গ্রাউন্ডজিরো, ২৬.০৫.২০২০
শ্রমিকদের ঘরে ফেরাকে ‘বড় ইস্যু, বড় সমস্যা‘ হিসেবে চিহ্নিত করল প্রশাসন। এই কলঙ্কলেপন নিন্দনীয়।
সমস্যা সঙ্কুল পরিস্থিতিতেই মানুষ চেনা যায়। মানুষ ও অমানুষের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় সঙ্কটকাল। দেশজুড়ে করোনা এক নতুন শ্রেণির অস্পৃশ্যতার জন্ম দিয়েছে। এর জন্য বলিয়ে-কইয়ে, ডিগ্রিধারী অথচ প্রকৃত অশিক্ষিত শ্রেণিটিই দায়ী। এর মধ্যে যেমন, একজাতীয় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক রয়েছে তেমনি রাজনীতিক ও মোড়ল-নাগরিকরাও আছে। এই করোনাকাল এই আমপান-বিধ্বস্ত বাংলা মনুষ্যত্বের অগ্নিপরীক্ষার কালও বটে।
কর্মহীন, বিচারহীন, সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তাহীন, যুগপৎ মালিক-সরকারের চরম অবহেলা-বঞ্চনার শিকার এই শ্রমিকরা ঘরের, প্রিয়জনের, বন্ধু-প্রতিবেশীর ওমের খোঁজে, মানসিক শারীরিক আশ্রয়ের খোঁজে নিজের ঘর, নিজের গাঁয়ে ফিরছেন। যাঁদের অনেকেরই হয়তো ঘর কেড়েছে আমপান। ভেসে গেছে ভিটেমাটি।
শ্রমিকরা সমস্যা নয়, তাঁরা সম্পদ। তাঁরা দেশের তাবড় ছোট বড় সম্পদের সৃষ্টিকারী। তাঁদের ঘাম-রক্তে পুঁজি ফুলেফেঁপে ওঠে। নবান্ন বাড়িটি, ওই চেয়ার-টেবিল, ওই পোশাক, জুতো, মুখে আঁটা মুখোশ শ্রমিকের হাতে গড়া। শ্রমিকদের ঘরে ফেরা ‘বড় ইস্যু’ নয়। বড় ইস্যু তাঁদের আশু চিকিৎসা, প্রাথমিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা, সন্দেহ-ঘৃণার হাত থেকে রক্ষা করা। তাঁদের কর্মহীনতা, তাঁদের পুনর্বাসন, রুটিরুজির সুরাহা পরবর্তী ‘বিগ ইস্যু’। হ্যাঁ, ঘরে ফেরা নয় এ সবই প্রধান বিচার্য বিষয়। বিনি ভাড়ায় ট্রেনে চাপিয়ে — তাও আবার নানা বায়নাক্কার পর — কেউ কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের আইনি অধিকার রয়েছে বিনাভাড়ায় যাতায়তের। সেই অধিকার এক ক্ষুদ্র অংশই পায়। সে অধিকার দেওয়ার কথা, তাকে নির্দিষ্ট পেশাকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করে সর্বজনীন করে তোলার কথা তো দূরে থাক, সরকার জানেই না কত শ্রমিক পরিযাণে যান, কী কী কাজ করেন। কত শ্রমিক চক্রবৎ এক কাজ থেকে আরেক কাজে ঘরে-বাইরে ঘুরে মরেন। কাশ্মীরে গুলি খেলে কিংবা কেরালায় বন্যায় ডুবলে, মুম্বাইয়ে বাড়ি ভেঙে মরলে জানা যায়। ভোটের সময় ভাবনায় আসে।
ওঁদের স্বাগত জানান। ‘সমস্যা’, ‘ইস্যু’ বলে জটিলতার সৃষ্টি করবেন না। একা না-পারলে দশজনকে ডাকুন। দেশে এখনও মানুষের অভাব হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি পালনে সহায়তা করুন। চিকিৎসা ও শুশ্রূষার হাত বাড়িয়ে দিন। সামাজিক, মানবিক বন্ধন দৃঢ় করুন। এটাই সময়ের দাবি।
Cover Image Courtesy : The Hindu