২০২০ সালের মার্চ মাসের পর আর ‘ভীমা কোরেগাঁও কমিশন অব এনকোয়ারি’র কোনও কাজ হয়নি। এ বছর ৮ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মেয়াদ বৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু,ভীমা কোরেগাঁও মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে ‘ডাইনি শিকার’ অব্যাহত রেখেছে এনআইএ। তারা ‘চক্রান্তকারী’ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাঁর সাম্প্রতিকতম শিকার হলেন অধ্যাপক পার্থসারথি রায়। গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট।
ভীমা কোরেগাঁও এলগার পরিষদ মামলায় বিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মী পার্থসারথি রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি বা এনআইএ। সম্প্রতি এই বিজ্ঞানীর কর্মস্থল আইআইএসইআর-এ পৌঁছেছিলেন এনআইএর তদন্তকারীরা। কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিগত কারণে পার্থ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে তাঁকে মুম্বাইয়ে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ‘সাক্ষী’ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় বলে জানা গিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমকে ইতিমধ্যেই তিনি জানিয়েছেন, ভীমা কোরেগাঁও আন্দোলন কিংবা ওইদিন অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি তিনি পুণেতে উপস্থিতিই ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার পরে তিনি ওই বিষয়ে জানতে পেরেছেন। ( https://www.edexlive.com/news/2020/sep/05/sad-that-i-am-harassed-on-teachers-day-nia-iiser-prof-witness-in-elgar-parishad-case-14424.)
২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এলগার পরিষদের ডাকে পুণেতে এক দলিত সমাবেশ হয়। ব্রিটিশ ও দলিত সৈন্যদের কাছে ব্রাহ্মণ পেশোয়ার সাম্রাজ্যের পতনের ঘটনাকে মনে রেখে প্রতিবছরই দলিত সংগঠনগুলি এই সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু ওইদিন মিলিন্দ একবোতে ও শম্ভাজি ভিদের নেতৃত্বে এই সমাবেশের বিরোধীতায় নামে বিজেপি সমর্থিত ব্রাহ্মণ্যবাদী মারাঠা সংগঠনগুলি। ভিদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘গুরুজি’ বলেও খ্যাত। ওইদিন বিকেলে একবোতে-ভিদের প্ররোচনায় পুণেতে ব্যাপক হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই ঘটনায় দলিত নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতার করে পুণে পুলিশ। একবোতে ও ভিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্ত্বেও কোনও আইনি ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এর পরপরই মহারাষ্ট্রের তৎকালীন বিজেপি সরকারের নির্দেশে দলিত-আদিবাসী ও মানবাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দেশের বিশিষ্ট বিদ্বৎজ্জন, অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিকদের গ্রেফতার করতে থাকে পুণে পুলিশ। একে একে গ্রেপ্তার হন, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গঞ্জালভেজ, মহেশ রাউত, সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেন, সুধীর ধাওয়ালে, রোনা উইলসন, ভারভারা রাও।
তাঁদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থা বিরোধী আইন, ইউএপিএ, সরকার ফেলে দেওয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীকে খুনের চক্রান্ত-সহ নানা ধারায় মামলা করা হয়। বিজেপি সরকারের পতনের পর এই মামলার এবং পুণে পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জোট সঙ্গী কংগ্রেস ও বিশেষভাবে এনসিপির শারদ পাওয়ারের তীব্র সমালোচনা এবং এসআইটি গঠনের দাবি উঠতেই কেন্দ্রীয় সরকার রাতারাতি মামলাটি মহারাষ্ট্র পুলিশের হাত থেকে নিয়ে এনআইএর হাতে তুলে দেয়। এনআইএ দায়িত্ব নেওয়ার পর এপ্রিল মাসে বিশিষ্ট অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বে এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নাভালকাকে গ্রেপ্তার করে। জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করা হয় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমটি হানি বাবুকে। বিগত দু’বছর ধরে এই মামলার বিরুদ্ধে বারংবার আবেদন জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট মানুষ, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলি। শীর্ষ আদালতও তাঁদের আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে। এদিকে অতিমারি ও লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর আর ‘ভীমা কোরেগাঁও কমিশন অব এনকোয়ারি’র কোনও কাজ হয়নি। এ বছর ৮ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মেয়াদ বৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে ‘ডাইনি শিকার’ অব্যাহত রেখেছে এনআইএ। তারা ‘চক্রান্তকারী’ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যাঁর সাম্প্রতিক তম শিকার হলেন অধ্যাপক পার্থসারথি রায়। পার্থসারথি, নিখিল সিং রাঠোর, পিকে বিজয়ন -সহ আরও নয় বিজ্ঞানী, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, সাংবাদিক বিগত প্রায় একবছর ধরেই স্পাইওয়ারের সাহায্যে নজরবন্দি বলে দাবি জানিয়েছে আমিনেস্টি ও সিটিজেন ল্যাব। ( https://www.amnesty.org/en/latest/research/2020/06/india-human-rights-defenders-targeted-by-a-coordinated-spyware-operation/)
কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির যাঁরা মুখ্য সমালোচক এবং একই সঙ্গে দলিত-আদিবাসী এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকারের লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন এবং এখনও চলেছেন, পাশাপাশি ভীমা কোরেগাঁও মামলায় যাঁরা বিভিন্নভাবে সুধা ভরদ্বাজ, ভারভারা রাওদের সহায়তা দিয়ে চলেছেন তাঁদের মুখ বন্ধ করাই এখন কেন্দ্রীয় সরকার ও এনআইএর প্রধান লক্ষ্য। এমনই মত দেশ-বিদেশের দলিত ও মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের। ইতিমধ্যেই পার্থসারথি রায়কে নোটিশ পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা করে প্রতিবাদ সভা করেছে রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।
এক প্রেস বিবৃতিতে আসানসোল সিভিল রাইটস অ্যাসোসিয়েশন জানায় :
“এই ঘটনা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কে স্তব্ধ করার এক ঘৃণ্য ফ্যাসিস্ট চক্রান্ত। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। একই সঙ্গে এই ভুয়ো মামলা প্রত্যাহার ও এখনো পর্যন্ত আটক সবার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”
https://s.docworkspace.com/d/ANqU0a6rqbInqZHL3t2dFA