হিংসা যা চোখে পড়ে, যা দেখা যায় টিভিতে –কাগজে; আর যা চোখে পড়ে না কিন্তু লুকিয়ে থাকে আড়ালে–আবডালে, হাটে –মাঠে, সমাজমাধ্যমে — সেই লুকিয়ে থাকা, বোতল বন্দি দৈত্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন লাবণী জঙ্গী।
এক
১৩-১৪-১৫-১৬’র দিনগুলো জেলাগুলোতে নানাভাবে নির্মিত হচ্ছিল আশঙ্কা। ওই সপ্তাহটা কেটে যায় মিডিয়ার দেখানো খবরে, মুর্শিদাবাদে ট্রেন পোড়ানো, রাস্তা অবরোধ অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির বিপুল তথ্যের সম্ভারে। যা নিয়ে তৈরি হয় সুশীল সমাজের মধ্যে এই এনআরসি, সিএএ আন্দোলন বিষয়ক তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ ‘সার্বজনীন বিতর্ক’। সেইসব বিতর্ক মধ্যবিত্ত-প্রান্তিক ভদ্রলোকদের হিন্দু-মননে সিএএ, এনআরসির বিরুদ্ধে সবধরণের আন্দোলন প্রতিহত করার মানসিকতা কীভাবে যেন নির্মিত হয়ে গেল। আর মুসলমানদের প্রতি যে ঘৃণা-বিতৃষ্ণা; যা আগে থেকেই মনের গোপন কোণে সঞ্চিত ছিল, তার বহিঃপ্রকাশের সুযোগ এদিকের মানুষজন আকছারই করেন সময়-সুযোগ পেলেই। এ নতুন কিছু নয়। কিন্তু, এবারে বড় আকারে সার্বজনীন বিতর্ক গড়ে ওঠার কারণ অনেকগুলো ছিল; যার মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং যখন টিভি-তে বললেন “পোশাক দেখেই চেনা যায় কারা দেশের সম্পত্তি নষ্ট করছে।” এই পোশাক দেখে ঘেন্নার পাঠ এবার বৈধতা পেয়ে গেল।
লোকাল মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কাকুরা জেঠুরা বাজারে চায়ের দোকানে আলোচনা করতে শুরু করলেন, ‘কীভাবে কত টাকার দেশের সম্পত্তি নষ্ট হল এই মুল্লার বাচ্চাদের হাতে।’ বা ‘যে দেশে থাকে তাকেই ধ্বংস করে এরা।’ কাকিমা-বউদিদের বিকেলের পায়চারি, আর পিএনপিসির আড্ডা গ্রুপেও কীভাবে যেন রাজনীতি ঢুকে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে রাজনৈতিক সেই গসিপের আলোচ্য বিষয় হয়ে গেল, ‘কীভাবে মোসলাগুলো মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।’ আর আমাদের এলাকার দেশভক্ত নব-যুবকদের কথা তো আর বলবেন না, তাঁরা হোয়াটসঅ্যাপে ইজরায়েলের বোমাতে ক্ষতবিক্ষত প্যালেস্টাইনের শিশুর ছবি দেখে এবং দেখিয়ে এমন সংঘবদ্ধ আক্রোশ তৈরি করল। ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হওয়া নিরীহ মুসলমানটিকেও তাঁদের কাটার বাচ্চা দেশদ্রোহী মনে হতে লাগল। তাঁরা সন্ধের আলোচনা সভার বিষয়ে রাখছিল জামিয়া আর আলিগড়ের মতো মুসলমান ইউনিভার্সিটির সাথে আরও কী কী করা দরকার। ওসব জায়গাতে জিন্নার ছবি রাখা হয়, ওই ইউনিভার্সিটিগুলোতে সন্ত্রাসবাদী বানানো হয় এমন অসংখ্য তথ্য যুক্তি ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির পাঠ্য ফুলেফেঁপে উঠতে থাকল।
যেসব নির্লিপ্ত কাকু-জেঠুদের পড়াশুনো করা ভদ্র-বাচ্চা তাঁদের একটা বড় অংশও এইসব অঞ্চলগুলোতে, কাটার বাচ্চাদের ট্রেন পোড়ানো প্রবল হিংসা দেখে ক্ষেপে গিয়ে ফেসবুক দেওয়ালে লিখে ফেলল, ‘আর কতো সহ্য করব ওদের।’ আর শেষ ধামাকাতে ছিল, দীর্ঘদিন সিপিএম করা বাবু, সেমি-বাবু নেতাদের ধিক্কার, এই ট্রেন পোড়ানোর মতো হিংসাকে সমর্থন করছেন না বলে, ‘এই বর্বরোচিত কাজের নিন্দা’ বলে নানাবিধ পোস্ট।
এসব কিছুর পরও একটা বড় স্বস্তি, জেলা শহরগুলোর কিছু অংশে সামান্য হলেও এনআরসি সিএএ বিরোধী মিছিল নামছিল। কলকাতা শহরে আমার ইউভার্সিটির বন্ধুরা রাত জাগছিল, জামিয়া, আলিগড়ের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিতে। সামান্য হলেও এটুকু স্বস্তি ছিল দিনের শেষে সকলে বিকিয়ে যাবে না। টুকরো হলেও প্রতিরোধ কোন না কোনও কোনাতে জিইয়ে থাকবে। ওই সময়ে সকলের ঘরেই প্রায় টিভি পর্দায় সম্প্রচারিত হয়েছিল তার মধ্যে বেশিরভাগ ছিল আঞ্চলিক হিংসা, কিছু মবের ট্রেন পোড়ানো, রাস্তা অবরোধ ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ। একই সাথে রাষ্ট্রীয় পুলিশের হাতে জামিয়া ও আলিগড় ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের উপর আসা নির্যাতন জাতীয় হিংসার খবরও ফুটেজ সমেত সম্প্রচারিত হচ্ছিল। কিন্তু পথেঘাটে বাজারে মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত বাবুরা যে খবরটা মাথায় গেঁথে নিলেন সটাক করে সেটা হল, ‘দেখেছো মুর্শিদাবাদের মুসলমানদের কেমন বাড় বেড়েছে, দেশটাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’
লেখাটা লিখছি ২৬ তারিখ আজও আমাদের গঞ্জ এলাকাতে, ট্রেন পোড়ানোর হিংস্রতা নিয়ে আজও প্রবল উৎসাহে আনাচে-কানাচে কথা হয়ে চলেছে। যদিও প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রতিবেদন বেরোচ্ছিল। টুপি লুঙ্গি পড়ে আরএসএস কর্মীদের ট্রেন পোড়ানোর খবর। সে সব খবর যদিও হিন্দু পাড়াতে বিশেষ পাত্তা পায়নি আমাদের এই জেলাগুলোতে। এখানে এলাকার মানুষের কোনো কথাতে আসে না উত্তরপ্রদেশে যোগীর সরকার কীভাবে একের পর এক খুন করে চলেছে। এই দেশের আঞ্চলিক অনেক মানুষের কাছের মুসলমান নামের লিঞ্চ হওয়া বা খুন হওয়া আজ খুব স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে পড়ে। আর জামিয়া-আলিগড়ের ছাত্র পেটানোর এদের কাছে কীভাবে মান্যতা পেল সে বিষয়ে পড়ে আসছি।
আমাদের এসব এলাকার মানুষ যে খবরগুলো গোল্ডফিস মাছেদের আগেও ভুলে যায় তা হল — বিজেপির শাসনে বিগত তিন বছরে দেশে রেল দুর্ঘটনা তিনগুণ বেড়েছে। সরকারি তথ্য সে কথাই বলছে। শুক্রবার সংসদে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে ২০১৫-১৬ দেশে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০টি। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৬-১৭-য় তা বেড়ে হয় ৩৪। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে রেলদুর্ঘটনা বেড়ে হয়েছে ৫৯। যার অর্থ, বিগত তিন বছরে রেলদুর্ঘটনা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
রেলমন্ত্রীর দাবি, এই ৫৯টি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অন্তত ১৭টি ক্ষেত্রে রেললাইনের ত্রুটি ছিল। যার জেরে দুর্ঘটনা ঘটে। রেল এই গাফলতির কথা স্বীকার করে (এইসময় ২২ জুন ১৯)। এটা উল্লেখ করছি কেন? সরকারের ত্রুটিতে যদি রেল দুর্ঘটনা হয় তবে; ওই এলাকার ট্রেন চালু হতে কতদিন সময় লাগে আপনাদের কি জানা আছে ? আমাদের এখানে লালগোলা শিয়ালদা লাইনের ট্রেন এখনো ঠিকমতো চালু হয়নি। আপনারা কি জানেন সরকারি গাফিলতিতে দুর্ঘটনায় তুবড়ে যাওয়া ট্রেনের বগি সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রদর্শিত করতে করতে যায়, না কি নানান স্টেশনে ২-৩ দিন করে রেখে দেয়? আমাদের এই লাইনে গত সপ্তাহ ধরে সরকার পোড়া ট্রেনের বগিগুলোকে হিংসার নমুনা প্রদর্শনের উদ্দেশে নানা স্টেশনে ২-৪ দিন ধরে রেখে দিয়েছিল।
মুর্শিদাবাদ থেকে শিয়ালদাগামী লাইনের প্রতিটা ষ্টেশনে একদিন দুই দিন ধরে রাখা হচ্ছে। এলাকার মানুষেরা উৎসাহে সেই পোড়া ট্রেন দেখতে আসছেন, এবং তা টুপি লুঙ্গি পরা লোকেদের হিংস্রতার নিদর্শন— এই ভাবনা নিয়ে বাড়ি বা আড্ডা থেকে ‘ওদের আরও ঘেন্না করার যুক্তি ও তথ্য নির্মাণ করতে পারছেন।’ আরেকটি ‘জাস্টিফাই’ করার যুক্তি এদেরও কথাবার্তাতে উঠে আসছে, ‘পুলিশ ঢুকে মেরেছে ঠিক করেছে, দেশের খাবে দেশে থাকবে আর দেশের সম্পত্তিগুলো এভাবে ধ্বংস করবে। এদের ঘরে ঢুকেই মারা উচিত।’ লোকাল পাবলিকের মন-মাথা থেকে তাই দুটো প্রান্তের হিংসার একটা জিইয়ে থাকল, আরও সেই হিংসার কথা সময়ের সাথে শাখাপ্রশাখাহয়ে বিস্তার লাভ করবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় হিংসাটাও মান্যতা পেয়ে গেল কী অদ্ভুতভাবে।
দুই
এবারে আসা যাক যে হিংসাগুলোর কোনো সম্প্রচার হয়নি; সেগুলো কেমন ছিল এসব অঞ্চলে। ১৩-২২ এই সময়ে বোলপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের কিছু অংশে ঘুরে যেটা একই রকম ভাবে উঠে এসেছে। এই কথাটা তিন জেলার ভিন্ন ভিন্ন বর্গের মানুষের কাছে শুনেছি; যেদিন সিএএ পাশ হয় সেদিন রাতে বহু হিন্দু প্রতিবেশী বাজি-পটকা পুড়িয়ে আনন্দ করেন। ছোটখাটো বাইক গ্যাং জয়-শ্রীরাম, ভারতমাতার জয় শ্লোগানে মুসলমান পাড়ার উপর দিয়ে যায়। আর বয়স্ক কিছু মানুষ জানিয়েছেন বাজারে, বা কোনো জনবহুল এলাকাতে দাড়ি-টুপি থাকলে নাকি প্রশ্ন ধেয়ে আসছিল, ‘চাচা কাগজ ঠিক আছে তো?’ একজন সত্তর ঊর্ধ্ব মানুষের সাথে কথা হচ্ছিল, তিনি সিএএ পাসের দুইদিন পড়ে বাজারে গেছেন মাঠের সবজি বিক্রি করতে। আড়তদার ও এলাকার কিছু ছেলে বসে এসব নিয়েই আলোচনা করছিল। তাকে দেখে প্রশ্ন ছোড়ে, ‘চাচা আপনারা কোথা থেকে এসেছিলেন, এবার কোন দেশে যাবেন? উনি উত্তরে বলেছিলেন বাপু তোমরা কুন দ্যাশ থেকে এসচ গো? এই দ্যাশের হলি পারে তো আমাকে চিনতি পারবা, আমি জ্ঞান হবার পর থ্যাকি তু তা প্রায় ষাট বছর হয়ি গ্যেল এই বাজারে মাঠের ফসল বিক্রি করতি আসছি; এই দ্যাশের লোক হলি সে আমাকে চিনবিই; আমার বাপও এই কাজই করতু; তুমরা বিটা এই দ্যাশির হলি আমাকে চিনতি পারবা।’ উত্তরে আড়ত মালিকের ছেলে বলে ‘আরে চাচা মজা করছিলাম তো আমারা।’
এই কথা বলতে বলতে বৃদ্ধের শুকিয়ে যাওয়া শূন্য দুই চোখ আর্দ্র হয়ে উঠল। আর বললেন, ‘দ্যাখো বিটি, তেমন হলি তো আমাদের আরেকটা দ্যাশ আচেই, সারে-তিনহাত মাটির নিচি, এই মাটিতেই, নতুন মাটি আর এই বয়িসি এসি খুজতি যেতি পারবু না।’ আমি কোনো সান্ত্বনা বাক্য জানাতে পারিনি। কোনো মিথ্যে আশার কথাও বলতে পারিনি; কারণ জানি বিশ্ব শান্তি নোবেল পাওয়া সুকি-র দেশের থেকে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গাদের কথা। আর জানি আমার দেশেই আমার পড়শিরা কীভাবে বদলে যাচ্ছে ক্রমশ। তিনটে জেলাতেই নিম্নমধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশের মানুষ সিএএ পাশ হবার পর কী আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিল!
যাক এই হিংসার জায়গাটা বুঝতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, নানা অঞ্চলে; উল্লাসের কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক জায়গা থেকে; একটা আখ্যান বিজেপি ও আরএসএস প্রান্তিক মানুষের মনে গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেমন (১) আমরা ভালো নেই কারণ ওরা এই দেশে আমাদের খাওয়া-পড়া, চাকরিতে ভাগ বসাচ্ছে। (২) আমাদের দেশের অর্থনীতি এদের কারণে, এদের অনেকগুলো বাচ্চার কারণে নিম্নমুখী। (৩) এরা এই দেশের খায় এই দেশের ক্ষতি চায়। এমন নানা কথা।
কিন্তু জেলাতে যে অন্য ঘটনাগুলো এই আখ্যানের তলায় চাপা পড়ে যায়; সেগুলো কেমন? ধরুন, মুর্শিদাবাদে ট্রেন পোড়ানোর পর হঠাৎ এলাকাতে রিউমার চলল, চাল, তেল, ডালের দাম আকাশ ছোঁবে। এলাকার দোকানে, লাইন লাগল, দুই দিনের মধ্যে জেলার বড় আড়তগুলো ফাঁকা হয়ে গেল। আড়তদারদের মুখে চওড়া হাসি। আর বিড়ি বাঁধা, পরিযায়ী শ্রমিকদের হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সর্বসঞ্চয় দিয়ে দুই চার বস্তা করে ২০ টাকার চাল ৪০ টাকা দিয়ে মজুদ করে রাখার ঘটনার মধ্যে কেউ কোনো হিংসা খুঁজে পাবেন না। এগুলোর কারণ তো ওই ট্রেন পোড়ানো; আর কোন পোশাকের লোকেরা ট্রেন পোড়াল কাকুরা জেঠুরা তো জানেনই, প্রধানমন্ত্রীও উল্লেখ করে দিয়েছেন।
এরপর যেটা দেখলাম, সেটা আপনারা ভদ্রলোকেরা হিংসা হিসাবে কোন পদেই ফেলতে পারবেন না। ধরুন লালগোলা থেকে বহরমপুর আসতে যেতে খরচ হল বাসে ৩৫+৩৫= ৭০ টাকা। ভোরবেলা থেকে লাইন লাগে সদর শহরগুলোতে; মুসলমানের নাম বাবুরা ঠিক বানানে কোনোকালেই লিখতে পারেন না। তাই সেসব ভুল বানান সংশোধনের দায় নিয়ে সারাদিন লাইনে দাঁড়াতে হয় ওই হত দরিদ্র মানুষগুলোকেই। কোর্টে উকিল ধরে নাম সংশোধন সেখানে ২০০-৫০০— সেসব টাকা তো বাদই দেন। সরকারি প্রকল্পেও যদি নাম ঠিক করতে আসতে হয় সারাদিন কেটে যায় এই আশঙ্কা নিয়ে আজ কাজটা হবে তো; দিনে একবেলা সবজি-ভাত ৩০-৩৫ টাকা। একদিনের লাইনে কাজ না হলে পরের দিন আবার। ওই ভাঙাচোরা চোয়ালের চোখ কোটরে যাওয়া দিনআনা দিনখাটা মানুষরা ঘামে ভেজা টাকাগুলো যখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে বারবার গুনেগুনে দেন তখন কোনো হিংসা কি কেউ দেখতে পান ? এসব হিংসা আসলে কোনো হিংসা নয়; সেই হিংসাটাই আসল যেটা আমাকে আপনাকে আমাদেরকে রাষ্ট্র দেখায়। এই মানুষেরা যদি কোনো একদিন প্রবল রোষে সব তছনছ করতে চায় তখন তাঁদের পোশাক দিয়ে তাঁদের হিংসাকে একটা খোপে পুড়ে দেওয়া যাক, বেশ কেল্লাফতে।
তিন
এবারে আসব একটা দীর্ঘমেয়াদী ধূর্ত হিংসার বুনট কীভাবে নির্মাণ হয় তা দেখতে। আর আমরা দুর্বল হলেও একটু সামান্য উদ্যোগ নিলে এই মিথ্যের নির্মাণকে ভাঙা যায়, বা প্রতিরোধ করা যায়। ১৮ তারিখ একটা ফোন আসে, আমার শিক্ষক স্থানীয় ব্যক্তি। বয়স্ক মানুষটির কাজকর্মের উপর দীর্ঘ দিনের শ্রদ্ধা ছিল এখনো আছে। তবে বিগত কয়েক মাস থেকে ওঁর চিন্তনের সাথে মেলাতে পারছিলাম না। যতটা সম্ভব বিতর্ক চালু রাখা সম্ভব তা চলছিল, আশা করি আগামী দিনেও বিতর্কের জায়গা থাকবে। বিতর্কের সূত্রপাত হয় উনি গত মাসে একদিন ফোন করে, কথা সূত্রে বলছিলেন ‘জ্যোতিষ আসলে এক ধরনের বিজ্ঞান’ আমি সেদিন ওঁকে জানাতে বাধ্য হয়েছিলাম যতদিন বাঁচব দাভলকার, কালিবুর্গি, পানসারের খুনের কথা মাথাতে রাখব। আর জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিজ্ঞানের অংশ বলে দাবি করাটা সমকালীন গোঁড়া দক্ষিণপন্থীদের সফল প্রচারের অংশ। তাই এর বিরুদ্ধে দুর্বল হলেও আমার সংঘর্ষ জারি থাকবে।
এর পর ১৮ তারিখ ওই দিন ফোনে উনি জানান উনি কলকাতা এসেছেন, কতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দীর্ঘ বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে। আমি ভাবলাম হয়তো ১৯ তারিখের মিছিলে হাঁটবেন তাই। উনি জানালেন, না, ওঁর কিছু ব্যক্তিগত কাজে কলকাতা আসতে হয়েছে, মিছিলে হাঁটবেন না। তারপর জানালেন আমাদের বামপন্থীরা কিছুই জানে না গ্রামীণ অঞ্চলে কী হয়ে চলেছে। কতটা মৌলবাদ দানা বাঁধছে। সংক্ষিপ্তসার বললে বলা হয়, মুর্শিদাবাদের উগ্র মুসলমান মৌলবাদ কীভাবে হিন্দু মৌলবাদকে বেড়ে ওঠার রসদ যোগাচ্ছে। এতদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল। তবে ফোনে উনি যখন জানালেন বিশ্বস্ত সূত্রে নাকি খবর পেয়েছেন, ‘বেলডাঙ্গা অঞ্চলের হিন্দুরা টেররাইজড হয়ে আছেন। যেদিন অরগানাইজড হয়ে নাকি মিটিং মিছিল করে জেহাদিরা ট্রেন পুড়িয়েছে; সেদিন নাকি বাজারে হিন্দুদের দোকানপাঠ- লুঠপাঠ, ভাঙচুর, ভয় দেখানো সিসি টিভি ভাঙচুর হয়। এর ফলে বেলডাঙ্গার সংখ্যালঘু হিন্দু দোকানিরা নাকি খুবই ত্রস্ত।’
এই খবরটা শুনে প্রথমে মনে হল বিজেপির আইটি সেলের বানানো খবর শুনছি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কাদের কথা বলছেন ? কারা ত্রস্ত? আসলে এই সময়ে গ্রামে মফঃস্বলে ঘুরে একটা ছবি খুব স্পষ্ট যে কারা ত্রস্ত। নিজের গ্রামে ও বাড়িতে দেখছি পাগলের মতো দলিল আর নাম ঠিক করার জন্য মানুষরা হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে; প্রতিদিন প্রায় বয়স্ক কেউ না কেউ এসে ওই একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে, ‘হ্যাঁ গো আমাদের এই বয়েসে অত্যাচার করে তাড়াবে না তো?’
তাই ওঁর বলা নতুন তথ্য শুনে চমকে গেলাম। হিন্দুরা ত্রস্ত হয়ে আছে, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গাতে দু’দিন পরও ফোন করে এটা বলছিলেন যখন, তখন আমি বেলডাঙ্গাতে।
আমি ওঁকে জানিয়েছিলাম ওখানে যাব, উনি বললেন আমার সাথে যেও। আর খবরটা অথেনটিক এটা দাবি করে জানালেন এটা ওই এলাকার একজন ‘লিবারাল’ মুসলমানের কাছে থেকে পেয়েছেন। এবং উনি এই মুহূর্তে এই খবরটা প্রকাশ করতে মানা করেছেন তাকে।
ভোর থেকে গ্রামের চাষাভুসো গরিব মুসলমানগুলো হন্যে হয়ে জমির কাগজ আর ভুল নামের বানান নিয়ে জর্জ কোর্টে , বি এল আরও অফিসে ছুটছে। কারা ত্রস্ত চোখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এই সময়ে। তাই বেলডাঙ্গাতে যদি হিন্দুরা ত্রস্ত থাকেন এমন খবর বেশ ভিন্ন হতেই পারে। সেদিন রাতেই চেনা জানা বেলডাঙ্গার মানুষদের ফোন ও মেসেজ করলাম ঘটনাটা জানতে। স্থানীয় এক ছাত্রকে খবরটার সত্যতা নিয়ে জানতে চাইলে সে জানায় ‘দিদি, এটা মিথ্যে খবর, তুমি এসে দেখে যেতে পারো।’ সৌম্য, শাহিনরাও জানালেন তাদের বেলডাঙ্গা বাড়ি, এমন কোনো খবর তার কাছে নেই, খবরটা সত্য নয়। তবু যেহেতু শিক্ষক স্থানীয় মানুষ এমনটা বলছেন, আর যাই হোক এটা বিজেপির আইটি সেল নয় ঘটনাটা সত্যতার যাচাইয়ের জন্য বেলডাঙ্গা যেতে ইচ্ছে হল।
মুর্শিদাদিকে জানালাম, ওঁর বাড়ি বেলডাঙ্গা, মুর্শিদাদি ছিলেন না; তবু তিনি সমস্ত রকম সাহায্য করলেন। বেলডাঙ্গাতে বিলকিস পূর্ণিমাদি আমাকে ২০ তারিখে তার এলাকা পরিদর্শনে সাহায্য করলেন শুধু নয়। পূর্ণিমাদি আমাকে ওই এলাকার অসংখ্য দোকানে নিয়ে গিয়ে কথা বলে দেখতে বললেন। মিছিলটা যে পথ দিয়ে গিয়েছিল সে পথের দুই পাড়ের দোকান; তেমন বিশেষ কোনো ক্ষত-চিহ্ন চোখে পড়ল না। আর বাজারের গঠনগত রূপ এমন যে চাইলেও আলাদা করে হিন্দুদের দোকান ভাঙা সম্ভব ছিল না। ধরুন ক্রসিঙের সামনে রাস্তার ধারে ‘হেমন্ত টি স্টল’ আর ‘আসাদুল টি স্টল’ একদম গায়ে গায়ে জড়ানো। হেমন্ত টি স্টলের যিনি বসে ছিলেন ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, মিছিলের দিন আপনাদের এদিকে কোনো দোকান ভাঙা, ভয় দেখানো, দোকান খুলতে না দেওয়া এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে? তিনি স্পষ্ট জানান ‘এসব কিছু হয়েছে বলে তো জানি না দিদি; এমনটা প্রচার হচ্ছে বুঝি? আমার দোকান দেখতে পাচ্ছেন সবই ঠিক আছে কোনো জিনিসপত্র নড়চড় হয়নি। আপনি বাজার ঘুরে দেখুন; ঘটনার দিন অল্প-বিস্তর কিছু দোকানে বাড়ি-টাড়ি পড়তে পারে কিন্তু সেভাবে কোনো ভাঙচুরের খবর জানি না।’ এর পর এলাম সুবোধ সাহার ফলের দোকান ও মহুয়া সাহার( উভয়ের নাম পরিবর্তিত) ফুলের দোকানে, তাঁরা জানালেন ফলের দোকানে ইটের বাড়ি এসেছে; যদিও কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখাতে পারেননি; আর মহুয়া সাহা বলেন, মিছিলের এত মানুষ দেখে খুব ভয় পেয়ে ঘাবড়ে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে ফিরে যান। ওখানে একজন স্কুল শিক্ষক দাঁড়িয়ে ছিলেন। উনি বিশেষ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন কেন এসেছি, কোথা থেকে এসেছি; নাম কি, পদবি কি; কোন সংগঠন এমন নানা কিছু। তারপর জানালেন, ‘ভাঙচুর নাকি হয়েছে, হিন্দুদের দোকান টার্গেট করেই সিসিটিভি ভাঙা হয়েছে।’
আমাদের রাস্তায় একজন জানালেন রাজনন্দিনী মিষ্টির দোকানের দিকে যেতে। পূর্ণিমাদি ওখানে পথে যাবার সময় বলল দুই পাশের দোকানগুলোর অক্ষত সিসিটিভি সমেত দোকানগুলো দেখতে, ও ছবি নিতে। এরপর আমরা অসিত কুমার সাহার মিষ্টির দোকানে ঢুকে কথা বললাম; শীতল ভট্টাচার্য আর আনাই শেখ এই দোকানের কর্মচারী তাঁরা এক যোগে বললেন, ‘আপনি যে খবর পেয়েছেন তা সত্য ঘটনা থেকে অনেকটাই বিকৃত। এমন ঘটনা ঘটেনি, আর হিন্দুরা ত্রাসে আছে তাঁদের দোকান ভাঙা হয়েছে এই কথাটি মিথ্যে; হ্যাঁ তবে মিছিল থেকে দু’ চার জন ছেলে ফিরতি পথে দু’-একটা দোকানে রড দিয়ে ভাঙচুর করেছে। তবে সেটা কোনো কমিউনাল আক্রোশ থেকে নয়। বাজারে খোঁজ নিলেই জানতে পাড়বেন।’ এই পথে একটু এগিয়েই দুটো মুসলমান মালিকের জুতোর দোকান; দোকানের সাইন বোর্ড ভাঙা; হবিবুর শেখ জানালেন, ‘কমিউনাল হিংসা ছড়াতে যদি দু’-চারটে দোকানের সাইন বোর্ড আর সামনের সিসি ক্যামেরা ভাঙা হয়; তাহলে আমাদের দোকানের সাইনবোর্ড ভাঙল কেন? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন ফিরতি পথে কিছু মব হাতে যা ছিল দোকান লক্ষ করে ছুঁড়তে ছুঁড়তে গেছে। কোনো কমিউনাল টেনশন ওই দিন থেকে এখানে কাজ করেনি। আর খোঁজ নিয়ে দেখুন এই বাজারে তো একজনও নয়ই; স্টেশনেও কোন যাত্রী বা এলাকার একটিও মানুষের সাথে কোনো কিছু হয়নি।’ আমি পূর্ণিমাদি বাজার ঘুরে দেখলাম; ফোনে যা শুনেছিলাম; বা আমাদের এদিকের জেলাতে বিজেপির আইটি সেল যা প্রচার করে তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা এবং এই বাজারের দোকানপাটের গঠনকাঠামো। খোদ বেলডাঙা স্টেশনের গায়ে শাহা হোসেন, বেনু প্রামাণিক, মমতা মণ্ডলদের চা-পান, চপ, ষ্টেশনারি দোকান। বেনু মণ্ডল, মমতা মণ্ডল জানিয়েছেন শাহা হোসেনের সাথে তাঁদের বাবা মেয়ের সম্পর্ক; আর এদিকে অমন আলাদা হিন্দুর দোকান, মুসলমানের দোকান ভাগ করে ভাঙা সম্ভবই নয়।
এ তথ্য সংগ্রহের পর স্টেশনে এলাম, দেখলাম এক সপ্তাহ ধরে প্রদর্শনী হিসেবে একটা পোড়া ট্রেন রেখে দেওয়া হয়েছে; যা অনেকেই ট্যুরিজমের মতো করে দেখতে আসছেন আশেপাশের এলাকা থেকে। চোখ সেঁকে বলছেন, কী হিংসা,কী হিংসা! ওই দিনই ১৩৫ টাকার পেঁয়াজের রান্না রেঁধে কাকিমণিরা বিকেলে ভ্রমণে বেড়িয়েছেন, বাচ্চা-কাচ্চার হাত ধরে পোড়া ট্রেনের নিদর্শন দেখিয়ে বলছেন, কতো বড় ক্ষতি হল। মোসলাগুলো এই দেশ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক্ করে দিচ্ছে। আগুন চারিদিকে ধিক্ ধিক্ করে জ্বলছে, সে জ্বলার নিদর্শন কাকিমণিদের চোখেও ফুটে উঠেছে আজ। ওঁদের কথার মাঝে আমি টপকে পড়ে বললাম কাকিমা দেশের সংবিধানটাই পুড়িয়ে রাখ করে দিলো, এটা তো মাত্র ট্রেন। ওঁদের কে কী বুঝলেন কে জানে, দু’জন বললেন হ্যাঁ রাস্তা-ঘাটে সব আইন পোড়াচ্ছে দেশদ্রোহীরা। পূর্ণিমা দিদি ওদের বোঝাপড়া বুঝে চট করে বলল, ‘আচ্ছা আপনারা কি একটুও অনুভব করতে পারছেন না, এতবছর কোনো কিছু তো পোড়ানো হল না, আজ কেন পুড়ছে। এমন কী হল যে এত মানুষ পথে নেমে পড়ল?’ এই কথার উত্তর খুঁজে না পেয়ে কাকিমারা কেউ মুখকে বেঁকিয়ে, কেউ গম্ভীর ভাব নিয়ে চটপট হাঁটা দিলেন। বার্তালাপ সময় আছে কি? আমরা খানিক ওঁদের পিছু হেঁটে ফিরে এলাম। ১৩৫ টাকার পেঁয়াজের পাদের গন্ধ বড্ড বিকট।
চার
আমরা জানি আমরা হেরে গেছি অনেকদিন ধরেই। এত প্রবল ক্ষমতার সামনে আমরা খুব তুচ্ছ। তবু এটা বিশ্বাস করি এই একসাথে বাঁচার, পাশাপাশি এক দেওয়ালের দোকান, এক দোকানে আনাই শেখ আর শীতল ভট্টাচার্য নামের কর্মচারী যখন এক সাথে কথা বলে ওঠেন, এই সময়েও শাহা শেখের সাথে বেনু প্রামাণিক, মমতা মণ্ডলের যে সম্পর্কের বুনন যখন দেখি এই বাস্তবটুকুই ওদের বিশাল বিস্তৃত মিথ্যার গালে সপাটে থাপ্পর বসায়। আর সাথে এই উত্তাল সময়ে কিছু কিছু বড় ছাত্র-সমাবেশ ও মিছিল, শক্তিমান ধূর্ত সরকারের ঘাম ছুটিয়ে দিতে পারে এই স্বপ্নটুকু বাঁচিয়ে রেখেছি সযত্নে। আমি বিশ্বাস করি মিছিল সমাবেশ খুব জরুরি এই সময়ের বুকে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে একটা জিনিস ভেবে যাচ্ছি আমাদের একটা বড় সমাবেশের বিরুদ্ধে ওরা আরেকটা আরও বড় সমাবেশ নামানোর ক্ষমতা রাখে। শক্তিমান শাসকেরা ও তাঁদের ধূর্ত মতাদর্শ যে ভাবে অঞ্চল ধরে প্রভাবিত করতে পারে; একমুখীন ভাবাতে সক্ষম হয়, আমরা তা পারি না কেন।
এই সময়ে তো এটাও তথ্য হয়ে উঠে এল মুর্শিদাবাদে যে, স্বতঃস্ফূর্ত জনআন্দোলন গড়ে উঠছিল তাকে জোড় করে ঝান্ডার মিছিলে পরিণত করা হল। সব শাসকেরাই গণআন্দোলনকে চতুরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম। এখানেও একই পথে ছোটফুল নির্ণয় করে দিল এ রাজ্যে মাত্র দুটো ফুলের ঝান্ডা উড়বে। বড়ফুল ও ছোটফুল মিলিজুলি বৈরিতা মানুষকে আরও ধর্মের নিরিখে দুইভাগে ভাগ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে বড় লাল পার্টির বেশিরভাগ মিটিং মিছিলগুলোই এখন হয় মুসলমান মহল্লা আর পাড়াগুলোতে। ওখানে এই ইস্যুতে লোকজন বেশি হয় তাই। যে সময়ে অনেক বেশি জরুরি হয়তো হিন্দু এলাকাগুলোতে পাড়াতে পাড়াতে অনেক বেশি প্রচার; কিন্তু সে কাজটা তেমনভাবে চোখে পড়ছে কই?
একেকটা বড় জনমিছিলে আমরা সরকারের এই জন-বিরোধী আইনের বিরোধ করতে পারব; এই কথাটা স্বীকার করি। কিন্তু আঞ্চলিক স্তরে যে হিংসার বীজ শক্ত বিষগাছ হয়ে উঠছে। আর এই গুজবগুলোকে কীভাবে প্রতিহত করব? আমরা যেগুলো বন্ধু বা কাছের মানুষ বা সম্মাননীয় মানুষের কাছে শুনি; তা বিশ্বাস করে নিই সহজেই। আমিও যেমন মুহূর্তে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম ১৮ তারিখে আসা ওই ফোনে। যদিও সেদিনই অন্যদের কাছে খবর নিয়ে জেনেছিলাম ঘটনাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়।সম্পূর্ণ সত্যটুকু জানার জন্য আমাদের অঞ্চলে অঞ্চলে যাওয়া জরুরি। এমন একটা ধূর্ত ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে যেখানে আমাদের মানবিক বিশ্বাসের জায়গাগুলো হয়তো ধসের মুখে। তাই এলাকাতে ঘুরে আপাতত লিখতে থাকব জুড়ে-জুড়ে থাকা আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথাগুলো।
লেখক: সেন্টার ফর সোশ্যাল সাইন্স কলিকাতা–র শিক্ষার্থী ও গবেষক।
Cover Image: Anti-CAA/NRC protest in Kolkata,West Bengal. Image courtesy: Bijoy Chowdhury.
Thanks…good job…carry on.