ব্যক্তির বর্বরতার বিরূদ্ধে রাষ্ট্রের বর্বরতা – এই ন্যায় কী চাইছি আমরা?


  • December 7, 2019
  • (0 Comments)
  • 1563 Views

চারজন গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তকে ফেক এনকাউন্টার-এ মেরে ফেলে এই রাষ্ট্রব্যবস্থা কোনও ন্যায়, কোনও আত্মার শান্তি প্রদান করতে পারেনি। গনউন্মাদনায় কিছুটা সাময়িক প্রলেপ দেওয়া যায় মাত্র। আজ কত সহজে ন্যায়ের নামে রাষ্ট্র কর্তৃক লিঞ্চিং, খুনকে সমর্থন করছে মানুষ। ব্যক্তির বর্বরতার বিরূদ্ধে রাষ্ট্রের বর্বরতা এই ন্যায় কী সত্যিই চাইছি আমরা ? লিখেছেন সুদর্শনা চক্রবর্তী 

 

 

একটা ভয় ক্রমশ চারিয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে মাথায় ক্রমাগতই একটা তীব্র অস্বস্তি বাড়ছে। দৈনন্দিন বেঁচে থাকা নিশ্চয়ই থেমে নেই, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার বোধটা ক্রমেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। হ্যাঁ, নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। শুধু মেয়ে বলে নয়, এই দেশের, এখন যে ভারত রাষ্ট্রে নিঃশ্বাস নিচ্ছি তার নাগরিক বলে। কেবলমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে যে নিরাপদ নই, সেটা তো আর নতুন করে বুঝছি না, জ্ঞান হওয়া ইস্তক সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়, বুঝে নিতে হয়। এখন অবশ্য জ্ঞান হওয়ার আগেই যদি তা বুঝিয়ে দেওয়ার উপায় থাকত, তাহলে ভালো হত।

 

হায়দ্রাবাদের তরুণ পশু চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি-র গণধর্ষণ ও নৃশংস হত্যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কেন? কারণ নৃশংসতার মাপকাঠি। একটি মেয়ে, একজন নারী – তার বয়স যাইহোক না কেন, তিনি যে ধর্ষণ, যৌন হেনস্থার শিকার হতে পারেন এটা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা শুধু নাগরিক সমাজের মানুষজন কেঁপে উঠি যদি সেই অত্যাচারের মাত্রাটি আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে ছাপিয়ে যায়। যেমন জ্যোতি সিং-এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। মহিলা স্কুটি চালিয়ে রাত্রিবেলা বেরোচ্ছেন বা পুরুষবন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখছেন – এ তো অবশ্যই ভারি ‘না-ইনসাফি’। একটু-আধটু ‘সবক’ শেখানোর জন্য মাঝেমাঝে কয়েক জনের রাশ টেনে ধরতে হয়। তবে সবসময় পরিমিতি বোধ কাজ করে না। বাড়ির আঙিনা পেরিয়ে বাইরের পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করা মেয়েগুলোর উপর রাগ, নিজেদের শরীর-যৌনতা-আর্থিক স্বাধীনতা-জীবনযাপনের উপর নিয়ন্ত্রণ খোঁজা মেয়েগুলোর উপর রাগ তাই ধর্ষণের পর শরীরগুলিতে প্রাণ থাকতেও জ্বালিয়ে দিতেই সায় দেয়।

 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, পরিবারে পিতৃতন্ত্রের চোখ রাঙানি এসব নিয়ে এত কথা খরচ করতে হয় প্রতিদিন, যে আজকাল ক্লান্ত লাগতে শুরু করে। তবে থামার উপায় নেই। যে মুহূর্তে এগুলো নিয়ে কথা বলা বন্ধ করব, তখন থেকেই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের দাঁত-নখ আরও বেশি বেরিয়ে পড়বে। শরীর, মাথা, মন সবকিছু দাবিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিটা নানা স্তরে এমনভাবে জাঁকিয়ে বসবে যে তার থেকে বেরোনোর কোনও উপায়ই থাকবে না। কারণ লড়াইটা একদমই আমাদের নিজেদের, একার। কেউ সঙ্গে থাকতেই পারেন, তবে ঘরের ভেতরে, রাস্তায়, শিক্ষাক্ষেত্রে, কাজের জায়গায় নিজেদের অধিকার আর অস্তিত্বের লড়াইটা একা বা জোট বেঁধে আমাদেরই লড়ার কথা।

 

গত কয়েক দিনে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুরো পরিস্থিতিটাই মনে হচ্ছে চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে। আগামী দিনে এই দেশের নানা প্রান্তে মহিলাদের একা বা দলবদ্ধ লড়াইটা ঠিক কোন্‌ পথে যেতে পারে তা বোধহয় ভেবে দেখার সময় হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান এই ভাবনাকে আরও উসকে দিচ্ছে। কারণ এই হিন্দুরাষ্ট্রের ধুয়ো তোলা, ব্রাহ্মণ্যবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমার-আপনার পাশের মানুষটিও যে ন্যায়ের নামে রক্তপিপাসু হয়ে উঠবেন না তার আর কোনও প্রতিশ্রুতি কেউ দিতে পারবে না। আর কী আশ্চর্য এটাই যে দেশের শাসকদল গত ছ’ বছর ধরে চেয়ে আসছে। ঠিক সেই টোপেই পা দেওয়া হল।

 

বিশ্বাস করুন, প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি, জ্যোতি সিং, উন্নাও-এর মেয়েটি, মালদহের মেয়েটি, কামদুনির মেয়েটি, সুজেট ও আরও অসংখ্য মেয়েরা শুধু ও শুধুমাত্র নিজেদের জীবনটা বাঁচতে চেয়েছিল। ওরা সবাই মৃত। চারজন গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তকে ফেক এনকাউন্টার-এ মেরে ফেলে এই রাষ্ট্রব্যবস্থা কোনও ন্যায়, কোনও আত্মার শান্তি প্রদান করতে পারেনি। এভাবে আদপেই কিছু হয় না। গনউন্মাদনায় কিছুটা সাময়িক প্রলেপ দেওয়া যায়। রাষ্ট্রের ধামাধারী পুলিস প্রশাসনকে ‘হিরো’ বানিয়ে পুজো করা যায়। ‘জাস্টিস’, ‘ন্যায়’ দেওয়া হল বলে গলা ফাটানো যায়। আর এভাবেই আখলাক, তাবরেজ-দের বা নাম না জানা দলিত মানুষদের উপর নেমে আসা গণরোষকে মান্যতা দেওয়া হয়ে যায়। সবই তো ন্যায়ের খেলা, রাষ্ট্রের হিরো-রা যা করতে পারে, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাহিনীই বা করবে না কেন!

 

একটি মেয়ে বাড়ির বা পরিবারের কাজকর্ম করুক, লেখাপড়া করুক, চাকরি করুক – যাই করুক না কেন তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দড়ি পরিয়ে রাখতে হবে। কখনও ঐতিহ্য, কখনও দায়িত্ববোধ, কখনও স্রেফ মেয়ে হয়ে জন্মানো, কখনও দেবীত্ব আরোপ, কখনও পণ্যসর্বস্ব সামাজিক কাঠামোয় আইকন করে তোলা ইত্যাদি নানাবিধ দোহাই দিয়ে পুরুষতন্ত্র তাকে কাবু করতে চায়। না পারলে প্রথম রাগটাই গিয়ে পড়ে শরীরের উপর, কারণ শরীর ঘিরে তৈরি করা আজন্মলালিত ট্যাবু দিয়ে তাকে সহজে পেড়ে ফেলা যায়। আর ঐ যে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া, তথাকথিত সম্মান বাঁচানোর আর্তি তা দিয়েই নিজেদের পুরুষত্বকে তোল্লাই দিতে পুরুষদের শেখায় এই সমাজ। মুশকিল হচ্ছে, এনকাউন্টার-এ অভিযুক্তদের মেরে ফেলে প্রিয়াঙ্কাকে না হয় ন্যায় দেওয়া গেল, যাদের মারা হল তাদের বৃদ্ধা মা বা তরুণী বিধবা স্ত্রী বা শিশুকন্যা, কিশোরী বোন-এর পরিচয় হয়ে রইল ধর্ষণকারী ও পুলিসের গুলিতে নিহতের মা, স্ত্রী, মেয়ে, বোন। যাদের দায়িত্ব কোনওভাবেই এই সমাজ বা রাষ্ট্র নেবে না। অথচ খোঁজ নিলে হয়তো জানা যাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের কাঠামো এমন হয় যে এই পুরুষমানুষগুলির বেড়ে ওঠা বা পরবর্তী কর্মকান্ডে পরিবারের মহিলাদের ভূমিকা থাকে নগন্য। অথচ ভালো-মন্দ যাই হোক সেই পুরুষের পরিচয়ের বোঝা এই মহিলাদেরই ঘোমটা টেনে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। তাদের আলাদা কোনও পরিচয় গড়ে উঠতেই দেওয়া হয় না এই ব্যবস্থায়।

 

খুব সূক্ষ্মভাবে মহিলাদের উপর ঘটতে থাকা, বাড়তে থাকা অত্যাচার, শোসন, নৃশংসতার মধ্যেও ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জাত-বর্ণ-ধর্ম-শ্রেণীগত বৈষম্যের ভাবনা। জনগনের যে প্রতিবাদের ভাষা, ন্যায়ের জন্য যে প্রবল দাবি তা কিছু নির্দিষ্ট মহিলার জন্যই উঠে আসে। এই দাবি শুনতে পাওয়া যায় না কাশ্মীরের অগনিত মেয়েদের জন্য, উত্তর-পূর্বের মেয়েদের জন্য, বস্তারের মেয়েদের জন্য, গুজরাট দাঙ্গার মেয়েদের জন্য, চুপ করে থাকা যায় কুনান পোসপরার মেয়েদের জন্য, সোনি সোরির জন্য, মনোরমা-র জন্য। ‘কালেক্টিভ’ প্রতিবাদের স্বর কি চমৎকারভাবে ‘সিলেক্টিভ’ হয়ে যায়। আসলে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া যায়, তাদের মানসিক গঠন নিয়ে চর্চা করা যায় (অবশ্যই সেখানে সমাজ কীভাবে দায়ী তা আলোচিত হবে না), তাদের কঠোর শাস্তি চাওয়া যায়। অথচ অপরাধী যেখানে রাষ্ট্র সেখানে সবাই আবার চুপ। সরকার বদলে যায়, রাষ্ট্রচরিত্র বদলায় না। মহান দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় কিছু মহিলাকে তো অত্যাচার সহ্য করতে হতেই পারে, তাই না? তায় যদি তারা আবার রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে মুখ খোলেন, একটু শাস্তি হিসেবে তাকে ধর্ষণ করাই যায়। অদ্ভূত, দেশকে মা বলব আর অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা, পুরুষসর্বস্ব সমাজ থেকে উঠে আসা তরুণ সৈন্যদের শিখিয়ে দেব দেশের নামে ধর্ষণ করলে, বর্বর অত্যাচার করলে দোষ নেই। চারজন মানুষকে গুলি করে নিমেষে মেরে ফেলা যায় অথচ যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, খুন, ব্ল্যাকমেইল-এর অভিযোগ থাকা নেতা, মন্ত্রী, ধর্মগুরুর সামনে নতজানু হবে দেশের রক্ষকরা। এই রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দেবে? ন্যায় দেবে?

 

প্রিয়াঙ্কা ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন, উন্নাও-এর মেয়েটি পুড়ে মরে যেতে যেতেও অপরাধীর শাস্তি চেয়েছিলেন ঠিক জ্যোতি-র মতো। বাকিদের কথা জানতে না পারলেও তাঁরা যে সকলেই নিজেদের মতো করে জীবনটা বাঁচতে চেয়েছিলেন সন্দেহ নেই। এই পরিবার, এই সমাজ, এই দেশকে সঙ্গে নিয়েই, তাদেরই মধ্যে। এই দেশের প্রত্যেকটি কোণায় ধর্ষিত, অত্যাচারিত, মৃত মেয়েদের হয়ে আমরা অপরাধীর শাস্তি চাই, ন্যায় চাই। চাই তা আইনের পথে আসুক। দ্রুত আসুক। জনরোষ শান্ত করতে প্রশাসন আইন হাতে তুলে নিক চাই না। যে কারণে অনেকেই এই এনকাউন্টার-কে সমর্থন করছেন তা হল আইনি পথে বিচার পেতে যে দীর্ঘসূত্রীতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা প্রমাণ করে ‘জাস্টিস ডিলেয়েড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড’ বা এদেশের ক্রমশ দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠা বিচারব্যবস্থায় ন্যায় পাওয়া যে কঠিন হয়ে পড়ছে সেই বাস্তব। কিন্তু তার জন্য বিচারব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজাতে হবে। আর সে দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র, দায়িত্বে থাকা সরকারের উপরেই বর্তায়। আইনিব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুক দেখিয়ে মানুষ খুন করতে পারে না সে। চরমতম নৃশংসতার সামনে দাঁড়িয়েও চাই শাস্তি আসুক আইনের পথে।

 

জনরোষ যে কতটা যুক্তিহীন হতে পারে তার প্রমাণ আমরা গত কয়েক বছরে বারেবারেই পেয়ে চলেছি। এই যে প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির ধর্ষণকারীদের পুলিশ গুলি করে মারল, তাতে বিজেপি-আরএসএস সমর্থক আর অধিকাংশ বিরোধীরা এক লাইন-এ চলে এল। বহু হিন্দুত্ববিরোধী, হিন্দু রাষ্ট্রবিরোধী মানুষ এই খুনকে সমর্থন করছেন। রাগের বহিঃপ্রকাশ, মানছি। কিন্তু তার জন্য যুক্তি-বুদ্ধি বিসর্জন দেওয়া যায় কি? বিজেপি-আরএসএস যে ধর্মীয় আবেগ চারিত জনরোষকে গণপিটুনিতে রূপান্তরিত করার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে মুসলমান-দলিত-প্রান্তিক মানুষদের ক্ষমতার জোরে মেরে ফেলছে, এই ঘটনা সেগুলোকেই বৈধতা দেবে। সেইজন্যই আরও বেশি ভয় পাচ্ছি। যে হিন্দুত্ববাদ বিরোধী, ধর্মজিগির বিরোধী, বিজেপি-আরএসএস বিরোধী সহনাগরিকের উপর হয়তো এতদিন আস্থা রেখেছি, ভেবেছি একই রাজনৈতিক ভাবনার শরিক আজ দেখছি কত সহজে ন্যায়ের নামে সে/তারা রাষ্ট্র কর্তৃক লিঞ্চিং, খুনকে সমর্থন করছে। ব্যক্তির বর্বরতার বিরূদ্ধে রাষ্ট্রের বর্বরতা এই ন্যায় কী সত্যিই চাইছি আমরা?

 

আমাদের যে বন্ধুরা বিশেষত যদি মহিলা হন, তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় যে ভাবে ট্রোল করা হচ্ছে তা দেখলে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। কন্যাসন্তানের মা-বাবা বন্ধুরা যে কথাগুলি লিখছেন তা পড়লে গলার কাছে কি যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। আমি, আমরা যারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাইছি, হ্যাঁ রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে কথা বলছি, কাজ করছি তাদের যেসব প্রশ্নের সামনে পড়তে হচ্ছে এই খুনের প্রতিবাদ করায় তা চোয়াল শক্ত করছে। একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দেওয়া প্রয়োজন – জ্যোতি সিং-কে নির্ভয়া বানিয়ে লাভ নেই। তাকে মেরে ফেলা গেছিল। সোনি সোরি বেঁচে আছেন আর লড়ছেন। কুলদীপ সেঙ্গার-রা বুক চিতিয়ে ঘুরছে আর চারজন ধর্ষণে অভিযুক্ত ধরা পড়া মাত্রই এনকাউন্টারে মারা পড়ল। আমাদের চোখ এড়াচ্ছে না।

 

মহিলাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে এই বলিউডি পুলিসি তৎপরতার গল্পটা ভালভাবেই ছড়িয়ে দেওয়া গেছে। বহু প্রতিবাদী, প্রগতিশীল, মুক্তমনা মহিলারও অবস্থান গুলিয়ে দেওয়া গেছে। কিন্তু গ্রাম-শহর-মফস্বলের মেয়েদের লড়াইটা এত সহজে থামার নয়। কারণ তাদের প্রতিদিন একজন স্বাধীন, স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয় স্কুলছুট হয়ে যাওয়া, প্রাথমিক স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, নাবালিকা বিয়ে, স্বনির্ভর হতে না দেওয়ার চেষ্টা, পণের জন্য অত্যাচার-মেরে ফেলা, অ্যাসিড আক্রমণের মতো ঘটনার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে। প্রতিবন্ধী নারী, লিঙ্গ-যৌন পরিচয়ে তথাকথিত প্রান্তিক নারীদের যাপনের বাস্তবতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলেও বলা যায়, রাষ্ট্রের সন্ত্রাস, রাষ্ট্রের বেছে বেছে ন্যায় দেওয়ার চেষ্টা, নারীদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতার বিরূদ্ধে লড়াই ফেক এনকাউন্টার-এ স্তিমিত বা বন্ধ হবে না।

 

জ্যোতি-র সময়ে মিডিয়া প্রচার করছিল ‘আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা’– আমাদের মেয়ে বলে কিছু হয় না, তাদের সহনাগরিকের সম্মান দিতে শিখতে হয়। এখন তারা প্রচার করছে ‘নির্যাতিতা ন্যায় পেলেন’। এভাবেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের ‘এজেন্সি’ অগ্রাহ্য করে তাদের ‘প্রোটেক্টর’, রক্ষকের ভূমিকায় থাকতে চায় সব সময়ে।

 

চরম প্রভাবশালী বলিউডের তৈরি করা ‘ম্যায় তন্দুরি মুর্গ হো’ বা ‘মর্দানি’ কোনও বাক্সে বন্দী হতে রাজি নই আমরা। শুধু আশা রাখি, স্বপ্ন দেখি চিলি-র হাত ধরে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়া রাষ্ট্রবিরোধী মহিলা আন্দোলনের প্রবল রূপ যা পথঘাট স্তব্ধ করে দিচ্ছে, ‘আ রেপিস্ট ইন ইওর ওয়ে’-র সুর নিয়ে তা আমার দেশেও আসছে। ততদিন শুধু অপেক্ষা আর একা বা দল বেঁধে প্রাচীর গড়ে যাওয়া।

 

লেখক ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং স্বতন্ত্র সাংবাদিক 

 

Cover Image Courtesy: www.firstpost.com   

 

Share this
Leave a Comment