গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের হাথরাস-এ এক দলিত যুবতীর উচ্চবর্ণের চার পুরুষের হাতে নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা শুধু নারীর চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতাই নয়, ভারতের বর্ণবৈষম্যের রাজনীতির ক্রমশ বেড়ে চলা ন্যক্কারজনক বাস্তবটিকেই নগ্ন করে দিয়েছে। দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলেছে, চলছে। এর মধ্যেই আর্ন্তজাতিক মঞ্চে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বাক্ষর-সংগ্রহের প্রচার কর্মসূচি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
মূলত আমেরিকানিবাসী প্রবাসী ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মীদের এক যৌথ সংগঠন ‘ইন্ডিয়া সিভিল ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল’, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের পাশে থাকা। তারা গত ১২ অক্টোবর ২০২০ একটি দরখাস্ত প্রকাশ করে, হাথরাসের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। উদ্দেশ্য ছিল এই সত্যকে সামনে নিয়ে আসা যে, উত্তরপ্রদেশ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সারা দেশ জুড়েই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর যে শোষণ-নিপীড়ন চলছে, তাতে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১৮০০ মানুষ ভারতে বর্ণবৈষম্য ভিত্তিক হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইতে নিজেদের সমর্থন জানিয়ে এই দরখাস্তে সই করেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বহু পরিচিত শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। অনেকগুলি প্রথম সারির অ্যাকাডেমিক জার্নালে যেমন এই দরখাস্ত ইতিমধ্যেই উল্লেখিত হয়েছে, তেমনি আমেরিকার প্রথম শ্রেণির বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবিভাগে ও প্রোগ্রামে এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তের সামাজিক ন্যায়ের জন্য কাজ করা সংগঠনগুলিতেও তা আলোচিত হয়েছে। এই পিটিশনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনটি এখন এক বৃহত্তর জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। শুধুই ভারতের উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটি এখন বিশ্বজুড়ে চলা ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’ আন্দোলনের সঙ্গেও যেমন জুড়ে যাচ্ছে, তেমনি আবার সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের সামাজিক ন্যায় অর্জনের লক্ষ্যে এখন যে এক ঐতিহাসিক লড়াই চলছে, তার অনুরণনও এখানে শোনা যাচ্ছে।
সেই সূত্রেই এই সংগঠন গত ২৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে একটি প্রেস বার্তায় দলিত ও কালো মানুষদের অধিকারের লড়াইতে সামনের সারিতে থাকা বেশ কয়েকজন পরিচিত আন্দোলনকর্মী তাঁদের একসাথে পথ চলার বার্তা, প্রতিরোধের শব্দ পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা গ্রাউন্ডজিরো-র পক্ষ থেকে সেই প্রেস বার্তার বাংলা অনুবাদটি নীচে তুলে দিলাম। ইংরেজিতে মূল লেখাটি পড়তে পারবেন এই লিঙ্ক-এ ক্লিক করে – https://indiacivilwatch.org
দলিত লাইভস্ ম্যাটার! আ ক্রাই টু রেজ এগেইনস্ট দ্য হরিফাইং ভায়োলেন্স অফ স্যাফরন টেরর ইন ইন্ডিয়া (দলিত জীবন মূল্যবান! ভারতে গেরুয়ারাজের বীভৎস হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান)
হাথরাসে পুলিশ ঘিরে রেখেছে এক
ধর্ষিতা নারীর বাড়ি
ছিনতাই করে নিয়ে গেছে শব, জ্বালিয়ে দিয়েছে খুনি-রাতে,
মায়ের একটানা আর্তনাদেও কান দেয়নি ওরা।
এ দেশে দলিত রাজ করতে পারে না,
রাগে ফেটে পড়তে অথবা, এমনকি
শোকে বিলাপও করতে পারে না।
এমন আগেও ঘটেছে, এমনটা আবারও ঘটবে।
…
সনাতন, একমাত্র আইন এ দেশে বহাল,
সনাতন, যেখানে কিছুই, কিছুই কখনও বদলাবে না,
সর্বদা, সবসময়ই লাঞ্ছিতকেই দোষারোপ,
নোংরামেয়ের ছাঁদফলক,
ধর্ষক-রক্ষক পুলিশ-রাষ্ট্র, জাত-অস্বীকারি চতুর্থ স্তম্ভ।
এমনটা আগেও ঘটেছে, এমনটা আরও ঘটবে।
উপরের এই পংক্তিগুলি মীনা কান্দাসামী-র লেখা ‘রেপ নেশন’ কবিতার অংশ, যা তিনি লিখেছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ের চার জন পুরুষের হাতে ১৯ বছর বয়সী এক দলিত তরুণীর নৃশংস ধর্ষণের ঘটনার পর। এই বীভৎস বর্ণবৈষম্য ভিত্তিক হিংসার পরে আরও যা ঘটেছে, তা হল অকল্পনীয় পুলিশি নিষ্ঠুরতা ও তদন্তপ্রক্রিয়া চলাকালীন পুরো সময়টা জুড়ে পুলিশের ঐ প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের অপরাধীদের সঙ্গে টানা সহযোগিতা করে যাওয়া। গত এক মাস ধরে সারা উত্তর ভারত থেকে একই ধরনের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বহু খবর পাওয়া গেছে, যা বর্তমান সময়ে হিন্দুত্বত্রাসের রাজত্বে দলিত মহিলাদের উপর শতাব্দীপ্রাচীন কাঠামোগত হিংসা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ারই স্পষ্ট প্রমাণ।
পূর্ব উল্লেখিত হাথরাসের ধর্ষণ, হত্যা ও নিষ্ঠুরতার ঘটনা এবং শুধুমাত্র গত একমাসে সারা ভারত থেকে চমকে ওঠার মতো বহুসংখ্যক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার যেসব রিপোর্ট সামনে আসছে, তার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইওরোপ, ইউনাইটেড কিংডম, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া প্যাসিফিক থেকে শিক্ষাবিদ, পেশাদার ও ব্যক্তি মানুষেরা আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসাবে এক সামাজিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, যা ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের – বিশেষত দলিত মহিলাদের উপর – ক্রমশ বাড়তে থাকা চমকে দেওয়ার মতো অপরাধগুলি, যা ভারতে গেরুয়ারাজের গভীর শিকড় বিস্তারেরই ফলশ্রুতি, তার তীব্রভাবে নিন্দা করছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার উদ্দেশ্যেই গড়ে উঠেছে। যে নিন্দাসূচক বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দাবি জানানো হয়েছে – উচ্চবর্ণের ঐ পুরুষেরা ও পুলিশ কর্মচারীরা, যারা হাথরাসে এবং সাম্প্রতিক কালে অন্যান্য জায়গায় এইজাতীয় জঘন্য অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক, এবং আন্দোলনকর্মী ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ ও বিরুদ্ধমতকে দাবিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা, তা এই মুহূর্তে বন্ধ হোক। একইসঙ্গে আমরা মৃত্যুদণ্ডবিলোপ সমর্থনকারীদের যুক্তিটিকে আবারও তুলে ধরতে চাই। আমাদের ন্যায়ের যে খোঁজ, তা এক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা, যা প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের হিন্দুদের স্বার্থরক্ষা করে, তার তথাকথিত ন্যায়বিচারে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। দলিত, মুসলমান, আদিবাসী, কাশ্মীরি এবং অন্য সবাই, যাদের এই সময়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের ন্যায়বিচার তখনই পাওয়া সম্ভব, যখন জাতব্যবস্থা এবং ভারতের সামরিক-পুঁজিবাদকে বিলুপ্ত করা যাবে।
এই বক্তব্যটির সমর্থনে আঠেরোশ’রও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মীরা, প্রখ্যাত দলিত ও কৃষ্ণাঙ্গ বুদ্ধিজীবীরা, দক্ষিণ এশিয়া চর্চা, জাতিবিদ্যা, মানবীবিদ্যা জগতের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা। প্রখ্যাত স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাঞ্জেলা ডাভিস, গ্লোরিয়া স্টেইনেম, মঁড বার্লো, বারবারা হ্যারিস-হোয়াইট, চন্দ্র তালপাড়ে মোহান্তি, অর্জুন আপ্পাদুরাই, শৈলজা পাইক, সুরজ ইঙ্গড়ে, রড ফার্গুসন, ক্যাথরিন ম্যাকিট্রিক, মার্গো ওকাজাওয়া-রে, লরা পুলিডো, হুমা দার, নিদা কিরমানি ও মীনা ধান্দা। এর পাশাপাশি যে আর্ন্তজাতিক সংগঠনগুলি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – দলিত সলিডারিটি ফোরাম ইন দ্য ইউএসএ, ন্যাশনাল উইমেন্স স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন, এসইডব্লিউএ(সেওয়া)-এআইএফডব্লিই(এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ওয়েলনেস), কোডপিঙ্ক ও উইমেন্স লিগাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইট্স ব্যুরো-ক্যুয়েজন সিটি। যে জার্নালগুলি স্বাক্ষর করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য – অ্যান্টিপড: আ র্যাডিক্যাল জার্নাল অফ জিওগ্রাফি, ফেমিনিস্ট স্টাডিজ এবং অ্যাজিটেট: আনসেটলিং নলেজ। এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে বেশ কিছু শিক্ষাবিভাগ ও প্রোগ্রাম, যার মধ্যে রয়েছে – জেন্ডার, উইমেন অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ অ্যাট দ্য ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা-টুইন সিটিস; এবং উইমেন্স, জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ অ্যাট ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি; এবং উইমেন্স, জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি স্টাডিজ অ্যান্ড দ্য হিউম্যান রাইট্স প্রোগ্রাম অ্যাট ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস্-বস্টন।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে, যখন মিনিয়াপোলিস-এ এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে জর্জ ফ্লয়েড-এর নিষ্ঠুর হত্যা আমেরিকা ও সারা পৃথিবী জুড়ে ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার আন্দোলনকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে, তখন উত্তরপ্রদেশে প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের পুরুষদের হাতে দলিত মহিলাদের ধর্ষণ ও হত্যা বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার প্রতিবাদীকে জোটবদ্ধ করেছে ভারতে হিংস্র হিন্দুত্বের পক্ষে কাজ করে চলা পুলিশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এই পিটিশন কিছু জরুরি তর্কের পরিসরও তৈরি করেছে, যেখানে আলোচনা চলছে, এই সময়ে বৈপ্লবিক সংহতির রূপ কেমন হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে যে দৃঢ় সংহতি জানানো হয়েছে, তার কথা আলাদা ভাবে বলা প্রয়োজন, কারণ এই জায়গাগুলিতে নিয়মিতভাবে কাঠামোগত হিংসা সংঘটিত হয় গভীর জাতিবিদ্বেষ থেকে তৈরি হওয়া প্রত্যাখ্যানের চর্চার মাধ্যমে এবং এখানে যোগ্যতা হয়ে ওঠে প্রভাবশালী শ্রেণির সম্পত্তি বা অধিকার।
একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভিডিও বার্তায় দার্শনিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী অ্যাঞ্জেলা ওয়াই. ডেভিস জোর দিয়েছেন বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য ও বর্ণবাদী-ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদের স্বর গর্জে উঠছে, তার প্রতি অর্থপূর্ণ আর্ন্তজাতিক সংহতির উপরে। তিনি জোরের সঙ্গে সমর্থন করেছেন ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’, ‘দলিত লাইভস্ ম্যাটার’ ও ‘মুসলিম লাইভস্ ম্যাটার’ আহ্বানগুলিকে। আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ন্যায় ও মানুষের সম্মানের জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এই আহ্বানগুলির ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্রগুলিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ক্রীতদাসপ্রথা আইনসিদ্ধ ছিল, তখন থেকেই এই সম্প্রদায়গুলির মধ্যে যোগসূত্রের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। অ্যাঞ্জেলা ডেভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের ডাক দিয়েছেন, ভারতে দলিত মহিলাদের উপরে জাতিগত, যৌন ও বর্ণভিত্তিক হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।
আরেকটি ভিডিও বক্তব্যে ভারত থেকে ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ দলিত উইমেন ইন ইন্ডিয়া-র সভাপতি রুথ মনোরমা এই সংহতির কথাই দৃঢ়ভাবে বলেছেন। তিনি দলিত মহিলাদের বৈষম্যের অভিজ্ঞতাকে ভারতে বর্ণভিত্তিক শোষণের ঐতিহাসিক, কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করেছেন এবং কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকাবাসী ও দলিতদের ডাক দিয়েছেন জাতিগত ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হওয়ার জন্য।
অন্যান্য স্বাক্ষরকারীরা চিন্তিত হয়েছেন এই ভেবে যে, ধর্ষণ ও হত্যা এক স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ, যেখানে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থী, লেখক, নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করা আইনজীবী ও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতের মুসলমান নাগরিকদের লক্ষ্য করে সংবিধান পরিবর্তনের যে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সব স্বরকে খুঁজে বের করে তাদের স্তব্ধ রাখা এবং কাশ্মীরের উপর ভারতের দখলদারির বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করছেন তাঁদের শাস্তি দেওয়া। এই নির্লজ্জ স্বৈরাচার ও দমন-পীড়ন এই ভয়ানক বাস্তবকেই সত্যি বলে প্রমাণ করছে যে, ভারত রাষ্ট্র এখন খোলাখুলি এক হিংস্র হিন্দুত্ব ও বর্ণবাদী ব্যবস্থার প্রচার ও প্রসার চালাচ্ছে, যে ব্যবস্থা লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও অপমান চালায় সেই মানুষগুলির উপর, যারা এই ব্যবস্থা দ্বারাই শোষিত – জমি, গোষ্ঠীপরিচয় ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।
হাথরাসের ঘটনাটিকে যে দলিতদের উপর স্রেফ আরেকটি রাষ্ট্র-সমর্থিত হিংসার উদাহরণ হিসেবে ভুলে যাওয়া হবে না, তা এই বহুসংখ্যক স্বাক্ষরকারীর আর্ন্তজাতিক স্তরে সংহতি জানানোর মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট। দরখাস্তে তাঁর মন্তব্যে স্বাক্ষরকারী ক্রিস্টোফার কুইন, যিনি ধর্মশিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এশিয়া ও পশ্চিমে সমাজমুখী বৌদ্ধধর্ম নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন, তিনি জাতিগত ও বর্ণভিত্তিক হিংসার মধ্যে তুলনা করে বলেছেন, “যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিংস্র জাতিবিদ্বেষ, যা দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিকদের সাহায্যে কায়েম থাকে, তেমনই দলিত নাগরিকদের – বিশেষত মহিলা ও মেয়েদের – উপর বাড়তে থাকা নিষ্ঠুরতা যেন এক ক্রমবর্দ্ধমান মহামারী, যা এমন এক দেশের অন্তঃস্থলে বাসা বেঁধেছে, যে দেশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও মানবিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে।” জর্জ ফ্লয়েডের হত্যা ও ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে দলিত মহিলাদের ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক স্তরে যে প্রতিবাদ দানা বেঁধেছে, তাকে ধরে রাখার জন্য ও এই ঘটনাগুলির তীব্র নিন্দা করার জন্য আমাদের আর্ন্তজাতিকভাবে একজোট হতে হবে এবং জাতিভিত্তিক ও বর্ণবাদী বিসমকামী-পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদের কাঠামোকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য আরও জোরদার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রোজা সিং, যিনি একজন দলিত স্কলার, আমরা তাঁর দৃঢ়প্রত্যয়ী কথাগুলি দিয়ে শেষ করতে চাই – “আমরা, মানুষের সম্প্রদায় হিসাবে জাতিভিত্তিক, বর্ণবাদী, ও যৌন হিংসার ক্রমবর্ধমান মহামারীর ভিতর সংহতি খুঁজে নিতে সক্ষম। আমরা আমাদের সমবেত স্বরকে জাগিয়ে তুলছি – দলিত লাইভস্ ম্যাটার! হ্যাঁ, আমাদের এই চূড়ান্ত যন্ত্রণাদায়ক সত্যিটি মেনে নিতে ও অনুভব করতে হবে যে, দলিত মহিলারা ধর্ষিত হয়েছেন, তাঁদের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁদের ছাই থেকেই জেগে উঠছি পুনরুত্থানকারী আর্ন্তজাতিক সংহতি সম্প্রদায় রূপে – এক বিশ্বব্যাপী আন্দোলন – সকলের জন্য ন্যায় ও মানুষের সম্মানকে পুনরুদ্ধার করার ডাক দিচ্ছি। কবি জুন জর্ডন-এর কথায় ‘উই আর দ্য ওয়ান্স উই হ্যাভ বিন ওয়েটিং ফর’(আমরাই তারা, যাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম)।”
যোগাযোগ:
ই-মেইল: icwi@indiacivilwatch.org
ওয়েবসাইট: https://indiacivilwatch.org
দূরভাষ: (৮৬৪)৮০৪-০২১৬
ছবি : সবরং ইন্ডিয়া (Sabrang India)
This struggle should be on regular basis . Awareness program should be organised at grass root level on regular basis.