এনইপি ও শিক্ষার মনুবাদিকরণ : ডঃ অনিল সদগোপাল


  • August 10, 2020
  • (1 Comments)
  • 1688 Views

এনইপি শুধু যে জাত/বর্ণ, পুরুষতন্ত্র, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা – এই সামাজিক সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করে তা-ই না, এই নীতির মূল লক্ষ্য হল সমাজে দাসত্ব ও বঞ্চনার সবরকম বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা। লিখেছেন দময়ন্তী সাহা। লেখাটি ডঃ অনিল সদগোপালের  ‘নিউ  “এক্সক্লুশন ” পলিসি ২০২০’ : কর্পোরেটাইজেশন, মনুবাদিকরণ অ্যান্ড ওভার-সেন্ট্রালাইজেশন অফ এডুকেশন (‘নতুন “বঞ্চনা” নীতি ২০২০’ : পুঁজিকরণ, মনুবাদিকরণ ও অতিকেন্দ্রিকরণ) শীর্ষক  সাম্প্রতিক ওয়েবিনারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ইংরেজি লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে gaurilankeshnews.com-এ। গ্রাউন্ডজিরো থেকে লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করা হল। 

 

 

প্রথম শ্রেণিতে যে দলিত-বহুজন ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশকেই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাব্যবস্থা স্কুল থেকে ঠেলে বার করে দেয়। এদের ‘ড্রপআউট’ বা ‘স্কুলছুট’ বলা উচিত না, কারণ এরা নিজের ইচ্ছেয় পড়াশুনো ছাড়ে না; ভারতীয় শ্রেণিকক্ষে জড়িয়ে থাকা বর্ণবাদ এবং সুবিধাবাদ এদের তাড়িয়ে ছাড়ে। শিক্ষাব্যবস্থায় এধরনের ভয়াবহ বৈষম্য দূর করার বদলে, নিউ এডুকেশন পলিসি (এনইপি/নতুন শিক্ষা নীতি) শিক্ষায় জাতনির্ভর বিভাজনকে বৈধতা দেওয়ারই চেষ্টা করছে।

 

‘সমান’ শিক্ষা এনইপি-র কাছে একটি শব্দ মাত্র। এটি আদতে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে মুনাফা করার রাস্তা খুলে দিচ্ছে। বেসরকারি স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক মুনাফা বা তার উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এনইপি-র কোনো বক্তব্য নেই। উল্টে এতে বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে জনহিতকর বিনিয়োগ করলে কোম্পানির ট্যাক্স কম লাগতে পারে; সাথে এও বলা হয়েছে, যে সমস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে শুধু মুনাফার জন্যই চালানো হয় সেগুলোও নাকি সরকারি সহায়তা পাবে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যাবস্থাপনা একেবারেই আলাদা এবং স্কুল-কলেজগুলিও নানা স্তরে (টিয়ার) বিভক্ত; তাহলে সমান বা বা অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) শিক্ষা নিয়ে কথা বলার তো কোনো মানেই হয় না – তা শুধুই বিভ্রান্তি বাড়ায়।

 

১৯৬৬ সালের কোঠারি কমিশন রিপোর্ট, যাকে অবশ্যই সমান শিক্ষার উদ্দেশ্যে নীতি নির্ধারক একটি দলিল হিসেবে চিহ্নিত করা যায় – এনইপি-তে তার উল্লেখটুকুও পাওয়া যায় না। কোঠারি কমিশন সমস্ত স্কুলে সমান ও অভিন্ন পরিকাঠামো ও পরিকল্পনার সুপারিশ করেছিল। সমান শিক্ষার সূচকগুলির মধ্যে সুষম শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত, ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে সবার জন্য বিজ্ঞান ল্যাবরেটরির বন্দোবস্ত ইত্যাদিকে রাখা হয়েছিল। এনইপি-তে এগুলিরও উল্লেখ করা হয়নি কারণ এজাতীয় সুষম বন্দোবস্ত সরাসরি মুনাফা-ভিত্তিক বেসরকারি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে।

 

ছাত্রের জাত (কাস্ট) প্রায়ই সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভাজনের ভিত হয়ে ওঠে, কারণ তুলনামূলক ভাবে সবর্ণ শিক্ষার্থীরা উচ্চমানের শিক্ষার জন্য বেশি টাকা খরচ করতে পারে, এবং দলিত-বহুজন ছাত্রছাত্রীরা সেইসব সরকারি শিক্ষাকেন্দ্রেই পড়তে যায়, যেগুলি ফান্ডিং ও শিক্ষক সমেত কর্মচারীর অভাবে ভুগছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বেসরকারি সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে একটা বিপজ্জনক ব্যবস্থা চালু আছে, যেটাকে ‘স্বচ্ছতা’ এবং ‘নজরদারি কমানো’র নাম করে এনইপি-র মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। এটি হল একটি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কোনো সরকারি নজরদারি ও হস্তক্ষেপ ছাড়াই, অনলাইনে ফর্ম ভরে ও জমা করে ‘স্ব-নিয়ন্ত্রণ’ ব্যবস্থা চালাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এই ব্যবস্থা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি সামাজিক ন্যায়নীতিমূলক আইনগুলোকে, যেমন এসসি/এসটি সেল, সংরক্ষণ ইত্যাদিকে সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আয়ব্যায়, নিয়োগ পদ্ধতি, ছাত্রছাত্রী ভর্তির পদ্ধতি ইত্যাদির জন্য কারুর কাছেই দায়বদ্ধ থাকবে না। এনইপি-র আরেকটি দিক, যা বর্ণ-বিভাজন বাড়াবে, তা হল ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে পেশামূলক শিক্ষার (ভোকেশনাল এডুকেশন) পরিকল্পনা। শিশুশ্রম (নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৬ সংশোধনীর মাধ্যমে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল; এতে বলা হয়েছিল যে, ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুরা তাদের পিতামাতা বা পরিবারের জন্য কাজ করলে সেটা শিশুশ্রম বলে বিবেচিত হবে না – এর ফলে বিশেষ করে জন্মভিত্তিক বা বর্ণভিত্তিক পেশাগুলির ক্ষেত্রে শিশুশ্রম বৈধতা পায়।

 

ইংরেজি-মিডিয়াম বেসরকারি বিদ্যালয়ে উচ্চবিত্ত শিশুদের পিতামাতারা ‘পেশামূলক’ শিক্ষায় স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহী হবেন না বিশেষত যদি সে পেশায় শারীরিক শ্রম জড়িত থাকে। সুতরাং, বাস্তবে এই নীতির বৈষম্যমূলক রূপটি হবে এই যে, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের – বিশেষত বহুজন শিক্ষার্থীদের – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই জন্মভিত্তিক পেশা শিখতে উৎসাহের ছলে চাপ দেওয়া হবে, যাতে তারা সস্তা শ্রমিক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকে। যদিও এনইপি দাবি করেছে সাধারণ শিক্ষা ও পেশামূলক শিক্ষার মধ্যে কোনও তফাত থাকবে না, এটা বুঝতে অসুবিধা নেই যে, ছাত্রদের শ্রমিক হবার দিকে ঠেলে দেওয়া হবে, তাদের স্কুলে উপস্থিতি কমতে থাকবে, তারা পড়বার জন্য আরো কম সময় পাবে এবং ছাত্র হিসেবে ক্রমশ আরো বেশি বঞ্চিত হতে থাকবে।

 

যে সকল শিক্ষার্থীরা পেশামূলক শিক্ষা বেছে নেবে, এনইপি নিশ্চিত করছে, যে তারা দ্বাদশ শ্রেণির পরে সরাসরি কাজে ঢুকে যেতে পারবে। বহুজন শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে সস্তা শ্রমের আড়ত তৈরির করার পিছনে আছে এনইপি-র মূল বৃহত্তর পুঁজিতান্ত্রিক উদ্দেশ্য – বিদেশি মূলধন বিনিয়োগের বাজার তৈরি করা, যার জন্য দরকার একটি বিরাট শ্রমশক্তি, যাদের হাতে তাদেরই উপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নকে সমালোচনার কোনো অস্ত্র থাকবে না। শিক্ষার্থীদের এ-লেভেল বা বি-লেভেলের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া, তাদের জন্য ‘নমনীয়’ বা ‘ফ্লেক্সিবল’ মূল্যায়ন – এগুলোও আসলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যকে আরো শক্তিশালী করে তোলা, উচ্চশিক্ষা ও কর্মস্থানে সুযোগের অসমতা সৃষ্টি করা – এইসব উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে।

 

এনইপি আরো বলছে যে, “যেখানেই সম্ভব, শিক্ষার মাধ্যমটি কমপক্ষে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, তবে সম্ভব হলে অষ্টম শ্রেণি অবধিও বাড়ির ভাষা/মাতৃভাষা/স্থানীয় ভাষা/আঞ্চলিক ভাষায় হবে”, এবং এই আদেশে কোথাও এটা বলা হয়নি, যে এর চেয়ে উঁচু ক্লাসে গিয়ে ভাষাগত মাধ্যমে কোনো বদল আনা হবে। এর সহজ মানে হল, সরকারি বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষা বিশেষ দেওয়া হবে না। ফলে যে ছাত্রছাত্রীরা বেসরকারি স্কুলে পড়াশুনা করতে যেতে পারবে, তারা আরো বেশি করে যাবে। ইংরেজি ভাষাই বহুজন শিক্ষার্থীদের তাদের রাজ্যের বাইরে, অতএব স্থানীয় উচ্চবর্ণ প্রভাবের আওতার বাইরে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। শিক্ষার ভাষাগত মাধ্যমে এই বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিয়ে এনইপি বিপজ্জনকভাবে জাত/বর্ণভিত্তিক নিপীড়নকে শক্তিশালী করছে।

 

এনইপি-র বক্তব্য অনুযায়ী, সংস্কৃত শেখার সুযোগ “স্কুল এবং উচ্চশিক্ষার সমস্ত স্তরে” দেওয়া হবে; ফলে, আরো বেশি করে সংস্কৃত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে এবং প্রতিটি স্তরে এই ভাষার বিভাগগুলোকেও অর্থ দেওয়া হবে। এর কারণ দেখানো হয়েছে ধ্রুপদী প্রাচীন ভাষার প্রচার। তবে এই প্রস্তাবটিতে অন্যান্য সব প্রাচীন ভারতীয় ভাষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এনইপি জানিয়েছে যে, অন্যান্য শাস্ত্রীয় এবং ঐতিহাসিক ভাষাগুলিকে নথিভুক্ত এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। পরিষ্কার কথা – শেখানো হবে এবং আর্থিক সহায়তা করা হবে একমাত্র সেই ভাষাটিকেই, যাতে ব্রাহ্মণ্যবাদ ও বর্ণবাদের আদর্শের মূল রয়েছে; অন্যদিকে, তামিল, পালি প্রভৃতি ভাষা, যা বর্ণবাদবিরোধী জ্ঞানকে সংরক্ষণ করে, তাদের উপেক্ষা করা হবে। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির উপর এনইপি-র ঝোঁকের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদের এই নির্লজ্জ প্রচার স্পষ্ট; চার্বাক ও লোকায়ত দর্শন এবং বৌদ্ধধর্ম, যা ব্রাহ্মণ্যবাদকে প্রতিহত করেছিল, সেইসব দার্শনিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলিকে সুবিধা মতো মুছে দেওয়া হবে।

 

এনইপি সাথে-সাথে এ-ও বলছে যে, আদিবাসী অঞ্চলের আশ্রমশালার ‘মেধাবী’ শিক্ষার্থীদের ‘ফি’-এর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে এবং ‘মেধাবী’ শিক্ষকরা বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সুযোগসুবিধা পাবেন। প্রথমত, ফি ছাড় দেওয়ার কথাটি অবাক করে, কারণ এনইপি তো বলছে শিক্ষার অধিকার(আরটিই)ক্ষেত্রটি বাড়ানো হবে – সবাইকে নাকি বিনা ব্যয়েই শিক্ষা দেওয়া হবে। তাহলে হয় এনইপি নীতিতে এটা পরিষ্কার করে বলা হয়নি যে শিক্ষা ব্যয়সাপেক্ষ হবে কি হবে না, নয় ‘মেধাবী’ বৃত্তি (স্কলারশিপ) দিয়ে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে বৃত্তি দ্বারা প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিত যে ‘মেধাবী’ মানে কী? শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, এর মানে দাঁড়াবে, যারা একটি অসম এবং বহুত্ববিরোধী শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে অনলাইন পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবে, এবং শিক্ষকদের ক্ষেত্রে, এর মানে হবে যাঁরা ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং কর্পোরেট শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শকে সবচাইতে বেশি মেনে চলবেন। তাই এনইপি-তে ‘মেধাবী’ শব্দের ব্যবহার উদ্বেগজনক।

 

লিঙ্গ সংবেদনশীলতার ব্যাপারে এনইপি নিজেকে একটি উদারনীতি হিসাবে দেখাতে চায়। তবে, ভারতে পুরুষতন্ত্র ও জাতিবর্ণ একে অন্যের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে, যে একের বিরোধিতা না করে অন্যের মোকাবিলা করা যায় না। এনইপি-তে খালি বর্ণকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন নয়, বরং বর্ণভেদকে আরো শক্তিশালী করার জন্য নানা চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে, স্কুলে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ১০%-এরও কম উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে ঢুকতে পারে, অথচ এই সামান্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিই উচ্চবর্ণের সমাজের কাছে এমন এক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যে তাদের উঠেপড়ে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হয়। যদি প্রশ্ন তোলা হয়, কেন বেশিরভাগ বহুজন শিক্ষার্থীই দ্বাদশ শ্রেণীতে পৌঁছতে পারে না, তবেই ‘মেধা’ সম্পর্কে পুরো ধারণাটিকেই চ্যালেঞ্জ করা যাবে। সত্যিকারের সমান ও উদার শিক্ষাব্যবস্থা জাত/বর্ণ, পিতৃতন্ত্র, শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা ইত্যাদি সামাজিক সমস্যাকে সরাসরি সমাধান করতে চেষ্টা করবে। এনইপি শুধু যে এই সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করে তা-ই না, এই নীতির মূল লক্ষ্য হল সমাজে দাসত্ব ও বঞ্চনার সবরকম বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা।

 

ফীচার ইমেজ : Sabrang India

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: সন্তোষ সেন। on August 19, 2020

    খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেসন করা হয়েছে। সমৃদ্ধ হলাম।

Leave a Comment