দেশ বিক্রিতে উদ্যত প্রধানমন্ত্রী আগেরদিনও বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সিএএ নিয়ে জনতাকে বিভাজনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, রাত না পোহাতেই তার জবাব দিল রিষড়ার বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ পথে নেমে। একটি গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট।
“আজাদি! আজাদি! আজাদি!” না, জেএনইউ নয়। সাম্প্রতিক খবরে পুলিশি অত্যাচারে প্রতিবাদী স্বর ভেঙে দেবার হুমকিকে না ডরানো অকুতোভয় জামিয়ার মেয়েরা নয়। এই স্লোগানে গলা মেলালেন রিষড়া-শ্রীরামপুরের হাজার দেড়েক সাধারণ মানুষ আর সজোরে সগর্বে জানিয়ে দিলেন, “কাগজ দেখাব না!”
কেন্দ্রীয় সরকারের গদিতে বসে দেশ বিক্রিতে উদ্যত প্রধানমন্ত্রী আগেরদিনও বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সিএএ নিয়ে জনতাকে বিভাজনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, রাত না পোহাতেই তার জবাব দিল রিষড়ার বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ পথে নেমে। এনআরসি, এনপিআর ও সিএএ-র মতো আইনের বিরোধে পুরোভাগে নেতৃত্ব দিলেন সাধারণ ঘরের মহিলারা, যারা মিছিল এগিয়ে নিয়ে গেলেন রিষড়া থেকে শ্রীরামপুর। পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে ‘পিপলস রেজিস্টেন্স এগেনস্ট এনআরসি’। এই সংগঠনের তরফেই মিছিলের গতিপথ নির্দিষ্ট করা হয়েছিল এই দিন।
দুপুর দুটোয় রিষড়ার বাগখালে জামা মসজিদের নিকটবর্তী রাস্তায় জমায়েত করতে শুরু করেন প্রায় কয়েকশো শ্রমিক পরিবার যারা রিষড়ার জুটমিলগুলিতে বিগত কয়েক দশক ধরে চাকরি করছেন। নানা বয়সের মুখ ভিড় করে হাতে পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে। অল্পবয়সীরা জাতীয় পতাকা তুলেছেন মাথা উঁচু করে। মিছিল বহু প্রাচীন গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোডে পড়তেই বোঝা যায়, এই মিছিল রাস্তা স্তব্ধ করতে নামেনি, বরং আওয়াজে মুখর করে তুলতে এসেছে। চুঁচুড়া থেকে আসা বাগখালগামী বাস, পথচলতি মোটরবাইক, ইতিউতি লোকজন তখন থমকে দাঁড়ায়।
পুলিশ আগাগোড়াই ছিল সাথে। তারাও হেঁটেছেন পা মিলিয়ে। তারা বাধা দেননি, কারণ জানেন এ জনতাকে চুপ করায়, এমন সাধ্য কারোর নেই। ছাত্র-যুব-শ্রমিককে পিটিয়ে থামানো যায় না, যেমন যায়নি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। শহুরে ধাঁচের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মফস্বলের পড়ুয়ারা, অফিসযাত্রীদের ভিড় থেকে আওয়াজ উঠল, “যব তক জনতা ভুখা হ্যায়, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়!”
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথে প্রাথমিক পাঁচ-ছ’শো থেকে মিছিল বাড়তে থাকে হাজারে। তখন মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে গর্জন হয়ে উঠেছে প্রতিটি স্বর। রাস্তার পাশের দোকান, বাড়ির থেকে মানুষ ঘুম ভেঙে স্লোগানের সাথে সাথে হাত উঁচিয়ে বলছেন, “হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে!”
কিন্তু এ দেশ, এ দেশের মানুষ সত্যিই মহান। মসজিদের আজান বা মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির পাশ দিয়ে নিশ্চুপে চলে এ মিছিল। প্রায় হাজার দেড়েক জনের মিছিলের স্তব্ধতা ও মুখরতা জানান দেয় আগামীর ঝড়ের।
শ্রীরামপুর ইএসআই হসপিটালের পাশে পড়ন্ত বিকেলের রোদমাখা মিছিলের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতে যখন এই বিরাট দেশের একটুকরো অঞ্চল গমগম করে, তখন মনে হয়, হ্যাঁ, এই ফ্যাসিবাদী বিভাজনকারী বিজেপি সরকারকে আটকাবে কেবল বড় শহরের নয়, প্রতিটা গ্রাম প্রতিটা মফস্বলের মানুষ।