স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের কাছে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দাবিসনদ দিল ১৪টি সংগঠন


  • August 27, 2020
  • (1 Comments)
  • 3088 Views

গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন

 

পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের, মূলত প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রায় ১৪টি লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী, ছাত্র ও মানবাধিকার সংগঠন ২৬ আগস্ট, বুধবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধ্যক্ষ সচিবের কাছে একটি দাবিসনদ পেশ করেন। এই সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে কিছু সময় প্রতিকী অবস্থানের পর এই দাবি সনদ তুলে দেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের হাতে। এই দাবি সনদের মূল বিষয় – “মহিলা, রূপান্তরকামী মানুষ, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষদের জন্য কোভিড ব্যতীত অন্যান্য চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা জরুরি ভিত্তিতে পুনরায় চালু করার দাবী”। এই দাবি সনদে স্বাক্ষর করেছেন অহল্যা, অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উওমেন’স অ্যালায়েন্স, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস্‌ অ্যাসোসিয়েশন, চিত্রাঙ্গদা, দশ থেকে দশ হাজার, ফেমিনিস্টস ইন রেজিসট্যান্স (এফআইআর), কলকাতা আনন্দম ফর ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড জাস্টিস, মৈত্রী – আ নেটওয়ার্ক অফ অর্গানাইজেশনস্‌ অন উওমেন’স রাইটস্‌ ইন বেঙ্গল, নারী চেতনা, রিফ্রেকশান, রাইট টু ফুড অ্যান্ড ওয়ার্ক ক্যাম্পেন, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, শ্রমজীবী নারী মঞ্চ, উওমেন অ্যাগেইনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স অ্যান্ড স্টেট রিপ্রেশন (ডব্লিউএসএস)।

 

বর্তমান কোভিড ১৯ মহামারীকালীন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা – মনে করছেন অতিমারী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গিয়ে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা উপেক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে দুর্দশার মধ্যে পড়ছেন নারী, রূপান্তরকামী মানুষ, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষেরা। অ-কোভিড রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও ন্যূনতম পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত অসুবিধার দিকে তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ও সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো তৈরি করছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

 

এই দাবিসনদে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে তা নীচে দেওয়া হল:

 

খাদ্য ও পুষ্টি

 

বিশ্বব্যাপী অতিমারীর সময় ক্ষুধা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার আশ্চর্যজনকভাবে উদাসীন।

 

    • দেশব্যাপী লকডাউনের সময়ে ভারতের অপুষ্টি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকগুলি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পরিণত করা হয়েছিল।

 

    • লকডাউন ও তার পরবর্তীতে চাকরির সঙ্কটে ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পরিবারভিত্তিক খাদ্য সংস্থানের সংক্ষেপণ দেখা দেয় এবং বেড়ে চলে অপুষ্টি এবং ক্ষুধার হার, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। আমাদের মতো অসাম্যের সমাজে মহিলা এবং বিশেষ প্রয়োজনসমৃদ্ধ শিশুরা এর ফলে অনেক বেশি বিপন্ন। একটি পুষ্টিকর আহারে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দানাশস্য, ডাল এবং রান্নার তেল। পিডিএস-এর মাধ্যমে ন্যূনতম স্বাস্থ্যকর খাবার যোগানের বদলে সরকার সেই শস্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৬৭% জনসংখ্যা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা অধিকার আইনের অধীন থাকার কথা কিন্তু কেবল ৬২% মানুষ এই আইনের অধীন যার ভিত্তি ২০১১ জনসংখ্যা সমীক্ষা, এর দরুন ৩.৫ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। ১ জুলাই অবধিও ৯৪.৪২ কোটি টন খাদ্যশস্য ভারত রাষ্ট্রের অধীনে ছিল যা কাজে লাগানো যেত খাদ্য সঙ্কট দূরীকরণের জন্য। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ২ প্রকল্পের আওতায় সমস্ত বিধি ভঙ্গ করে আরও ১.৫ কোটি মানুষের খাদ্যশস্যের উপরে নামিয়ে আনা হল গভীর অনিশ্চয়তা। রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার নানা বিভ্রান্তকারী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিথ্যাচার করে চলেছেন অথচ বাস্তব পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে এক অন্য সত্যের।

 

    • জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন ২০১৩ (ধারা ৮) অনুযায়ী স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বাচ্চাদের গরম রান্না করা খাবারের পরিবর্তে সরকার এই সময়ে নগদ এবং খাদ্যশস্যের খাদ্য সুরক্ষা ভাতার প্রতিশ্রুতি দেয়। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে কীভাবে এই সময়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে এবং গর্ভবতী, স্তন্যদায়ী নারীসহ শিশুরা লকডাউনের পরে অঙ্গনওয়াড়ি এবং খাদ্য সুরক্ষার আওতায় কেবল আলু এবং চাল পেয়েছে। আইসিডিএস স্কিমের তালিকাভুক্ত ডিম, ডাল এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

 

    • প্রায় ১৭০০০ টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ২৬৯ কোটি টাকার ভাতা এই সময় বাচ্চাদের স্কুল থেকে পাওয়ার কথা ছিল, যা তারা পায়নি। ৪.০২ টন ডাল, ২০০০ টনেরও বেশি খাদ্যশস্য এবং ৩৮৩২৮৮৯৯৭৬টি ডিম আইসিডিএসের আওতাভুক্ত অঙ্গনওয়াড়িগুলি থেকে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি। রাজ্যস্তরে আইসিডিএস আওতাভুক্ত মানুষদের প্রাপ্য প্রায় ৪২৪.৭৫৫ লক্ষ টাকা চুরি হয়েছে। ফিল্ড রিপোর্ট এবং সরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী লকডাউনের পরে রাষ্ট্রীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় একজন নারীও মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসাবে প্রাপ্য ৬০০০ টাকা পাননি।

 

    • টিকাদান, স্বল্প আয়ের বাচ্চাদের ডে-কেয়ার, বাচ্চাদের জন্য টিকাদানের সময়সূচী নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা কিনা অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের কাজ তা অতিমারীর দোহাই দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষদের এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন, অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের পক্ষে টিকাদানের প্রক্রিয়ায় নথিভুক্তিকরণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

    • শ্রমিকদের রেশন এবং অঙ্গনওয়াড়ি বা স্কুল থেকে শিশুরা প্রত্যেকদিন মিড ডে মিল থেকে লাগাতার বঞ্চিত হয়ে চলেছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড এখনো যাদের তৈরি হয়নি বা এই পরিস্থিতিতে সংগ্রহ করতে পারেননি সেই সমস্ত প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যৌনকর্মী, ভিক্ষুক, হিজড়া ব্যক্তি এবং গৃহহীন মানুষ নিয়মিতভাবে প্রাপ্য রেশন থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছেন।

 

যৌন এবং প্রজননজনিত স্বাস্থ্য

 

    • মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সঙ্কটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হল অতিমারী ও লকডাউন চলাকালীন গর্ভবতী নারীদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা অস্বীকার করা হচ্ছে।

 

    • অন্যান্য অনেক অ-কোভিড রোগীদের মতো গর্ভবতী নারীদেরও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে প্রথমে কোভিড-১৯-এর জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্তানসম্ভবা নারীদের প্রসব-বেদনা শুরু হলে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা শুরু না করা এক প্রকার হেনস্থা, এই সময়ে রিপোর্টের জন্য একদিন অপেক্ষা করা জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার সমার্থক।

 

    • প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলি প্রসূতি, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিতে অস্বীকার করেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিপুল অর্থের বিনিময়েই পরিষেবা প্রদান করছে।

 

    • অতিমারীর বাহানায় অবাঞ্ছিত গর্ভধারন এবং নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে। গর্ভনিরোধক ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এবং অন্যান্য জটিলতাগুলিকে বাড়িয়ে তুলেছে। কোভিড-১৯ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ট্যাবুর ফলে স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত জরুরি অবস্থায় হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলি পরিষেবা দিতে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।

     

    রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

     

    • পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য রূপান্তরকামী নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য দুটি করে চারটি বেড সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু জেলার হাসপাতালে কোনও বেড সংরক্ষণ করা নেই।

 

    • বর্তমান পরিস্থিতিতে রূপান্তরকামী ব্যক্তিরা বিশেষত যারা সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া বা হরমোনাল চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন, তাদের নিয়মিত ডাক্তারি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব এবং কোভিড-১৯ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ট্যাবু তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করেছে।

 

    • বর্তমান অর্থর্নৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রূপান্তরকামী ও ক্যুয়ার ব্যক্তিরা নিজের পরিবারের মধ্যেই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন এবং জন পরিসরেও বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং হিংসার শিকার হচ্ছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের আপদকালীন চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কোনও পরিকাঠামো নেই।

     

    প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা

     

    • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (পিডব্লিউডি) চিকিৎসার প্রয়োজনে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়, যা বর্তমানে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতাল পৌঁছানোর জন্য গাড়ির অভাব, বিষয়টিকে ব্যয়বহুল এবং কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অসম্ভব করে তুলেছে।

 

    • চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান, চিকিৎসক বা নার্সের অভাবের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারবর্গকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বারংবার।

 

    • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকেই বিভিন্ন সহায়ক ডিভাইস, হুইল চেয়ারগুলির জন্য ব্যাটারি, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডায়াপার, বাতজনিত রোগীদের জন্য গ্লাভস ইত্যাদির নিয়মিত ক্রেতা। কিন্তু ওষুধের দোকানগুলিতে এই মুহূর্তে এই সমস্ত জিনিসের অপ্রতুলতা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে সঙ্কট তৈরি করেছে।

     

    মানসিক স্বাস্থ্য

     

    • লকডাউনের ফলে এক গভীর মানসিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন মহিলারা। সাহায্য গোষ্ঠীর অভাবে, অতিরিক্ত গৃহশ্রম এবং পরিবারের সদস্যদের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়ি থেকে অফিসের কার্যক্রম চালু রাখা এক নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বাড়িতে নিজের কর্ম পরিসরকে অন্য পরিজনদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে পারিবারিক এবং গভীর মানসিক বিপন্নতা।

 

    • লকডাউনে গৃহ হিংসার হার বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। নারী, রূপান্তরকামী এবং বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের ক্ষেত্রে যা তীব্র আতঙ্কের।

 

    • মানসিক স্বাস্থ্যের সাহায্যের জন্য তৈরি জায়গাগুলি একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নারী এবং রূপান্তরকামী মানুষেরা বাধ্য হচ্ছেন পরিবার এবং তাদের সঙ্গীর অত্যাচারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।

     

    আমাদের দাবী

     

    ১। কোভিড আক্রান্ত নয় কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন এরকম নারী, শিশু, রূপান্তরকামী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য রাজ্য সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হোক এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো জোরদার করতে হবে। সামাজিক বৈষম্য, গার্হস্থ্য হিংসা এবং অন্যান্য হিংসার শিকার ব্যক্তিবর্গের মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার জন্য আপদকালীন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ২। রাজ্যে আপদকালীন চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে হেল্পলাইন চালু করতে হবে। বর্তমানে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ কর্তৃক যে টেলিমেডিসিন চিকিৎসার গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে তাতে প্রজননজনিত স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই।

     

    ৩। সরকারি ক্ষেত্রে কোভিড ব্যতীত অন্যান্য চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা (স্বল্প খরচে) সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ৪। অবিলম্বে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি চালু করতে হবে। আশা এবং আইসিডিএস কর্মীরা, যারা পুষ্টি, টীকাকরণ, স্তন্যদায়ী মা ও শিশুদের টীকা গ্রহণের সময়সূচি তৈরি এবং নথিভুক্তকরণের সাথে যুক্ত, তাদের বেতন নিয়মিত করতে হবে এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষা যোজনার মধ্যে আনতে হবে।

     

    ৫। রেশন এবং তার সাথে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার যাতে বস্তিবাসী এবং প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ৬। কোভিড চিকিৎসার দোহাই দিয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি কোনোভাবেই উপেক্ষা করা চলবে না। গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়াটিকে সহজ এবং সুলভ করতে হবে সরকারি, বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই। গর্ভনিরোধক ওষুধ, গর্ভপাত সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং ওষুধ সুলভ করতে হবে।

     

    ৭। সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে গর্ভপাতের বিষয়টি যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং এই সংক্রান্ত চিকিৎসা যাতে অস্বীকার করা না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ৮। কোয়ারেন্টাইন-এ থাকাকালীন, লকডাউন পরিস্থিতিতে কিম্বা হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং ব্যক্তিগত সহায়তা পান, হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য পরিবহন সহজলভ্য হয় – এ সকল বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ৯। রূপান্তরকামী নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি জেলার যেকোনও একটি হাসপাতালে দু’টি করে চারটি বেড সংরক্ষণ করা হোক এবং অ-কোভিড এমারজেন্সি কেসের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। হরমোনাল এবং এইচআইভি ওষুধগুলো সাধারণ ওষুধের দোকানে যেন পাওয়া যায়।

     

    ১০। প্রান্তিক পরিচয়ের কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যাতে চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা বা অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

     

    ১১। অতিমারী পরিস্থিতিতেও প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকারকে সামনে রেখে গর্ভবতী মহিলাদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি নিতে হবে।

     

    ১২। গর্ভপাত একটি মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার এবং এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে যে এটি একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য অধিকার। সমস্ত হাসপাতাল এবং সরকারি ক্লিনিকে গর্ভপাতের যাবতীয় গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে।

     

    ১৩। কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউনের সময় বিশেষভাবে অক্ষম মানুষদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে হবে এবং হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ নিয়োগ করতে হবে।

     

    ১৪। জেলা হাসপাতালগুলিতে অন্তত দু’টি বেডের ব্যবস্থা করতে হবে রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য অতিমারী বা অন-অতিমারী স্বাস্থ্য সঙ্কটের চিকিৎসার জন্য।

     

    ১৫। রূপান্তরকামী মানুষের হরমোনের ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের যাবতীয় ব্যবস্থার আয়োজন রাখতে হবে।

     

    ১৬। রূপান্তরকামী, নির্যাতিতা নারী এবং শিশুদের জন্য অবিলম্বে শেল্টার হোমগুলি চালু করা হোক।

     

    ১৭। মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিকিৎসা বিধির অর্ন্তভুক্ত করা হোক এবং নারী, রূপান্তরকামী এবং দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারকে সামগ্রিকভাবে বিচার করা হোক।

Share this
Recent Comments
1
  • খাদ্য শস্য বঞ্চনার হিসাব করতে গিয়ে পড়ুয়াদের যে চাল, ডাল, আলু দেওয়া হচ্ছে সেটা কি বিবেচনা করা হয়েছে? সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল বিনা ক্ষতিপূরণে অধিগ্রহণের দাবি নেই কেন?

Leave a Comment