ধসে পড়েছে গুজরাত মডেল। ৯ মে পর্যন্ত গুজরাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭৪০২ এবং মৃত ৪৪৯ জন। আহমেদাবাদে নামাতে হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। চিকিৎসকের জন্য দ্বারস্থ হতে হয়েছে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের। ২১ লক্ষের বেশি শ্রমিক গুজরাত ছেড়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যাবেন বলে স্থির করেছেন। আর এই সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় ভারতীয় কর্পোরেট দুনিয়া। ইতিমধ্যেই তারা আর্থিক ক্ষতির এবং সর্বস্তরে সম্ভাব্য ছাঁটাইয়ের খতিয়ান প্রস্তুত করে ফেলেছে। এক রকম কর্পোরেটের পরামর্শ মেনেই শ্রম আইন বিসর্জন দিয়েছে তিন বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাত। দেশজোড়া এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও আর্থনৈতিক সঙ্কটের দিনে গুজরাত মডেল নামক অতিকথাটি ফের খতিয়ে দেখলেন দেবাশিস আইচ।
Development requires the removal of major sources of unfreedom: poverty as well as tyranny, poor economic opportunities as well as systematic social deprivation, neglect of public facilities as well as intolerance or over activity of repressive states. Despite unprecedented increase in overall opulence, the contemporary world denies elementary freedom to vast numbers — perhaps even the majority — of people.
-Amartya Sen, Development as Freedom.
চাল আছে। গ্যাস ফুরিয়ে গিয়েছে। ডাল নেই। রান্না করব কিছু নেই। ময়দা নেই। শুধু চাল আছে। আমরা কি এখানে না খেয়ে মরতে এসেছি?
-গোবিন্দ কুমার, উত্তরপ্রদেশ থেকে সুরাতে আসা টেক্সটাইল শ্রমিক।
উল্টোরথের যাত্রা
‘সব পেয়েছির’ নগর, শ্রমিকের ‘এল ডোরাডো’ সুরাত থেকে পালাতে চাইছেন শ্রমিকরা। পালাচ্ছেন। পালিয়েওছেন। পালাচ্ছেন তো সেই ‘জনতা কার্ফু’ জারির সময় থেকেই। দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, লুধিয়ানা, হরিয়ানা, এর্নাকুলাম, রাজকোট, আহমেদাবাদ — প্রায় সমস্ত বড় শহর থেকেই দেশে, গাঁয়ে, মুলুকে ফেরার উল্টোযাত্রা। কিন্তু, সুরাতের ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের মতো বার বার পথে নেমে আসতে, সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি অন্য কোনও শহরে।
২৯ মার্চ ২০২০:
রাতে সুরাতের পান্ডেসারা এলাকার গণেশ নগর, তিরুপতি নগরে বাড়ি ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন প্রায় ৫০০ শ্রমিক। টিয়ার গ্যাস, লাঠি চার্জ বনাম ইট-পাটকেলের লড়াই শেষে ২৯ ও ৩০ মার্চ ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় দাঙ্গা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগে এবং এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্টে। যদিও, জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদসংস্থার মতে, রাস্তায় নেমে আসা জনতা পাওয়ারলুম, টেক্সটাইল প্রসেসিং ইউনিটে কাজ করতে আসা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের শ্রমিক।
১০ এপ্রিল ২০২০:
সন্ধে ৭টা সাড়ে ৭টা নাগাদ সুরাত শহর থেকে বেরিয়ে পড়েন একদল শ্রমিক। পুলিশের মতে এঁরা প্রধানত ওডিয়া শ্রমিক। শহরের সীমান্তে লকসানা এলাকায় তাঁদের পথ আটকায় পুলিশ। খাবার আর ঘরে ফেরার দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। রাস্তার পাশে সারি দিয়ে থাকা গাড়ি, বেশ কয়েকটি সব্জির ঠেলাগাড়ি, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন তাঁরা। পুলিশ এখানেও প্রায় ৬০-৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
১৪ এপ্রিল ২০২০:
লকডাউনের সময়সীমা বাড়তেই শহরের আবাসিক ও শিল্প এলাকা ভারাচ্চার পথ অবরোধ করেন শ্রমিকরা। দাবি সেই একই ‘খাবার চাই’, ‘বাড়ি ফিরিয়ে দাও’। পুলিশ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। তার আগে এক এনজিও’র সাহায্যে খাবারের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
২৮ এপ্রিল ২০২০:
সুরাতের প্রধান বাণিজ্য অঞ্চলে নির্মীয়মান ডায়মন্ড বুআসে ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, বিভিন্ন বাণিজ্যিক কেন্দ্রের জানালার কাঁচ ইট মেরে ভেঙে দেয়। ভাঙচুর চলে কার্যালয়ে। অভিযোগ, লকডাউনের সময়ের মজুরি না-দিয়ে জোর করে খাটিয়ে নিচ্ছেন মালিকরা। বাড়ি ফিরিয়ে দেবার দাবি মানছে না কর্তৃপক্ষ। উলটে গুজরাতের অন্য অঞ্চল থেকে শ্রমিক নিয়ে আসছেন ঠিকাদার। এই বাইরের শ্রমিকদের থেকে রোগ ছড়াতে পারে এই ভয়েও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা। অভিযোগ জানানোর জন্য বিল্ডার ও কন্ট্রাকটারদের হদিশও মেলেনি।
২৮ এপ্রিল ২০২০:
সুরাতের দিন্দোলিতে রেল লাইনের উপর পাঁচ শ্রমিককে বসে থাকতে দেখে পুলিশ তাঁদের তাড়া করে। ঘরে ফেরার তাগিদেই স্থানীয় স্টেশনে যাওয়ার জন্য তাঁরা রেললাইনে উঠেছিল বলে জানা যায়। পুলিশের দাবি, তাঁদের মধ্যে একজন পড়ে গিয়ে আহত হন। এর পর বাকি চার যুবকের চিৎকার শুনে আশপাশ থেকে আরও শ্রমিক বেরিয়ে আসেন। এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। শেষ পর্যন্ত তিন-চারটি থানার পুলিশ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু গ্রেপ্তার করে ওই পাঁচ জনকেই।
৪ মে ২০২০:
বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতেই হবে — এই দাবি তুলে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভারেলির রাস্তায় নেমে আসেন। পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে পালটা ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়।
৪ মে ২০২০:
সুরাতের পালানপুর পাটিয়া অঞ্চলে বাড়ি ফেরার জন্য হাতে হাতে রেজিশট্রেশন ফর্ম দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকরা। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা গেলেও তা কাজ করছিল না।
৪ মে ২০২০:
বাড়ি ফিরতে না পেরে রাগে ক্ষোভে উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকরা মাথা কামিয়ে প্রতিবাদ জানান। ঘটনাটি ঘটেছে সুরাতের পান্ডেসারা এলাকায়। শ্রমিকরা সংবাদসংস্থাকে জানায় দু’দিন আগে তাদের বাড়ি ফিরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বাসে করে ফেরার সময় ‘বৈধ অনুমতি’ নেই এই অজুহাতে পুলিশ সুরাতের কোসাম্বা এলাকায় তাঁদের আটকে দেয়। অভিযোগ, অনেক শ্রমিক মোবাইল, ঘড়ি বেচে বাসের ভাড়া জোগাড় করেছিলেন।
৯ মে ২০২০:
খাদ্যের দাবিতে সুরাতের হাজিরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে শ্রমিকদের তুমুল বিক্ষোভ। এর বাইরেও অশান্তি ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে রাজকোট, আহমেদাবাদ ও দাহোদ থেকেও।
এই লাগাতার বিক্ষোভ শুধু গুজরাত নয় কেন্দ্রীয় সরকারকেও বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। শুধু তো গুজরাতের সুরাত নয়, সারা দেশেই বড় বড় শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা। পুলিশের মার খেয়েছেন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে বহু শ্রমিককে। ৮ মে সারা দেশব্যাপী এ জাতীয় ৪৬টি বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, লাঠিচার্জের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ‘মাইগ্রেন্ট লাইভস ম্যাটার’। প্রথম দফা লকডাউনের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই মুম্বাইতে শত শত শ্রমিক বান্দ্রা রেলস্টেশনের দিকে ছুটে গিয়েছিল। দেশ জুড়েই পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফেরার জন্য উন্মুখ, একদিকে কাজ বন্ধের জেরে আর্থিক সঙ্কট অন্যদিকে, কারখানা, নির্মাণ প্রকল্পের অস্থায়ী ঝুগগি-ঝুপড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে বড় অংশকেই। শ্রমিক বস্তি এলাকার মাথা গোঁজার ভাড়া গুনতে না পেরে পথে নেমে এসেছেন অনেকেই। দু’বেলা জুটছে না পেট ভরা খাবার, মিললেও অনেক সময়ই অখাদ্য। স্থানীয় গরিব মানুষদের বিবেচনায় আনতে গিয়ে লম্বা লাইনের শেষে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভিন রাজ্যের মানুষকে। যাঁদের তবু মাথার উপর ঠাঁই বজায় রয়েছে খাদ্যাভাব, জ্বালানির অভাব, ক্রমে ফুরিয়ে আসা সামান্য সঞ্চয় অসহায় করে তুলেছে তাঁদেরও। আশ্রয় শিবিরের অবস্থা চরম অস্বাস্থ্যকর, সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অন্যান্য চিকিৎসা, মাস্ক, সাবানের কোনও বালাই নেই। শৌচাগার অপ্রতুল, নোংরা, ব্যবহারের অযোগ্য — এমন অভিযোগও ভূরি ভূরি। একে ঠিকা শ্রমিক, দিনমজুর, তার উপর গ্রাম থেকে উজিয়ে আসা দলিত-আদিবাসী-মুসলমান সমাজের এই শ্রমিক শ্রেণি চিরকালই চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত ও শোষিত। চিরকালই এই অংশটি, দেশের শ্রমিক সমাজের নিম্নতম স্তরে থাকা অথচ দেশের বৃহত্তম শ্রমিক সমাজ, এবং সরকারি, দলীয় ও ট্রেড ইউনিয়নের বৃত্তের বাইরে। কোভিড-১৯ অতিমারি যেন যাবতীয় অবজ্ঞা, উদাসীনতা, স্বেচ্ছাবিস্মৃতির অতল মন্থন করে তাঁদের তুলে এনেছে সকলের চোখের সামনে। ধূলিসম যাঁদের উপস্থিতিকে লুকিয়ে রাখা ছিল মখমল মসৃণ উন্নয়নী গালিচার মিথ্যার নীচে অতিমারির প্রবল প্রকোপে তা যেন আঁধি হয়ে দেখা দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরে।
ভিন রাজ্যের সরকার চায় না এঁরা ফিরে যাক, নিজ রাজ্যের সরকারও নয়। কেন্দ্র চায়, শিল্পপতিরাও চান মানসিক, শারীরিক ভাবে ধ্বস্তবিধ্বস্ত, অজানিত অসুখের ভয়ে চরম ভীত, প্রিয়জন আর ছেড়ে আসা গ্রামের আদরে ফিরতে চাওয়া মানুষগুলোকে ফের জুতে দিতে কাজে। এবার আরও কম মজুরিতে কিন্তু অতিরিক্ত কাজের সময়ের জাঁতাকলে। সুরাতের হিরে ও টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা মার্চ মাসেই ঠিক করেছিলেন তাঁরা কাজ চালিয়ে যাবেন। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকেই বিশ্বের বহু দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কুপ্রভাব দেখা দিতে থাকে। প্রথমে হংকঙে লাগাতার বিক্ষোভ, এর পর চিনে করোনার প্রাদুর্ভাব হিরে শিল্প ক্ষতির মুখে পড়ে। জুয়েলারি এক্সপোর্ট কাউন্সিলের হিসেব করেছিল ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫০০০ কোটি টাকায়। এদিকে কিন্তু সুরাতকে বিশ্ব রত্নবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র ডায়মন্ড বুআস গড়ে তোলার কাজ এই লকডাউনের বাজারেও চলছে। অন্যদিকে, প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ‘জনতা কার্ফু’ ঘোষণার দিন থেকে লকডাউনের প্রথম দু’একদিনের মধ্যেই সুরাত ছেড়ে নিজের রাজ্যের দিকে পাড়ি দেয়। সৌরাষ্ট্রের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সুরাতে আসা শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করে ফিরে যেতে থাকে। প্রশাসন নিজ রাজ্যের শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছেও দিয়েছে। এর পর যত দিন যায় তত অশান্ত হয়ে উঠতে থাকেন শ্রমিকরা। শেষ পর্যন্ত দেশজুড়ে ফুঁসতে থাকা শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ২৯ এপ্রিল ও ১ মে নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। গুজরাত রাজ্য প্রশাসনের দাবি, ২ মে শনিবার থেকে ৫ মে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৩টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ২৮ হাজার শ্রমিক ওডিশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে ফিরে যায়। সংখ্যাটি কিছুই নয়। কেননা, ৩ মে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে গুজরাত থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ২৫টি রাজ্যের ২০,৯৫,৪২৮ জন আবেদন করেছেন। এবং নেপালে ফিরে যাওয়ার আবেদনকারীর সংখ্যা আরও ১১ হাজার। আবেদনকারীর সংখ্যা আরও কয়েক লক্ষ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
বন্দি করার ফন্দি
৩ মে শ্রমিকদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আর একদফা নির্দেশ জারি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। প্রথম দুটি নির্দেশের নিরিখে জারি করা এই নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার ও শিল্পপতিদের গোপন বোঝাপড়াকেই যেন সামনে নিয়ে এল। নির্দেশের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে প্রথম দুই নির্দেশের ব্যাখ্যা করে বলা হয়:
প্রথম দুই নির্দেশের লক্ষ্য সেই সমস্ত আটকে পড়া শ্রমিকদের সাহায্য করা যাঁরা লকডাউনের মুখে তাঁদের বাসস্থান/ কাজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু লকডাউনের জন্য গাড়ি চলাচল এবং সাধারণের যাতায়তে বাধানিষেধের ফলে নিজ নিজ বাসস্থান বা কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারেননি। কিন্তু, (ওই নির্দেশ) তাঁদের জন্য নয় যাঁরা আদি বাসস্থানের বাইরে কর্মসূত্রে স্বাভাবিক ভাবে কোথাও বসবাস করেন এবং স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ি ফিরতে চান।
মোদ্দা কথাটি কী দাঁড়ালো? সত্যিই গোলমেলে। বহু শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন এবং যে রাজ্যে কর্মসূত্রে গিয়েছিলেন তার বাইরে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় শিবিরে আটক রয়েছেন। আবার কর্মচ্যূত হয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কোনও আশ্রয় শিবিরে কোনওমতে মাথা গুঁজে আছেন। আবার অনেকেই কর্মরাজ্যে শ্রমিক বস্তি, মেস কিংবা কারখানা বা নির্মীয়মান এলাকার সাইটে আটক পড়েছেন। হাইওয়ের ধারে কিংবা গ্রামীণ এলাকাতেও অস্থায়ী ছাউনি বা স্কুল বাড়িতে আশ্রয় হয়েছে পথে বের হয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া শত শত শ্রমিকের। এছাড়া রয়েছেন অন্যান্য আধা স্থায়ী কিংবা স্থায়ী কর্মী/শ্রমিকরা। তবে কাদের জন্যই-বা এই নির্দেশ? অত প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। সন্দেহ হয় এই নির্দেশের লক্ষ্য হল, যত বেশি বেশি সংখ্যক শ্রমিকদের আটকানো সম্ভব, আটকাও। কেন এই সন্দেহ? এই ‘সংশোধিত’ নির্দেশ বেরলো ৩ মে এবং সব ব্যবসা খুলে দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো বণিকসভার ‘স্ট্রাটেজি নোট অন রিজাম্পশন অফ ইকনমিক অ্যাক্টিভিটিজ ইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াজ’ শীর্ষক রিপোর্ট সকলের গোচরে এল ৪ মে। এর মধ্যে কি কোথাও কোনও যোগ রয়েছে? আপাতদৃষ্টিতে না। কিন্তু, যোগসাজশটি উলঙ্গভাবে প্রকাশ পেল কর্নাটক সরকারের এক সিদ্ধান্তে। কনফেডারেশন অফ রিয়েল এস্টেট ডেভলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্রেডাই) সঙ্গে এক বৈঠকের পর পরই মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ৬ মে থেকে বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন বাতিল করে দিলেন। শ্রমিকদের প্রবল বিক্ষোভ, কর্নাটক তো বটেই সারা দেশে প্রবল সমালোচনার জেরে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
আধা দাস, আধা স্বাধীন
এই যে ‘এল ডোরাডো’, এই যে পুঁজির পাহাড় — সে তো এই শ্রমিকদের রক্ত ঘামে সৃষ্টি। দৈনিক মজুরি দিলেই চলে। সামাজিক নিরাপত্তা, পিএফ, গ্র্যাচুইটি, পেনশন, ডিএ, ডিআর, কিছুই দিতে হয় না। চিকিৎসার খরচ দিতে হয় না। ইএসআই দূরের কথা এঁরা যে মজুর তার পরিচয়টুকুই নেই। কর্মস্থলে দুর্ঘটনা ঘটলে কিংবা দুর্ঘটনায় বেঘোরে মারা গেলে বাকিদের মুখবন্ধ করতে যা একটু খরচ। তাও নিয়ম মেনে নয়। অর্থাৎ, কোনও স্থায়ী খরচ নেই। মহিলা শ্রমিকদের অন্তঃসত্ত্বাকালীন ছুটি, শিশুদের-মায়েদের টীকাকরণ, অঙ্গনওয়ারি-মিড ডে মিল, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সবই খাতায়-কলমে রয়েছে। বাস্তবের ধান-আলুর নামালে নেই, গম কিংবা আখের খেতে নেই, ইটভাটায় নেই, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য আইন আছে মানা হয় না। নিয়োগ, আসা-যাওয়া সে সব ম্যানেজ করে ঠিকাদার, উপ ঠিকাদাররা। বাসস্থানের ব্যবস্থা ঝুগগি-ঝুপড়িতে কিংবা সাইটে শ্রমিকরাই করে নেয়। ‘স্যানিটেশন’ কিংবা ‘হাইজিন’ এসব মারি-অতিমারি হলে, কলেরা কিংবা আন্ত্রিকে মরলে সরকার বলে, বাবুরা বলে, যেমন, এখন বলছে। সে কল-কারখানা, বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে বলে বলছে। বেঘোরে মরার ভয়ে বলছে। বেকার হয়ে যাবার ভয়ে, ক্ষমতা, পুঁজি হারাবার ভয়ে বলা। দরদ, মানবতা, অধিকার — এসব ছেঁদো শব্দ স্বার্থে ঘা লাগায় শোনা যাচ্ছে।
তিন দফার লকডাউনের পর, এখন, চক্ষুলজ্জার খাতিরে এটুকু বলার মতো আর পরিসর নেই। বণিকসভা বলছে শিল্পের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আর সত্যি-সত্যি তো গেছেই। বিগত ছয়-সাত বছরে আর্থনৈতিক অসুখ ক্রমে বেড়েছে। নাভিশ্বাসের আর দোষ কী? অতএব, ওসব রেড-অরেঞ্জ-গ্রিন বাকোয়াস ছাড়ো। সব জোনেই কারখানা খুলতে হবে। তা বলল কবে, ঠারেঠোরে, কিছুটা রেখেঢেখে বলতে শুরু করেছিল প্রথম দফার পর থেকেই। ফলত, দ্বিতীয় দফার শুরুতেই কিছু বাধানিষেধ, কিছু স্বাস্থ্যবিধান মান্য করার সাপেক্ষে কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় কল-কারখানা খোলা, ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর অনুমতি মিলেছিল। চা-কফি বাগিচার শ্রমিকদের তো ‘হার্ড ইমিউনিটি’ কত মারি-মন্বন্তর পার করে দিল, আর করোনাভাইরাস! খোলা রইল বাগান। কোনও কোনও অঞ্চলে শ্রমিকরা কাজে লকডাউন মেনে কাজে এলেন না। ভেবেছিলেন বোধহয় দেশের দুই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মালিকের কথা ফেলবেন না বাগানের মালিকরা। লকডাউনকালীন মজুরি মিলবে। দেখা গেল, এ রাজ্যের বাগিচা মালিকদের পরামর্শদাতা কমিটি জানিয়ে দিল কাজ না হলে তাঁদের ১৫৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। অতএব, ১৩ এপ্রিল থেকে খুলে গেল বাগান। লকডাউনের মজুরি তো মিললই না উলটে তথাকথিত সামাজিক দূরত্ব, ২৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়োগের অজুহাত দেখিয়ে পাতা তোলার নিয়ম, স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দ্বিগুণ কাজ করতে বাধ্য হলেন শ্রমিকরা। ২১ এপ্রিলের মধ্যে গুজরাতে খুলে দেওয়া হল ৬০০০ বড় ও মাঝারি কল-কারখানা। কাজে যোগ দিলেন ৪৫ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী। তবে, শুধু গুজরাত নয়, ১৫ ও ২০ এপ্রিল দু’দফায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা খোলার অনুমতি পাওয়ার পর সারা দেশেই ছোট-বড় বহু প্রতিষ্ঠানই কাজ শুরু করে। অবশ্যই মজুরি বা বেতন ছেঁটে, অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করার কড়ারেই যোগ দিতে হয় শ্রমিকদের। যাঁদের এক বড় অংশই এপ্রিল মাসের বেতন বা মজুরি পাননি, মার্চ-এপ্রিল দু’মাসের মজুরি মেলেনি এমন শ্রমিক বা কর্মচারীর সংখ্যাও কম নয়।
একই সঙ্গে, সংসদে পাশ না হলেও যেন একরকম চালু হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড বা শিল্প-সংক্রান্ত সম্পর্কের আচরণ বিধি, ২০১৯। কোডে দিনে ১২ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব রয়েছে। এ ছিল দেশের শিল্পপতিদের বহুকালের মনোবাসনা। কেন্দ্রীয় সরকারের সায় রয়েছে তাতে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নির্দেশ জারি করে নয়া শ্রমিক আইন চালু করে দিল রাজস্থান (১১ এপ্রিল), গুজরাত (১৩ এপ্রিল), পঞ্জাব (২০ এপ্রিল), হিমাচলপ্রদেশ (২১ এপ্রিল)। প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫ এবং রাজ্যে রাজ্যে এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট। গুজরাতের বণিকসভা ১২ ঘণ্টা কাজের পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপ বন্ধ রাখার প্রস্তাব পেড়েছিল বহু আগেই। এবার উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের পথ অনুসরণ করে চারটি বাদে দেশের সব শ্রম আইন বাতিলের পথ নিল।
মধ্যপ্রদেশের নয়া শ্রম আইনে বলা হয়েছে, কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বেড়ে ১২ ঘণ্টা হবে। ৭২ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম নয় এবং শপ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট ভোর ছ’টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ১০০ জন কাজ করে এমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুযায়ী লোক নিয়োগ করতে পারবে। অর্থাৎ, এ মুহূর্তে যে প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন কাজ করতেন, ম্যানেজমেন্ট সেখানে ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ ছাঁটাই করতে পারবে। ৫০ জন শ্রমিক থাকলে ঠিকাদারকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না। তিন মাস কোনও কারখানায় ইনস্পেকশন হবে না। ৫০ জন কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানে ইনস্পেকশনই হবে না। এছাড়া একদিনে মিলবে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স এবং ১০ বছরে একবার লাইসেন্স নবীকরণ হবে।
উত্তরপ্রদেশ: বিল্ডিং অ্যান্ড অদার কন্সট্রাকশন ওয়ার্কাস অ্যাক্ট, ১৯৯৬; ওয়ার্কমেন কমপেনসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৩; বন্ডেড লেবার সিস্টেম (অ্যাবলিশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৬ এবং পেমেন্ট অফ ওয়েজেস অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা ছাড়া সব শ্রম আইন বাতিল করে তিন বছরের জন্য শিল্পপতিদের ‘মুক্তি’ দিয়েছেন যোগী।
নতুন শিল্পের জন্য মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট; ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি রুলস, এমপ্লয়িজ কমপেনসেশন অ্যাক্ট; ছাড়া অন্যান্য শ্রম আইন মেনে চলা থেকে রেহাই পাবেন শিল্পপতিরা। এমনই অর্ডিন্যান্স এনেছে গুজরাত। ১২০০ দিন, অর্থাৎ, আগামী প্রায় তিন বছর আট মাস শ্রম আইনের আওতা থেকে শিল্পের ছুটি হয়ে গেল। এই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য অনলাইনেই যাবতীয় অনুমোদন মিলে যাবে ১৫ দিনের মধ্যে। জমি মিলবে ৭ দিনে। ৩৩ হাজার হেক্টর জমিও নাকি চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। (ইকনমিক টাইমস, ৯ মে ২০২০।)
এই তৎপরতা যদি শ্রমিকদের দু’বেলা খাদ্য জোগাতে, মজুরি দিতে কিংবা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেখা যেত — তবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক রুজি-রোজগার ছেড়ে আর এক অজানা ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াতেন না। সে ভাবনা দূরে থাক এবার তাঁদের চাকরি মর্জিমাফিক কেড়ে নেওয়ার আইনি অধিকার জন্মাল শিল্পমালিকদের। ইনস্পেকটর তো দূরের কথা সরকারের শ্রম দপ্তরও আর শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে নাক গলাবে না। হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না ট্রেড ইউনিয়নকেও। কেননা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার কোনও অধিকার রইল না এই তিন রাজ্যের অর্ডিন্যান্সে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি ভারতীয় কর্পোরেট দুনিয়া। তারা দু’হাত তুলে এই সিদ্ধান্তকে শুধু স্বাগত জানায়নি, প্রতিটি রাজ্যই যেন এই পথে হাঁটে সেই রকম মনোবাঞ্ছাও প্রকাশ করেছে। আপাতত বামপন্থী সিটু থেকে আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস এই সিদ্ধান্তের নিয়মানুগ প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বলা হচ্ছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, চিন থেকে হাজারের বেশি মার্কিন সংস্থাকে এ দেশে আনার জন্যই এই উদ্যোগ। চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং করোনাকালে চিনের সঙ্গে মার্কিন সরকারের সম্পর্কের অবনতির জন্য নাকি মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি চিন ছাড়তে চাইছে। এবং এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ‘লাভ তুলতে’ এবং ভারতকে ‘গ্লোবাল ম্যানুফাকচারিং হাব’ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট কেন্দ্র। সেই জন্যই বহির্ভারতের শিল্পপতিদের কাছে আকর্ষণীয় এবং আইনি জটিলতা বিহীন বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই এই পদক্ষেপ। সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গকে উদ্ধৃত করে এদেশের সংবাদমাধ্যম এও জানাচ্ছে, “কারখানা গড়ে তুলতে জমির সমস্যা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে অব্যবহৃত (অবস্থায়) পড়ে থাকা ৪,৬১,৫৮৯ হেক্টর জমি চিহ্নিত করেছে।” (এই সময়, ৯ মে ২০২০।)
মার্কিন দাস শ্রমিক কিংবা ব্রিটিশ আমলের চা-বাগানের ‘গিরমিটিয়া’দের ধরে বেঁধে, চাবুক মেরে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, কিংবা জাহাজের খোলে শিকল বেঁধে বা সাঁওতাল পরগনা থেকে রেলপথে চালান করা হচ্ছে না। রুটিরুজির তাগিদে স্বেচ্ছায় পাড়ি দিচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা এদেশে এটুকুই স্বাধীনতা তাঁদের। কর্মক্ষেত্রে পৌঁছলেই তাঁরা যেন হয়ে ওঠেন সামন্তপ্রভুদের দাসসাম্রাজ্যের বাঁধা শ্রমিক। এবার যৌথ উদ্যোগে, প্রায় সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকেই তাঁদের যাবতীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করার রাস্তা পাকা করে ফেলল দেশের বণিকসভা ও বিজেপি সরকার।
অতিলৌকিক ‘গুজরাত মডেল’
কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। এল ডোরাডোর কঙ্কাল। বিগত চার দশকে বিশ্বে দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পাওয়া ৩০ শহরের অন্যতম সুরাত। বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি এবং শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই ভিন রাজ্য কিংবা গুজরাতের অন্য শহর ও গ্রাম থেকে আসা। সংখ্যাটি কমবেশি ১২ লক্ষ। এঁদের ৯৬ শতাংশই পুরুষ। হিরে কাটা ও পালিশ শিল্পের শ্রমিকদের এক বড় অংশ সৌরাষ্ট্রের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাছাই করে আনা হয়। প্রধান কারণ (এক) বিশ্বাসযোগ্যতা, (দুই) শ্রমিক নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে শক্তিশালী বর্ণ বা কাস্ট নেটওয়ার্ক। বিশ্বের ৭০-৭৫ শতাংশ হিরে কাটা ও পালিশ হয় সুরাতে। যার ৮০ শতাংশই রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে, রয়েছে বিপুল পরিমাণ ছোট মাঝারি পাওয়ার লুম, টেক্সটাইল প্রসেসিং ইউনিট। সারা দেশকেই সিন্থেটিক শাড়ি পড়ায় সুরাত। এবং নির্মাণ শিল্প। এই মুহূর্তে সুরাতের সর্বোচ্চ খ্যাতি-মর্যাদা এবং আর্থিক প্রতিপত্তির দ্যোতক ডায়মন্ড বুআস।
শ্রমিকদের ‘এল ডোরাডো’ বলেই খ্যাতি সুরাতের। একবার গিয়ে পড়লে কিছু না কিছু কাজ মিলবেই এমনই আস্থা শ্রমিকদের। আরও বড় কথা শ্রমিকদের মধ্যে প্রবাদের মতো ছড়িয়ে পড়া বিশ্বাস, ‘সুরাতে যখন কেউ প্রথম আসে তার থেকে গরিব হয়ে সে ফিরে যায় না।’ বিমুদ্রাকরণের দিনে সেই অতিকথনে বড় ধাক্কা লেগেছিল বটে কিন্তু ভেঙে পড়েনি। করোনাভাইরাস তা ধসিয়ে ছেড়েছে। না হলে ১৪০০ কিমি পাড়ি দিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা শ্রমিক বলে বসেন, “এখানে কি না খেয়ে মরতে এসেছি? গ্রামে ফিরে যাব। খেতি করব। আর আসব না সুরাতে।” প্রায় পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ শ্রমিক সুরাত ছেড়ে চলে যাওয়ার পথে। শিল্পে সঙ্কট শুরু হয়েছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বিমুদ্রাকরণ ও জিএসটির ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে প্রথমে মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধের আমেরিকা অতিরিক্ত শুল্ক বসালে চিন ভারতীয় হিরে আমদানি ও রপ্তানি কমিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, হংকঙে গণতন্ত্রের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলন এবং তার জের মিটতে না মিটতে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবে হংকং ও চিনে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এবার সঙ্কট চরমে পৌঁছয়। সুরাতের হিরের ৩৭ শতাংশ হংকঙে রপ্তানি হয়। তা কেনে চিন। চিন থেকে কেনে আমেরিকা। এই শৃঙ্খল ভেঙে পড়তেই যত বিপত্তি। ২০১৯ সালে অন্তত ১০ জন হিরে শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন। এই ২০ ফেব্রুয়ারি হিরে কারখানার শ্রমিক কানুভাই, মজুরি কমে যাওয়ার শোক সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। একই দিনে আত্মহত্যা করেন আর এক স্ট্রিট ভেন্ডার সুরজভাই। ২০১৮ সালে ৪০,০০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিল। ২০% ছোট ইউনিটও বন্ধ হয়ে যায়। এবং হিরে শিল্পের সর্বস্তরেই বেতন কাঠামোয় ছাঁটকাট করা হয়। সাবজি ঢোলাকিয়ার মতো বড় মাপের শিল্পপতিরাও যখন বলছেন, ২০০৮ সালের পর এমন মহামন্দা কখনো আসেনি, হিরে শিল্পই এখন গতিহীন। তখন সাড়ে ৩৫ একর জমিতে, ন’টি টাওয়ার সমৃদ্ধ, ৬২০,০০০ স্কোয়ার ফুটে সাড়ে চার হাজার বাণিজ্যিক কার্যালয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র ডায়মন্ড বুআস নির্মাণে মশগুল কর্পোরেট ও গুজরাত সরকার। লক্ষ্য বিশ্বে হিরে কাটা, পালিশ থেকে রপ্তানি অবধি হিরে বাণিজ্যে এক নম্বর কেন্দ্র হয়ে ওঠা। বিশ্বের ৭০-৭৫ শতাংশ হিরে সুরাতে কাটা ও পালিশ হলেও হিরে বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রটি মুম্বাইয়ের কুরলার ভারত ডায়মন্ড বুআস বা বিডিবি। এই ডিসেম্বরেই সুরাত ডায়মন্ড বুআস বা এসডিবি খুলে যাওয়ার কথা ছিল। (ইকনমিক টাইমস, ৭ মে ২০২০।)
অরক্ষিত শ্রমিক ও উন্নয়ন সূচক
গুজরাতের নয়া অর্ডিন্যান্স আসলে বিগত এক যুগ ধরে চলে আসা শ্রমনীতিরই আরও উদার-সংস্করণ। এনএসএসও সমীক্ষা ২০১৭-১৮ অনুযায়ী ওই রাজ্যের ৯৪ শতাংশ শ্রমিকই অসংগঠিত। বিগত একযুগ ধরে দেখা গিয়েছে গুজরাতই একমাত্র রাজ্য যেখানে বিধিবদ্ধ সুরক্ষিত চাকরি ক্রমে ক্রমে কমে এসেছে। এছাড়াও নিয়মিত হোক কিংবা অনিয়মিত বা ঠিকা, গ্রামীণ হোক কিংবা শহুরে শ্রমিকদের মজুরির হার ২০টি প্রধান রাজ্যের মধ্যে প্রায় একদম নিচুতে। আবার মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই রাজ্যের স্থান বাকি ২০টি রাজ্যের মধ্যে নীচের সারিতে রয়েছে। কাজের পরিবেশও এতই খারাপ যে উৎপাদনশীল কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপক খামতি রয়েছে। প্রসঙ্গত, স্থায়ী শ্রমিক নির্ভর বড় বড় টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সুরাতের বিকেন্দ্রীভূত ছোট ও মাঝারি পাওয়ার লুম, স্পিনিং মিল, ডাইং মিল, প্রসেসিং হাউসগুলির রমরমা বাড়ে। বহু স্থায়ী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে কম মজুরিতে এই কারখানাগুলিতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। অচ্ছে দিনের প্রবক্তারা না মুখ খুললেও গুজরাত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নতুন নতুন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির ঠিকা বা অনিয়মিত শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়াই প্রথম পছন্দের। আর দ্রুতবৃদ্ধির শিরোপা মেলা সুরাত হিরে, পাওয়ার লুম, এমব্রয়ডারি ও জরি শিল্পে শ্রমিক নিয়োগ, চুক্তিপ্রথার জন্য কুখ্যাত। অন্যদিকে, পুঁজিনিবিড়তা এবং সুদক্ষ কর্মী নির্ভরতা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় (অত্যাধুনিক যন্ত্র, রোবট ব্যবহার) তৈরি হয়েছে বিশাল সংখ্যক কম মজুরির ঠিকা ও অনিয়মিত কাজ। যে কাজে কোনও সামাজিক নিরাপত্তাই নেই। অর্থাৎ, গুজরাতের সিংহভাগ শ্রমিক শুধু অরক্ষিত নন দুর্বল ও অসহায়।
কেন গুজরাত কোভিড-১৯ হটস্পট? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আহমেদাবাদের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভস-এর ইন্দিরা হীরওয়ে এবং আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শীণী মহদেবিয়া শুধু এনএসএসও সমীক্ষাই নয়, বিশেষ বিশেষ এলাকায় জনঘনত্ব, ২০০২ সংখ্যালঘু গণহত্যার পর শহর ও আধাশহর এলাকায় মুসলিমদের পূর্ণ ঘেটোকরণ ও বিচ্ছিন্নায়ন, দলিত ও শ্রমিক বস্তির অনুন্নয়ন এবং সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পুষ্টি কর্মসূচির হালও খতিয়ে দেখেছেন। দেখা যাচ্ছে, সরকার এসডিপির মাত্র ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে। যার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ চলে যায় ডাক্তারি শিক্ষায় ও বিমায়। জেলা ও ব্লকস্তরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর পোস্ট খালি। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ব্যয়বরাদ্দ কম হওয়ায় একজন নাগরিককে সরকারি চিকিৎসার সুযোগ নিতে হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খরচ নিজের পকেট থেকে করতে হয়। কেননা স্বাস্থ্যখাতে গুজরাত বছরে মাথাপিছু ব্যয় করে ২,৩২৯ টাকা, অর্থাৎ, দৈনিক ৬.৩৮ টাকা। মা ও শিশুদের পুষ্টি প্রকল্পগুলি যেমন অঙ্গনওয়ারির শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, মিড ডে মিল প্রকল্পগুলির বরাদ্দের মাত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। (দ্য ওয়ার, ২৯ এপ্রিল ২০২০।)
এবার যদি তাকাই “চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স” বা শিশু উন্নয়ন সূচকের দিকে, শ্রমিক কল্যাণের মতোই শিশু কল্যাণ, অর্থাৎ, ১২-২৩ দিনের শিশুর পূর্ণ টীকাকরণের অনুপাত; ১০-১৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার; পাঁচ বছরের নীচের শিশুরা, যারা স্বাভাবিক বা বাঞ্ছিত ওজনের কম নয় তাদের অনুপাত, জন্মের আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার অনুপাত —এ জাতীয় চারটি বুনিয়াদি সূচকের মিলিত হিসেবেও গুজরাত একটি নিম্নসারির রাজ্য। যার নীচে রয়েছে পাঁচ বিমারু রাজ্য রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। এই সূচকের নিরিখে ২০০৫-০৬ সালে প্রথম কুড়িটি রাজ্যের মধ্যে গুজরাতের স্থান ছিল ১৪তম। ২০১৩-১৪ সালে তা নেমে হয় ১৫তম। দুই ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচটি রাজ্য ছিল যথাক্রমে, কেরালা, তামিলনাড়, হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র এবং কেরালা, হিমাচলপ্রদেশ, তামিলনাড়, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র। দুটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল যথাক্রমে অষ্টম। (কেরালা টপস, গুজরাত ফ্লপস, বিহার হপস, জঁ দ্রেজ, সেন্স অ্যান্ড সলিডারিটি, ২০১৮।)
এই বইয়ের অন্য একটি প্রবন্ধে — দ্য গুজরাট মাডল — জঁ দ্রেজ একের পর উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন গুজরাত সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা জালের নানা সূচকে আসলে একটি মধ্যমানের রাজ্য। মানব উন্নয়ন সূচকে তার স্থান ২০টি রাজ্যের মধ্যে নবম; ‘অ্যাচিভমেন্টস অফ বেবিজ অ্যান্ড চিলড্রেন (এবিসি) ইন্ডেক্স’-এও নবম। এই সূচকটি শিশুদের পুষ্টি, বেঁচে থাকা, শিক্ষা ও টীকাকরণ — এই চারটি সূচককে ভিত্তি করে নির্মিত হয়।
“মাল্টি-ডাইমেনশনাল পভার্টি ইন্ডেক্স” (এমপিআই)-এ দেখা যাচ্ছে হুবহু একই ছবি। এমপিআই-এর ধারণাটির সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে দ্রেজ জানাচ্ছেন, দারিদ্র নানা রকমের বঞ্চনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। যেমন, খাদ্যের অভাব, বাসস্থান, নির্মলতা, বিদ্যালয়-শিক্ষা, স্বাস্থ্যের যত্ন ইত্যাদি। একটি পরিবারকে দরিদ্র ধরা হবে যদি দেখা যায় তারা এই বুনিয়াদি বঞ্চনার তালিকার একটি জ্ঞাত অনুপাত অনুযায়ী (ধরা যাক এক তৃতীয়াংশ) বঞ্চনার শিকার।
এই সার-সংক্ষেপিত সংখ্যাতাত্ত্বিক সূচকের অন্যতম রঘুরাম রাজন কমিটি উদ্ভাবিত “কম্পোজিট ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স”। এই সূচকে রয়েছে মাথাপিছু ভোগ, পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের বন্দোবস্ত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নগরায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি (ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন) ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত দশটি উপাদান। আশ্চর্যজনক ভাবে এক্ষেত্রেও গুজরাত সেই মধ্যমানে, অর্থাৎ, নবম স্থানে। রঘুরাম রাজন কমিটি-কৃত আরও একটি সূচক হচ্ছে “পারফরমেন্স ইন্ডেক্স”। কম্পোজিট ডেভেলপমেন্ট সূচকের নির্দিষ্টতায় একটি সময় ব্যাপী অগ্রগতির হার কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা মাপতে পারফরমেন্স ইন্ডেক্সকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন দ্রেজ। এই মাপকের নিরিখে ২০০০-এর যুগে কেমন অগ্রগতি ছিল গুজরাত-সহ অন্যান্য ১৯টি রাজ্যের? এ ক্ষেত্রে ‘মডেল’ খ্যাত গুজরাত নবম স্থান থেকে হড়কে দ্বাদশে গিয়ে পৌঁছয়। দ্রেজ বলছেন, গুজরাত যদি মডেল রাজ্য হয় তবে কেরালা, তামিলনাড় ‘সুপার মডেল’। মহারাষ্ট্র এই যাবতীয় সূচকে গুজরাতের চেয়ে ঢের এগিয়ে, এবং হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটক, হরিয়ানা, পঞ্জাবও এই সূচকগুলি অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুজরাতের তুলনায় ভালো স্থানে রয়েছে। দ্রেজের মতে ‘গুজরাত মডেল’ একদমই বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, গুজরাতের উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যা উন্নয়ন হয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রেই নরেন্দ্র মোদীর কোনও ভূমিকা নেই। তৃতীয়ত, এই প্রচারে হালকাভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গ। কিন্তু, ব্যাপক পরিমাণ পরিবেশ ধ্বংস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মতো অন্ধকারময়, কদর্য দিকটি অনালোচিত রয়ে গিয়েছে।
‘গুজরাত মডেল’ হচ্ছে সেই মডেল, অমর্ত্য সেনের ভাষা ধার করে এভাবে বলতে পারি, “অনেকের দৃষ্টিতে উন্নয়ন হচ্ছে একটা ‘ভয়ংকর’ প্রক্রিয়া অনেক বেশি বেশি ‘রক্ত, ঘাম ও অশ্রু’র— এক পৃথিবী, যেখানে প্রজ্ঞা কঠোর হওয়ার দাবি জানায়।” ‘নরমসরম’, সংস্কারের পথে ধীরগতি, তার উপর ১০০ দিনের কাজের মতো ‘টাকা ফোঁকা’, ‘ঠুনকো ভাবনা’র প্রকল্পের মদতদাতা প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেশের এলিট ও ইয়ারদোস্ত পুঁজিপতি এবং তাঁদের ধামাধরা মিডিয়ার প্রয়োজন ছিল এক শক্তিশালী, পেশিবহুল প্রধানমন্ত্রীর। ক্ষুধার্ত, মৃত্যু ভয়ে ভীত, ঘর ও প্রিয়জনের জন্য আকুল কোটি কোটি শ্রমিক দেশজুড়ে রাস্তায় নেমে এলে, গাড়ি চাপা পড়ে, লরি উলটে কিংবা মালগাড়ির নীচে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও যাঁর চোখের পাতা কাঁপবে না, ঠোঁট নড়বে না। দেশ তাঁকে পেয়েছে বটে কিন্তু করোনার মার কি তাঁর খড়ের পা, তাঁর যাবতীয় অক্ষমতা, অপদার্থতাকে দিনের আলোর মতো মেলে ধরল না?
লেখক একজন স্বাধীন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।
so called lock down –its not lock down and no herd immunity at all. Genocide only.