরদাতা যারা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের উপভোক্তা, গত এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে প্রতি মাসে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পেয়েছেন। ৮৫% উত্তরদাতা বলেছেন যে, গত ৩০ দিনে মিড-ডে মিল প্রকল্পে শিশুরা শুকনো খাবার পেয়েছে।

 

যদিও উপরের তথ্যগুলি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করছে খাদ্য প্রকল্পের উপর মানুষ কতটা নির্ভরশীল এবং এই প্রকল্প প্রান্তিক মানুষের বাঁচার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই প্রকল্পের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলিকে দূর করে এই প্রকল্পটিকে প্রসারিত করার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

 

এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, কারণ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা-র মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের রেশন কার্ডধারী উপভোক্তারা (পশ্চিমবঙ্গে ৬২%) গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত যে ৫ কেজি খাদ্যশস্য ও ১ কেজি ডাল বিনামূল্যে পাচ্ছিলেন তা বন্ধ হয়ে যাবে।

 

গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জোরজবরদস্তি ৩টি কৃষি আইন ও ৪টি শ্রম কোড পাশ হওয়ার ফলে সমস্ত কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থা যেমন আরও সংকটময় হবে, তেমনি হাতে গোনা কিছু কর্পোরেটদের মুনাফা আরো বহুগুণ বাড়বে।

 

অন্য দিকে রাজ্য সরকার পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিছক চমক দিয়ে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে দিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে আমলাদের সম্পর্ক স্থাপন করে স্বাস্থ্য সাথী, জব কার্ড, এনআরইজিএ ইত্যাদি আবেদন পত্র পূরণ করতে জনগণকে উৎসাহিত করবেন এবং তাঁদেরকে আশ্বাসের বন্যায় ভাসিয়ে দেবেন। প্রশ্ন হল, নিছক ভুরি ভুরি আবেদন পত্র কি মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তি করবে? যেখানে নতুন রেশন কার্ডের জন্য কিছু বরাদ্দই নেই! রাজ্য সরকার কি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকার অভাবের অজুহাত না দেখিয়ে প্রত্যেক নতুন জব কার্ডধারী ইচ্ছুক কর্মপ্রার্থীকে কাজ দেবেন?

 

জাতীয় সমীক্ষায় অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের একটি ইতিবাচক দিক হল যে, এই রাজ্যের ৯০% উত্তরদাতা মনে করেন যে, খাদ্য পাওয়া বা এই পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও সামাজিক বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয় না। যদিও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে যে, রাজ্যে আগামী বিধান সভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাড়-বাড়ন্ত হলে সামাজিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

হাঙ্গার ওয়াচ পশ্চিমবঙ্গের সমীক্ষার সংক্ষিপ্ত তথ্য পেতে নিচের লিঙ্কটি ব্যবহার করতে পারেন –

https://drive.google.com/file/d/1DSrCDFj26c9xbS23fjSsQnZYKZNRXLJc/view

 

PDF of the report in English (Hunger Watch Survey)

[pdf-embedder url=”https://www.groundxero.in/wp-content/uploads/2020/12/Hunger-Watch-Report_West-Bengal.pdf” title=”Hunger Watch Report_West Bengal”]

 

Share this
Leave a Comment