প্রয়াত কবি সুমিত চট্টোপাধ্যায় ‘এসময়’পত্রিকার জন্য এই সাক্ষাৎকারের পরিকল্পনা করেছিলেন। অনিবার্য কারণে এটি প্রকাশিত হয়নি। পরবর্তীতে ‘সোঁতা’ পত্রিকায় ২০০১ সালের বইমেলা সংখ্যায় এই সাক্ষাৎকার-সহ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজরিত একগুচ্ছ লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা সেই সাক্ষাৎকারটি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হুবহু তুলে ধরলাম। সম্পাদকমণ্ডলী।
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি সকাল :
সুমিতা চক্রবর্তী
৭ এপ্রিল, ১৯৮৫। রবিবার। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন এবং একটু ভালো আছেন শুনে সকালবেলা গেলাম তাঁর কাছে। ইচ্ছে ছিলো- জেনে নেবো কিছু কথা। সঙ্গে ছিলেন ‘এসময়’- এর সম্পাদক সুমিত চট্টোপাধ্যায় আর কল্লোল দাশগুপ্ত। কিছু পরে এলেন কবি সমীর রায়।
পরিচ্ছন্ন ছোট ঘরটিতে বালিশে ভর দিয়ে বসেছিলেন তিনি। শীর্ণ শরীর- নিশ্চয়ই কষ্টও ছিলো কিছু। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধির কালো ছাপ পড়েনি তাঁর মুখে বা কথায়। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় খুব নিবিড় ছিল না। কিন্তু যে মুক্ত সরল বাক্যালাপ শুনেছিলাম সাত বছর আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনা-চক্রে; যে উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখেছিলাম কয়েক বছরের বইমেলায় লিটল্ ম্যাগাজিন স্টলগুলোর সামনে- সেই অমলিন প্রাণময়তায় সেদিনও ঘাটতি ছিল না কোথাও। তিনি কথা বলছিলেন, হাসছিলেন- আমার প্রশ্নের জবাব দিতে তক্ষুণি রাজি। জিজ্ঞেস করলাম- ‘কথা বলতে কষ্ট নেই তো?’ বললেন- ‘না। কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসছেন যে- লিখবেন নাকি?’ বললাম- ‘একটু লিখি। সব কি মনে রাখতে পারবো?’ হাসলেন- ‘কিন্তু যে কথাগুলি গোপন রাখতে বলবো তা লিখতে পারবেন না।’ বললাম- ‘কোন কথাগুলি গোপনীয় তা বলে দেবেন।’ মাঝে মাঝে আসছিলেন শ্রীমতী চট্টোপাধ্যায়। শরবত দিলেন। ক্বচিৎ দু’একটি কথাতেও যোগ দিচ্ছিলেন। সহজ ও সরস পরিবেশে কথা শুরু হলো। সদ্য হাসপাতাল প্রত্যাগত ক্যানসার রোগীর ঘরে কি করে সেই সরসতা সম্ভব হয়েছিল- আজ ঠিক কল্পনা করতে পারছি না। কিন্তু হয়েছিল। সেই সকালটির কথা কখনোই ভুলবো না।
বামপন্থী চিন্তাভাবনা কবে থেকে শুরু করলেন?
জগবন্ধু ইনস্টিটিউশনে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ে টেররিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। এক বন্ধু একদিন আড়ালে ডেকে বললো- মরতে ভয় পাস? সে বয়সে ও কথার একটাই উত্তর হয়- না। সে পাড়ার দু’একজন নেতার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। অনুশীলন দল। দলের ভেতরের কথা সামান্যই জানতাম। দেশ স্বাধীন করতে হবে- এটুকুই বুঝেছিলাম। কাজ বলতে চিঠিপত্র আর খবর পৌঁছে দেওয়া ছাড়া কিছুই করিনি। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রশ্ন জাগলো। তাঁদের শিক্ষা ছিলো- নাটক নভেল পড়বে না, ধর্মগ্রন্থ পড়বে, মেয়েদের দিকে তাকাবে না- এসব যুক্তিসঙ্গত লাগতো না। ছেলেবেলা থেকে বই পড়েছি প্রচুর। বাবার বাক্সভর্তি বই ছিলো। ইংরেজি, বাংলা। ক্রমেই দলাদলি ও সংকীর্ণতার আভাস পাচ্ছিলাম। নেতাদের ওপর শ্রদ্ধা থাকছিলো না। একদিন একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কথাপ্রসঙ্গে পূর্ববঙ্গবাসীদের প্রতি ঘৃণামিশ্রিত কটূক্তি করেন। খুব আঘাত পাই। আমি তো বাঙাল নিশ্চয়ই। তাঁর দলে পূর্ববাংলার কত ছেলে আছে। আমি তো তাঁর কথায় প্রাণ দেবার জন্য প্রস্তুত অথচ তিনি কত গভীরভাবে ঘৃণা করেন আমাদের। তখন ক্লাস টেন-এর ছাত্র। তারপরই দল ছেড়ে দিলাম। দলেরও তখন ভাঙা অবস্থা। আমাকে ধরে রাখার বা শাস্তি দেবার ক্ষমতা তাঁদের ছিলো না। সেই সময়েই একবার পাড়ার কিছু বন্ধুর সঙ্গে এক বামপন্থী মিছিলে যোগ দিই। বামপন্থা সম্পর্কে ভাবনার সেই শুরু। সময়টা ১৯৩৫ সাল মতো।
সেই চিন্তার ক্রমবিকাশ কীভাবে ঘটলো?
নিয়মমাফিক কোন ক্রমবিকাশ হয়নি। ম্যাট্রিক পাশ করে রিপন কলেজে ভর্তি হই। কলেজের ছেলেরা মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা করতো- নিজেদের মার্কসবাদী বলতো কেউ কেউ। বামপন্থী হওয়াটা ছিল ফ্যাশন। কিন্তু সাধারণ কর্মীদের প্রতি নেতৃত্বের একটা উদাসীন ও উন্নাসিক মনোভঙ্গি ছিলো। কোন প্রশ্নের ঠিকমতো জবাব কেউ দিতেন না। কিছু বুঝিয়েও দিতেন না। আমার কোন পলিটিক্যাল পড়াশোনা ছিলো না। সুভাষচন্দ্রকে যখন বামপন্থীরা নিন্দা করেন তখন তা ভালো লাগেনি। ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম- মনে পড়ে। এইভাবে কিছুটা বন্ধুদের সঙ্গ থেকে, কিছুটা নানা জায়গায় যাতায়াত করতে করতে ১৯৪০ নাগাদ বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ হয়ে যায়। ফোর্থ ইয়ারের পর কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিই। অনিয়মিতভাবে দলের কিছু কিছু কাজ করি। প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের কিছুটা সংস্পর্শে আসি। কিন্তু পুরোপুরি দলীয় ব্যক্তিদের- নেতাদের তখনও আমার খুব মন থেকে ভালো লাগতো না।
প্রশ্নঃ লেখা শুরু করলেন কীভাবে? কবে থেকে?
উত্তরঃ কলেজে থাকতে খাতায় কবিতা লিখতাম। বিশেষ ছাপা হতো না। পার্টির সূত্রেই আমি ১৯৪২ সালের কাছাকাছি সময় থেকে ‘অরণি’ পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করি। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫- এর মধ্যে ‘বসুমতী’তেও অনেক লেখা বেরিয়েছে। একটু একটু করে পরিচয়ের সীমানা বাড়ে। কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে ১৯৪৪-এ খুব ঘনিষ্ঠতা হয়। অরুণ মিত্রের বাড়িতেও যেতাম। ১৯৪৪ থেকে ‘কবিতা’, ‘পরিচয়’ ও ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় কিছু কিছু লিখেছি। কলেজে আমার অধ্যাপক ছিলেন বুদ্ধদেব বসু ও বিষ্ণু দে। কিছু পরিচয় ছিলো। ‘সাহিত্যপত্র’ যখন বেরোলো প্রথম তিন সংখ্যাতেই কবিতা লিখেছিলাম। ১৯৪৬-৪৭ এ প্রচুর লিখেছি, প্রচুর ছাপাও হয়েছে।
একটা কথা। আপনি বলছেন, সেই সময়ে বামপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো আপনার। কিন্তু যে পত্রিকাগুলিতে লিখছেন তার মধ্যে ‘কবিতা’ ও ‘পূর্বাশা’ তো সম্পূর্ণ অ-রাজনৈতিক চরিত্রের ছিলো- তাই না?
পার্টির সঙ্গে আমার খুব গভীর যোগাযোগ কখনও ছিলো না। সভাসমিতি বা মিছিলে যেতাম কিন্তু কারণটি বিবেচনা করে যাবার চেষ্টা করতাম। আমার ব্যক্তিগত সমর্থন থাকলে তবেই যেতাম। আর, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হাত দেওয়া ভালো লাগতো না। আমি চিরকালই সব ধরনের পত্রিকায় কিছু কিছু লিখেছি।
চাকরি করতেন না কিছু?
১৯৪২ থেকে চাকরি শুরু করি আমার দাদারই প্রতিষ্ঠান- ঢাকুরিয়া ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনে। তখন দেশি ব্যাঙ্ক ছিল সব। ১৯৪৮-এ সেই ব্যাঙ্ক ফেল করে। আমিও বেকার হয়ে যাই। প্রায় পাঁচ বছর বেকার ছিলাম।
তখন সংসার ছিলো?
হ্যাঁ। ১৯৪৪-এ বিয়ে করি।
চলতো কী করে?
প্রায় চলতো না। ‘ক্রান্তি’ এবং ‘গণবার্তা’য় কিছু কিছু কাজ করতাম। ‘ক্রান্তি’-তে মাসে কুড়ি আর ‘গণবার্তা’ থেকে মাসে চল্লিশ- এটাই নিয়মিত আয় ছিলো। ‘পূর্বাশা’য় চাকরি পেলাম তারপর। কিন্তু মাসের শেষে মাইনে আর পাই না। অনেক ঘোরাঘুরির পর একশো টাকা আদায় হলো। আর যাইনি। সেই সময় রেস খেলতাম খুব।
রেস? মানে ঘোড়া?
হ্যাঁ। মরিয়া অবস্থা হয়ে উঠেছিলো।
কখনো জিতেছিলেন?
কখনো না। তারপর ১৯৫২-তে চাকরি পাই আমার বড়দার চায়ের ব্যবসায়ে। যেতে হলো পূর্ববাংলা- এখন বাংলাদেশ। বেতন একশো টাকা। কিছুদিন পরে ছেড়ে চলে আসি। তারপর সেই পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দিই। কিছুদিন আগে পর্যন্তও সেই যোগ ছিলো। তবে ব্যবসা আমার ভালো লাগে না। রীতিনীতিও বুঝি না। সেখান থেকে প্রাপ্যের অনেক কম পেয়েছি চিরকাল।
রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের ব্যপারটা বলুন। তারপর কী হলো?
ঐ ‘ক্রান্তি’ আর ‘গণবার্তা’য় কাজ করার সময়ে যোগাযোগ হলো আর এস পি-র সঙ্গে। এখনো সে যোগ আছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আর এস পি-র সঙ্গেই আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা। তবে প্রধানত পত্রপত্রিকাগুলির সঙ্গেই আমার সংযোগ। আর এস পি-র মত ছিলো- সাহিত্যে পার্টির নির্দেশ প্রাধান্য পাবে না। আমারও মত তাই। ওরা পত্রিকা চালানোর ব্যাপারে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করতো না। আমার অন্য কোথাও লেখাতেও কোন বাধা ছিল না।
তাহলে আর এস পি-ই আপনার পার্টি?
তা-ও ঠিক নয়। দলীয় সংকীর্ণতা, ক্ষমতালাভের চেষ্টা করা তাদের মধ্যেও দেখেছি। একবার আর এস পি-র ক্যান্ডিডেট ছিলো বলে বাঘা যতীন স্কুলে আমার চাকরি হয়নি যোগ্যতা সত্ত্বেও। আমি আর এস পি-র পরিচিত ছিলাম কিন্তু পার্টির ক্যান্ডিডেট ছিলাম না। পরে কিন্তু সেই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক খুব দুরবস্থার সময়ে কিছুদিন স্কুলে চাকরি দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। আর এস পি-এর মতাদর্শ, সংগঠন- এসবের সঙ্গেও আমার তেমন কোন যোগ ছিল না। তবু বলবো ওদের পত্রিকার সঙ্গে আমার দীর্ঘকালের সংযোগ। সেখানে নিজের মতো করে কাজ করতে পেরেছি। এই দলের বহু সদস্যের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত প্রীতির সম্পর্ক। বহু ভালো লোক দেখেছি তাঁদের মধ্যে।
‘দেশ’-এ কখনো লিখেছেন?
হ্যাঁ। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় ছিলো। একসময়ে মনোমালিন্যও হয়েছিলো। তখন তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথাই অনেককে বলেছি। নীরেন কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলেননি। মহাজাতি সদনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এগিয়ে আসায় আমরা আবার বিরুদ্ধতা কাটিয়ে উঠি। নীরেনের কথায় ‘দেশ’-এ লিখেছি। তারপর ১৯৬১-৬২ তে ‘দেশ’গোষ্ঠী যখন স্বাধীন সাহিত্যের সমর্থনে অনেক কথা বলতে শুরু করে- তার বিরুদ্ধে লিখেছি ‘দর্পণ’-এ, ‘সাপ্তাহিক বসুমতী’তে। এই স্বাধীন-সাহিত্য- বিরোধিতার সূত্রেই আবার কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হলো। ‘পরিচয়’ তখন আমাকে লিখতে বলে, খুব ছাপেও আমার লেখা। কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে ভাঙন ধরছে- সেটা তখন বুঝতে পারিনি। সি পি আই আমাকে তাদের লেখক হিসেবে অনেকটা গ্রহণ করে।
কম্যুনিস্ট পার্টির ভাগ হওয়া, চীন আক্রমণ ইত্যাদি সময়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিলো?
রাজনৈতিকভাবে তখন একেবারেই সক্রিয় ছিলাম না। পত্রিকা চালাই আর লিখি। নিজের মতো করে দেশের কথা বলার চেষ্টা করি। তার মধ্যে কোন দলীয় মতবাদ ছিলো না।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখার কথা সবসময়ই ভেবেছেন তো?
ওভাবে কখনো কিছু ভাবিনি বা বলিনি। নিজের যখন যা মনে হয় সহজভাবে তাই বলার চেষ্টা করি। কোন তত্ত্বই আমি কোনদিনই তেমন বুঝিনি। আজও বুঝি না। মার্কসবাদ সম্পর্কে অনেককাল কিছুই পড়িনি। পরে কিছু পড়েছি। খুব বেশি নয়।
নকশালপন্থীদের সঙ্গে যোগের কথা বলুন।
নকশালপন্থীদের সঙ্গে কোন যোগই ছিল না। প্রথম প্রথম কাগজে পড়তাম। কোন উৎসাহ বোধ করিনি। মতামতের সমর্থকও ছিলাম না। কোন কোন কাজের প্রবল বিরোধী ছিলাম। এখনও আছি। স্কুল আক্রমণ করার, ছাত্রজীবন নষ্ট করার কোন যুক্তি নেই। স্কুল হলো নতুন কর্মী বেছে নেবার, তৈরি করবার জায়গা। স্কুল ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে কোন বিপ্লব হয় না। কিন্তু তারপর ক্রমেই সরকারের অত্যাচার দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে উঠলাম। এই পাড়ার অল্প বয়সের ছেলেরা- শুধু মিছিল করছে, সভা করছে বলে- যেভাবে অত্যাচার হয়েছে তাদের ওপর, জেলে নিয়ে গিয়ে বিনা বিচারে মেরে ফেলা হয়েছে- তারা তো ক্রিমিনাল নয়। দেশের জন্য ভিন্ন এক শাসনব্যবস্থার কথা ভাবছে- এই অপরাধে গণতান্ত্রিক সরকার যদি এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায় তাহলে তার প্রতিবাদ করা উচিত মনে করেছি। সেজন্যই তাদের মনে করে, তাদের উদ্দেশে, অত্যাচারের প্রতিবাদে আমার কবিতা।
তাহলে নকশালপন্থীদের সঙ্গে আপনার কোন যোগই ছিল না?
জেলে ওরা আমার কবিতা পড়েছিল কেউ কেউ। অনেকে জেল থেকে বেরিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আরো নকশাল ছেলেরা যাওয়া-আসা শুরু করে। তাদের পত্রপত্রিকায় আমার কবিতা চায়। আমিও তাদের দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক যোগাযোগ যোগাযোগ তাকে বলে না। মতামতের মিল-অমিলের কথাও তেমন ওঠেনি। তারপরে তো ওদের মধ্যেও মতবিরোধ। দল ভেঙে গেলো। আমার প্রতিবাদ শুধু সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। আমার সমর্থন শুধু নতুন সমাজব্যবস্থার চিন্তার প্রতি। আমি বড় কিছু করেছি বলতে পারি না। তবে আমার সাধ্যের মধ্যে যেটুকু বলা উচিত মনে হয়েছে সেটুকুই শুধু বলেছি।
আরো অনেক কথাই জানার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সকাল শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আর কথা বলানোও উচিত মনে হয়নি। ভেবেছিলাম- আবার কখনো যাবো। অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিলো। আমরা- তথাকথিত সুস্থরা- ঠিক বুঝি না সময়ের সত্যিকারের দাম।
তাই নিয়ে নচিকেতা, তবু তুমি গড়বে প্রতিমা?
অন্ধ হবে, বোবা ও অধীর
তবু ক্লান্তিহীন, মৃত্তিকায় পুনর্জন্মের অস্থির
জিজ্ঞাসায় মৃত্যুর তুষার
বারবার হেঁটে হবে পার?
অগ্নিদগ্ধ দুই হাতে কতবার খুলবে তুমি যমের দুয়ার?
এত জরুরি আর গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল। এটা অনেক অনেক বেশি প্রচার পাওয়া উচিত ছিল। এমন মিতবাক অথচ সটান স্বীকৃতি নিজের ভাবনা মনোভঙ্গির! মনে হয় অনেক কবির, অনেক সাংস্কৃতিক কর্মীর নিজেদের জন্য অবশ্যপাঠ্য হতে পারত এই অল্প কটি কথা।