সম্প্রতি ‘কমিটি এগেইনস্ট অ্যাসল্ট অন জার্নালিস্টস’ (সিএএজে) -এর পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয় – দিল্লিতে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের ঘটনা। এই রিপোর্টে একটি নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে দেখা হয়েছে মূলত তিনটি পর্যায়ে কীভাবে সাংবাদিকদের উপরে রাষ্ট্রের মদতে পুলিস, প্রশাসন ও জনতা আক্রমণ ঘটিয়েছে এবং সেগুলির পেছনে কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে। এই রিপোর্টটি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের বর্তমানে কী অবস্থা (বিশেষত দেশজুড়ে সিএএ বা নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে) তাই যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। গ্রাউন্ডজিরো ইংরেজিতে প্রকাশিত রিপোর্টটির মূল বক্তব্য বাংলায় তুলে ধরার চেষ্টা করল। পাঠকদের সুবিধার জন্য লেখার শেষে মূল ইংরেজি রিপোর্ট’টির লিঙ্ক দেওয়া রইল।
কমিটি এগেনইস্ট অ্যাসল্ট অন জার্নালিস্টস (সিএএজে) ‘রিপাবলিক ইন পেরিল’ শীর্ষক যে রিপোর্টটি তৈরি করেছে সেখানে মোট ৩২টি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে সাংবাদিকরা তাঁদের উপর আক্রমণের কথা বলেছেন। যখন তারা নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘খবর’ করতে গিয়েছিলেন। এই রিপোর্টে দিল্লিতে ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত যেভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে হিংসা সংগঠিত হয়েছে তারও একটি স্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যায়।
ভূমিকা
এই রিপোর্টটির মূল উদ্দেশ্য হল প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের উপরে যে জাতীয় আক্রমণ নেমে আসছে তার ধরনটিকে বোঝা। রিপোর্টটি পড়লে যা বোঝা যায়, তা হল সাম্প্রতিক অতীতে সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের প্রকৃতি ও আক্রমণকারীদের পরিচিতির ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যা ঘটছে, তাতে মনে হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখন আর বড় কথা নয়। আসল হল – যখনই একজন সাংবাদিক সত্যটি প্রকাশ করছেন, তাঁর স্বাধীন মতটি প্রকাশ পাচ্ছে, তখনই আর তাঁর জীবন বা কাজের পরিসরের সুরক্ষা নিশ্চিত থাকছে না। এখন যখন একজন সাংবাদিক কোনও ‘খবর’ করতে যাচ্ছেন তখন তাঁর সংবাদমাধ্যমের ব্যানার/ব্র্যান্ড দেখে ধরে নেওয়া হচ্ছে তিনি কী রিপোর্ট করতে পারেন। যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে রিপোর্ট করছেন, তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে সত্যিটা প্রকাশ না করে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করতে এবং যদি তারা তা না করেন, তাহলেই তাঁদের আক্রমণ করা হচ্ছে, শারীরিক হেনস্থা করা হচ্ছে, জনসমক্ষে অপমান করা হচ্ছে।
এই রিপোর্টের সময়কাল ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাস (যখন ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব আইন পাশ হয় ও তার বিরোধিতায় দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়, যা এখনও চলছে) থেকে ২০২০-এর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ, যখন দিল্লিতে রাষ্ট্রের মদতে সুপরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ হিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হল। এই সময়ের মধ্যে দিল্লি — নির্দিষ্টভাবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা ঘটনাগুলি। এই রিপোর্টে ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত চার মাস জুড়ে যে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাগুলি ঘটেছে ও তার সঙ্গেই সাংবাদিকদের উপরে যে আক্রমণগুলি হয়েছে তার এক ধরনের তুলনামূলক সমীক্ষা করে বিশ্লেষনের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায় : সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন ও তাকে কেন্দ্র করে হিংসার প্রথম পর্যায়টি হল ডিসেম্বর ২০১৯, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই পর্যায়ে মোট ৭টি ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে যেখানে সাংবাদিকরা জামিয়া মিলিয়াতে ঘটনার ‘খবর’ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন জনতা ও পুলিশের হাতে। এই সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন মূলস্রোতের নিউজ চ্যানেল, এজেন্সি, আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডিজিটাল নিউজ প্ল্যাটফর্ম। দিল্লিতে মুখ্যত ১৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫দিন এই আক্রমন চলেছিল, যদিও সারা দেশে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে এই পর্যায়ে যে মোট ১৬টি ঘটনা ঘটেছিল সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের, তাও সিএএজে-এর এই রিপোর্টের শেষ অধ্যায়ে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায় : জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ শুরু হয়ে এই পর্যায়টি মোটামুটি গোটা জানুয়ারি মাস জুড়েই চলেছিল। ৫ জানুয়ারি যেদিন সন্ধ্যাবেলা মুখ ঢাকা গুন্ডারা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংস আক্রমণ চালায়, সেদিনই সেই ঘটনার ‘খবর’ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে, ট্যুইটারে সাংবাদিকদের করা অভিজ্ঞতার বর্ণনা থেকে এই সংখ্যাটা প্রায় ডজন খানেক। উল্লেখ করা যেতে পারে এই আক্রমণগুলি ছিল সুনির্দিষ্ট, ‘খবর’ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল ও জনতার হাতে সাংবাদিকরা জঘন্যভাবে হেনস্থা হয়েছিলেন।
এই পর্যায়টি চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় ৩১ জানুয়ারি, যেদিন আইটিও ও রাজঘাটে সাংবাদিকদের আক্ষরিক অর্থেই তাড়া করা হয়, মারা হয় ও আটক করে রাখা হয়। প্রায় ১০ জন সাংবাদিক ছিলেন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বরিষ্ঠ সাংবাদিক। প্রায় ১২ জনেরও বেশি সাংবাদিককে রাত পর্যন্ত স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে আটকে রাখা হয়েছিল। এক ও একমাত্র দিল্লি পুলিশ এই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া এই ঘটনার নিন্দা করে সেদিনই একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
তৃতীয় পর্যায়: এই পর্যায়টি ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা অনেককেই জরুরি অবস্থার সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রায় ১৮টি ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে যেখানে সাংবাদিকদের শুধু ‘খবর’ করতে বাধাই দেওয়া হয়নি, দাঙ্গাবাজ জনতা তাঁদের হিন্দু বা মুসলমান বলে চিহ্নিত করেছে, জনসমক্ষে চূড়ান্ত অপমান করেছে ও নির্দয়ভাবে মেরেছে। এই উন্মত্ত জনতাই তাঁদের ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ভেঙেছে, যানবাহন পুড়িয়েছে। ভয় ও আতঙ্কের কারণে এমন বহু ঘটনা এমনকি রিপোর্ট-ও হয়নি।
প্রায় প্রতিটি মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে ও প্রশ্ন তুলেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে – যেভাবে তাণ্ডব চালানো জনতাকে তারা শান্ত না করে বা আটক না করে তাদের সাহায্য করেছে – তা দেখে।
এই তিনটি পর্যায়কে ক্রমানুযায়ী সাজিয়ে এই রিপোর্ট-এ দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথম দিকের আক্রমণগুলি আদপে ছিল রাষ্ট্র ও তার মদতপুষ্ট জনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, যা শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির শেষে দিল্লিতে যে প্রচণ্ড হিংসার ঘটনা ঘটল, তাতে সাংবাদিকদের উপরে যেভাবে পরিকল্পনামাফিক আক্রমণ চালানো হল তারই ‘ব্লু প্রিন্ট’ ছিল।
শুধু তাই নয়, আক্রমণের ধরনেও ছিল এমন যা আগে কখনও দেখা যায়নি। একজন সাংবাদিককে সরাসরি গুলি করা হয়েছিল, একজন সাংবাদিককে প্যান্ট খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল ধর্মীয় পরিচয় প্রমাণ করতে, আরেক জনকে নির্দিষ্ট ধর্মীয় মন্ত্র বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। তৃতীয় পর্যায়ের আক্রমণে ধর্মীয়ভাবে চিহ্নিত করা ছিল আক্রমনের একমাত্র উদ্দেশ্য।
কাকতালীয় নয়
প্রথম পর্যায়: ডিসেম্বর ২০১৯
এই পর্যায়ে ৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে ঘটে চলা কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়েছে। যার মধ্যে থেকে কয়েকটিকে বেছে নিয়ে আমরা উল্লেখ করছি।
ডিসেম্বর ১০, ১১, ১২ – যথাক্রমে সিএএ লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ ও রাষ্ট্রপতি দ্বারা স্বাক্ষরিত।
ডিসেম্বর ১৩ – জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আইনের প্রতিবাদে সংসদ পর্যন্ত মিছিল করেন। ৫০ জনকে আটক করা হয়।
ডিসেম্বর ১৫ – দু’শোরও বেশি শিক্ষার্থী জামিয়াতে সিএএ বিরোধী প্রতিবাদে শামিল হন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সন্ধ্যা ৬.৪৬-এ শয়ে শয়ে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। প্রতিবাদরত পড়ুয়াদের উপর ব্যাটন দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি পুলিশ কাঁদানে গ্যাসও প্রয়োগ করে। প্রায় ১০০ জন পড়ুয়াকে পুলিস আটক করে ও পরের দিন ভোররাত ৩.৩০-এ তাদের ছাড়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ৫ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় ও হস্টেলে থাকা পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস খালি করতে বলা হয়।
ডিসেম্বর ১৯ – প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ দিল্লির কিছু অংশে গণ জমায়েত নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধ না মেনে লালকেল্লা ও মান্ডি হাউজে প্রতিবাদ জমায়েত হয়। দিল্লির কোনও কোনও এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ জারি হয়।
ডিসেম্বর ২০ – জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও যাশোলা বিহার শাহিন বাগ – এই দু’টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যাবেলা দরিয়াগঞ্জে একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হলে প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিস লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে।
ডিসেম্বর ২১ – দেশজুড়ে চলা সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের ‘খবর’ করার কাজে যুক্ত সাংবাদিকদের উপর পুলিশি বর্বর আক্রমনের (বিশেষত দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও কর্নাটকে) বিরূদ্ধে দেশের সব প্রান্তের সাংবাদিকেরা সমবেত প্রতিবাদ জানান।
ডিসেম্বর ২৪ – দিল্লির কেন্দ্রস্থল ও লুটিয়েন’স জোন-এর কাছে মান্ডি হাউজ-এ কোনওরকম জমায়েতের উপর পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সিএএ-এনআরসি বিরোধী মিছিল মান্ডি হাউজ থেকে শুরু করে যন্তর-মন্তর পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল
ডিসেম্বর ২৭ – দিল্লি পুলিশ প্রতিবাদকারীদের একটি ভিডিও রেকর্ড করে ফেসিয়াল রেকগনিশন সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে ও তাদের যে অপরাধীদের তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেস) রয়েছে তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে।
বিশ্লেষণ :
মোট ৩জন সাংবাদিক – উর্দু সংবাদমাধ্যম, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও বিবিসি-র – পুলিশের দ্বারা হেনস্থা হন। ব্যানার বা সংস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়নি। আবার মাতৃভূমি নিউজ-এর দু’জন অ-মুসলমান সাংবাদিকের হেনস্থা এটাও প্রমাণ করে শুধুই পরিচিতির ভিত্তিতেও হেনস্থা হয়নি।
মূলত জামিয়ার পড়ুয়া ও স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে অপর একটি ঘটনায় জি নিউজ, এএনআই ও এশিয়ানেট নিউজ-এর তিন জন সাংবাদিক হেনস্থা হন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে জি নিউজ ও এএনআই-এর বিরূদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তার কারণ তাদের পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন ও যার বহিঃপ্রকাশ এই আক্রমণ।
গত কয়েক বছরে মালিকানা ও স্বার্থের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমগুলি দল বদলেছে ও পক্ষপাতমূলক হয়ে উঠেছে। শুধু ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্টিং নয়, দর্শকদের মতামত তৈরিতেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ‘রাষ্ট্রবাদী’ বলে নিজেদের প্রচার করা জি নিউজ জামিয়ার কাছেই আক্রান্ত হয়েছে। জাতীয়বাদী বলে দাবি করা রিপাবলিক টিভিও অভিযোগ করেছে যে তাদের উপর জামিয়াতে আক্রমণ হয়েছে। এএনআই টেলিভিশন চ্যানেলে এজেন্সি হিসাবে সংবাদ ফুটেজ দিয়ে থাকে এবং গত ছ’বছরে তারা প্রতিষ্ঠানঘেঁষা বক্তব্য জনমানসে প্রচার করে গেছে।
হিংসাকে আউটসোর্স করে দেওয়া:
দ্বিতীয় পর্যায়: জানুয়ারি ২০২০
জেএনইউ থেকে রাজঘাট পর্যন্ত ঘটনাক্রম।
• জানুয়ারি ৫ – মুখঢাকা একদল জনতা হাতে লোহার রড, লাঠি নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। হিন্দু রক্ষা দল নামের একটি দক্ষিণপন্থী সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে।
• জানুয়ারি ৬ – টাইমস্ নাউ সংবাদ চ্যানেলে এক আলোচনাচক্রে এবিভিপি দিল্লির যুগ্ম সম্পাদক অনিমা সোন্কর স্বীকার করে নিলেন যে এবিভিপি সদস্যরা সেদিন সশস্ত্র ছিল।
• জানুয়ারি ৯ – জেএনইউ-এর প্রায় ১০০০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দপ্তর পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে। প্রতিবাদকারীদের পুলিশ আটকে দেয়, তাড়া করে ও ব্যাটন দিয়ে মারে। বহু পড়ুয়াকে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
• জানুয়ারি ১০ – ইন্ডিয়া টুডে সংবাদ চ্যানেলে জেএনইউ হামলার উপরে একটি স্টিং অপারেশন প্রচারিত হয়। সেখানে দেখা যায় এবিভিপি ছাত্রদের দ্বারা সমর্থিত দু’জন ছাত্র কীভাবে হেলমেটে মুখ ঢেকে রড নিয়ে পেরিয়ার হস্টেলে হামলা চালাচ্ছে। এই ভিডিওতেই প্রশ্ন তোলা হয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন – “আলো কে নিভিয়ে দিয়েছিল?” একজন ছাত্র বলে, “প্রশাসন, মনে হয় পুলিস।” সাংবাদিক এরপর যখন প্রশ্ন করেন, “তাহলে পুলিশ এবিভিপি-কে সাহায্য করেছিল?” ছাত্রটি উত্তর দেয়, “এটা কাদের পুলিশ, স্যার?”সে আরও স্বীকার করে গত ছ’মাস ধরেই তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে হিংসা চালাচ্ছিল ও সেদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরেও পুলিশ ছিল এবং দিল্লি পুলিশের একজন ডিসিপি তাদের বলে ছাত্রদের মারতে।
• জানুয়ারি ১১ – পুলিশ দাবি করে যে তারা ‘ইউনিটি এগেইনস্ট লেফট্’ নামে একটি হোয়াট’স অ্যাপ গ্রুপের ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৩৭ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে।
• জানুয়ারি ৩০ – জামিয়া মিলিয়ার সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদরত পড়ুয়াদের দিকে পিস্তল তাক করা এক সশস্ত্র ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ঐ ব্যক্তিকে প্রতিবাদকারীরাই ধরে ফেলে। এই ঘটনায় একজন ছাত্র আহত হয়, যাতে জামিয়াতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
• জানুয়ারি ৩১ – মহাত্মা গান্ধীর শহিদ দিবসে দিল্লির রাজঘাট-লালকেল্লা-দরিয়াগঞ্জ এলাকায় একটি মানবশৃঙ্খল তৈরি করা হয়, যেখান থেকে দিল্লি পুলিস রাজনৈতিক নেতা, আন্দোলনকর্মী, সাংবাদিকদের উপরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাঁদের আটক করে রাত পর্যন্ত স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে আটকে রাখে।
বিশ্লেষণ:
এই পর্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু জেএনইউ যেখানে শাসক দলের তৈরি করা জাতীয়তাবাদের নামে আক্রমণ চালানো হয়। মূলত দক্ষিণপন্থী জনতা, যার মধ্যে এবিভিপি ছাত্ররাও ছিল তারা ‘নকশালবাদী’, ‘জেহাদি’ ইত্যাদি নামে সাংবাদিকদের ডেকেছে ও আক্রমণ করেছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংবাদমাধ্যম আজ তক, স্ক্রোল.ইন, দ্য হিন্দু, নিউজলন্ড্রি-র সাংবাদিকরা।
সেই রাত্রে হেনস্থা হওয়া অনেক সাংবাদিকই তাঁদের ট্যুইটারে উল্লেখ করেন — যা তারা বিভিন্ন জায়গায় বারবার শুনেছেন – ‘যদি এনডিটিভি-র কাউকে দেখতে পাও, মারো।’ এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় জেএনইউ-তে ৫ জানুয়ারি যে দক্ষিণপন্থী জনতা হামলা চালাচ্ছিল তাদের কাছে – এনডিটিভি, আজ তক, স্ক্রোল.ইন, দ্য হিন্দু – এগুলি অ্যান্টি-ন্যাশনাল সংবাদমাধ্যম। সেই কারণেই তাঁরা তাঁদের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ও সাংবাদিক আয়ুষ তিওয়ারিকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে তাঁর জাতীয়তাবাদ প্রমাণ করতে হয়েছে।
তবে প্রথম পর্যায়ের হেনস্থার চেহারা পুরোপুরি বদলে যায় ৩১ জানুয়ারি ২০২০, যেদিন কোনওরকম ঝামেলা না ঘটতেই রাজঘাট থেকে দিল্লি পুলিস বহু সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করে। রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানাতে ও ‘খবর’ করতে যাওয়া প্রত্যেকজন সাংবাদিককে পুলিশ কোনওরকম বিচার-বিবেচনা না করেই তুলে নেয়।
এর থেকে পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি দিক বোঝা যায়, যেখানে সরকারের মদতপুষ্ট প্রশাসন ও দক্ষিণপন্থী জনতা সংবাদমাধ্যমকে হেনস্থা করে। সবচেয়ে বড় কথা হল দক্ষিণপন্থী জনতাকে হিংসা আউটসোর্স করে দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণা/পরীক্ষা-নিরীক্ষা
তৃতীয় পর্যায়: ফেব্রুয়ারি ২০২০
• ফেব্রুয়ারি ১ – শাহিনবাগে আরও একজন বন্দুকধারী প্রকাশ্যে গুলি চালায়।
• ফেব্রুয়ারি ২ – জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ নম্বর গেটের বাইরে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারী স্কুটারে করে এসে প্রকাশ্যে গুলি চালায়।
• ফেব্রুয়ারি ৭ – সুপ্রিম কোর্ট শাহিনবাগ সংক্রান্ত শুনানি ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়।
• ফেব্রুয়ারি ১০ – সুপ্রিম কোর্ট বলে প্রতিবাদকারীরা শাহিনবাগে রাস্তা আটকে রাখতে পারেন না। অপর পক্ষের বক্তব্য না শুনে রায় দিতে রাজি হয় না ও শুনানির দিন স্থির হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি।
• ফেব্রুয়ারি ১৭ – শাহিনবাগে আলোচনা চালানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট বরিষ্ঠ দুই আইনজীবীকে নিয়োগ করে। পরবর্তী শুনানির দিন স্থির হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি।
• ফেব্রুয়ারি ২০ – ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর ‘রাবণ’ উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে যান ও ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ডাকা ভারত বনধ্ সমর্থন করতে স্থানীয় মানুষদের ডাক দেন।
• ফেব্রুয়ারি ২২ – মূলত মহিলাদের নিয়ে তৈরি একটি বড় দল জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের নীচে সিএএ বিরোধীতায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভে বসে।
• ফেব্রুয়ারি ২৩ – বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর নেতৃত্বে মৌজপুরে একটি মিছিল বেরোয়, যেখানে তিন দিনের মধ্যে চাঁদবাগ গো জাফরাবাদ থেকে সিএএ-বিরোধী অবস্থান তুলে না দিলে তাঁর দলবল পুলিশকেও মান্য না করে অবস্থানকারীদের তুলে দেবে বলে তিনি হুমকি দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ এলাকায় পাথর ছোঁড়া শুরু হয় ও সন্ধের মধ্যেই সিএএ সমর্থক ও বিরোধী দুই দল পরস্পরের বিরূদ্ধে যুযুধান হয়ে ওঠে।
• ফেব্রুয়ারি ২৪ – মৌজপুরে হিংসা জোরদার হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই হিংসার রিপোর্ট করতে থাকে, যেখানে দুই সম্প্রদায়ই পরস্পরের বিরূদ্ধে হিংসায় জড়িয়ে পড়ছিল। সেই রাতেই মুসলিম অধ্যুষিত গোকলপুরী এলাকায় একটি টায়ার বাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঐ দিনই সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত দুই আইনজীবী শাহিনবাগ নিয়ে তাঁদের রিপোর্ট পেশ করলে শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়।
• ফেব্রুয়ারি ২৫ – পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জাফরাবাদ মেইন রোড, চাঁদবাগ, মৌজপুর, করদমপুরী, ভজনপুরা, গোকলপুরী, খাজুরিখাস, যমুনাবিহার ও ব্রিজপুরী এলাকায় হিংসা ভয়াবহ নৃশংস আকার নেয়।
• ফেব্রুয়ারি ২৬ – রিপোর্ট আসতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় উন্মত্ত জনতা যানবাহন থামিয়ে লোকজনের ধর্মীয় পরিচয় জানাতে বাধ্য করছে ও তার ভিত্তিতে একদলকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ও অপর পক্ষকে বীভৎস মারধোর করে, কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি পুলিস হিংসা থামাতে দেখামাত্রই গুলির পরোয়ানা জারি করে। সুপ্রিম কোর্ট চলতি হিংসা থামাতে দিল্লি পুলিসের ভূমিকার সমালোচনা করে ও শাহিনবাগের ঘটনার শুনানি ২৩শে মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়।
• ** ২৫ ও ২৬ এই দু’দিনই সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের অনেকগুলি ঘটনা ঘটে। অসংখ্য ঘটনা ঘটে যেখানে সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয় অপরাধের ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলার জন্য।
• ফেব্রুয়ারি ২৬ মধ্যরাত: বিচারপতি এস. মুরালিধর ও তলওয়ান্ত সিং-কে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ হিংসাবিধ্বস্ত মানুষদের নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য নিরাপদ রাস্তার ব্যবস্থা করার আবেদন শোনে। পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে এর ব্যবস্থা করার। তাদের আরও বলা হয় পরবর্তী শুনানির দিন আহত ও কারা কিরকম চিকিৎসা পাচ্ছেন তার তালিকা তৈরি করে জমা করতে। দিল্লি পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় চারজন বিজেপি নেতার বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী বক্তব্যের জন্য এফআইআর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এই দিনই শেষ রাতে বিচারপতি মুরালিধরকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করা হয়।
• ফেব্রুয়ারি ২৭ – পুলিশ ও র্যাফ হিংসা বিধ্বস্ত অনেকগুলি এলাকায় মার্চ করে। নতুন একটি বেঞ্চ গঠন করে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। সরকারি আইনজীবী জানান তৎকালীন পরিস্থিতিতে সরকারের সময় লাগবে কোনওরকম সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। ঠিক যে বক্তব্যগুলি আগের বেঞ্চ মেনে নিচ্ছিল না, এই বেঞ্চ সেগুলিই মেনে নেয়। এনএসএ অজিত ডোভাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
• ফেব্রুয়ারি ২৮ – সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে যায়। দু’টি এসআইটি গঠিত হয় হিংসার তদন্তে, ৬৩০ জন গ্রেফতার হয় ও ১৪৮টি এফআইআর নেওয়া হয়। দু’টি আলাদা নোটিসে সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এবং আপ এমএলএ আমানুতুল্লা খান, অভিনেতা স্বরা ভাস্কর, রেডিও জকি সায়েমা রহমান, আন্দোলনকর্মী হর্ষ মন্দার ও একাধিক এআইএমআইএম নেতৃত্বের বিরূদ্ধে হাইকোর্ট দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিদ্বেষ উদ্রেককারী বক্তব্যের জন্য এফআইআর করা বিষয়ে জানতে চায়।
বিশ্লেষণ:
বাস্তব এরচেয়ে আর আর নির্মম হতে পারে না যে – উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বীভৎস হিংসার পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট করতে যাওয়া একজন সাংবাদিককেও জনতা রেহাই দেয়নি। একটাই কথা – নিজের পরিচিতি জনতাকে জানাও তারা যেটা পছন্দ করছে সেটাই বলো।
জেকে ২৪ নিউজ-এর সাংবাদিক আকাশ নাপাকে গুলি করা হয়। এনডি টিভি আক্রান্ত হয়। জাতীয় সংবাদমাধ্যমের এক বিরাট অংশ দক্ষিণপন্থী জনতার আক্রমনের ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়, যার মধ্যে রয়েছে – ফার্স্টপোস্ট, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, স্ক্রোল, এইচটি, ইন্ডিয়া টু’ডে, টাইমস্ নাউ, নিউজ এক্স, রিপাবলিক টিভি, টিওআই, রয়টার্স। এঁদের মধ্যে দুর্বলতম – সুশীল মানভ নামে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যিনি জনচৌওক নামে একটি ওয়েবসাইট-এর জন্য রিপোর্ট করছিলেন, তাঁকে শুধু সবার সামনে অপমানই করা হয় না, দু’বার হনুমান চালিসা বলতে বাধ্য করার পরেও তাঁকে মারা হয়।
এগুলি একটি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উদাহরণ। সংবাদমাধ্যমের উপর এরকম নির্বিচার আক্রমণ এটা কাকতালীয় নয়, হিংসাত্মক আক্রমণ যেভাবে আউটসোর্স করা হয়েছে ও আক্রমণের ধরন নিয়ে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে তাকে অবশ্যই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে।
প্রজাতন্ত্রের বিপদ
এ কথা ঠিক যে সংসদে সংখ্যাগুরু সাংসদরা যারা বর্তমান কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধি তাঁরাই নাগরিকত্ব আইন পাশ করেছেন এবং তা বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে, বিশেষ কোনও তর্ক ছাড়াই। আবার এটাও বাস্তব যে, ৯১ কোটি মোট যোগ্য ভোটদাতার মধ্যে মাত্র ৬৭% ২০১৯-এ ভোট দিয়েছেন। বিজেপি ২২ কোটি ভোট নিশ্চিত করেছে যা মোট যোগ্য ভোটদাতার চার ভাগের এক ভাগ। ২৫%-এর মতকে সামনে রেখে ও ৭৫%-এর মতকে উপেক্ষা করে একটি আইন পাশ করানোর জন্যই সিএএ বিরোধিতা এতটা তীব্র হয়ে উঠেছে। বিজেপি শাসিত সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অবহেলা করেছে।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ
সংবাদমাধ্যমের গত কয়েক বছরে চরিত্র পরিবর্তন হতে দেখেছি আমরা, মালিকানা ও ব্যবসায়িক মডেলের উপর ভিত্তি করে। একশ্রেণির সংবাদমাধ্যমকে গোদী বা রাষ্ট্রবাদী মিডিয়া বলে প্রচার আসলে পক্ষপাতমূলক সংবাদমাধ্যমের প্রমাণ। দর্শকের মধ্যেও ভাগ হয়ে গেছে – ‘আমাদের’ মিডিয়ার খবর দেখা/শোনা/পড়া আর ‘ওদের’ মিডিয়ার খবর উপেক্ষা করা। এভাবে সংবাদমাধ্যমের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ায় ব্যক্তি সাংবাদিক চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছেন তাঁদের ব্র্যান্ড/ব্যানার-এর থেকে। এর ফলে হয় তাঁর সুনাম হচ্ছে নয় দুর্নাম।
একইভাবে আক্রমণের চেহারাও ভাগ হয়ে গেছে। ক্রমেই তা হয়ে গেছে ‘পরিচিতিভিত্তিক শাস্তি’, তিনি কোন্ দলের প্রতিনিধি তার উপর নির্ভর করে। আবার যখনই এধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে একইভাবে সংবাদমাধ্যমের ভেতরে মতামতও ভাগ হয়ে গেছে। এমন ঘটনা ঘটেনি যে গত কয়েক বছরে যেখানে এরকম কোনও আক্রমণের ঘটনায় তামাম সংবাদমাধ্যম একজোট হয়ে একসুরে প্রতিবাদ করেছে।
এর ফলেই দেখা গেল উন্মত্ত জনতা যখন পরিচিতি জানতে চাইছে তখন কোনও সাংবাদিক নিজেকে অপরাধী নন এমনটা প্রমাণ করতে পারেননি। পক্ষপাতমূলক একটি মিডিয়া হাউজের সাংবাদিক যে কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন, পক্ষপাতমূলক নয় এমন হাউজের সাংবাদিকও অন্য দলের হাতে একই কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভই মনে হচ্ছে যেন ভেঙে পড়েছে। যেমনটি ৩ মার্চ, ২০২০-তে মুখ্য বিচারপতি এসএ বোব্দে বলেছেন –
“আমরা ঘটনা ঘটা আটকাতে পারব না। আমরা প্রতিরোধমূলক ত্রাণও দিতে পারব না। আমরা আমাদের উপর এক ধরনের চাপ অনুভব করছি। আমরা কোনও কিছু ঘটার পরেই কেবল সেই পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে পারি, আমরা এভাবে পারব না। যেন আদালতই দায়ী। আমরা সংবাদপত্র পড়ছি, আমরা জানি কী ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। একটি ঘটনা ঘটার পরেই আদালতের কাজ শুরু হয় ও আদালত এ ধরনের ঘটনা আটকাতে পারে না।”
To read the original report click: Republic in Peril