কাশ্মীর বন্দী। প্রায় এক মাস হতে চলল উপত্যকার সওয়া এক কোটি মানুষের উপর বন্দুকের নলের জোরে চাপিয়ে দেওয়া ভারতীয় ‘লক ডাউন’-এর। বন্ধ যাতায়াত, ফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বাণিজ্য, ঈদের নামাজ, রেশন এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহ ব্যবস্থা। বন্ধ সাংবাদিকতা। কারাবন্দী অথবা গৃহবন্দী কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতা – বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ভারত সমর্থক নির্বিশেষে। বিশেষজ্ঞদের মতে এতদিন ধরে এত বিশাল একটি জনজাতিকে এই ধরনের সম্পূর্ণ গণ-কারারুদ্ধ করে রেখে শাস্তি দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে অভূতপূর্ব।
কাশ্মীরের মানুষের কণ্ঠরোধ করার পাশাপাশি ভারতীয় জনমাধ্যমে লাগাতার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইতিহাসের নামে বিভিন্ন মিথ্যা এবং অর্ধসত্য। এই দিনপঞ্জিটি SOS Kashmir নামক কাশ্মীর থেকে চালিত একটি ব্লগে প্রকাশিত ইংরাজি টাইমলাইন-এর বাংলা অনুবাদ। এই অনুবাদটির মূল উদ্দেশ্য কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাসের মুখ্য ঘটনাপঞ্জিকে সাধারণ পাঠকের কাছে তুলে ধরা।
১৬ মার্চ ১৮৪৬: জম্মু কাশ্মীর প্রদেশ গঠন
প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে শিখ রাজত্বকে জরিমানা বাবদ শতলুজ এবং বিয়াস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল ইংরেজ শাসকের হাতে তুলে দিতে হয়। ইংরেজ শাসক অতঃপর এই অঞ্চলের শাসনভার তুলে দেয় গুলাব সিং নামক শিখ সামন্তরাজার হাতে। ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক গুলাব সিং ইংরেজ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করেছিলেন। ‘অমৃতসর চুক্তি’-র মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের এই বাণিজ্যিক ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয় ১৮৪৬ সালের ১৬ই মার্চ। গুলাব সিং হলেন কাশ্মীরের প্রথম ডোগরা রাজা।
Raja Gulab Singh’s Role in the First Anglo-Sikh War
১৮৪৬-১৯৪৭: শতাব্দীব্যাপি ডোগরা রাজত্ব
ইংরেজদের থেকে কাশ্মীরকে মাত্র ৭৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কেনার মাধ্যমে পুরনো শিখ সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট থেকে জন্ম নেয় ডোগরা শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য।
কিছু সময়ের মধ্যেই ব্রিটিশ শাসকের স্নেহধন্য ডোগরা শাসকশ্রেণী উত্তরোত্তর ঘৃণিত হয়ে উঠতে থাকে কাশ্মীর উপত্যকার মানুষের কাছে। নিজেদের প্রদেশের প্রশাসন, পরিচালন থেকে বঞ্চিত সাধারণ কাশ্মীরী মানুষ বহিরাগত শাসকের শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করেন।
এই বিচ্ছিন্নতাবোধ চরম আকার ধারণ করে ১৯৩১ সালে। ১৩ই জুলাই শ্রীনগর কেন্দ্রীয় জেলের সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষ জমা হন আব্দুল কাদির খান গাজি-র বিচার চাক্ষুষ করার জন্য। আব্দুল কাদিরকে গ্রেপ্তার করা হয় সন্ত্রাসবাদের অপরাধে – মূল অভিযোগ: ডোগরা শাসনের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করা।
চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ জমা হন আব্দুল কাদিরের বিচার দেখার জন্য। বৈকালিক প্রার্থনার জন্য তাঁরা যখন জড়ো হচ্ছেন, সেই সময় এসে পৌঁছন জেলাশাসক এবং উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। সরকারি প্রতিনিধিদের দেখতে পেয়ে জমায়েত হওয়া মানুষজন স্লোগান তোলেন এবং সাথে সাথে শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। প্রত্যুত্তরে ক্ষিপ্ত জনগণ পাথর এবং ইঁট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। শুরু হয় জনতা এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ। গভর্নর তুরলক চাঁদ ডোগরা সৈন্যদের আদেশ দেন গুলি চালাতে। পুলিশের গুলিতে ওইদিন নিহত হন অন্তত ২১ জন কাশ্মীরি মুসলমান।
13 July 1931: A Chapter of Kashmir
Kashmir Martyrs’ Day: Everything about Kashmir’s July 13 carnage
Dogra raj in Kashmir
১৯৪৬: গনতন্ত্রের জন্য লড়াই – ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং শেখ আবদুল্লা
১৪ই মে ১৯৪৬-এ শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে শুরু হয় ডোগরা রাজা হরি সিং-এর শাসনের বিরুদ্ধে “কাশ্মীর ছাড়ো” আন্দোলন। আন্দোলনকারীদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ হানেন মহারাজ। ২২শে মে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে অন্তত ২০ জন মানুষ প্রাণ হারান, ৩০০ জন কারাবন্দী হন।
Quit Kashmir Movement 1946
The Rise of Kashmiriyat: People-Building in 20th Century Kashmir
১৯৪৭: সাম্প্রদায়িক জুলুম এবং পুঞ্চ বিদ্রোহ
জম্মু-কাশ্মীর মহারাজ হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তান – কোন্ দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে চান ঠিক করতে না পেরে উভয় দেশের সাথে “স্ট্যান্ডস্টিল চুক্তি” সই করেন। ১৯৪৭-এর অক্টোবর-এ হরি সিং-এর সৈন্য কাশ্মীরি মুসলমানদের নৃশংস গণহত্যা করে, এবং বহু মানুষকে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য করে। দুই মাস ব্যাপী এই সুপরিকল্পিত গণহত্যায় প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন হিসাব পাওয়া যায়। ‘দ্য স্পেক্টেটর’-এর হোরেস অ্যালেক্সান্ডার তাঁর ১৬ই জানুয়ারী ১৯৪৮ তারিখের রিপোর্টে দাবী করেন এই গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। টাইম্স লন্ডন-এর ১০ই অগাস্ট ১৯৪৮-এর রিপোর্টে লেখা হয়, “২৩৭,০০০ মুসলমানকে পরিকল্পিতভাবে স্থানচ্যুত করা হয় এবং পাকিস্তান চলে যেতে বাধ্য করা হয়…”।
কিন্তু সকলে পায়ে হেঁটে পাকিস্তান অবধি পৌঁছোতে পারেননি। পাকিস্তানমুখী বহু মানুষকে ডোগরা সৈন্যদল রাজৌরির জঙ্গলে ঠেলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তৎকালীন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ মুসলমান মানুষের মৃত্যু হয় এই হত্যাকাণ্ডের পরিণামে।
চরম অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ’৪৭-এর গণহত্যা জন্ম দেয় সশস্ত্র বিপ্লবের। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৫০,০০০ ‘পুঞ্চি’ মানুষ হরি সিং-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। স্থানীয় মানুষের এবং ঝিলম-এর অন্য পাড় থেকে সাহায্যের সূত্রে পুঞ্চের বিপ্লবীরা ডোগরা সেনাকে পরাস্ত করেন। তাদের অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং গোটা এলাকাকে ডোগরা শাসন থেকে মুক্ত করা হয়। এই পুঞ্চ বিদ্রোহের সাহায্যার্থেই পাখতুন আদিবাসীরা জম্মু কাশ্মীর প্রদেশ আক্রমণ করেন।
The forgotten Poonch uprising of 1947
Jammu – The Forgotten Genocide
The forgotten massacre that ignited the Kashmir dispute
Poonch rebellion, not tribal raid triggered 1947 Kashmir conflict: Book
১৯৪৭: অস্থায়ী সংযোজন এবং প্রথম ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ
পাকিস্তানি আদিবাসী বাহিনীর আক্রমণ, এবং পাকিস্তানে কাশ্মীরের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ভারতের থেকে সামরিক সাহায্য নেওয়ার জন্য হরি সিং-কে রাজি করান শেখ আবদুল্লা।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয় সামরিক সাহায্য পাঠানো হবে, একমাত্র যদি জম্মু ও কাশ্মীর ভারতে অন্তর্ভুক্তির চুক্তি সই করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর তরফ থেকে এই সংযোজন চুক্তি (Instrument of Accession)-র বিভিন্ন শর্তাবলী নিয়ে মধ্যস্থতা করেন নেহেরুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ আবদুল্লা।
চুক্তিসাক্ষর হয় ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭। ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সেনা পাখতুন আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। শুরু হয় প্রথম ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। শেষ হয় ১৩ অগাস্ট ১৯৪৮-এ জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মাধ্যমে। জাতিসংঘে এই প্রস্তাব সরকারিভাবে গৃহীত হয় কিছু পরে, ৫ই জানুয়ারী ১৯৪৯ তারিখে।
[চুক্তি অনুযায়ী] সদ্যোজাত ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের দেশজ নেতৃত্ব এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন – যিনি তখনও অলিখিতভাবে ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় যথেষ্ট ক্ষমতাশালী – রাজি হন যে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কাশ্মীরিরাই। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ তারিখে নেহেরু পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীকে টেলিগ্রাম করে বলেন যে, “[আমি] স্পষ্ট করে দিতে চাই যে কাশ্মীরকে মদত দেওয়ার পিছনে জোর করে প্রদেশটিকে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত করার কোনও অভিসন্ধি [আমার] নেই”। এই বিষয়ে নির্ণয় নেওয়া হবে কাশ্মীরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। পরবর্তীকালে ভারতীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বেশ কয়েকবার এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করা হয়।
The Backstory of Article 370: A True Copy of J&K’s Instrument of Accession
Kashmir in retrospect
১৯৫১-১৯৫৭: জম্মু কাশ্মীর সংবিধান-সভা
৩১ অক্টোবর ১৯৫১ তারিখে গঠিত হয় জম্মু কাশ্মীরের সংবিধান সভা। ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭ তারিখে জন্ম নেয় জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান। [সভার অন্যতম সদস্য] মীর কাসিমের ১৭ নভেম্বর ১৯৫৬ তারিখে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই একই দিনে জম্মু কাশ্মীর সংবিধান সভা রদ করা হয়।
১৯৫৩: নেহেরুর বিশ্বাসঘাতকতা, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু, “কাশ্মীর ষড়যন্ত্র” মামলা
জম্মু ও কাশ্মীরের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’-এর প্রশ্নে ভারতবর্ষ ইতিমধ্যেই বিশ্বাসঘাতকতা করছে – এই অভিযোগ তুলে ১৯৫৩ সালে শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরে বেশ কিছু জনসভা করেন, যার ফলে দিল্লী নড়েচড়ে বসে। এর কিছু সময় পরেই আবদুল্লাকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তারপর কারাবন্দী করা হয়।
প্রায় এক-ই সময়, ১৯৫৩ সালের জুন মাসে, কাশ্মীরে কারারুদ্ধ অবস্থায় মারা যান হিন্দুত্ববাদী নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’-এর মুখর সমালোচক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এর পর থেকেই ভারতীয় জনসঙ্ঘ, এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় জনতা পার্টি, শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনকে দায়ী করে এসেছে।
শেখ আবদুল্লাকে ১৯৫৮র জানুয়ারিতে অল্প সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হলেও পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু তিনি একা নন। কাশ্মীর সরকার এবং ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ উদ্যোগ “কাশ্মীর ষড়যন্ত্র” মামলায় শেখ আবদুল্লার সাথে সাথে গ্রেপ্তার হন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহায়ক আফজল বেগ এবং অন্যান্য ২২ জন।
August 9, 1953: Why Sheikh Abdullah was removed?
Sheikh Abdullah, A CIA Profile
Shyamaprasad Mukherjee had “supported” Kashmir autonomy, opposed Quit India
১৯৫৩-১৯৭৭: বকশি, সামসুদ্দিন, সাদিক, কাসিম (জম্মু কাশ্মীরের উত্তরকালীন প্রধানমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রীর তালিকা)
ডোগরা রাজা হরি সিং -এর ছেলে এবং জম্মু কাশ্মীরের ‘হেড অফ দ্য স্টেট’, করণ সিং-এর সাথে হাত মিলিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক নেতা শেখ আবদুল্লাকে সরিয়ে দিয়ে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হস্তগত করেন [নেহেরু, এবং দিল্লীর, অন্যতম ঘনিষ্ঠ] বকশি গুলাম মহম্মদ। ১০ বছর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী পদ অধিকার করে থাকেন তিনি। ১৯৫৫ সালে শেখ আবদুল্লার সহায়ক মির্জা আফজল বেগ ‘প্লেবিসাইট ফ্রন্ট’ নামক পার্টি গঠন করেন। প্লেবিসাইট ফ্রন্ট-এর মূল দাবী ছিল জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী গণভোটের মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হোক। ১৯৬৩-র নির্বাচনে পরাজয়ের ফলে বকসিকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে পার্টির কাজে নিযুক্ত করেন নেহেরু। সিংহাসনে বসেন বকশির ঘনিষ্ঠ, খ্বাজা সামসুদ্দিন। এই সামসুদ্দিনের রাজত্বকালেই কাশ্মিরের হজরতবল দরগা থেকে চুরি যায় মই-এ-মুকাদ্দাস (নবীর অবশেষ)।
’৬৪র নির্বাচনের পর জম্মু কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী পদ অধিকার করেন কংগ্রেস প্রার্থী গুলাম মহম্মদ সাদিক। বকশি হয়ে দাঁড়ান প্রধান বিরোধী নেতা। সাদিক-মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার শাস্তিস্বরূপ ‘ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া’ আইনে গ্রেফতার হন বকশি, যদিও জম্মু কাশ্মীর বিধানসভায় বহুমত ছিল তাঁর। রাজ্যপাল বিধানসভাকে স্থগিত রাখেন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই অবশ্য সাদিক পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল হন।
১৯৬৫-এর ৩০ মার্চ জম্মু কাশ্মীর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদটিকে ‘মুখ্যমন্ত্রী’-তে বদলানো হয়, এবং এর পর সাত বছর গুলাম মহম্মদ সাদিক জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বহাল থাকেন। সাদিকের পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলান মীর কাসিম (১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ – ২৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৫)।
Roots of the Kashmir dispute
Article 370: Law and politics
শেখ আবদুল্লা এবং ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে চুক্তি সাক্ষর হয় ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ তারিখে। ঐতিহাসিক মতভেদকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিল্লীর সাথে সমঝোতা করে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদে ফের বহাল হন শেখ আবদুল্লা। ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকার গঠন করে, কংগ্রেসের বাহ্যিক সমর্থনের সাহায্যে।
Kashmir: Sheikh Abdullah’s Reinstatement
১৯৮২: শেখ আবদুল্লার মৃত্যু এবং ফারুক আবদুল্লার উত্থান
৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৮২ তারিখে পরলোক গমন করেন শেখ আবদুল্লা। সকলকে অবাক করে শেখ তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তুলে দেন সন্তান ফারুক আবদুল্লার হাতে, যদিও জামাই জি.এম. শাহ ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিনিধি।
There is no way that the National Conference will promote corruption: Farooq Abdullah
The Rise and Fall of Democracy in Jammu and Kashmir
১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ তারিখে কাশ্মীরের ‘বাবা-এ-কৌম’ (জাতির জনক) মকবুল ভাটের ফাঁসি হয়। ‘আজাদ কাশ্মীর প্লেবিসাইট ফ্রন্ট’-এর সাথে যুক্ত থাকার মাধ্যমে, এবং পরবর্তীকালে আমানুল্লা খানের সাথে ‘ন্যাশনাল লিবারেশান ফ্রন্ট’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মকবুল কাশ্মীরি প্রতিরোধের জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন। ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকতে গিয়ে ১৯৭৬ সালে গ্রেফতার হন মকবুল। তথাকথিত ‘কাশ্মীর লিবারেশান আর্মি’ (KLA) মকবুল ভাটকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৪-র ৩রা ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্র মহাত্রে নামে এক ভারতীয় কূটনীতিবিদকে মুক্তিপণ হিসেবে ইংল্যান্ডের বার্মিংহ্যাম থেকে অপহরণ করে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে, ৬ ফেব্রুয়ারী রবীন্দ্রর মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। এর প্রত্যুত্তরে, ১১ই ফেব্রুয়ারী ভারতীয় আদালতের হুকুম অনুযায়ী মকবুলকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আজ পর্যন্ত মকবুল ভাটের দেহাবশেষ তিহার জেলের ভিতরে সমাহিত। ফাঁসির একদিন আগে পর্যন্তও মকবুলের ফাঁসির নির্দেশ তাঁর পরিবার বা উকিলকে জানানো হয়নি। এমনকি ফাঁসির দিন শেষবারের মতো দেখা করতে আসার পথে মাঝ রাস্তায় আটকে দেওয়া হয় তাঁর ভাইকে।
Bring Him Back [Trailer]
Last Days of Maqbool Bhat
JKLF remembers Maqbool Bhat, seeks his mortal remains
Brutal killing of Indian diplomat Ravindra Mhatre resurrects Kashmir issue once again
১৯৮৪: জগমোহনের আগমন এবং জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা ভঙ্গ
১৯৮৪ সালে জগমোহন মালহোত্রা জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল পদে বহাল হন। এর কিছু পরেই ন্যাশনাল কনফারেন্সের একটি অংশ জি.এম. শাহ-এর নেতৃত্বে পার্টি পরিত্যাগ করেন, যার ফলে ফারুক আবদুল্লা সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
এর পর কংগ্রেস-এর সমর্থনের ভিত্তিতে জি.এম. শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে শাহকে সিংহাসন ছাড়তে হয়।
1984: Why Indira Dismissed Farooq?
১৯৮৭: মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট এবং রাজ্য নির্বাচন
১৯৮৭-র রাজ্য নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জামাত-এ-ইসলামির নেতৃত্বে তৈরি হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত ‘মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট’ নামের নির্বাচনী জোট। কিন্তু নির্বাচন রিগিং ক’রে জয়লাভ করে ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স, ‘ইউনাইটেড ফ্রন্ট’-কে হারিয়ে।
কাশ্মীরে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের বর্তমান ইতিহাসের পেছনে মুখ্য ভূমিকা ’৮৭-র এই ভুয়ো নির্বাচনের। জেল থেকে মুক্তির পরে ১৯৮৯’এ ইউনাইটেড ফ্রন্ট-এর আমিরাকাদাল প্রার্থী মহম্মদ ইয়ুসুফ পাকিস্তানের হিজবুল মুজাহিদ্দিনে যোগ দেন।
How Mufti Mohammad Sayeed Shaped the 1987 Elections in Kashmir
How The 1987 Elections Shook The Faith Of The Kashmiri People In Indian Democracy
The 23rd March 1987, the day that changed Kashmir as never before
১৯৮৯: সশস্ত্র বিপ্লবের সূত্রপাত এবং রুবাইয়া সঈদ-এর অপহরণ
নির্বাচন রিগিং-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী ও ধর্মঘটে ফেটে পড়ে কাশ্মীর। ১৯৮৯-র শুরুতে ‘জম্মু কাশ্মীর লিবারেশান ফ্রন্ট’ কথিত ভাবে ১০ জন ভারতীয় গুপ্তচরকে হত্যা করে। এরপর ডিসেম্বরে তৎকালীন ভারতীয় গৃহমন্ত্রী মুফতি সঈদ-এর মেয়ে রুবাইয়া সঈদকে অপহরণ করে জেকেএলএফ। মুক্তিপণ-এর দাবী ছিল ভারতীয় জেলে বন্দী ১০ জন কাশ্মীরি রাজদ্রোহীর মুক্তি। এরপর রুবাইয়া সঈদ-এর মুক্তির বিনিময়ে ১০ জন বন্দীর মুক্তিকে কাশ্মীরি সশস্ত্র বিদ্রোহের ইতিহাসে প্রতীকি হলেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জয়ের মুহূর্ত বলে গণ্য করা হয়।
Mufti Sayeed’s dark hour: Militants released for abducted daughter
১৯৯০: জগমোহনের দ্বিতীয় দফা, ফারুক আবদুল্লার পদত্যাগ এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রস্থান
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা কেন্দ্র সরকারকে শাসিয়ে রেখেছিলেন যে জগমোহন মালহোত্রাকে দ্বিতীয় বার রাজ্যপাল করা হলে তিনি ইস্তফা দেবেন। মালহোত্রার প্রথম দফায় আবদুল্লার সরকার-পতনের স্মৃতি তখনো টাটকা।
অথচ সেই জগমোহনকেই দ্বিতীয়বার কাশ্মীরের রাজ্যপাল মনোনীত করা হয়। প্রতিবাদে ফারুক আবদুল্লা পদত্যাগ করেন। এর পর ১৯ জানুয়ারী ১৯৯০ জম্মু কাশ্মীরে রাজ্যপাল শাসন ঘোষণা করা হয়।
সরকারহীন জম্মু কাশ্মীর প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন ১৯৭৬-এ সঞ্জয় গান্ধীর কুখ্যাত ‘তুর্কম্যান গেট ম্যাসাকারের’ অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি জগমোহন মালহোত্রা। মোট ১২৭ দিন অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে অবশেষে পদত্যাগ করার আগে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কাশ্মীর ছেড়ে জম্মু এবং ভারতবর্ষের অন্যত্র সদলে প্রস্থান করায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন রাজ্যপাল জগমোহন মালহোত্রা। ইতিহাসবিদ মহম্মদ ইয়ুসুফ তাইং-এর মতে “ভিতরের লোকে বিশ্বাস করে উনিই [পণ্ডিতদের] দেশান্তর করান।”
জগমোহনের নিয়োগের ঠিক পরের দিন ঘটে কাশ্মীরের আধুনিক ইতিহাসে বৃহত্তম গণহত্যা – গওকাদাল গণহত্যা। যদিও সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র ৪০ জনের মৃত্যুর দাবি করা হয়, অন্যান্য বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী [যেমন, বিশ্ব প্রবাসী কাশ্মীরি জোট] মৃতের সংখ্যা অন্তত ২০০।
Governor’s Rule in Jammu and Kashmir: Residents recall Jagmohan Malhotra’s 1990 reign with fear, horror
Why Kashmiris are using the hashtag #JagmohanTheMurderer after the Padma award announcement
The lone survivor
Feature: The day before the Gaw Kadal Massacre: What happened inside cordoned Chota Bazaar?
Gaw Kadal massacre painful reminder of huge human cost Kashmiris pay under forcible control: Mirwaiz
The Forgotten Massacres of Kashmir
২৩শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯১ তারিখে চতুর্থ রাজপুতানা রাইফেলস এর সশস্ত্র বাহিনী ‘কর্ডন অ্যান্ড সার্চ’-এর নামে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুনান ও পোশপোরা – দুটি গ্রামের উপর। মোট ১৫০ জন মহিলাকে যৌন হেনস্থা করা হয়। পুরুষদের বাড়ির ভিতর থেকে জোর করে বার করে এনে অত্যাচার করা হয়। অন্তত ৩১ জন মহিলাকে ওই রাতে গণধর্ষণ করা হয়।
Do You Remember Kunan Poshpora?
26 Years After Kunan Poshpora, Army Still Enjoys Immunity For Sexual Violence
All These Years Later, Do Not Forget the Kunan-Poshpora Mass Rapes
১৯৯০-১৯৯৬: জঙ্গি আন্দোলন এবং কাশ্মীরে পাকিস্তানের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি
কাশ্মীরে জঙ্গি আন্দোলনের প্রথম দফায় মূল নেতৃত্ব ছিল জেকেএলএফ-এর। এই আন্দোলনে শুরুতে পাকিস্তানের আংশিক মদত ছিল। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই জেকেএলএফকে ছেড়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্র হিজবুল মুজাহিদ্দিন এবং লস্কর-এ-তইবার মতো নিজস্ব [পাকিস্তান ভিত্তিক] জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে কাশ্মীরের আন্দোলনে নিজের প্রবেশপথ তৈরি করে।
১৯৯০-১৯৯৬: ৬ বছর ব্যাপী রাষ্ট্রপতি শাসন
পূর্ববর্তী রাজ্যপালের শাসনকে সম্প্রসারিত করে ৬ বছরের জন্য কাশ্মীরকে রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে নিয়ে আসা হয় – গণ অভ্যুত্থানকে দমন করাই ছিল কাশ্মীরে ভারত সরকারের এই সময়ের প্রধান নীতি। এই ছ’বছরব্যাপী সময়ে কাশ্মীর থেকে আসতে থাকে অগুনতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট। গওকাদাল গণহত্যা, তেংপোরা গণহত্যা, বিজবেহারা গণহত্যা, কুনান পোশপোরার গণধর্ষণ, গণঅন্তর্ধান এবং অত্যাচার – এই ছ’বছরের ইতিহাসের প্রত্যেক পাতায় পাওয়া যায় এমন সব ঘটনা।
Under Jagmohan, Jammu and Kashmir entered a period of unfettered repression
INDIA: Human rights abuses in the election period in Jammu and Kashmir
রামাদানের সবচেয়ে পবিত্র রাত – শব-এ-কদর-এর রাতে ওয়ান্ধামায় হত্যা করা হয় পণ্ডিতদের। মধ্য কাশ্মীরের গান্দেরবাল জেলায় ভারতীয় সেনার পোশাক পরে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের মহল্লায় ঢোকে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি। ছলপূর্বক কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ঘরে ঢুকে হত্যাকারীরা চা পান করে, এবং এরপর ঠাণ্ডা মাথায় ২৩ জন পণ্ডিতকে গুলি করে হত্যা করে।
1998 Wandhama Massacre: When 23 Kashmiri Pandits were killed in the dead of night
21 years later, Wandhama massacre’s “untraceable” closure still evokes conflicting memories
২০০০: ছত্তিসিংপোরা গণহত্যা এবং পাথরিবাল ফেক এনকাউন্টার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে ১৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার একটি শিখ গ্রাম আক্রমণ করে ৩৬ জন শিখকে হত্যা করে। সরকারি তদন্তে যদিও লস্কর-এ-তইবা-কে হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এই হামলার পিছনে কারা – তাই নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় আছে।
এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে পাথরিবাল ফেক এনকাউন্টার-এর, যেখানে ৫ জন গ্রামবাসীকে লস্কর-এ-তইবা মদদপুষ্ট পাকিস্তানি জঙ্গি বলে খুন করা হয় লালকৃষ্ণ আদবানির ছত্তিসিংপোরা সফরের ঠিক আগে। ছত্তিসিংপোরা গণহত্যার ২০ বছর বাদেও আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের পরিবার তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর, অথবা ন্যায়বিচার – কোনওটাই পাননি।
Seventeen Years On, SC Notice on Pathribal Fake Encounter Brings Little Hope of Justice to Victims’ Families
Jammu & Kashmir: Massacres and mysteries
Kashmir: Chattisinghpora Massacre – Sikh Body Dismayed Over Delay In Justice
Chittisinghpura massacre
২০০১: ভারতীয় পার্লামেন্টে সশস্ত্র আক্রমণ
২০০১-এর ১৩ই ডিসেম্বর একটি গাড়িবোমা নিয়ে ভারতের সংসদ ভবন চত্বরে ঢুকে রক্ষীদের উপর গুলিবর্ষণ করে পাঁচ জন সশস্ত্র জঙ্গী। এই সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ৫ জঙ্গি, 8 জন সুরক্ষা কর্মী, এবং একজন পথচারী। ঘটনার দু’ দিন পরে আফজাল গুরু, এস এ আর গিলানি এবং শউকাত গুরু-কে গ্রেপ্তার করা হয়। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তিন জনের ফাঁসির হুকুম দেয়।
পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট গিলানি এবং শাউকাত গুরুকে বেকসুর খালাস দেয়। কিন্তু আফজাল গুরুর ক্ষেত্রে তিনটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দু’ দফায় ফাঁসির হুকুম হয়।
Indian parliament attack kills 12
২০০২: রাজ্য নির্বাচন এবং পিডিপি গঠন
১৯৯৬ সালে রাজ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্স ক্ষমতায় আসার পর জম্মু কাশ্মীর কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা এবং ভি পি সিং সরকারের গৃহমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সাঈদ ‘পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন।
২০০২-এর রাজ্য নির্বাচন-এর পর জোট সরকার গঠন করে পিডিপি এবং কংগ্রেস। জোটের চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকেন মুফতি মহম্মদ সাঈদ এবং পরের ৩ বছর কংগ্রেসের গুলাম নবী আজাদ।
Is Mufti Sayeed’s PDP a creation of the National Democratic Alliance?
The Collaborator: How Mufti Mohammad Sayeed became Delhi’s man in Kashmir
National Conference of Jammu and Kashmir
২০০৮: অমরনাথ ভূমি সংঘর্ষ এবং দ্বিতীয় ইন্তিফাদা
তীর্থযাত্রীদের আশ্রয়স্থল তৈরি করার জন্য অমরনাথ শ্রাইন বোর্ড-কে ৪০ হেক্টর বনভূমি দেওয়ার ঘোষণা করে কংগ্রেস রাজ্য সরকার। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ঘোষণা ছিল রাজ্যের জনতত্ত্ব বদলে দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টার অঙ্গ। ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ৩৭০-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই সরকারি পদক্ষেপ ছিল জম্মু কাশ্মীরের দেশীয় জনসমাজের অধিকার খর্ব করার লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ।
এর প্রতিবাদে পরবর্তী কয়েক মাস ধরে চলে উপত্যকা ব্যাপী প্রতিরোধ এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রতিরোধকারীদের মৃত্যু। মুফতি সাঈদ জোট সরকার থেকে সমর্থন ফিরিয়ে নেন। সরকার ভেঙে যায়।
The Rise of Kashmir’s Second ‘Intifada’
Amarnath Yatra: A Militarized Pilgrimage
Human Rights Reports by JKCCS
Land protests shut down Kashmir
Views on Kashmir land row
শোপিয়ান অঞ্চলের একটি খালে দু’জন মহিলার মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। জানা যায় একই পরিবারের এই দু’জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে ভারতীয় সেনা। এই মামলায় তদন্ত পদ্ধতি এবং স্বাক্ষ্যপ্রমাণ বিকৃতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে শুরু থেকেই। গোটা ‘তদন্ত’টি জনসমক্ষের আড়ালে রাখা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ এবং তার উপর যথাযথ তদন্তের অভাবে কাশ্মীরের মানুষ রাগে ফেটে পড়েন। প্রবল জনরোষ সত্ত্বেও দৃঢ় তদন্ত চালানোর বদলে ভারত সরকার মামলার সাথে জড়িত তথ্য সূত্র আরও গোপনীয় করে ফেলতে সক্রিয় হয়। এবং পাশাপাশি আক্রমণ শানানো হয় প্রতিরোধকারী জনগণের বিরুদ্ধে। ফল: মৃত্যু, কারফিউ এবং আর যা যা ‘স্বাভাবিক’ রোজকার কাশ্মীরে।
Human Rights Reports by JKCCS
Deaths provoke Kashmir protests
Get to the truth on Shopian
২০১০: মাছিল ফেক এনকাউন্টার এবং আন্দোলনের গ্রীষ্ম
সৈনিকদের গুলিতে খুন হলেন কুপওয়ারা অঞ্চলের মাছিল এলাকার ৩ জন, “বিদেশি সন্ত্রাসবাদী” অভিযোগে।
পরে জানা যায় এঁরা আসলে বারামুলার বাসিন্দা। চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বারামুলা থেকে এঁদের কুপওয়ারা নিয়ে আসেন এক পুলিশকর্মী। কুপওয়ারায় ৩ জনকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় কিছু হাজার টাকার বিনিময়ে। এই ঘটনার ফলে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উপত্যকা, আন্দোলন চলে সারা গ্রীষ্মকাল জুড়ে।
Human Rights Reports by JKCCS
Six Army men sentenced to life in Machil fake encounter case
আফজাল গুরুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ২০০৫ সালে। এই ফাঁসির অধ্যায় জুড়ে ছড়িয়ে আছে মিথ্যাচার, ধাপ্পাবাজি এবং বিচারবিভাগীয় চক্রান্ত – আফজাল গুরুকে যথার্থ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
কোর্ট নিযুক্ত বিচার আধিকারিক আফজালের সাথে কারাগারে সাক্ষাত পর্যন্ত করেননি বলে অভিযোগ। আফজাল-এর পক্ষের সাক্ষীদের কোর্টে শমন দেওয়া হয়নি, পাল্টা জেরা করা হয়নি সরকারি পক্ষের সাক্ষীদের। মামলার বিভিন্ন তথ্য সাজানো হয় বলে অভিযোগ। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয় গোটা মামলাটির প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের মিথ্যা প্রচার নিয়ে। এই সমস্ত কারণে আফজাল গুরুর বিচারের আইনি নিরপেক্ষতা নিয়ে মৌলিক স্তরে প্রশ্ন ওঠে, এবং ভারতীয় রাজনীতির বামপন্থী এবং মধ্যপন্থী দলগুলিও এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
The hanging of Afzal Guru is a stain on India’s democracy
২০১৪-২০১৬: বিজেপির উত্থান, পিডিপি-বিজেপি জোট
২০১৪ সালে লোকসভায় ঐতিহাসিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। রাজ্যে হেরে যায় ওমার আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স। ৩টি করে আসন পায় বিজেপি এবং পিডিপি। মার্চ ২০১৫-এ জম্মু কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন মুফতি মহম্মদ সাঈদ, বিজেপির সাথে জোট বেঁধে।
ইতিহাসে প্রথমবার রাজ্য সরকারে ক্ষমতায় আসে বিজেপি।
Was the PDP-BJP coalition Mufti Mohammad Sayeed’s biggest miscalculation?
Timeline Of BJP-PDP Alliance In Jammu And Kashmir
BJP-PDP seal deal on forming govt. in J&K
২০১৬: মুফতি সাঈদের মৃত্যু এবং জম্মু কাশ্মীরের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি
দিল্লীতে ৭ই জানুয়ারি তারিখে বয়সজনিত কারণে মৃত্যু হয় ৭৯ বছর বয়স্ক মুফতি সাঈদের। শুরুতে আপত্তি জানালেও অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর পদ অধিকার করেন মুফতি সাঈদের কন্যা মেহবুবা মুফতি – জম্মু কাশ্মীরের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
J&K Chief Minister Mufti Mohammad Sayeed dead
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল জনপ্রিয় হিজবুল মুজাহিদিন বিপ্লবী নেতা বুরহান ওয়ানিকে অনন্তনাগ জেলার কোকেরনাগে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বুরহানের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিরামহীন প্রতিরোধ কর্মসূচীতে ফেটে পড়ে কাশ্মীর। উপত্যকাব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন কিছুদিনের মধ্যেই চেহারা নেয় ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী জনবিপ্লবে। বুরহানের হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মধ্যে খুন করা হয় আরও অন্তত ৫০ জনকে। অগুনতি মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এই মৃত্যুমিছিলের প্রতিবাদে। এই সব মিছিলেও গুলি চালায় সেনা, নতুন নতুন মুখ শহীদ হন, প্রতিবাদে ফের রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ।
জুলাই মাসে কাশ্মীরে দানা বেঁধে ওঠে ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার স্বাধীনতা আন্দোলন।
India’s crackdown in Kashmir: is this the world’s first mass blinding?
The Rise of Burhan
Season of Discontent
The Iron Cage: Why the Indian state is failing in Kashmir
বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার শুরু থেকেই নানা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলছিল। বিভিন্ন শাসননীতিগত প্রশ্নে, বিশেষত “জঙ্গি দমন” প্রশ্নে, দুই পার্টির মধ্যে শুরু থেকেই নানা মতান্তর ছিল। শুরুতে জঙ্গি দমনের প্রশ্নে বিজেপির ‘লৌহ মুষ্টি’ নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে পিডিপি নেতৃত্ব। এর ফলে শুধু সংগ্রামী আন্দোলনকারীদের নয়, সাধারণ মানুষেরও গ্রেপ্তারি এবং খুনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ক্ষোভ।
একটা সময়ের পর মেহবুবা মুফতি এই দমন নীতির বিরোধিতা করলে তাঁকে “সফট সেপারাটিস্ট” [বিচ্ছিন্নতাবাদী] আখ্যা দেয় জোটসঙ্গী বিজেপি। সরকারের ‘লৌহ মুষ্টি’ নীতি সত্ত্বেও বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরবর্তী ৩ বছরে উপত্যকায় আতঙ্কবাদী ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৬৪ শতাংশ।
শেষ অবধি বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব ফ্যাক্স মারফত মেহবুবা মুফতিকে জানান যে তাঁরা সরকার থেকে বেরিয়ে আসছেন। জম্মু কাশ্মীরের বিধানসভাকে এরপর নিষ্ক্রিয় ঘোষণা করা হয়, এবং আরও একবার চাপিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যপালের শাসন।
Human Rights Reports by JKCCS
BJP-PDP Split In J&K: Here’s a Look Back at Their 3-Yr Alliance
Playing Politics with the Jamaat in Kashmir
২০১৯: জম্মু কাশ্মীর রাজ্য দুইভাগ
৫ই অগাস্ট ২০১৯ তারিখে জম্মু কাশ্মীরের মানুষ অকস্মাৎ বাইরের দুনিয়ার সাথে সমস্ত যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন। চলতি বছরে ৫৩ তম বার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ক’রে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সেনা অধ্যুষিত অঞ্চলে আরও ১০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন ক’রে, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ক’রে দিয়ে, একটি মুখ্য হিন্দু তীর্থযাত্রা বাতিল ক’রে দিয়ে, পর্যটকদের নাটকীয়ভাবে রাজ্য থেকে বার ক’রে দিয়ে, শ’য়ে শ’য়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার ক’রে ১৪৪ ধারা চাপিয়ে – ভারতবর্ষের বিজেপি সরকার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে জম্মু কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এবং ভারতীয় রাষ্ট্রের মধ্যে মৌলিক সাংবিধানিক সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে ছেদ করে। রদ করা হয় ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা।
অক্টোবর ১৯৪৭-এ ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই ভারতীয় সরকার ধারাবাহিক ভাবে জম্মু কাশ্মীর রাজ্যের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’ খর্ব করে এসেছে। এই ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’-এর ভরকেন্দ্র ছিল ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা।
৩৭০ ধারা রদ করার মাধ্যমে ভারত সরকার ভারতীয় রাষ্ট্র এবং কাশ্মীরের মধ্যে সমস্ত রকম সম্পর্ককে নিজেই মুছে দিয়েছে এবং এই মুহূর্তে আইনগতভাবে, সাংবিধানিক ভাবে এবং মনস্তাত্তিকভাবে ভারতবর্ষ আক্ষরিক অর্থেই কাশ্মীরের ঔপনিবেশিক শাসক। কাশ্মীরের সওয়া ১ কোটি মানুষকে তাঁদের সমস্ত মৌলিক অধিকার – যেমন আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের অধিকার, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার, নিজস্ব পরিচয় ও সত্ত্বার অধিকার – এসব থেকে গায়ের জোরে বঞ্চিত করে রেখেছে ভারতীয় সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যবাদী হিন্দু রাষ্ট্রের উপনিবেশ হিসেবে কাশ্মীর প্রদেশের জোরপূর্বক অন্তর্ভুক্তি বিজেপি এবং তার মার্গদর্শক আরএসএস-এর রাজনৈতিক পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীরের ‘হিন্দু অতীতকে’ ফের ক্ষমতায় আনা এদের উদ্দেশ্য।
শুধু ৩৭০ বা ৩৫এ বাতিল করাই নয়, কাশ্মীরের সংখ্যালঘু উপ-জাতীয়তাবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলার উদ্দেশ্যে জম্মু কাশ্মীরের ‘রাজ্য’ স্ট্যাটাস ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে’ অবনমিত করে বিজেপি সরকার।
The RSS game plan
Internetshutdowns.in: We are tracking instances of Internet shutdowns in India
Lockdown in Kashmir: 400 politicians, aides, separatist under arrest as Valley turns into massive prison
Explained: What is Section 144 of CrPC?
J&K: The first state to become a Union Territory
ছবির সূত্র: SOS Kashmir
In a nutshell too good.hope in future we will to learn or to read this type of article…