এনআরসি, এনপিআর, সিএবি — যুক্তমঞ্চের সভা থেকে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ গড়ে তোলার ডাক


  • December 9, 2019
  • (0 Comments)
  • 1358 Views

গ্রাউন্ডজিরো: লোকসভায় পাশ হল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল বা সিএবি। আর কলকাতার ধর্মতলায় আওয়াজ উঠল দেশজোড়া ‘অসহযোগ আন্দোলন’-এর।রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে নাগরিক পঞ্জি বিরোধী যুক্তমঞ্চ-র এই নাগরিক পঞ্জি, এনপিআর থেকে সিএবি – সব ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষকে সরকার এবং এ-কাজে যুক্ত সরকারি কর্মীদের সঙ্গে অসহযোগিতা করার আহ্বান রাখলেন।  নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্তমঞ্চ-র ‘পাহাড় থেকে সাগর: এনআর সি-বিরোধী যাত্রা’র আজ ছিল শেষদিন। ১৫ নভেম্বর দার্জিলিং থেকে এই যাত্রা শুরু হয়। সভায় সর্বভারতীয় নারী আন্দোলনের নেত্রী এআইপিডব্লিউএ’র কবিতা কৃষ্ণাণ এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে বাংলার অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সংসদে সিএবি বিল পেশ করা হয়েছে। সংখ্যাধিক্যের জোরে লোকসভায় তা পাস হয়ে যাবে কিন্তু ঘরেবাইরে তার প্রতিবাদ করে যেতে হবে। তিনি পাড়ায় পাড়ায় সিএবি বিল পুড়িয়ে দেওয়ার ডাক দেন। ‘আমরা সবাই নাগরিক। আমরা সবাই ভারতীয়।’ এই শ্লোগান তুলে সারা দেশের মানুষকে এককাট্টা হয়ে দাঁড়ানোর ডাকও দেন তিনি।

 

বামপন্থী যুবনেতা কানহাইয়া কুমার আরও একধাপ এগিয়ে জানিয়ে দেন, সরকার নাগরিকত্ব না মানলে আমিও সরকারকে মানব না। কানহাইয়া তাঁর ট্রেডমার্ক ভঙ্গিতে বলেন, দেশের সংবিধান মেনে অমিত শাহ নির্বাচন লড়েছেন, সংবিধান মেনে শপথ নিয়ে গৃহমন্ত্রী হয়েছেন, আজ তিনি দেশের সংবিধানকে মানছেন না। জনতাও তাহলে সরকারকে মানবে না। সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে আইনের কাছে সকলে সমান। সেখানে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ নেই। গৃহমন্ত্রী নাগরিকত্ব বিল সংসদে পেশ করে সংবিধানের বিরোধিতা করছেন। এই সরকারকে জনতা মানবে না। তাঁর মতে সংবিধানকে, দেশের মূল ভাবনাকে, আজাদির সংকল্পকে ছিনিয়ে নিতেই বিজেপি সরকার এই এনআরসি-এনপিআর-সিএবি’র আশ্রয় নিয়েছে। তিনিও উপস্থিত শ্রোতাদের এ-সংক্রান্ত কোনও তথ্য সরকারকে না-দেওয়ার এবং হাতজোড় করে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান।

 

সভার অন্যতম দুই বক্তা এপিডিআর-এর রঞ্জিত শূর এবং বিধায়ক ও যুক্তমঞ্চের অন্যতম নেতা ভিক্টর আলি ইমরান রামজ এনআরসি ছাড়াও এনপিআর বা জনসংখ্যা পঞ্জি এবং রাজ্যে নির্মীয়মাণ তিনটি ডিটেনশন ক্যাম্পের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। দুই বক্তার মতে এনপিআর হল এনআরসি’র প্রথম ধাপ। ২০০৩ -এর নাগরিকত্ব বিধিতেই তার সংস্থান রয়েছে। জনগণনা কিংবা সেনসাসের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার জনসংখ্যাপঞ্জি ও জনগণনা একই বলে প্রচার করছে এবং রাজ্যবাসীকে পঞ্জিকর্মীদের সহযোগিতা করার আবেদন জানাচ্ছে। তথ্য ও সরকারি নথির উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই এনপিআর-এর কাজ শুরু হবে। কর্মীরা নানা তথ্য সংগ্রহ করবেন। তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে তারা দেশের নাগরিকদের সন্দেহজনক বলে দাগিয়ে দেবেন। ওই নাগরিককে-ই তখন প্রমাণ করতে হবে তার নাগরিকত্ব, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। শূর প্রশ্ন তোলেন, সরকারের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে ১১০জন ‘জানখালাস’ বিদেশি নাগরিক আছেন তবে একাধিক ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণের পিছনে রহস্যটা কি? একই ভাবে সরকারের ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করে আলি ইমরান দাবি তোলেন, সরকারকে বলতে হবে এনপিআরও হবে না। একটি বিষয়ে সকল বক্তা প্রায় একই সুরে বলেন, এনআরসি থেকে সিএবি — এই সবই রুটি-রুজির জ্বলন্ত সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া এবং আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে বিজেপির কূটচাল।

 

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কান্নান গোপীনাথন, ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা, শরদিন্দু উদ্দীপন, মিলন মান্ডি, দেবর্ষি চক্রবর্তীরা। সভাপতিত্ব করেন প্রসেনজিৎ বসু।  

 

Share this
Leave a Comment