সরাসরি শ্রমিক নিয়োগ বিআরও-র, লাদাখের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন ১৬০০ ঝাড়খণ্ডী শ্রমিক


  • June 13, 2020
  • (0 Comments)
  • 1317 Views

গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট, ১৩.০৬.২০২০

 

শেষ পর্যন্ত প্রথম ট্রেন রওনা দিল। শনিবার ফ্ল্যাগ অফ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্য সরকার আশা করে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা শ্রমিক আইন মোতাবেক নিয়োজিত হবেন এবং সেখানে দালালদের কোনও ভূমিকা থাকবে না। মাসিক প্রাপ্য অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে হবে।”

 

অবশেষে লে-লাদাখের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ঝাড়খণ্ডী শ্রমিকরা। আইনি বর্মে নিয়োগনথিতে সুরক্ষিত হয়ে। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা বিআরও-র বিজয়ক ও হিমাঙ্ক প্রকল্পে তাঁরা যোগ দেবেন। এই প্রথম কোনও রাজ্যের শ্রমিকরা ঠিকাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গেল। পথ দেখাল ঝাড়খণ্ড। শনিবার দুমকা স্টেশন থেকে ১৬৪৮ জন শ্রমিক বিশেষ ট্রেনে লাদাখের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। স্টেশনে রাজ্য ও বিআরও-র আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ট্রেনযাত্রার সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।

 

করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে প্রায় ৮ লক্ষ ঝাড়খণ্ডী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েন। লাদাখ থেকে শ্রমিকদের এয়ারলিফট করে আনতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। তাঁদের দুরবস্থার কথা জানার পর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনও সংস্থা শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করতে পারবে না। ইতিমধ্যে, ভারত-চীন সীমান্তে রাস্তা মেরামত, তৈরি, জোজিলা, রোটাংপাস সহ বিভিন্ন  পাসগুলিকে সচল রাখার জন্য নির্মাণ শ্রমিকদের জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। বর্তমানে লাদাখ চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতিও বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। কিছুদিন আগেই ঝাড়খণ্ড থেকে ১১,৮১৫ জন শ্রমিককে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রেলমন্ত্রকের কাছে ১১টি বিশেষ ট্রেনের জন্য আবেদন জানায়। আর এখানেই হস্তক্ষেপ করে ঝাড়খণ্ড। (পড়ুন: ঝাড়খণ্ড-বিআরও সমঝোতা কি আন্তঃরাজ্য শ্রমিকদের জন্য নতুন পথের সূচনা করবে?)।

 

গত বৃহস্পতিবার বিআরও-র অ্যাডিশনাল ডিজিপি অনিল কুমার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারে বিআরও-র আশু  প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। দুমকার ডেপুটি কমিশনার রাজেশ্বরী বি-র সঙ্গে বিআরও আধিকারিকের শ্রমিক নিয়োগের নানা শর্ত নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিডিওরা বিআরও প্রকল্পে কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক যুবকদের ইন্টারস্টেট মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কমেন (রেগুলেশন অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড কন্ডিশন অফ সার্ভিস) রুলস, ১৯৮০ অনুযায়ী নাম নথিভুক্ত করার সমস্ত কাজ তদারকি করেন। ঝাড়খণ্ড আগেই জানিয়ে দিয়েছিল ওয়ার্কমেন অ্যাক্ট ও রুলস অনুযায়ী নথিভুক্ত করে, প্রাপ্য সুযোগসুবিধার ভিত্তিতেই শ্রমিকদের নিয়োগ করা যাবে। মাসের প্রথমে সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিতে হবে মজুরি। কোনও মধ্যস্বত্বভোগী, ঠিকাদার, দালাল, মেটকে এই নিয়োগের মধ্যে রাখা যাবে না। অবশেষে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শ্রমদপ্তর ও বিআরও-র মধ্যে নিয়োগ বিষয়ে টার্ম অফ রেফারেন্স তৈরি হয়।

 

শেষ পর্যন্ত প্রথম ট্রেন রওনা দিল। শনিবার ফ্ল্যাগ অফ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্য সরকার আশা করে সব পরিযায়ী শ্রমিকরা শ্রমিক আইন মোতাবেক নিয়োজিত হবেন এবং সেখানে দালালদের কোনও ভূমিকা থাকবে না। মাসিক প্রাপ্য অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে হবে।” বিআরও বাৎসরিক অন্তত ১ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে। ৬০ শতাংশ শ্রমিক স্থানীয় ভাবে নিয়োগ করা হয়। বাকিদের নিয়োজিত করা হয় বিভিন্ন রাজ্য থেকে। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রায় ১২-১৪ হাজার শ্রমিক বিআরও-র বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন। সব শ্রমিকই ঠিকাদারি কিংবা মেটপ্রথার মধ্য দিয়ে নিয়োজিত হন। এবং কোনও শ্রমিকই আইনমাফিক মজুরি বা অন্যান্য সুযোগ পান না বলেই অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের আরও শ্রমিককে বর্তমানে নথিভুক্ত করা হচ্ছে। ধাপে ধাপে তাঁরাও যোগ দেবেন বিআরও-র কাজে।

 

পাশাপাশি, দেশের নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। রিয়েল এস্টেট থেকে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, অটোমোবাইল থেকে টেক্সটাইল সকলেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, বাসস্থানগত বিশেষ সুযোগের কথা জানাচ্ছে। এবং সেই বার্তা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেউ ঠিকাদারদের উপর কেউ তাদের কর্মচারীদের রাজ্যে রাজ্যে পাঠাচ্ছে। কিন্তু কোথাও আইন অনুযায়ী নথিভুক্তিকরণ কিংবা অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগের কথা অবশ্য এখনও শোনা যায়নি। অন্যান্য রাজ্যগুলিও কি ঝাড়খণ্ডের পথ অনুসরণ করবে?

 

Share this
Leave a Comment