যাঁরা নিজেদের ‘বামপন্থী’ মনে করেন এবং অন্য সমাজ/ অন্য পৃথিবীর রাজনীতির কথা বলেন, তাঁরা কীভাবে পুঁজিতন্ত্রের এই সঙ্কটকে দেখছেন কিম্বা দেখবেন? করোনা মহামারিজনিত যে আপৎকালের মধ্যে আমরা আনখশির ডুবুডুবু, সেই গোলমেলে সময়ের আশু দাবি ও প্রয়োজনকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েও, মহামারি অবস্থায় এবং তৎপরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক মূল্যায়ন অবশ্যকর্তব্য, সে বিবেচনায় কিছু কথা/প্রশ্ন/বক্তব্যর অবতারণা করলেন সৌমিত্র ঘোষ।
পুঁজিতন্ত্রের সঙ্কট:
বোঝাই যাচ্ছে যে করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজি ও পুঁজিতন্ত্র গভীর গাড্ডায় পড়েছে। গাড্ডাটি নতুন নয়, ছিলই। ওপরের চাকচিক্য ও জমকঠমক দেখে তা অবিশ্যি বোঝবার জো ছিল না। বিশ্বব্যাপী বাজারে উজ্জ্বল পণ্যসমাবেশ (এমন পণ্য যার অনেকটাই দেখা যায়ও না, যেমন কিনা ব্যাংকের ধার, কোম্পানির ধার), চড়বড়ে শেয়ারবাজার, এখানে সেখানে ইয়াব্বড়ো ছাপান্ন-আটান্ন-ষাট ইঞ্চি ছাতিওয়ালা নেতাদের দুর্মদ দাপাদাপি, একদিকে জাতিরাষ্ট্র-জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে বিশ্বায়নের শান্তিবাণিজ্য বুলি আউড়ে প্রকৃতি ও সমাজকে তছনছ করা, এসবের আড়ালে আসলে পুঁজিতন্ত্রের যে হাঁড়ির হাল ২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকেই গত এক-দশকের বেশি সময়কাল ধরে স্পষ্টতর, করোনা-পরিস্থিতি সে সঙ্কটকে শুধু আরো গভীরই করেনি, গোটা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সবরকম ঝামেলায় ফেলেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে কুখ্যাত স্প্যানিশ ফ্লু, ১৯২৯-৩০ এর মহামন্দা এবং তৎপরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এসব মনে রেখেও বলা যায়, পুঁজিতন্ত্রের মোটামুটি গত পাঁচশো বছরের ইতিহাসে — বিশেষত শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে — পুরো ব্যবস্থাটা সম্ভবত এর আগে ঠিক এইভাবে বিশ্বজোড়া সার্বিক হামলার মুখে পড়েনি। সে অর্থে, বর্তমান সঙ্কট অভূতপূর্ব। প্রায় সমস্ত শিল্প- উৎপাদনপ্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ, বিশ্বের সর্বত্র নথিভুক্ত পঞ্জিকৃত বেকারের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধনী ও শিল্পোন্নত রাষ্ট্রকে ও আর্ন্তজাতিক অর্থপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা এবং ত্রাণ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সঙ্কট ব্যবস্থাগত বা সিস্টেমিক, মূলভূত। শুধু যে তথাকথিত শিল্প-উৎপাদনক্ষেত্র বিপর্যস্ত হচ্ছে তা নয়। গত তিন দশক ধরে নিওলিবারল বাজার অর্থনীতি ও পণ্যবাণিজ্যের অভাবনীয় বিস্তারের কালে যে যে ঝাঁ-চকচকে ক্ষেত্রগুলো ঝাক্কাস দ্রুতগতিতে বেড়েছে, তার সবকটা একত্রে মুখ থুবড়ে পড়েছে, যথা নির্মাণ, পর্যটন, আতিথ্য বা হস্পিটালিটি, অসামরিক বিমান পরিবহন, একচেটিয়া/বড় খুচরো ব্যবসা। বাকি ক্ষেত্রগুলোও প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে সংকুচিত হচ্ছে।
পুঁজিতন্ত্রের কাছে যে বিষয়টা আরো বেশি চিন্তার, গত কয়েক দশক ধরে অর্থপুঁজির যে বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছে, আপাতত তাও অনেকাংশে গতিরুদ্ধ। রাষ্ট্রগুলো বাজার-চনমনানার্থে (সাদা বাংলায় স্টিমুলাস) অর্থাৎ পুঁজিত্রাণ বাবদ যে লগ্নি করেছে, তাতে করে শেয়ার বাজারের হুড়ধপাস ধস সাময়িকভাবে আটকেছে বটে, সামগ্রিক নিম্নগতি রোধ করা যায়নি। লগ্নি/বিনিয়োগের বিভিন্ন সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সার্বিক সংকোচনের কারণে বর্তমান অর্থপুঁজির বাজারের কেন্দ্রে যে ধারের (ধার দেওয়া ও ধার শোধ হবে-কি-হবে না তাই নিয়ে বেমক্কা ভুতুড়ে জুয়া খেলা, উভয়ার্থে) অর্থনীতি, তা বিপন্ন। ফলে, আপাত-উৎপাদন বহির্ভূত (আনপ্রোডাক্টিভ বা ননপ্রোডাক্টিভ), মুখ্যত অনিয়ন্ত্রিত মুনাফাবৃদ্ধির যে ধূমধামাকা পুঁজিবাজারের কেন্দ্র হয়ে উঠছিল, তা আর কতদিন চালু থাকবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে।
কথাটা হল, যাঁরা নিজেদের ‘বামপন্থী’ মনে করেন এবং অন্য সমাজ/ অন্য পৃথিবীর রাজনীতির কথা বলেন, তাঁরা কীভাবে পুঁজিতন্ত্রের এই সঙ্কটকে দেখছেন কিংবা দেখবেন? ‘দেখা’ অর্থে বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক মূল্যায়নের কথা। করোনা মহামারিজনিত যে আপৎকালের মধ্যে আমরা আনখশির ডুবুডুবু, সেই গোলমেলে সময়ের আশু দাবি ও প্রয়োজনকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েও, মহামারি অবস্থায় এবং তৎপরবর্তীতে এই মূল্যায়ন অবশ্যকর্তব্য, সে বিবেচনায় কিছু কথা/ প্রশ্ন/ বক্তব্য ইত্যাদির অবতারণা করা যাক।
প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রশ্ন।
(১) শ্রম ও শ্রমিক
দুটো প্রধান রাজনৈতিক প্রশ্ন/প্রতর্ক আছে। প্রথমটা, শ্রম ও শ্রমিক সংক্রান্ত। নিওলিবারাল বিশ্বব্যবস্থায় এতকাল শ্রম/শ্রমিকের ওপর যে সার্বিক হানাদারি চলেছে, তার ধাক্কায় শ্রম/ শ্রমিক আমাদের ‘চেনা’, অর্থাৎ যা-দেখাপড়াশোনা-যায়, সেই রাজনীতির পরিসর থেকে হাওয়া হয়ে যায়। হাওয়া হওয়ার প্রক্রিয়াটা নেহাতই আপাত ও দেখন-সর্বস্ব, এমন আদৌ নয় যে নিওলিবারাল ব্যবস্থায় পুঁজিবৃদ্ধির গোটা প্রক্রিয়াটা শ্রম/ শ্রমিক বিবর্জিত কোনো জাদুপরিসরে নিষ্পন্ন হত। অথচ যে কথাটা সবার জানা, দীর্ঘকাল ধরে জেনে আসা, পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎসে আছে শ্রম, সেটা সবাই ভুলতে বসেছিল। প্রাত্যহিক সমাজজীবনে সদা-মওজুদ, শানদার পণ্যবাজারের চকমকি (এবং আগ্রাসন) শ্রম ব্যাপারটাকেই উধাও করে দিয়েছিল। এমনটা হবারই কথা। পণ্যমগ্ন পুঁজিমুগ্ধ সমাজে শ্রম-ফ্রম জাতীয় ফালতু লাফড়া থাকবে না ধরে নেওয়াই যায়। তবে যে সামাজিক বিস্মরণের কথা বলা হচ্ছে তার আর একটা বড় কারণ, আমাদের রাজনীতি-ভাবনা থেকে কার্যত নির্বাসিত হয়েছিল শ্রম ও শ্রমিকের রাজনীতি, যা পুঁজিবিরোধী, পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার নিরন্ধ্র বিরোধিতায় যা ওতপ্রোত থাকে সর্বক্ষণ। অথচ, রাজনীতি না থাকলে, শ্রম ও শ্রমিক জড়-যন্ত্রবৎ, পুঁজিবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অংশমাত্র, উৎপাদিকা প্রযুক্তির উন্নতি হলে এবং মুনাফাবৃদ্ধির প্রয়োজনে পুঁজি যাকে ছেঁটে ফেলতে চায়, পারে। শ্রম/ শ্রমিক যখন সংগঠিত হয়, নিছক মজুরিবৃদ্ধির অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার বাইরে গিয়ে পুঁজিতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামে, পুঁজি ও শ্রমের বুনিয়াদি দ্বন্দ্ব অর্থনীতির বাইরে গিয়ে দর্শনের, সংস্কৃতির ও রাজনীতির আঙিনায় এসে পড়ে। ইতিহাসের শিক্ষা, পুঁজিতন্ত্র আগাগোড়াই এই রাজনৈতিক লড়াইকে ভয় পেয়ে এসেছে সবচাইতে বেশি। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট ও বামপন্থী আন্দোলনের ঐতিহাসিক সাফল্য ও ব্যর্থতা উভয়ত এর প্রমাণ। আন্দোলন যতদিন দমদার, শ্রমিক-সংগঠনগুলো মজবুত প্রভাবশালী, পুঁজিতন্ত্রের ঘুণচক্করে শ্রম/ শ্রমিকের উপস্থিতি ছিল এক ধরণের। শ্রমিক আন্দোলনের অভিঘাতে পুঁজিতন্ত্রকে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে, হোঁচট খেতে হয়েছে, আক্রান্ত বিপন্ন হতে হয়েছে বারবার। যে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র জন্মাবধি অভিজাত ও বুর্জোয়াদের সামাজিক শাসন প্রতিষ্ঠার কলবিশেষ, তাকে মাঝখানে রেখে পুঁজিতন্ত্রকে শ্রম/ শ্রমিকের সঙ্গে নানান আপোসরফায় যেতে হয়েছে।
যে বিষয়টা বহুকথিত ও বহুচর্চিত, গত শতাব্দীর অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই আপোসের সবচাইতে বড় দৃষ্টান্ত তথাকথিত কল্যাণমুখী বা ওয়েলফেয়ার অর্থনীতি, যেখানে রাষ্ট্র, পুঁজি ও শ্রমের বিরোধে শুধু যে মধ্যস্থতা করে তা-ই নয়, তা শ্রমিকের পক্ষও নেয় কখনোসখনো। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে, বিশেষত ওয়েলফেয়ার অর্থনীতি ও সংসদীয় গণতন্ত্রের যৌথ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে পুঁজিতন্ত্র চেষ্টা করে নিজেকে আগের তুলনায় বৈষম্যরহিত, মানবিক এবং সে কারণে ন্যায়নিষ্ঠ সমাজব্যবস্থা হিসেবে প্রতিপন্ন করার। ওয়েলফেয়ার বস্তুত যে পুঁজিতন্ত্রেরই রকমফের, সম্ভবত অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন, বামপন্থী ও কমিউনিস্ট দলগুলো তা বুঝে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক পুঁজিতান্ত্রিক বৃত্তের বাইরে থাকা তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়াতেও শ্রমিক আন্দোলন হয় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল (শ্রমিকের সরকার—কার বিরুদ্ধে লড়াই হবে?) কিংবা পরবর্তীতে তা বহু জায়গাতেই তথাকথিত গণতন্ত্রের লড়াইতে পুঁজিতন্ত্রের পক্ষ নেয় (যেমন পোল্যান্ডের সলিডারিটি)। পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমের/ শ্রমিকের যে নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক বিরুদ্ধতা ভিন্ন সমাজমুক্তির আন্দোলন শুধু অসম্পূর্ণই থাকে না, অসম্ভবও হয়ে ওঠে, সেই মূলগত বিরুদ্ধতার অভাব শ্রমিক আন্দোলনকে এবং পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক আন্দোলনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। একই সঙ্গে, প্রযুক্তির ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দক্ষিণ গোলার্ধের (আগে বলা হত তৃতীয় বিশ্বের) দেশগুলো-সহ তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার একাংশে (মূলত চীন দেশে) সস্তা শ্রমের যে নতুন বিশ্ববাজার গত তিরিশ-চল্লিশ বছরে তৈরি হয়েছে, তার যৌথ অভিঘাতে পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনব্যবস্থার সার্বিক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। কারখানা, বা শিল্প-উৎপাদনের পরিচিত কেন্দ্রীভূত পরিসর কমে আসতে থাকে। সমগ্র উৎপাদন ব্যবস্থাটাই দফায় দফায় স্তরে স্তরে পরস্পর-সংযুক্ত অথচ আলাদা বাণিজ্য/ উৎপাদনক্ষেত্র হিসেবে পুনর্বিন্যস্ত হয়। পুঁজিবৃদ্ধির ও শ্রমশোষণের বহু নতুন পরিসর গড়ে ওঠে, অথচ কেন্দ্রীভূত কারখানা/ উৎপাদনক্ষেত্র নির্ভর শ্রমিক সংগঠন যথা পুরোনো ট্রেড ইউনিয়নেরা সেখানে পৌঁছতে চায় না বা পারে না। নিওলিবারাল পুঁজিবাজারে শ্রমের যে সর্বব্যাপী বিশ্বায়ন ঘটে, সেই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বুঝতেও পুরোনো শ্রমিক সংগঠন এবং সাধারণভাবে বামপন্থী ও কমিউনিস্ট শক্তিগুলো ব্যর্থ হয়। শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারখানা ও পৃথক শিল্পনগরী তৈরির মধ্য দিয়ে শ্রম/ শ্রমিকের যে নির্দিষ্ট সামাজিক অস্তিত্ব সম্ভব হয়ে উঠেছিল, তা যখন দৃশ্যত ভেঙে পড়তে থাকে, পুরোনো ধাঁচের, সদস্যনির্ভর, বড় শ্রমিক সংগঠনগুলো স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ নিওলিবারাল সময়ে শ্রমের বাজার যে সমাজের সমস্ত অংশে প্রসারিত হচ্ছে, ফলত গোটা সমাজই যে কার্যত পুঁজিবৃদ্ধির শারীরিক প্রক্রিয়ায় আগাপাশতলা যুক্ত হয়ে পড়ছে, এই অবস্থাকেও বামপন্থীরা ঠিকমতো পড়ে উঠতে পারেন না।
শ্রম আছে, সুতরাং পুঁজি ও শ্রমের দ্বন্দ্বও আছে। অথচ শ্রমিক সংগঠন নেই, শ্রমিকের রাজনীতিও নেই। এই অবস্থার কারণেই চেনা রাজনীতির পরিসর থেকে শ্রম/ শ্রমিক অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। করোনা মহামারির বিশেষ পরিস্থিতিতে সে অদৃশ্য শ্রম পুনর্দৃশ্যমান, রাস্তায় হেঁটে চলা পরিযায়ী শ্রমিকদের মিছিলে, ছবি/ খবর হয়ে ওঠা তাঁদের বুভুক্ষায়, দারিদ্র্যে ও মৃত্যুতে, বাড়তে থাকা, বাড়তেই থাকা বেকারদের সংখ্যায়। ফলত শ্রম/ শ্রমিক প্রসঙ্গটা রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়ছে আবার। রাষ্ট্রকে ভাবতেই হচ্ছে বেকার শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, লকডাউন চলাকালীন বকেয়া মজুরি, একইসঙ্গে উৎপাদন চালু রাখার প্রয়োজনে শ্রমের যোগান অব্যাহত রাখা নিয়ে। নিওলিবারাল রাষ্ট্রের কাছে যেহেতু প্রথম দুটো অবাঞ্ছিত দায় ও তৃতীয়টা প্রয়োজন, সেখানেই জোর পড়ছে বেশি। ভারতবর্ষে যেমন, রাষ্ট্র যাবতীয় পুরোনো শ্রম/ শ্রমিক সুরক্ষা আইন-টাইন বদলে আইনহীন এমন এক ‘মুক্ত’ অবস্থায় ফিরতে চাইছে, যেখানে খোলা বাজারের তথাকথিত স্বাধীন শ্রম পরিণত হয় দাসশ্রমে, যা পুঁজিবৃদ্ধির প্রয়োজনে যেভাবে ইচ্ছা, যতক্ষণ ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে। শ্রম/ শ্রমিককে আইনি সুরক্ষার চৌহদ্দির বাইরে পাঠিয়ে রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ শ্রমিক আন্দোলনকেও ঠেকাতে চাইছে, এমন ভেবে নেওয়া যায়।
(২) রাষ্ট্র
যে দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতর্কের উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রথমটা যদি শ্রম ও শ্রমিক হয়, দ্বিতীয়টি রাষ্ট্র। যা বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যে, দেশে ও দেশের বাইরেও বামপন্থীরা রাষ্ট্রকে তাঁদের মহামারি-রাজনীতি বোধের কেন্দ্রে রাখছেন —তাঁদের বক্তব্যের পুরোটা জুড়েই থাকছে রাষ্ট্রের কী কী করা উচিত, তার দীর্ঘ ইচ্ছাসূচি। আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ব্যবস্থা যে বস্তুত পুঁজিতন্ত্রের অঙ্গীভূত, পুঁজি ও শ্রমের দ্বন্দ্বে যে রাষ্ট্র পুঁজির পক্ষে থাকতে বাধ্য, তা বুঝে বা না-বুঝে, বামপন্থীরা রাষ্ট্রের কাছে দাবিসনদ পেশ করেই যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দুটো খটকা আছে। এক, শ্রম-সুরক্ষা বা সাধারণভাবে সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কাছে তাঁদের যে প্রত্যাশা তার রাজনৈতিক ভিত্তিটা ঠিক কী? মহামারি চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্রকে সামাজিক সুরক্ষার কিছু বাড়তি দায় বহন করতে হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সেরকম হয়েছে, সামাজিক ত্রাণ ও জনস্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আগের তুলনায় বাড়বে, ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু তা থেকে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না যে নিওলিবারাল রাষ্ট্র কল্যাণকামী হয়ে উঠবে। ওয়েলফেয়ার অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি বিশেষ ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক সময়ের ফসল, তা একদা বর্তমান ছিল বলেই যে যেকোনো সময়েই থাকবে, এমন স্বতঃসিদ্ধতা নেই, থাকা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষের যে বর্তমান সরকার, তাদের সম্পর্কে সাধারণ ধারণাগুলোও গ্রাহ্য নয়। গত তিন-চার মাস ধরে তারা সামাজিক ত্রাণে নামমাত্র খরচা করেছে, গণস্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে কি বাড়ায়নি তার হিসেব বুঝে ওঠা দুষ্কর। গোটা দেশে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন মোতাবেক দিল্লির মসনদের বে-এক্তিয়ার হুকমত চলছে, সেখানে চারবেলা কেন্দ্রের মন্ত্রী-আমলারা রাজ্য-ফাজ্য বেমালুম ভোকাট্টা করে সরাসরি জেলার আমলাদের সঙ্গে কথা বলছেন, অথচ দ্রুত রোগনির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিট নেই, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সুরক্ষাবর্ম বা পিপিই নেই, জেলাস্তরে উপযুক্ত হাসপাতাল নেই, করোনার ঠেলায় দেশে গরিবগুর্বোদের জন্য যেটুকু যা ছিটেফোঁটা ব্যবস্থাদি ছিল তা-ও ফৌত হয়ে গ্যাছে, ফলে চিকিৎসাব্যবস্থা বলেই কার্যত কিছু নেই। সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে যে কুড়ি-তেইশ লক্ষ কোটি টাকার কোভিড প্যাকেজ বাজারে নামানো হয়েছে, সেটিও কার্যত হাওয়া, মানে মহাজুমলা, মানে বিভিন্ন বাজেট খাতে নিয়মিত সরকারি বরাদ্দ ও প্রচুর ধারকর্জ (সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নেবে, সেই টাকা ছোটবড় কোম্পানিকে দেবে, রাজ্য তার জিএসটি বাবদ ও অন্যান্য খাতে পাওনা পাবে না, কিন্তু শর্তাধীন ধার পাবে) ভিন্ন সেখানে কিস্যু নেই। লকডাউন আক্রান্ত শ্রমিকদের জন্য বস্তুত কোনো বরাদ্দ নেই, উল্টে যেখানে যা রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ এখনো বেঁচে, সেগুলোকে ধমাধম বেচার নিদান, সেইসঙ্গে দুনিয়ার সম্ভাব্য লগ্নিক্ষেত্র দেশি-বিদেশি মুনাফাবাজদের কাছে হাট করে খুলে দেওয়া। গোটা পৃথিবী করোনাবিধ্বস্ত, পিছনে যাবতীয় ও অনন্ত বিপর্যয়-সম্ভাবনা নিয়ে জলবায়ু-পরিবর্তনের বিপদ, কার কি যায় আসে? কয়লা চালানের জন্য অতিরিক্ত অর্থ-বরাদ্দ হয়েছে ৫০০০০ কোটি টাকা, করোনাত্রাণ হিসেবে। বন কেটে কয়লাখনি ও অন্যান্য উন্নয়ন-উদ্যোগ হয়েই চলেছে, ক্ষতিপূরক বনায়ন বা কমপেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশান বাবদ প্রায় ৬০০০০ কোটি বনবেচা টাকা সরকারের তোষাগারে মওজুদ, এ নিয়ে আদিবাসী ও বন-আন্দোলনগুলো গত বহু বছর ধরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে, বন কাটা চলবে না, যে টাকা জমেছে তা বন-সংরক্ষণ ও গ্রাম-উন্নয়নের কাজে গ্রামসভাগুলোকে দেওয়া হোক। কে কার কথা শোনে? করোনা ত্রাণ বাবদ আদিবাসীক্ষেত্রের বরাদ্দ ৬০০০ কোটি, যার সবটাই ক্ষতিপূরক বনায়নের টাকা। এই রাষ্ট্রের কাছে একের পর এক মর্মস্পর্শী দাবিসনদ পাঠিয়ে কী লাভ?
শ্রেণি-রাজনীতি ও ‘রাজনীতিহীনতা’।
প্রথাসিদ্ধ শ্রম-আন্দোলন বা ট্রেড-ইউনিয়ন বিশ্বের প্রায় সর্বত্র যেভাবে প্রথমে রাষ্ট্রনির্ভর ও পরে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অংশ হয়ে উঠে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে তা এখন রাজনৈতিক ইতিহাসের বিষয়। রাষ্ট্রনির্ভরতা প্রথাসিদ্ধ ট্রেড-ইউনিয়নকে শুধু যে রাজনৈতিকভাবে শক্তিহীন করেছে, তা-ই নয়। অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে পুঁজির সঙ্গে শ্রমের দরকষাকষিতে ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের যে ভূমিকা থাকে, নিওলিবারাল বিশ্বব্যবস্থায় তা খর্বিত এবং খণ্ডিত। রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্রকে আন্দোলন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু করে তুলে প্রথানুগ শ্রমিক-আন্দোলন যে রাজনীতির অবতারণা করে, তা রাষ্ট্রীয় রাজনীতির, অর্থাৎ পুঁজিতান্ত্রিক রাজনীতির থেকে আলাদা তো নয়ই, বরং তার অনুপূরক ও অংশ। ফলত পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমের, রাষ্ট্র ও পুঁজিতন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্রমিকের যে শ্রেণি-রাজনীতির সংগঠক ও অনুঘটক হিসেবে বামপন্থী রাজনীতির পুষ্টি, প্রথানুগ শ্রম-রাজনীতি কার্যত তার বিরোধিতা করে, সেই রাজনীতিকে নির্মিত ও সংগঠিত হতে বাধা দেয়।
সামাজিক চৈতন্যের উপর পুঁজি ও রাষ্ট্রের যে নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিওলিবারাল সময়পর্বে ক্রমাগত বিস্তৃত হয়েছে, তার প্রধান ফল তথাকথিত ‘রাজনীতিহীনতা’। অথচ, রাজনীতিহীনতা বস্তুত অসম্ভব। ‘জনসাধারণ অরাজনৈতিক হয়ে পড়ছে, ফলে এ সময়ে আর পুরোনো ধাঁচের আন্দোলন সম্ভব নয়’, জাতীয় আপ্তবাক্যের পিছনে থাকে পুঁজি-রাষ্ট্র দ্বারা অধিকৃত ও নির্মিত মায়াবাস্তবের প্রতি এক-ধরণের নিঃসংশয় আনুগত্য। যেন পুঁজিতন্ত্রের, পুঁজি ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিরুদ্ধতা আর সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন দেখাচ্ছে, পুঁজিতন্ত্রের, পুঁজি ও রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ আধিপত্যময় বাস্তব ঠিক কতটাই অতিভঙ্গুর, ঠুনকো, যে কোনো মুহূর্তে তা ভেঙে পড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, প্রযুক্তির অগ্রগতি বা পুঁজি-রাষ্ট্রের সামাজিক-অর্থনৈতিক আধিপত্য, এর কোনোটাই পুঁজি ও শ্রমের চিরকালীন দ্বন্দ্বের নিরসন করতে পারে না, ফলত শ্রেণিসংগ্রামকেও চেপে বা লুকিয়ে রাখা যায় না।
অথচ পুঁজি-বাস্তবতাকে না বোঝা গেলে, পুঁজি-বিরোধী প্রতিবাদী শ্রেণি বাস্তবতাকেও ধরা যায় না। রাষ্ট্রীয় নির্বাচনী রাজনীতির চেনা পরিসরের বাইরে, পুঁজিবাদ-পরবর্তী অন্য এক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লড়াই এহেন পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভব ঠেকে, এমনকি এ নিয়ে ভাবতেও অনেকসময় লোকে ভয় পায়। অতীত ও বর্তমানের পুঁজি-রাষ্ট্র বিরোধী আন্দোলন ও শ্রেণিসংগ্রাম থেকে বামপন্থীরা যদি শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হন, পুঁজি-রাষ্ট্র যে শ্রেণি-আধিপত্য তৈরি করে, তার বিরুদ্ধতায় শ্রম/শ্রমিকের নিজস্ব শ্রেণি-রাজনীতিও তৈরি হয় না। যে কথাটা জোর দিয়ে বলতে হবে, ‘শ্রেণি’ শব্দটাকে এখানে নিছক অর্থনৈতিক নিরিখে দেখা যাবে না। অর্থাৎ পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনব্যবস্থায় ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন এমন প্রত্যেকেই শ্রমিক। কিন্তু, এই শ্রমিকদের সঙ্ঘ/ ভিড়/ জটলা থেকেই যে সমাজমুক্তির লড়াই উৎসারিত হবে, এমন বাধ্যবাধতা নেই। যে শ্রেণি বিরুদ্ধ রাজনীতিকে ধারণ ও নির্মাণ করে, তা অর্থনৈতিক ঘটনামাত্র নয়, বরং এই শ্রেণির ‘শ্রেণি’ হয়ে ওঠার পিছনেও এক নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রক্রিয়া থাকা আবশ্যক। শ্রমিক শ্রেণির শ্রেণি-রাজনীতি শুধু স্থিতাবস্থাকেই ভাঙে না, তা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সমূহ/শ্রেণি হিসেবে নিজের ধ্বংসও নিশ্চিত করে। ফলত শ্রমিক শ্রেণির (প্রোলেটারিয়া অর্থে) শ্রেণি-রাজনীতি বিরুদ্ধ জ্ঞানের, যৌথ বিপ্লবী চৈতন্যের সামাজিক প্রকাশ, তা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও রক্তক্ষয়ী সাংস্কৃতিক-দার্শনিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।
ত্রাণ ও ত্রাণের রাজনীতি/ অ-রাজনীতি।
নিওলিবারাল ব্যবস্থা ও পুঁজিবাস্তবতা সামাজিক চৈতন্যকে দখল করতে পেরেছে তার কারণ শ্রমিক আন্দোলনের, বামপন্থী ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের ব্যর্থতা — পুঁজি-রাষ্ট্রের শ্রেণি-রাজনীতির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির শ্রেণী-রাজনীতি নির্মাণ করতে আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। আজকের বিশেষ পরিস্থিতিতেও, যখন নিওলিবারাল ব্যবস্থা ও জাতিরাষ্ট্র দিশেহারা, বামপন্থীরা রাজনৈতিক নির্মাণের পথে না হেঁটে, এই সঙ্কটে রাজনৈতিক অবস্থান না নিয়ে — ত্রাণের মধ্যে ও রাষ্ট্রনির্ভরতার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছেন। সামাজিক ত্রাণেরও যে রাজনৈতিক চরিত্র থাকা সম্ভব, তা না বোঝা শুধু ভুল নয়, অন্যায়। অতীতেও, যথা গত শতাব্দীর মন্বন্তরে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, খরা ও বন্যায়, বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় বামপন্থীরা ত্রাণকাজ করেছিলেন। সে সময়ের ও এখনকার ত্রাণের পার্থক্য এই যে তখন ত্রাণ তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতির, রাজনৈতিক কাজের অংশ ছিল। দ্বিতীয়ত, সামাজিক ত্রাণকাজ সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র-বহির্ভূত সামাজিক শক্তি ও সহমর্মিতার সংগঠিত প্রকাশও ঘটত। আজকে, ত্রাণের বাইরে এবং ত্রাণপ্রক্রিয়ায় রাজনীতির, অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণির শ্রেণি-রাজনীতির, কোনো ছায়াপাত নেই। সেই রাজনীতি এবং তৎসংলগ্ন অনুশীলন থেকে বামপন্থীরা বহু দূরে সরে গিয়েছেন, ফলে ত্রাণ এখন নিছকই ত্রাণ, ‘কিছু করা’।
নতুন রাজনীতির সন্ধানে।
ত্রাণের বিরোধিতা করা হচ্ছে না। রাষ্ট্রের কাছে দাবিসনদ পাঠানোরও নয়। প্রশ্নটা রাজনীতির, পুঁজি-রাষ্ট্রের লাগাতার, নিরন্ধ্র বিরুদ্ধতার, সেই বিরুদ্ধতায় শিক্ষিত ও পুষ্ট শ্রেণি-রাজনীতির। সে নিরিখে আজকের রাজনৈতিক কাজ কী? দল-গোষ্ঠী-ব্যক্তি নির্বিশেষে প্রত্যেকের একটাই মূল কাজ হতে পারে। তা শ্রম/ শ্রমিককে নতুন ভাবে সঙ্ঘায়িত (অর্গানাইজড) হওয়ার সাহায্য করা, সে উদ্দেশ্যে এবং শ্রেণি-রাজনীতির ভিত্তিতে নতুন সংগঠন গড়ে তোলা। এই সময়ে সংগঠন গড়ে তোলার কাজের সঙ্গে শ্রেণি-রাজনীতি বোঝার/নির্মাণের/ অনুশীলনের কাজের বিরোধ নেই, দ্বিতীয়টা না ঘটলে প্রথমটাও নিরর্থক হয়ে পড়বে। যে শ্রেণি-রাজনীতির কথা বলতে চাওয়া, তা আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মূল্যায়ন ভিন্ন সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিচিত্রধর্মী শ্রম ও শ্রমিকের সংঙ্ঘায়ন-সম্ভাবনা বিষয়েও মূল্যায়ন ভিন্ন এই রাজনীতি গড়ে উঠবে না। অর্থাৎ কিনা, কাজটা শুরু হতে পারে কোথায়, কাদের মধ্যে, কীভাবে? যে সম্ভাব্য সংগঠনের কথা হচ্ছে, তা বিশেষ উৎপাদনক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তি শ্রমিক/ শ্রমজীবীদের নতুন ট্রেড-ইউনিয়ন যৌথমাত্র নয়। বরঞ্চ, বিশেষ উৎপাদনক্ষেত্রের অর্থনৈতিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে রাষ্ট্র-পুঁজির দীর্ঘমেয়াদি বিরুদ্ধতার সম্ভাবনার ভিত্তিতে তা গঠিত হতে হবে।
দ্বিতীয় পর্ব – এই লিঙ্কে।
লেখক বামপন্থী ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ।
Interesting observation. Waiting eagerly for the next part.