এ জাতীয় অভিযানের রিপোর্ট করার সময় কেন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকমণ্ডলী মনে রাখবে না — রাষ্ট্র এবং হিন্দুত্ব ও সংখ্যাগুরুবাদী কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বারা ধারাবাহিক ভাবে সংঘঠিত গর্হিত গোপন কর্মকাণ্ডের ইতিহাসকে? তাদের অনেকেই সংবাদ থেকে সম্পাদকীয় নিবন্ধে তো ধারাবাহিক ভাবে এই গর্হিত কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত ভিন্ন বয়ান প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন ! প্রশ্ন তুললেন দেবাশিস আইচ।
# মিডিয়ার এই প্রশ্নহীন আনুগত্য কেন?
#’জঙ্গি’দের ছবি, পরিচয় মিডিয়া কোথা থেকে পেল? ছবির প্যানেল, পরিচয়ের নীচে ‘সূত্র’ নেই কেন?
# এনআইএ কি ধৃতদের ছবি গোপনে সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দিল?
# এভাবে অভিযুক্তের ছবি, পরিচয় ছাপা যায়? আইন কী বলছে?
# আইন ও এনআইএ-কে বাঁচাতেই কি সংবাদমাধ্যম সূত্র উল্লেখ করেনি?
# এলগার পরিষদ থেকে এনআরসি-সিএএ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিবাদ, ক্ষোভ-বিক্ষোভকে অপরাধ হিসেবে মান্য করে তুলেছে অমিত শাহ নিয়ন্ত্রিত এনআইএ ও দিল্লি পুলিশ — নির্বাচনের আগে বাংলার মুসলিম সমাজকে এবং তাঁদের ন্যায্য প্রতিবাদের অপরাধীকরণ করতে চাওয়া হচ্ছে?
# কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ — মোদী-শাহের দুই চোখের বালিকে কি তাই একসূত্রে গেঁথে ফেলা?
# বাংলার প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে মুসলমান বিরোধী (ভগবানে ভীত এক-আধটি সংবাদমাধ্যম ভিন্ন) দাঙ্গা বাঁধানো এবং তাকে মদত দেওয়া সম্ভব নয় বলেই কি এই ‘নিকৃষ্ট’ পথ?
# একটি ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সংগঠন, একাধিক ‘হিন্দু জঙ্গি’ জাতীয় মামলায় অভিযুক্তদের ক্লিনচিট দেওয়ার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের মোডাস অপারেন্ডিকে প্রশ্ন করা হবে না কেন?
# এ জাতীয় অভিযানের রিপোর্ট করার সময় কেন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকমণ্ডলী মনে রাখবে না — রাষ্ট্র এবং হিন্দুত্ব ও সংখ্যাগুরুবাদী কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বারা ধারাবাহিক ভাবে সংঘঠিত গর্হিত গোপন কর্মকাণ্ডের ইতিহাসকে? তাদের অনেকেই সংবাদ থেকে সম্পাদকীয় নিবন্ধে তো ধারাবাহিক ভাবে এই গর্হিত কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত ভিন্ন বয়ান প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন!
এর পরও অজস্র অর্ধসত্য ও চূড়ান্ত মিথ্যে ছড়াবে সংবাদমাধ্যম। এবং এই মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়াবে ‘সূত্র’, ‘ওয়াকিবহাল মহল’ এবং এনআইএ/গোয়েন্দাদের নামে-বেনামে। টিভি মিডিয়া লেলিয়ে দেবে তাদের বুমবাহিনীকে। এবং ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে হয় ‘এক্সক্লুসিভ’ বা ‘ব্রেকিং’ নয় চাকরি বাঁচানোর শর্ত। যেমন হয়েছিল, সুশান্ত-রিয়া এপিসোডে। জাতীয় সংবাদমাধ্যম বাংলা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মুসলমান জঙ্গিদের ত্রাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাজার মাতিয়ে দেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁদের চোখ রাঙিয়ে, ধমকে-চমকে, বিজ্ঞাপন বন্ধ করে কিংবা বিজ্ঞাপন ঢেলে ‘পন্থী’ করে তুলেছিলেন — তারা কেউ তাঁর পাশে থাকবে না। তা এ-সময়ে সরকারের ‘প্রেস রিলিজ’ ছাপা বেনেট এন্ড কোলম্যানের গোয়ালের সংবাদমাধ্যম হোক কিংবা ভগবানে ভীত সংবাদমাধ্যম। আম্বানি কিংবা গোয়েল পোষিত সংবাদমাধ্যমও নয়। যাদের মাথায় ‘নিজের লোক’ বসানো হয়েছিল। প্রথম দিনের প্রতিবেদন ও সম্প্রচারেই তা স্পষ্ট। টিআরপি ও সার্কুলেশনের অর্থনীতিই এখানে শেষ কথা বলবে। বলবে কেননা সেই মুসলমান বিরোধীতার মানসিক গণভিত্তির শেকড় বহুদূর ছড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যম তার ষোলআনার জায়গায় আঠারো আনার ফায়দা তুলবে।
দুর্ভাগ্য শিখর স্পর্শ করবে যদি, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাম-গণতান্ত্রিকশক্তি নারদ নারদ করে বসে। ‘গণশক্তি’ অন্তত প্রথমদিনে এনআইএ-র বয়ানকে ‘ধ্রুবসত্য’ বলে প্রচার করেনি। নামগোত্রহীনরা প্রশ্ন তুলছেন। এটুকুই যা বাঁচোয়া।
- লেখক সাংবাদিক এবং সামাজিক কর্মী।