মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে যুদ্ধবিরোধী মিছিল


  • January 8, 2020
  • (0 Comments)
  • 1919 Views

বৃহস্পতিবার রাতে খবর আসে বাগদাদে ট্রাম্প সরকারের ড্রোন আক্রমণে নিহত হয়েছেন ইরান এবং ইরাকের দুই নেতৃত্বস্থানীয়  মিলিটারি কম্যান্ডার। এর প্রতিবাদে শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ৮০টি শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। শিকাগো থেকে গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন।

ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস কোরের অভিজাত আল-কোদস বাহিনীর কম্যান্ডার জেনারেল   কাসেম সুলেইমানি ও ইরাকের শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী হাশদ আল শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল মুহানদিস-সহ আরও কয়েকজন ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে নিহত হন। ইরাকে মার্কিন ড্রোন অনেককেই হত্যা করেছে ইতিমধ্যে, কিন্তু এই প্রথম দুই রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ আধিকারিককে এই ভাবে নিশানা করা হল। ট্রাম্পের ইরানের সাথে সই করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা এবং ইরানের ওপর নানান রকম অর্থনৈতিক বাধা নিষেধ চাপানোর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগে ট্রাম্প সরকার ইরানের আল-কোদস ফোর্সকে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করে, এবং বর্তমানেও রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বলে চলেছে যে কেবল মাত্র একজন সন্ত্রাসবাদী – সুলেইমানিকে – মারা হয়েছে, এটা যুদ্ধ নয়। ডেমোক্র‍্যাটিক পার্টির বিরোধী নেতারা কিছু সমালোচনা করলেও, বেশির ভাগেই সাবধানে কথা বলছে, এবং সুলেইমানিকে গাল পাড়তে ভুলছে না। উলটো দিকে ইরানে সুলেইমানির জনপ্রিয়তার নানা খবর ও বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে।

 

 

 

 

ইরান- ইরাক দুই দেশের নেতৃত্বই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছে, এবং সকল চোখ এখন ইরানের পরবর্তী পদক্ষের দিকে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে ইরাকে গনতান্ত্রিত আন্দোলন চলছে ইরানের ও মার্কিনী দখলদারির বিরুদ্ধে – এবার কি সংগ্রামকে কোণঠাসা করে ইরাকে মার্কিন বনাম ইরান ছায়াজুদ্ধ চলবে? ইরানে কি রক্ষণশীল নেতাদের হাত মজবুত হবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ট্রাম্পের এই বছর ভোটে জেতার সম্ভাবনা বাড়বে? ইরাকে কি আবার মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি বাড়বে, নাকি এবার তাদের কিছুটা পিছুপা হতে হবে? ঠিক কী হতে চলেছে? ইতিমধ্যেই বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে গেছে। ঘটনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যে দিকেই গড়াক এর প্রভাব ভারতেও পড়বে। ভারতের সরকার তবে এই মার্কিনী আগ্রাসনের কোনো নিন্দা করেনি, কেবল সকল দেশকেই সংযত থাকার ডাক দিয়েছে।

 

এই প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ৮০টার ওপর প্রদর্শন আয়োজিত হয়। মূলত ‘কোড পিঙ্ক‘ নামক মহিলাদের যুদ্ধবিরোধী সংগঠন এবং ৯/১১-র অবব্যবহিত পরে  গঠিত  ‘Act Now to Stop War and End Racism Coalition (ANSWER)’- এর নেতৃত্বে এগুলির ডাক দেওয়া হয়। ক্রমশ বিভিন্ন সংগঠন এতে যোগ দেয়। শিকাগোর মিছিলটা যেমন ৯টি সংগঠন মিলে ডাকে এবং আরও ১২টি সংগঠন সমর্থন করে। এই নামের তালিকা দীর্ঘ, তবু নামগুলো থেকে আঁচ করা যায় কারা এই আন্দোলন সংগঠিত করছে। কিছু মূল সংগঠনের প্রতি অনেকের বিভিন্ন সমালোচনা থাকলেও (যেমন এক মাওবাদী পার্টি এই মিছিলে যুক্ত দুই দলকে সংশোধনবাদী আখ্যা দিয়ে একটি রিপোর্ট লিখেছে, তবে তারাও ব্যানার নিয়ে সামিল ছিল), এই দিনে বেশ কিছু সংগঠন ও কয়েক হাজার মানুষ যোগ দেয়।

 

সংগঠক: ANSWER Chicago, Party for Socialism and Liberation – Chicago, People United Against Oppression, Refuse Fascism Chicago , CODEPINK, The Chicago Committee Against War & Racism, Voices for Creative Non-Violence, SDS – UIC, The People’s Lobby

 

সমর্থক: International League of People’s Struggle – Midwest, Anti-War Committee Chicago, Gay Liberation Network, Chicago Area Peace Action – DePaul, Freedom Road Socialist Organization, Chicago Alliance Against Racist and Political Repression, Chicago Democratic Socialists of America, Revolution Club Chicago, 33rd Ward Working Families, Chicago Boricua Resistance, Women’s March Illinois, United Neighbors of the 35th Ward

 

 

 

শিকাগোর ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে দুপুর ১২টায় জমায়েত হয়, এবং এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন বক্তা এই মার্কিনী আগ্রাসনের ও সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করেন। একজন মনে করিয়ে দেন যে গত ইরাক যুদ্ধও যেমন শুধু বুশের কর্মসূচি ছিল না, এইটাও শুধু ট্রাম্পের যুদ্ধ নয় – ডেমোক্র্যাটরাও হাতে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করবে। একজন ইরানি আমেরিকান তার পরিবারকে আক্রমণ না করার আবেদন করেন। ইতিমধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, এই দেশে অবস্থিত ইরানীয়দের টার্গেট করা হচ্ছে। ভাষণ পর্ব শেষ হলে সকলে রাস্তায় নেবে পড়ে। ডাউন্টাউন শিকাগোর বড় রাস্তা জুড়ে মিছিল এগোয়। দেড় ঘণ্টার ওপরে মিছিল চলে। শোনা জায় বিভিন্ন স্লোগান –

 

“1,2,3,4 We don’t want your fucking war, 5,6,7,8 We will not cooperate. 1,2,3,4 We don’t want your fucking war, 5,6,7,8 Stop the killing, stop the hate. 1,2,3,4 We don’t want your fucking war, 5,6,7,8 America was never great.” “Whose streets? Our streets.” “What do we want? No war. When do we want it? Now.” “Show me what democracy looks like. This is what democracy looks like. Show me what antifa looks like. This is what antifa looks like.”  “No war” “US out of Middle-East. No justice, No peace”

পমিছিল একের পর এক বড় রাস্তা দখল করে এগোতে থাকলে পুলিশ বারবার গাড়ি ও সাইকেল দিয়ে তাদের পথ আটকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সকলে তাদের কাটিয়ে এগোতে থাকে। তবে লেক শোর ড্রাইভ নামক একটি হাইওয়ে দখলের চেষ্টা করায় পুলিশ গ্রেফতারি শুরু করে। বেশ খানিকক্ষণ ধরে স্লোগান চলে “Let them go”। কেউ পুলিশকে গালিগালাজ করে চেঁচিয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে  মিছিল আবার এগিয়ে চলে, হাইওয়ে ছেড়ে অন্য রাস্তা ধরে। আগামী দিনে আরও অনেক কর্মসূচি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং প্রয়োজনীয়তার কথা বলে মিছিল শেষ হয় তখন প্রায় দুপুর ৩টে।

 

 

(ছবি – গ্রাউন্ডজিরো )

Share this
Leave a Comment