গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট
বিএসএনএল কর্মীদের বেতন নেই, আজ দেড় বছর হতে চলল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে আজ অবধি বিএসএনএল কর্মীরা বেতন পাননি। এক লাখেরও বেশি ঠিকা শ্রমিকদের বেতন মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করে চলেছে। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, এই বেতন মেটানোর দায়িত্ব সরকারের নয়, ঠিকেদারদের। ইতিমধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা টেলিফোনস-এরই ৮ জন শ্রমিক এই নির্মমতার শিকার হয়ে লকডাউনের মাঝে আত্মহত্যা করেছেন। অন্যান্য রাজ্যে অবস্থাটা আলাদা কিছু নয়। তবে সুশান্ত-দীপিকা-রিয়া নিয়ে ব্যস্ত বাজারি মিডিয়াতে আসেনি সেইসব খবর।
কেন্দ্রীয় সরকার এই শ্রমিকদের উপর যে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর রাজভবনে অভিযান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জব কন্ট্রাক্ট লেবার (JCL) আওতাভুক্ত ক্যালকাটা টেলিফোনসের ঠিকা শ্রমিকদের ইউনিয়ন সিডব্লিউইউ (CWU-BSNL)।
দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের সাথে দেখা করার আবেদন জানিয়ে আগাম চিঠি দেওয়া হয়েছিল রাজ্যপালকে। ‘অতি সক্রিয়’ রাজ্যপাল কোভিড সমস্যা দেখিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, রাজ্যপাল নিজের পছন্দের সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা করার জন্য সারাদিন সময় দিলেও তাঁদের সাথে দেখা করতে রাজি হননি। বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেড় বছরে ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যুসংবাদ শুনতে তথা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলির সম্মুখীন হতে ভয় পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি এই রাজ্যপাল – বিশেষ করে যখন লকডাউন চলাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যস্ত থেকেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দেওয়ার কাজে।
আজকের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কলকাতা, কল্যাণী, বারাসাত, বনগাঁর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শ্রমিকেরা সামিল হয়েছিলেন। মিছিল গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউ-সি.আর.অ্যাভিনিউ ক্রসিং অবধি যাওয়ার পরই পুলিশ ৪০০ জন শ্রমিকের এই মিছিল আটকে দেয়। সেখানেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে প্রতিবাদ সভা। ইউনিয়ন নেতারা অভিযোগ করেন যে, অন্যান্য ইউনিয়নগুলি কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া এসএলএ (সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট) প্রথা মেনে নিয়েছে, যে প্রথা কেন্দ্রের পূর্বতন আইন অনুযায়ী তিন বছর শ্রম দেওয়ার পর শ্রমিকদের স্থায়ী করার নিয়মের বিরোধী। উপরন্তু এসএলএ শ্রমিকদের মূল নিয়োগকর্তা হিসেবে বিএসএনএল-এর জায়গায় ঠিকেদারকে ধার্য করে। তাছাড়া এই প্রথায় ঠিকা শ্রমিকদের মাইনে প্রায় অর্ধেকেরও কম হয়ে যায় এবং চাকরির কোনও সুরক্ষাও অবশিষ্ট থাকে না; এতদিন ধরে প্রাপ্ত ১৫০০০-২০০০০ টাকার বেতন কমে দাঁড়ায় ৭০০০-৮০০০ টাকায়।
সিডব্লিউইউ-বিএসএনএল-এর পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল বকেয়া বেতনের দাবিতে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়েরও করা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৫ আগস্ট রায় দেয় যে, সেদিন থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত কর্মীর বকেয়া বেতন মিটিয়ে দিতে হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও চলছে অত্যন্ত ঢিমে তালে। বহু শ্রমিককে ইচ্ছাকৃতভাবে কম বেতন দেওয়া হচ্ছে। ক্যালকাটা টেলিফোনস-এর আওতায় সাড়ে চার হাজার ঠিকা শ্রমিক আজ এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এনারা প্রত্যেকেই বিএসএনএল-এর কর্মী – কেউ ২৫ বছর ধরে, কেউ বা ৩০ বছর ধরে।
শ্রমিকদের এই লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আজকের সভায় বক্তব্য রাখেন আইএফটিইউ, এআইসিটিটিইউ, পিডিএসএফ, যাদবপুর কমিউন, এসডব্লিউসিসি, ডব্লিউএসএস এবং আইটি কর্মীদের ইউনিয়নের সদস্যরা।
ছবি – মৈনাক দত্ত