কুনান পোষপোরায় মহিলাদের উপর গণধর্ষণের বিচার আজও হয়নি


  • February 23, 2020
  • (0 Comments)
  • 2009 Views

কেটে গেছে ২৯ বছর। কাশ্মীরের কুনান পোষপরা-য় ভারতীয় সেনার হাতে ধর্ষিত নারীদের অপমানের ক্ষত শোকায়নি। একটি গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন।

 

২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখটি ভারতের কাছে দেশ হিসাবে লজ্জার। এখনও সেই লজ্জায় মাথা নীচু থাকা উচিৎ। অবশ্য পুরুষতান্ত্রিক যে রাষ্ট্র তার শোষন, নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে বারেবারেই ধর্ষণ ও নির্মম অত্যাচারকেই বেছে নেয়, তার সরকারের চেহারা বদলালেও চরিত্র বদলায় না। ফলে অপরাধবোধও তৈরি হয় না।

 

আজ ২৩শে ফেব্রুয়ারি – ১৯৯১ সালের এই তারিখে গভীর রাতে জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার পাশাপাশি দুই গ্রাম – কুনান ও পোষপোরায় এ দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম নারী হিংসার ঘটনাগুলির একটি ঘটেছিল। উগ্রপন্থী লুকিয়ে রয়েছে তাই তল্লাশি চালাতে হবে এই অজুহাতে ‘কর্ডন ও সার্চ অপারেশন’ সংক্ষেপে (সিএএসও) চালাতে প্রায় ৩০০ সেনা আধিকারিক এই গ্রাম দু’টিতে ঢোকে এবং বাড়ির পুরুষদের বের করে দিয়ে বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণ করে। পরপর দু’টি গ্রামে একটিও বাড়ি বাদ না দিয়ে অগুন্তি মহিলাকে তাদের নিজেদেরই বাড়িতে ‘দেশের সুরক্ষা’র নামে ‘সবক’ শেখাতে অবিরাম ধর্ষণ করে বীর ভারতীয় সেনা।

 

সেই রাতের কথা এক ধর্ষিতা মহিলার জবানবন্দীতে – “প্রথমে ওরা জল চাইল, তারপর তারা আমাদের ছুঁতে শুরু করল। প্রথমে চারজন করে উপরে এল, তারা চলে যেতে এক নতুন চার জন।”

 

এই ঘটনার কথা যথারীতি নাগাড়ে অস্বীকার করতে থাকে ভারতীয় সেনা। ভারত সরকার এই ঘটনার যে তদন্ত করে, স্বাভাবিকভাবেই তার কড়া সমালোচনা হয়। অবশ্য পরে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া একটি তদন্ত করে যা হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ-এর নজরে আসে। ১৯৯২ সালে দ্য ইউনাইটেড স্টেটস্‌ ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট তার আর্ন্তজাতিক মানবাধিকারের উপর প্রকাশিত রিপোর্টে বলে – “কুনান পোষপোরায় যে মহিলাদের উপর গণধর্ষণ করেছিল সেনাবাহিনীর ইউনিট তার যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে।”

 

কাশ্মীর কেবল ভূ-স্বর্গ নয়, বরাবরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য। ১৯৯৩ সালের হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী – সেনার বিরূদ্ধে সংগ্রামরত কাশ্মীরিরা অতর্কিতে হামলা চালনোর মত ঘটনা ঘটালে তারপর বদলা হিসাবে আক্রমনের সময় সুরক্ষা বাহিনী ধর্ষণকে একটি পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে সিএএসও-র সময়ে। নরওয়-এর জেন্ডার স্টাডিজ স্কলার ইঙ্গার স্কেজেলবিক যেমন বলেন – কাশ্মীরে ধর্ষণের ঘটনাগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সেনা যখন মানুষের বাড়িতে ঢুকছে তখন তারা পুরুষদের হয় হত্যা করছে বা বের করে দিচ্ছে, মহিলাদের ধর্ষণ করার আগে। আবার স্কলার শুভ মাথুর বলছেন – “কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজি-র অপরিহার্য উপাদান হল ধর্ষণ।”

 

২০০৫ সালে একটি আর্ন্তজাতিক সংগঠন তাদের সমীক্ষা শেষে রিপোর্ট-এ জানাচ্ছে বিশ্বের সমস্ত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি মহিলাদের সঙ্গে যৌন হিংসার ঘটনা ঘটে তারমধ্যে কাশ্মীর রয়েছে প্রথম সারিতেই। তাদের সমীক্ষায় মোট ৫১০ জনের মধ্যে ১১.৬%-ই ব্যক্তিগত যৌন লাঞ্ছনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন। তাদের রিপোর্টে আরও একটি বিষয় উঠে আসে চেচনিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো আরও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের তুলনায় কাশ্মীরে ধর্ষণের সাক্ষীর সংখ্যাও অনেক বেশি।

 

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনায় আজ পর্যন্তও কখনও ক্ষমা চায়নি। কিন্তু কাশ্মীরের নারীদের প্রতিরোধ আন্দোলনের চাপে আবার এই কেস খোলা হয়েছে। লড়াই জারি আছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে লড়াইতে কুনান পোষপারা-র অপমানিত, ধর্ষিত, অত্যাচারিত মহিলাদের বিচার পাওয়ানোর শপথ নেওয়া হয়। আজও।

 

তথ্যসূত্রের ঋণ: এএমইউ স্টুডেন্টস’ কালেক্টিভ

 

Share this
Leave a Comment