পড়ুয়াদের এই অসহিষ্ণুতা, এই বিক্ষোভ অভিপ্রেতই ছিল।


  • September 21, 2019
  • (0 Comments)
  • 3042 Views

আরএসএসএর প্রত্যক্ষ তালিমে যে ছাত্র সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যার মুক্ত আলয়কে কয়েদখানায় পরিণত করতে চায় বাবুল সুপ্রিয় তাদের প্রতিনিধি। যারা রাষ্ট্রীয় রক্ষাকবচের বলে কোনোরকম শাস্তির ভয় ছাড়াই ইচ্ছেমাফিক পিটিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে দলিত, আদিবাসী, মুসলমানদের বাবুল সুপ্রিয় তাদের প্রতিনিধি। ছাত্রছাত্রীদের অধিকার রয়েছে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার। ধৈর্য হারানোর। লিখেছেন দেবাশিস আইচ

 

 

‘Patience,’ wrote Ambrose Bierce in the The Devil’s Dictionary (1906), is ‘a minor form of despair, disguised as virtue.’ Over the century India has seen a lot of this alleged virtue.

…positive changes have often occurred and yielded some liberation when remedying of ailments have been sought actively and pursued with vigour. Even the oppression of British colonialism ended only when Indian political impatience generated popular movements that made the Raj ungovernable.

– Amartya Sen, Jean Dreze in An Uncertain Glory. 

 

 

১৭ জানুয়ারি ২০১৭, হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করলেন। কেন আত্মহত্যা করলেন এই দরিদ্র, দলিত, মেধাবী ছাত্রটি? ঘটনার পরম্পরা বলছে, রোহিতকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোহিতের ২৫ হাজার টাকা মাসিক স্টাইপেন্ড বন্ধ করে দেয়। রোহিতের অপরাধ সে ছিল আম্বেদকর স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএসএ)-এর এক  নিত্যসরব প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব। হিন্দুত্ববাদী ব্রাহ্মণ শিরোমণিরা স্বাভাবিক ভাবেই তা ভালো চোখে দেখেনি। বিজেপি তখন কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবজা করা তাদের আশু লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল। দলিত আন্দোলন তাদের চোখের বিষ। হায়দরাবাদ ক্যাম্পাসের দখল নিতে আরএসএস তার ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-কে লেলিয়ে দিল। বাধল বিরোধ।

 

৩ অগস্ট ২০১৫, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোহিত সহ পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অভিযোগ, ১ অগস্ট এবিভিপি নেতা এন সুশীল কুমারকে তারা হেনস্থা করেছে। ১৭ অগস্ট তৎকালীন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্ডারু দত্তাত্রেয় রোহিতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির উদ্দেশ্যে লিখলেন, “হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়…সাম্প্রতিক অতীতে বর্ণবাদী, সন্ত্রাসবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধী রাজনীতির আখড়া হয়ে উঠেছে।” স্মৃতি ইরানি পরবর্তী তিন মাসে রোহিত ভেমুলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যকে পাঁচ-পাঁচবার লিখিত নির্দেশ পাঠান। ১৭ ডিসেম্বর ভেমুলা সহ চার ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়। ৩ জানুয়ারি বহিষ্কার অনুমোদিত হওয়ার পর পাঁচ ছাত্র হস্টেল ছেড়ে ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে অনশন শুরু করে। ১৭ জানুয়ারি হস্টেলেরই এক ঘরে ভেমুলার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়।

 

রোহিত ভেমুলার এই মৃত্যু কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণ্ডের কথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মনে রেখেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর যাদবপুর ক্যাম্পাসে রোহিত ভেমুলার নাম উচ্চারিত হয়েছে।

 

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কানাহাইয়া কুমারকে দেশদ্রোহীতার দায়ে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। এর পর গ্রেপ্তার করা হয় দুই ছাত্র নেতা উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। ঘটনার উৎপত্তি কাশ্মীরের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে এক সভাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ ওঠে এই সভায় একদল ছাত্র ভারত বিরোধী এবং কাশ্মীরের জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে স্লোগান দেয়। পরবর্তীতে আদালতে প্রমাণ হয়, মুখ বাঁধা স্লোগানকারীরা এবিভিপি’র সদস্য। যে স্লোগানের উল্লেখ করা হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলকে জুটিয়ে এনে প্রচার তুঙ্গে তোলা হয়েছে, কানাহাইয়া কুমার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তার সঙ্গে যুক্ত নয়। এটি এবিভিপি’র ষড়যন্ত্র। প্রথম থেকেই এই সভার বিরোধিতা করে এবিভিপি। বানচাল করার চেষ্টা চালায়। অবশেষে, দেশ বিরোধী স্লোগানের ধুয়ো তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও দিল্লি পুলিশের কাছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলিকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে লিখিত অভিযোগ জানায়। এবার আসরে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এবিভিপি’র প্রাক্তন সদস্য রাজনাথ দেশদ্রোহীতার মাত্রা চড়াতে অভিযোগ তোলেন যে লস্কর-ই-তৈবা কাশ্মীর সংক্রান্ত সভার মদতদাতা। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, যারা দেশ বিরোধী স্লোগান তুলেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, তাদের সহ্য করা হবে না। রেহাই পাবে না তারা। ট্যুইট করে এও জানিয়ে দেন, দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অতঃপর, আরএসএস, তাদের ছাত্র শাখা এবিভিপি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ষড়যন্ত্রের বলি হল তিন ছাত্র।

 

এই ঘটনায় দেশে বিদেশে রাজনৈতিক ও বিদ্বজ্জন মহলে, শিক্ষাঙ্গনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, ব্রিটিশ আমলে যে ভয়ানক দেশদ্রোহী আইন চালু হয়েছিল, সেই আইনে স্বাধীন দেশের ছাত্র নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কেন? বিরোধী ও ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে বাধা দিতেই এই আইনে গ্রেপ্তার করা হয় তিন ছাত্রকে এই ছিল তাঁদের মত।

 

সেদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল।

 

ক্ষমতায় এসেই শিক্ষাঙ্গন দখল করতে তৎপর হয়ে ওঠা সঙ্ঘ পরিবার প্রথম থেকেই সমস্ত অনৈতিক পদক্ষেপ শুরু করে। কখনো সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রককে ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান থেকে পরিচালন সমিতিতে আরএসএসপন্থী ব্যক্তিদের বসিয়ে দেওয়া। কখনো ছাত্র থেকে শিক্ষক, অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হতে থাকে এবিভিপি ক্যাডারদের। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শুরু হয় হামলা। কখনো তালপাতার সেপাইয়ের ভূমিকা নিতে থাকে পুলিশ-প্রশাসন, কখনো-বা অতিসক্রিয় গুন্ডাবাহিনীর। এক আতঙ্কজনক স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটাতেই আরএসএস শিক্ষাঙ্গন দখলে সচেষ্ট হয়। কেননা বিচারমূলক চিন্তাধারা, গণতান্ত্রিক বিরোধিতা, ছাত্রদের সক্রিয়তা ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের বহুত্ববাদীতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা। আরএসএস এই গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের চরম বিরোধী। তারা প্রাণভোমরাটিকে হত্যা করতে চায়।

 

  • অগস্ট ২০১৫। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে কিরোরি মল কলেজে ‘মুজফফরনগর আভি বাকি হ্যায়’ ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় এবিভিপি। ভয় দেখিয়ে, মারধর করে এমনই সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করে যে পরবর্তী আট মাস কলেজের ফিল্ম ক্লাব একটিও ছবি প্রদর্শন করতে পারেনি। এমনকী সেভেন সামুরাইও নয়।
  • একই বছরে দিল্লির খালসা কলেজে হিন্দুত্ব বিরোধী বলে অভিযোগ তুলে অঙ্কুর নাট্যগোষ্ঠীর পথনাটিকা প্রতিযোগিতা গাজোয়ারি করে বন্ধ করে দেয় এবিভিপি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২০১৬ সালেও।
  • ২০১৫ সালেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন সভাপতির নেতৃত্বে কুইন্ট-এর এক সাংবাদিককে চরম হেনস্থা করে টেনেহিঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অজুহাত ওই সাংবাদিক ছাত্র-ছাত্রীদের ‘যৌন বিষয়ক’ প্রশ্ন করছিলেন। নীতি পুলিশের জায়গিরদারি সেই থেকেই জাঁকিয়ে বসেছে ক্যাম্পাসে।
  • ডিসেম্বর ২০১৫। উদয়পুরের মোহনলাল সুখাদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পশ্চিমি পণ্ডিতদের রচনায় হিন্দুইজম’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যায়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অশোক ভোরা। সেখানে তিনি ভারততত্ত্ববিদ পল কোর্টনাইট ও ওয়েন্ডি ডোনিগারকে উদ্ধৃত করেন। এই অপরাধে এবং এবিভিপি’র অভিযোগের ভিত্তিতে রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে অধ্যাপক ভোরার বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
  • জানুয়ারি ২০১৬। সাংবাদিক সিদ্ধার্থ বরদারাজনকে ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয় এবিভিপি।
  • ফেব্রুয়ারি ২০১৬। রামজস কলেজে উমর খালিদের সভা পণ্ড। মরিস নগর থানায় ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ উলটে লাঠিচার্জ করে এবং ছাত্রদের আটক করে।
  • ২০১৬। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে ছাত্রদের মারধর, শিক্ষকদের হেনস্থা ক’রে আইসা’র ‘আইডিয়া অভ ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক সেমিনার পণ্ড করে দেয় এবিভিপি। পুলিশ এই ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্রদের অভিযোগ নেয়নি।
  • এই সময় লেডি শ্রীরাম কলেজে কমলা ভাসিন, অরুন্ধতী রায়, দিলীপ সিমিওনদের একের পর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত করতে দেয়নি হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠনটি।
  • ২০১৬’র জেএনইউ কাণ্ডের পর দেশ জুড়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সভা, সেমিনারের উপর এক রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবিভিপি। ফেব্রুয়ারি ২০১৭। যোধপুরের জয়নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখতে আসেন নিবেদিতা মেনন। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রাজশ্রী রানাওয়াতকে বরখাস্ত করে। অবশ্যই এবিভিপি’র প্ররোচনায়।
  • ২০১৭’র মার্চে রাঁচির ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জেএনইউ’র প্রাক্তন অধ্যাপক ও সমাজতাত্ত্বিক এম এন পাণিনি’র সেমিনারে বাধা দেওয়া হয়।
  • এই মার্চেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভগত সিং-এর উপর বক্তৃতা করতে এসে বাধা পান জেএনইউ’র প্রাক্তন অধ্যাপক চমনলাল।
  • ২০১৯। দিল্লির আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আনন্দ পটবর্ধনের ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় এবিভিপি’র সদস্যরা। একই সময়ে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছবির প্রদর্শনীতে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। আট-আটবার আক্রমণ শানানোর পরও ছবিটি প্রদর্শিত হয়। কলকাতার প্রেসিডেন্সিতে এই ছবিটি দেখাতে দেয় না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি শো-এর আয়োজন করেছিল।

 

২০১৬ সালে দিল্লিতে একের পর এক ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক হামলা, মারধর, ভয় দেখনোর প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করলে এবিভিপি’র এক শীর্ষ নেতা সাকেত বহুগুণা ওয়েব নিউজ পোর্টাল স্ক্রোলের সাংবাদিককে জানিয়েছিল, “বামপন্থীরা ধর্ম ও জাতপাত নিয়ে ক্রোধ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। মানুষ মনে করতে শুরু করেছে যে ওদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।”

 

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নির্যাতিত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অধ্যাপক সকলেই যে খুব বামপন্থী একথা মনে করার কোনো কারণ নেই। আসলে বুদ্ধির মুক্তি, মুক্তমন, শিক্ষার অবাধ মুক্ত পরিসর, বাক স্বাধীনতা, প্রতিবাদের স্বাধীনতা, অসহিষ্ণুতার স্বাধীনতাকে ঘৃণা করে ফ্যাসিস্তরা। বাবুল সুপ্রিয় এই ফ্যাসিস্ত খোঁয়াড়ের প্রতিনিধি। আরএসএস-এর প্রত্যক্ষ তালিমে যে ছাত্র সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যার মুক্ত আলয়কে কয়েদখানায় পরিণত করতে চায় তিনি তাদের প্রতিনিধি। বাংলার এই প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্ত পরিসরকামী বলেই তিনি বিক্ষোভের সম্মুখীন। যারা সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদী ও নিষ্ঠুর, যারা কাশ্মীরিদের বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে, বাবুল সুপ্রিয় তাদের প্রতিনিধি। এনআরসি’র ফাঁসে যারা কোটি কোটি মানুষকে দমবন্ধ করে হত্যা করতে চায়, বাবুল সুপ্রিয় তাদের প্রতিনিধি। যারা রাষ্ট্রীয় রক্ষাকবচের বলে কোনোরকম শাস্তির ভয় ছাড়াই ইচ্ছেমাফিক পিটিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে দলিত, আদিবাসী, মুসলমানদের বাবুল সুপ্রিয় তাদের প্রতিনিধি। অতএব ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার রয়েছে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার। ধৈর্য হারানোর।

 

দেশ জুড়ে মুঠো মুঠো বিস্ফোরক ছড়িয়েছে সঙ্ঘ পরিবার। বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছে। সেই বিস্ফোরণে শুধু আমভারতীয়ই মরবে আর বাবুল সুপ্রিয়দের গায়ে আঁচড়টি লাগবে না একথা মনে করার কোনো কারণ নেই।  যাদবপুরের পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে যে আলো ছড়িয়েছে, ভিন ক্যাম্পাসের আরও শত পড়ুয়াদের অংশগ্রহণে তা ‘নো এনআরসি’র দাবি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহানগরের রাজপথেও। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত এনআরসি ও নির্ভুল দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহের তাড়নায় পাঁচ জনের অকাল মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন আত্মঘাতী হয়েছেন। একজন মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যজন রাজবংশী। বাকিরা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁরা হয় মুসলমান কিংবা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ।

 

মহানগরের এই প্রতিরোধের আলোয় যেন আলোকিত হয় শ্রমজীবী আদিবাসী, দলিত, মুসলমান পল্লিগুলিও।

 

 

লেখক স্বতন্ত্র সাংবাদিক এবং সামাজিক কর্মী

 

All Images Courtesy Facebook Wall of Activists.

 

Share this
Leave a Comment