সারা দেশে প্রতিদিন ৩১ জন, প্রত্যেক মাসে ৯৪৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। তথ্যটি সদ্য প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো। জানাছেন তৃষ্ণিকা ভৌমিক।
ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) দুর্ঘটনাজনিত এবং আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান গত শুক্রবার প্রকাশ করেছে। ৩ বছর পর মোদি সরকার কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান (২০১৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত) প্রকাশ করলো। এনসিআরবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০১৬ সালে ১১,৩৭৯ কৃষক আত্মঘাতি হন, অর্থাৎ প্রত্যেক মাসে ৯৪৮ জন এবং প্রতিদিন ৩১ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে, লোকসভায় সরকারের তরফ থেকে প্রকাশিত বক্তব্য অনুযায়ী ১১৩৭০ কৃষকের আত্মহত্যা করার পরিসংখ্যানটি সামনে এলেও, তখন জানানো হয়েছিল এটি সম্পূর্ণ তথ্য নয়, এনসিআরবি চূড়ান্ত পরিসংখ্যান পরে প্রকাশ করবে।
২০১৫ সালে শেষ দুর্ঘটনাজনিত কারণ এবং আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল। সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়া কৃষকের সংখ্যা ১১,৩৭৯। ২০১৪ সালে ১২,৩৬০ জন এবং ২০১৫ সালে ১২,৬০২ কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যদিও এনসিআরবি কৃষক আত্মহত্যার কারণ সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।
ভারতবর্ষে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়া কৃষকের মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ, নারীদের আত্মহত্যার হার ৮.৬ শতাংশ। নারী-পুরুষ কৃষকের মৃত্যুর হারের এই ব্যবধানের অন্যতম কারণ সম্ভবত, অধিকাংশ নারী যারা অন্যের জমিতে কাজ করেন তাদের কৃষক হিসেবে বিবেচনাই করা হয়নি।
এনসিআরবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মহারাষ্ট্র আবারও কৃষক আত্মহত্যার নিরিখে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রে ৩,৬৬১ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়া কৃষকের সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৪,০০৪ এবং ৪,২৯১। তথ্যের অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্য একটি তথ্য অনুযায়ী মহারাষ্ট্রে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৫,৩৫৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটক। ২০১৬ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ২,০৭৯ জন এবং ১,৫৬৯ জন কৃষক আত্মঘাতী হন। তেলেঙ্গনায় ২০১৪ সালে ১,৩৪৭ জন এবং ২০১৫ সালে ১,৪০০ জন কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৫ সাল কৃষক আত্মহত্যা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত অবিচল থেকেছে। এনসিআরবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এ রাজ্যে কৃষকও আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে। ২০১৪ সালে ২৩০ জন কৃষক পশ্চিমবঙ্গে আত্মঘাতী হন। বিহারও এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ না করায় সরকারি খাতায় কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা সেখানেও শূন্য। কিন্তু বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় রাজ্যেই কৃষক আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এনসিআরবি যখন থেকে কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল অব্দি সরকারি হিসেব অনুযায়ী সারা দেশে ৩,৩৩,৪০৭ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।