‘কলকাতা’র বাঙালির অহং বরং একটু কমুক


  • September 27, 2020
  • (0 Comments)
  • 1393 Views

সল্টলেকের মতো তথাকথিত ‘পশ’ এলাকায় কাউকে দেখেই মুসলমান বলে চিহ্নিত করে দেওয়া এবং সেইজন্য তাঁদের গেস্ট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনার প্রধান কারণ মুসলমান পরিচিতির সঙ্গে জঙ্গি, উগ্রপন্থী, নাশকতা, দেশদ্রোহী ইত্যাদি ধারণাগুলিকে জুড়ে দেওয়া। লিখেছেন সুদর্শনা চক্রবর্তী

Madrasa teachers who were driven away from the guest house. Image Source : Logical India

 

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা থেকে ১০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক নিজেদের কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁদের সেই কাজ ছিল সল্টলেকের বিকাশ ভবনে। থাকার সুবিধার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বিধাননগরের একটি গেস্ট হাউস। ভোরবেলা সেই গেস্ট হাউসের নিয়ম মেনে চেক ইন করেন। তাঁদের নির্দিষ্ট ঘর দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে নিজেদের জিনিসপত্র রেখে এরপর প্রাতঃরাশ সারতে তাঁরা বেরোন এবং ফিরে এসে শোনেন কিছু অসুবিধার জন্য তাঁদের পাশেই আরেকটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ সময় সেই হোটেলের লবিতে অপেক্ষা করার পর তাঁদের এসে জানানো হয় এলাকার বাসিন্দাদের আপত্তিতে তাঁদের হোটেলে ঘর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে তাঁদের কার্যত বের করে দেওয়া হয় হোটেল থেকে। হ্যাঁ, মুসলমান পরিচিতির জন্যই। হ্যাঁ, তাঁরা কোনও নামজাদা বেসরকারি স্কুল বা নিদেনপক্ষে সরকারি স্কুলের শিক্ষক না-হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক হওয়ার কারণেই।

 

একটা প্রশ্ন প্রথমেই করা দরকার, যখন তাঁদের জন্য গেস্ট হাউসটিতে ঘর ‘বুক’ করা হয়েছিল শিক্ষকদের একটি ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে, তখন নিশ্চয়ই নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের পরিচয় জানাতে হয়েছিল। যিনি ‘বুক’ করেছিলেন, সেই শিক্ষক নিজেও বাঙালি ও ধর্মীয় পরিচিতিতে মুসলমান। এরপর মালদা থেকে এই শিক্ষকেরা এসে পৌঁছলে ঘরে ‘চেক ইন’ করার সময়ও নিশ্চিতভাবে নিয়ম মতো পরিচয়পত্র দেখাতে হয়েছিল, নাম-ধাম রেজিস্ট্রারে লিখতে হয়েছিল। সুতরাং প্রথম থেকেই হোটেল কর্তৃপক্ষ অতিথিদের ধর্মীয় পরিচিতি বিষয়ে অবগত ছিলেন। সেই সময়ে গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ কোনও ওজর-আপত্তি করেননি। কারণ সেটা তাঁরা আইনত করতে পারেন না। কেউ হোটেল বুক করতে চাইলেক তাঁকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচিতির কারণে ঘর দিতে অস্বীকার করা যায় না। সম্ভবত, হোটেল কর্তৃপক্ষ অজুহাত খুঁজছিলেন, কীভাবে সেই ‘বুকিং’ বাতিল করা যায় আর সেইজন্যই অন্য হোটেলে নিয়ে যাওয়া আর অঞ্চলবাসীর আপত্তির কথা বলে অসম্মানজনকভাবে শিক্ষকদের হোটেল থেকে বের করে দেওয়া। যদি তাঁদের নিজেদের কোনও সমস্যা না থাকত, যদি তাঁদের ধর্মীয় কারণে ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা না-থাকত তাহলে ব্যবসায় নাক গলানোর কারণে এলাকাবাসীদের চাইলেই তারা থামাতে পারতেন। অমানবিকভাবে তুমুল বৃষ্টির মাঝে ভিন্‌ জেলার মানুষগুলোকে বের করে দিতে পারতেন না। এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ সঠিকভাবেই হোটেলের কর্মীদের বিরূদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার পর একটি মত উঠে এসেছে – সল্টলেক এলাকায় বাঙালি ভাষাভাষীদের তুলনায় অবাঙালিদের বাস বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা বাঙালিদের সঙ্গে এহেন ব্যবহার করেছেন ও হোটেল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে পেরেছেন। কিন্তু একটু বিশদে খোঁজ নিলে দেখা যাবে এখনও ঐ অঞ্চলে অবাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। কিন্তু নানাভাবে সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রভাব বেড়েছে। কারণ – বহুবিধ। তা এখানে আলোচ্য নয়। বাস্তব হল মুসলমান পরিচিতির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। এবং এবার বোধহয় সময় হয়েছে কলকাতা শহরের প্রতি নিজেদের ভালবাসা ভাবাবেগ বজায় রেখেও এই শহরের যে নিষ্ঠুর অমানবিকতা রয়েছে এবং বারবারই যা প্রকট হয়ে ওঠে সে দিকটিতেও চোখ রাখা। পরিচিতির রাজনীতি সমর্থন কেউ করতে পারেন, কেউ না-ও পারেন, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট পরিচিতির কারণেই যে বারবার বৈষম্য ঘটে চলেছে সেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াও কাজের কথা নয়। এবং নিঃসন্দেহে মুসলমান ধর্মীয় পরিচিতির কারণে বৈষম্য এই তালিকায় শীর্ষে থাকবে।

 

যখন ইঙ্গিতে এমনও বলা হচ্ছে যে, কে দেশদ্রোহী বা উগ্রপন্থী তা পোশাক ও চেহারা দেখলেই বুঝে ফেলা যায়, তখন এই যে গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে প্রাতঃরাশ করতে বেরোনো শিক্ষকদের দেখেই এলাকাবাসীর অস্বস্তি হয় ও তারা এসে জানায় – এই মতকে নাকচ করে দেওয়া বোধহয় যায় না। যে শিক্ষক দায়িত্ব নিয়ে ঘর ‘বুক’ করেছিলেন তাঁকে যে ভাষায় চিঠিতে এই ধর্মীয় পরিচিতির কথাটি বলা হয়েছে, তা পড়লে লজ্জায় মাথা ঝুঁকে যায়। কে কী পোশাক পরবে, কী খাবে তা তো এখন দেশের প্রধানেরা এবং সংবাদমাধ্যম ঠিক করে দিচ্ছে। আর মগজধোলাইয়ের জন্য রাজি হয়ে বসে থাকা জনগণ তা তারিয়ে তারিয়ে দেখছে, পড়ছে এবং সুযোগ মতো এই কুশিক্ষার ব্যবহার করছে, নিজেদেরই সহনাগরিকদের প্রতি। কলকাতা শহরে এমন বৈষম্য ঘটে না – এটা বলার দিন গেছে। আগেও বহুবার এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই শহর এবং এবার পরিস্থিতি কতটা ন্যক্কারজনক হয়ে উঠেছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।

 

এই শহরেই সংখ্যালঘু পরিচিতির জন্য ঘর ভাড়া পেতে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। এমনকি বছর এক-দেড় আগে সামাজিক মাধ্যমে এই ঘর ভাড়া পাওয়ার সমস্যা মেটাতে একটি সমমনস্ক মানুষদের গ্রুপ পর্যন্ত খোলা হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে সামাজিক মাধ্যমেই সমমনস্ক, রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষেরা পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন বারবার যে – কোনও নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচিতির মানুষেরা যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, থাকার জায়গা না-পান, তাহলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা হবে। শুধু সংখ্যালঘু ধর্মীয় পরিচিতি নয়, লিঙ্গ পরিচিতি, জাতিগত পরিচিতি এই সবের জন্যই ঘর পাওয়া, হোটেল পাওয়া নিয়ে প্রায়শই নানা সমস্যার কথা এই শহরে কান পাতলেই শোনা যায়। একজন একলা মেয়ের ঘর পাওয়া আজও এই তথাকথিত উদার, প্রগতিশীল শহরে খুব সহজ নয়। লিঙ্গ ও যৌন পরিচিতির দিক থেকে প্রান্তিক, এমন পরিচিত, অপরিচিত বহু মানুষের অভিজ্ঞতা ব্যক্তিগতভাবে জানার কারণে জানি যে একা বা সঙ্গীদের সঙ্গে ঘরভাড়া করা বা বাসস্থান কেনা কতটা অসুবিধাজনক। সামাজিকভাবে কতটা অসহিষ্ণুতার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। সবকিছুই কি আর সংবাদে উঠে আসে? না।

 

এই শহর এবং একশ্রেণির বাসিন্দা কতটা অমানবিক ও বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা মহামারির সময়ে বেশ কিছু উদাহরণেই স্পষ্ট। কোভিড সংক্রমণ শুরুর দিকেই, মার্চ মাসের শেষাশেষি কলকাতার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কয়েক জন পড়ুয়া, যারা আদপে নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা, এলাকাবাসীরা তাঁদের একজোট হয়ে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেয়, তাঁদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করে এবং ‘করোনাভাইরাস’ বলে অপমান করে। উত্তর-পূর্বের মানুষদের প্রতি এই আচরণ কলকাতায় নতুন নয়। তাদের বিদ্রূপাত্মক নানা নামে ডাকা, জীবনযাপন নিয়ে তীর্যক মন্তব্যও নতুন নয়। এমনকি নার্সিংহোমে কোনও উত্তর-পূর্বের স্বাস্থ্যকর্মী ভাষাবিভ্রাটে কথা বুঝতে না-পারলে তাঁদের প্রতি যে ধরনের মন্তব্য বাঙালিরা করে থাকে, তা ঠিক বাঙালির উদারতা প্রমাণ করে না। এই বিপদকালীন সময়ে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া অসহায় পড়ুয়াদের সঙ্গে এই অভব্য আচরণ করেছে খোদ ‘বাঙালি’রাই। তবু লজ্জা পাব না আমরা? এই ঘটনার আগেই কলকাতার দুই নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী আলাদা আলাদা ভাবে কলকাতার রাজপথেই অপরিচিত পথচারীদের কাছ থেকে করোনা সংক্রমণকে কেন্দ্র করে আপত্তিজনক মন্তব্যের মুখে পড়েন। আর তবে কী নিয়ে গর্ব এই ‘তিলোত্তমা’ কলকাতাবাসী বাঙালির?

 

আমরা নিশ্চয়ই এখনও ভুলে যাইনি, কোভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কীভাবে কোভিড মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল, কীভাবে যেসব জায়গায় দীর্ঘদিন তাঁরা থেকেছেন সেখান থেকে তাঁদের বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীরা একটি বারের জন্যও না-ভেবে উৎখাত করার জন্য দল বেঁধেছেন। অপমানে বিপর্যস্ত করে দিয়েছেন। সম্পূর্ণ ভুলে গেছেন এই মহামারির দিনে তাঁরাই বাড়িঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে লড়াই লড়ছেন, আমাদের সুস্থ থাকার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এবং কোনওভাবে সংক্রামিত হলে তাঁরাই একমাত্র ভরসা। চূড়ান্ত অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে পেশার তাগিদে তাঁরা যে পরিশ্রম করছেন, তার বদলে কয়েক ঘণ্টার শান্তির আশ্রয়, বিশ্রাম তাঁরা দাবি করেন। কিন্তু ‘কল্লোলিনী’ কলকাতা তার বিবেক হারিয়েছে বহুদিন। তাই অসুস্থ, অসহায় মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকলে, মরে গেলেও সে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সেইজন্যই এই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি অবস্থাকালীন সময়েও বাড়িছাড়া করতে বাঙালি কলকাতাবাসী দু’বার ভাবেনি।

 

মালদা থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষকদের গেস্ট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা আমাদের আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মালদা, মুর্শিদাবাদ হলে তার সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয় জুড়ে দেওয়াটা এখন প্রায় অলিখিত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। না-হলে সল্টলেকের মতো তথাকথিত ‘পশ’ এলাকায় কাউকে দেখেই মুসলমান বলে চিহ্নিত করে দেওয়া এবং সেইজন্য তাঁদের গেস্ট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটত না। এর প্রধান কারণ মুসলমান পরিচিতির সঙ্গে জঙ্গি, উগ্রপন্থী, নাশকতা, দেশদ্রোহী ইত্যাদি ধারণাগুলিকে জুড়ে দেওয়া।

 

এই কাজটি অবশ্য অভিসন্ধিমূলক রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমও করে চলেছে লাগাতার। মাদ্রাসা মানেই জঙ্গি তৈরির আঁতুড়ঘর এমন একটা বিশ্বাস মোটামুটি তৈরি করে দিতে পেরেছে। সঙ্গে চকোলেট বোমা পাওয়া যাক বা অন্য কিছু। প্রথম থেকে তৃতীয় সারির সমস্ত সংবাদমাধ্যমে নাশকতার যাবতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে মুসলমান পরিচিতিকে সমানে সামনে নিয়ে আসার খেলাটা চলতেই থাকে। এবং তা সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা যে সব ধর্মেই একইভাবে রয়েছে তা খুব সহজে সংবাদমাধ্যমের টিআরপি, বিজ্ঞাপনের বাজারে হারিয়ে যায়। সংবেদনশীলতা ভুলিয়ে সে শুধুই মুহূর্তের উত্তেজনা তৈরিতে মন দেয় আর তার ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে। সল্টলেকে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষক হওয়াটা যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক, তেমন আবার শিক্ষক না-হয়ে তাঁরা অন্য যেকোনও পেশার হলেও একই প্রশ্ন তোলা জরুরি ছিল।

 

এখন এ-রাজ্যে বিজেপি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে তার শক্তি, সমর্থন বাড়ানোর পরিকল্পনায় ধর্মীয় জিগির তুলছে, ফলে এ-ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আরও বেশি করে হওয়া প্রয়োজন। কেবলমাত্র সামাজিক মাধ্যমেই নয়, পথে নেমে প্রতিবাদ করাটাও সময়ের দাবি। তবে এই পরিস্থিতি নতুন নয়, মুসলমান পরিচিতির কারণে সামাজিকভাবে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে পূর্বতন শাসক ও বিরোধীদের আমলেও। এই কলকাতার ভেতরেই কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলকে দেগে দেওয়া হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত বলে, সেইসব এলাকার ঐতিহাসিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক গুরুত্ব মনে রাখার বদলে সেগুলি সম্পর্কে নানা গুজব ও মিথ্যে রটনা তৈরি করা হয়েছে এই শহরেই। বলা হয়েছে তাঁরা ‘ঘেটো’ করে থাকেন। অথচ একজন সাধারণ মুসলমান (অর্থাৎ সেলিব্রেটি কেউ নন বা জনপ্রিয় নন বা অত্যন্ত ধনী নন) কেন খুব সহজে কলকাতার অন্য অঞ্চলে চাইলেই বাড়ি ভাড়া করতে বা কিনতে পারেন না – হ্যাঁ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও – তার উত্তর কলকাতার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বাঙালির কাছে হয় নেই বা তারা এড়িয়ে যেতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। কলকাতার বহু পুরনো পাড়াতেও মুসলমান প্রতিবেশি খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়। তেমন অনেক পাড়ার মধ্যে আছে আরও একটি ছোট পাড়া, যেখানে নির্দিষ্টভাবে মুসলমান পরিচিতির মানুষেরা বাস করেন। সুন্দর সহাবস্থান! এমনও শুনেছি দীর্ঘদিন সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করা, কাজের প্রয়োজনে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানো, পাশের জেলার, ধর্মীয়ভাবে মুসলমান পরিচিতির একজন বাঙালি মহিলাকে এই কলকাতাতেই শুনতে হয়েছে, ‘বাহ্‌ আপনি খুব ভালো বাংলা বলেন তো!’ তিনি অবাক হয়ে ভেবেছেন যে ভাষায় তিনি সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ, সেই মাতৃভাষা বাংলার বদলে আর কী হবে বলে সামনের মানুষটি আশা করেছিলেন?

 

এখনও যদি কলকাতার বাঙালিরা নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই দ্বিচারীতা বোঝার চেষ্টা না-করে, তাহলে তার চেয়ে মর্মান্তিক কিছুই হবে না।

 

  • লেখক ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং স্বতন্ত্র সাংবাদিক

 

  • Feature Image courtesy : socialnews.xyz

 

Share this
Leave a Comment