When order is injustice, disorder is beginning of the justice.
– Romain Rolland
এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই দুর্গতমানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা আজ জেল ও পুলিশি হেফাজতে। তাঁদের গোছা গোছা, কড়া কড়া আইনি শেকলে জড়ানো হয়েছে। এ আমাদের লজ্জা। এই মানুষদের মুক্তির দাবিহীন কোনও সর্বদলীয় বৈঠক সম্পূর্ণতা পেতে পারে না।
গ্রাউন্ডজিরো।
ত্রাণ দুর্নীতিতে দল থেকে বহিষ্কার, কান ধরার নাটক বন্ধ হোক। অভিযুক্তদের পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের পঞ্চায়েত থেকে বহিষ্কার করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূরি ভূরি অভিযোগ অথচ একজনের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দল থেকে বহিষ্কার অথচ দলীয় পঞ্চায়েতে, প্রধানের আসন আলো করে বসে আছে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অর্থ নয়ছয় ও লুঠের কারবারিরা। নেতৃত্বের মদত ছাড়া এমনটা চলতে পারে না। মদত রয়েছে বলেই লোক দেখানো, কাগজ-খাওয়ানো বহিষ্কারাদেশ। একটি এফআইআর করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানাননি। এ প্রশ্নটিও কাউকে করতে শোনা যাচ্ছে না যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী কী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বদলীয় বৈঠকে অবশ্যই এই প্রশ্ন তুলতে হবে। জিজ্ঞাসা করতে হবে কী কী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। যদি না হয়, কেন হলো না? দুর্নীতির তদন্ত কোন পথে? বিজেপির জুজু দেখিয়ে, ‘নিচুতলা’র কর্মীদের দিকে আঙুল তুলে দায় এড়ালে চলবে না। উঁচুতলার পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ মদত ও অনুমতি ছাড়া এই ব্যাপক লুঠ সম্ভব নয়। একটি ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের মানুষ একযোগে অভিযোগ তুলছেন। এ যদি দুর্নীতির সূচক হয়, তাহলে ন’টি জেলার ৫ লক্ষ দুর্গতদের জন্য বরাদ্দ ৬২৫০ কোটি টাকার ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে তা সহজেই অনুমেয়।
এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই দুর্গতমানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা আজ জেল ও পুলিশ হেফাজতে। তাঁদের গোছা গোছা, কড়া কড়া আইনি শেকলে জড়ানো হয়েছে। এ আমাদের লজ্জা। এই মানুষদের মুক্তির দাবি ছাড়া কোনও সর্বদলীয় বৈঠক সম্পূর্ণতা পেতে পারে না।
লকডাউনে কাজ হারানো, আমপানে ঘর হারানো, করোনার ভয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কিত মানুষ লুঠ করে খেতে যায়নি। সামান্য রেশনে সন্তুষ্ট থেকেছে। এই জেলবন্দি স্বেচ্ছাসেবীদের, আরো অসংখ্য তরুণ-তরুণীদের, রাজ্যের অগণন মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা দুর্গত মানুষ হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন। ক্ষোভ ছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত কিংবা দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। তবু আশা ছিল। কিন্তু একমাস পরেও তাঁরা যদি দেখেন, তাঁদের হকের অর্থ পঞ্চায়েতের, দলের বাবুরা লুঠ করছে, নিজেদের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছে আর তাঁদের ঝড়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া, ধসে পড়া, বাঁধভাঙা জলে ডুবে যাওয়া ঘর, বাঁধ কিংবা টার্পলিনই সম্বল, তবে তো ক্রুদ্ধ হওয়ার অধিকার তাঁদের আছে। বিডিও যদি তাঁদের অভিযোগ না শোনেন, দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন, জেলাপরিষদ, জেলাপ্রশাসন, বিধায়ক, মন্ত্রীরা এই চরম দুরাচার দেখেও মুখ বুজে থাকেন, দেখেও না-দেখার ভান করেন আর নবান্ন যদি, মুখ্যমন্ত্রী যদি স্রেফ উড়ো হুমকি দিয়ে দায় সারেন – তবে এই দুর্নীতির প্রতীক, দুর্নীতির স্তম্ভগুলি, দুর্নীতির ভবনগুলি ভেঙে ফেলার হক আছে মানুষের। এ অপরাধ নয়, দুর্গত মানুষের ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই। এ ভাঙা নয়, এ গড়া। দুর্নীতি মুক্ত পঞ্চায়েতিরাজ গড়ে তোলার লড়াই। মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিকদের এ কথা বুঝে নিতে হবে দেগঙ্গা থেকে সাগর, হুগলি থেকে নন্দীগ্রাম এই বিডিও দপ্তর, পঞ্চায়েত ভবনে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, পথ অবরোধ আসলে বিচারের পথকে, ন্যায়ের পথকে মুক্তকরার গণপ্রয়াস। এক গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা। সমস্ত প্রতিবাদীকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি না হয় তবে মানুষ মনে রাখবে এই সরকারও চরম দুর্নীতিগ্রস্ত।