ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন আইন হিসাবে পাশ হয়ে গেল। এই আইনের ফলে ক্ষমতা হারাল পুরনো মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। আদপে এই আইনের ফলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হল স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারীকরণের দিকে। এর ফলে ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ বিষয়টিই আরও কোণঠাসা হবে। এই আইনের নেতীবাচক দিকগুলি তুলে ধরলেন শুভার্থ মুখার্জ্জী।
এনএমসি বিল নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল হইচই, ধর্মঘট, প্রতিবাদের পরেও রাষ্ট্রপতির সিলমোহর নিয়ে বিল পাশ হয়ে গেল বিধিবদ্ধ আইনের আকারে। বিগত প্রায় এক বছর জুড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আলোড়ন তৈরি করেছে এই বিল। অথচ দেখা গেল তারপরেও অবিশ্বাস্যরকমভাবে ডাক্তারী পড়ুয়াদের একটা বড়ো অংশ, যাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে চলেছে এই আইনের দ্বারা – হয় বিলটি আদৌ কি কি মূলগত পরিবর্তন আনতে চলেছে তা জানেন না, অথবা একটা বড় ভুল ধারণা পোষণ করেন। অবশ্যই এই দলিলের স্বরূপ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। না হলে এই জনস্বার্থবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেওয়াও সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিকভাবে জানা প্রয়োজন পূর্বতন ব্যবস্থাটি ঠিক কি ছিল এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ব্যবস্থাটি কী হল।
মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই): এনএমসি বিল দ্বারা গঠিত কমিশন যাকে প্রতিস্থাপিত করে তা হল এই এমসিআই। এতদিন পর্যন্ত দেশের চিকিৎসা পরিষেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষার সর্বোচ্চ নিয়ামক এই সংস্থাটি ১৯৩৩ সালের ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংস্থাটি। পরে ১৯৫৬ সালে আইনটি সংশোধিত হয়।
এমসিআই-এর গঠনতন্ত্র:
এমসিআই-এর সদস্যরা হলেন-
১. প্রতি রাজ্য থেকে একজন প্রতিনিধি(কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদে) – যাঁরা রাজ্য সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা মনোনীত।
২. দেশের প্রতিটি হেলথ ইউনিভার্সিটি থেকে নির্বাচিত একজন করে সদস্য।
৩. প্রতিটি রাজ্য থেকে মেডিকেল রেজিস্টারভুক্ত ডাক্তারদের দ্বারা নির্বাচিত একজন করে সদস্য।
৪. আইনের তৃতীয় শিডিউলের প্রথমাংশে উল্লিখিত যোগ্যতাসম্পন্ন (LMF, DMS ইত্যাদি) ডাক্তারদের দ্বারা নির্বাচিত সাতজন সদস্য।
৫. কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা মনোনীত আটজন সদস্য।
এই সদস্যরা আবার নিজেদের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিলের সভাপতি, সহ সভাপতি, কার্যনিবাহী সমিতির সদস্যদের ও স্নাতকোত্তর মেডিকেল এডুকেশন কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করতেন।
অর্থাৎ কাউন্সিলের কিছু সদস্য সরকার-মনোনীত হলেও বেশিরভাগই ছিলেন রেজিস্টার্ড বা নথিভুক্ত ডাক্তারদের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত, এমনকি সর্বোচ্চ পদ নির্ধারণের পদ্ধতিটিও সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক। স্বাস্থ্যনিয়ামক বোর্ডের নীতিনির্ধারণে স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রদানকারীদের মতপ্রকাশ করার যথেষ্ট পরিসর ছিল।
স্বাস্থ্যশিক্ষাগত: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন/আসন সংখ্যা বৃদ্ধি/উচ্চতর কোর্স চালু করতে চাইলে তার পরিপূর্ণ পরিকল্পনা (ফ্যাকাল্টির সংখ্যা, উপলভ্য বেডের সংখ্যা, সামগ্রিক পরিকাঠামো, মূলধন) পেশ করতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তারা সেই পরিকল্পনা পাঠিয়ে দেয় এমসিআই-এর কাছে। এমসিআই তার ন্যূনতম মান বিচার করে পুনরায় পাঠায় কেন্দ্র সরকারের কাছে। সরকার পুনর্বিবেচনা করে অনুমোদন দেয় অথবা যদি কোথাও কোনো বিশেষ পরিষেবার ঘাটতি থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে সংশোধনের সুযোগ দেয়।
উল্লেখ্য- ১. যদি পরিকল্পনা পেশ করার এক বছরের মধ্যে কেন্দ্র সরকার কোনো রকম সিদ্ধান্ত জানাতে অক্ষম হয়, তাহলে পূর্বোক্ত পরিকল্পনা অপরিবর্তিত রেখেই নতুন কলেজ স্থাপনআসন সংখ্যা বৃদ্ধি/নতুন কোর্স চালু করা যায়। অর্থাৎ আইনের ফাঁক সামান্য হলেও বিদ্যমান।
২. প্রতিটি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভিজিট করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরিকাঠামো পরিদর্শন।
৩.যদি শিক্ষাপদ্ধতি, পরিকাঠামো এমসিআই নির্দেশিত সুনির্দিষ্ট মানে পৌঁছাতে অক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বা আংশিক আসনসংখ্যার অনুমোদন প্রত্যাহার। অর্থাৎ মেডিকেল শিক্ষার একটি ন্যূনতম মান ও যুক্তিসংগত বেতন কাঠামো বজায় রাখা।
স্বাস্থ্যপরিষেবাগত:
১. হাসপাতালে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আচরণবিধি, নীতিগত আচরণ সুনির্দিষ্ট করা।
২. ভারতে বৈধ মেডিকেল যোগ্যতাসমূহের তালিকা ও পাশ করা ডাক্তারদের জাতীয় রেজিস্টার মেনটেন করা।
৩. যথোপযুক্ত আচরণবিধি/আইন ভঙ্গ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এমসিআই-এর
এবার আসা যাক নয়া এনএমসি বিলের কথায়। বিলটির প্রস্তাব ওঠে ২০১৭ সালে, যার বর্তমান সংশোধিত রূপটি উপস্থাপনা করা হল। মুখ্যত স্বাস্থ্যপরিষেবার পুরোনো নীতিগুলি বহাল রেখে বর্তমান ব্যবস্থায় নতুন সংযোজনগুলি হয়েছে।
ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন: বিল অনুযায়ী এনএমসি পুরোপুরিভাবে এমসিআই-কে প্রতিস্থাপিত করবে এবং এটিই হবে স্বাস্থ্যশিক্ষার সর্বোচ্চ নিয়ামক বোর্ড। সুতরাং ১৯৫৬ সালের ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল আইনের আর কোনো বৈধতা থাকল না।
গঠনতন্ত্র:
এনএমসি-র সদস্যদের ‘মনোনীত’ করার জন্য গঠন করা হয় এক বিশেষ সার্চিং কমিটি, যাতে রয়েছেন-
১. কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীপরিষদের সচিব
২. কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা ‘মনোনীত’ তিনজন বিশেষজ্ঞ – যাদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, গবেষণায় ন্যূনতম পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
৩. কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা কমিশনের আংশিক সময়ের সদস্যদের থেকে ‘মনোনীত’ একজন বিশেষজ্ঞ।
৪. কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা ‘মনোনীত’ এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর আইনশাস্ত্র, ম্যানেজমেন্ট, অর্থনীতি বা বিজ্ঞানপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ন্যূনতম পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
৫. কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের সচিব – আহ্বায়ক হিসেবে।
আর এঁদের দ্বারা ‘মনোনীত’ সদস্যরা হলেন-
১. বিশেষ কিছু যোগ্যতাসম্পন্ন একজন চেয়ারপার্সন।
২. দশজন ‘প্রাক্তন পদাধিকারী’ সদস্য, যাঁদের মধ্যে আছেন ইউজি ও পিজি মেডিকেল এডুকেশন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, আইসিএমআর ও ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস ইত্যাদি।
৩ .কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন সদস্য যাঁর পদমর্যাদা কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত সচিবে র চেয়ে কম হওয়া চলবেনা।
৪. ২২ জন আংশিক সময়ের সদস্য – যাদের মধ্যে আছেন রাজ্য ও কেন্দ্র দ্বারা মনোনীত সভ্যরা।
এছাড়া গঠিত হবে একটি দপ্তর, যার নেতৃত্বে থাকবেন একজন ‘মনোনীত’ সচিব, রাজ্যের প্রাথমিক মতামত ও প্রস্তাব পেশের জন্য মেডিকেল অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল এবং এনএমসি-র অধীনে চারটি তথাকথিত স্বয়ংশাসিত সংস্থা।
অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যপরিষেবার সর্বোচ্চ নিয়ামক বোর্ডে প্রত্যেকেই (স্বয়ংশাসিত সংস্থার চতুর্থ আংশিক সময়ের সদস্য ব্যতীত) হয় কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের মনোনীত অথবা আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরিষেবার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামত প্রকাশের আর কোনো গণতান্ত্রিক পরিসর রইলনা। কার্যত এনএমসি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হাতের পুতুলে পরিণত।
স্বাস্থ্য শিক্ষাগত:
১. বিলের প্রথম ও শেষ অংশের মধ্যে চূড়ান্ত অসংগতি রয়েছে ডাক্তারি কোর্সের শেষ পরীক্ষা বিষয়ে। প্রথমে নীট পিজি বহাল থাকবে বলা হলেও শেষাংশে উল্লিখিত ন্যাশনাল এক্সিট টেস্টের কথা – যা ফাইনাল এমবিবিএস ,স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা এবং বিদেশির বিদ্যালয়ে শিক্ষিত ডাক্তারি ছাত্রদের লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষাকে একইসাথে প্রতিস্থাপিত করে। সরাসরি কমিশন দ্বারা পরিচালিত এই পরীক্ষা বিবরণধর্মী না এমসিকিউ, তাতে কতগুলি বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকবে, একবার অকৃতকার্য হলে বা আশানুরূপ ফল না হলে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হবে কিনা – এসব নিয়ে এই বিল নিশ্চুপ। যা লক্ষ লক্ষ ডাক্তারী পড়ুয়ার ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দেয়।
২. ক) কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন/আসন সংখ্যা বৃদ্ধি/নতুন কোর্স চালু করতে গেলে তার পরিপূর্ণ পরিকল্পনা (বেতন কাঠামো, পরিকাঠামো, ফ্যাকাল্টি) পেশ করবে মেডিকেল অ্যাসেসমেন্ট ও রেটিং বোর্ডের কাছে, যা এনএমসি-র অধীনে স্বয়ংশাসিত সংস্থাগুলির একটি। যদি সেই পরিকল্পনা এনএমসি-র উল্লিখিত ন্যূনতম মানে পৌঁছায়, তাহলে জমা দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বোর্ড সেই স্কিমকে অনুমোদন দেবে অথবা যদি কোনো ভুলত্রুটি থাকে তাহলে সংশোধনের সুযোগ দেবে।
খ) যদি বোর্ড অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে বা ছয় মাসের মধ্যে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, উক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান সরাসরি কমিশনের কাছে আবেদন জানায়।
গ) যদি কমিশন ৪৫ দিনের মধ্যে অনুমোদন না দেয়, তাহলে আবেদন করা যাবে সরাসরি কেন্দ্র সরকারের কাছে।
বিল অনুযায়ী – “বিশেষ কিছু স্থানে/ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলি লঘু করতে পারে”।
অর্থাৎ ১. পরোক্ষভাবে বেসরকারী উদ্যোগে মেডিকেল কলেজ ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান নির্মানকে অবাধ ছাড়পত্র দেওয়া হল। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেসরকারীকরণের লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে গেল।
২. বেসরকারী কলেজের পড়াশুনোর বেতন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি রাজ্যে ছিল হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটি। নীতি আয়োগ ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত নেয়- “ফী ক্যাপ না অপসারণ করলে বেসরকারী উদ্যোগ বাধাপ্রাপ্ত হবে।” সেই সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যায় এনএমসি বিলে। বেসরকারী কলেজের ৫০% অব্দি আসনের ফী নির্ধারণ করবে উদ্যোগকারী বেসরকারী সংস্থা। বাকি ৫০% নিয়ন্ত্রণ করবে এনএমসি – যার কোনো ঊর্ধ্বসীমার উল্লেখ নেই এই বিলে।
৩.এনএমসি নিজের ইচ্ছানুযায়ী কোনো থার্ড পার্টি/এজেন্সিকে মেডিকেল কলেজগুলিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট কলেজ পরিদর্শনের জন্য তাদেরকেই অনুমতি দিতে বাধ্য থাকবে। অর্থাৎ সরাসরি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিকাঠামো ও স্বাস্থ্যশিক্ষির ন্যূনতম মান বজায় রাখার ব্যবস্থাটি কার্যত অপসৃত হল।
চিকিৎসা পরিষেবাগত:
১. আধুনিক মেডিসিনের সাথে যুক্ত এমন কিছু ব্যক্তিদের (তাঁরা কারা সেই নিয়েও বিল নীরব) ৬ মাসের ট্রেনিং কোর্স দিয়ে তৈরী করা হবে কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডার। এরা প্রাথমিক ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন এবং উচ্চতর স্তরে একজন রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার-এর অধীনে কাজ করবেন। এদের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে রেজিস্টার্ড ডাক্তারদের এক তৃতীয়াংশ।
প্রশ্ন হল – সারা দেশে সরকারী হাসপাতালে নিযুক্ত ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ষোলো হাজার, পাশ করা ডাক্তারের মোট সংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি, উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও তৃণমূলস্তরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া ডাক্তারদের নিয়োগ করার বদলে এই কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডার-এর গোঁজামিল কীসের উদ্দেশ্যে? ডাক্তার ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব যথাযথ উপায়ে না মিটিয়ে এরকম ঠেকনা দিয়ে আখেরে জনস্বাস্থ্যকে কীভাবে খাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হল সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
২. কমিশন, কেন্দ্রীয় হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিল এবং কেন্দ্রিয় আয়ুর্বেদিক কাউন্সিলের সংযুক্ত বৈঠক – উদ্দেশ্য “To enhance the interface between Homeopathy, Indian System of Medicine and Modern system of Medicine”।আলোচনাসভা হবে বছরে একবার।’Medical pluralism’ -এর নামে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা কোর্সের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে অতিরিক্ত ঐসব কোর্সের বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্তি করে সেই নয়া এডুকেশনাল মডিউলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।একজন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র বা প্র্যাক্টিশনারের পক্ষে বোঝা মোটেও কঠিন নয়,যে ফলিত চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে হোমিওপ্যাথী ও আয়ুর্বেদের মতো বিতর্কিত চিকিৎসাপদ্ধতিকে যুক্ত করলে আখেরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষতিসাধন ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
এছাড়াও সংযুক্ত হয়েছে আরো কয়েকটি ধারা –
১.৭নং ক্লজ অনুযায়ী কেন্দ্র সরকার চাইলেই তাঁর নিজস্ব ‘মতানুযায়ী’ অভিযুক্ত চেয়ারপার্সনকে অপসারণ করতে পারে।
২. ৪৫ নং ক্লজ অনুযায়ী কমিশন তার কার্যনির্বাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মান্য করতে বাধ্য।
৩. ৫৩নং ক্লজ অনুযায়ী সরকার, কমিশন, স্বয়ংশাসিত বোর্ড বা কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, যেখানে কমিশন বা সরকার – “For the faith of good will or intention to do it” কোনো পদক্ষেপ নেয়।
৪. কেন্দ্র সরকার চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিশনকে বাতিল করে তার যাবতীয় কাজকর্ম করায়ত্ত (Supersede) করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে এনএমসি কেন্দ্র সরকারের হাতের ক্রীড়নক যেখানে গণতান্ত্রিক মতামত ও মূল্যবোধের কোনো স্থান নেই। সামগ্রিক মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবার বেসরকারীকরণের উদ্দেশ্যে অন্যতম পদক্ষেপ এই বিল। নীচুস্তরের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রাপ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনসমষ্টি। অন্যদিকে বিত্তবানদের জন্য উপলভ্য হবে কর্পোরেট নামীদামি বেসরকারী হাসপাতাল। এই বিল কার্যকরী হওয়া প্রকৃতপক্ষে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ লক্ষ্যের উল্টোদিকে হাঁটার নামান্তর। তাই আওয়াজ তুলতে হবে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে, সমাজের সর্বস্তরের জন্য সমমানের স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রণয়নের দাবীতে।
পরিচিতি: লেখক কলকাতা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র