“এই মানুষদের সাথে তাঁদের সহজ বোঝাপড়াগুলো বুঝতে চেয়ে এই বিশ্বাসটুকু দৃঢ় হয় আমরা হারব না, প্রান্তিক মানুষ এবং তাঁদের নিজস্ব মাটির দেবতা এত সহজে হারবে না। এতটাই কি সহজ মানুষের জীবন–যাপন মাটির সম্পর্ককে ধুয়ে মুছে তুলে দিয়ে হনুমান আর রামকে ইম্পোর্ট করা?” প্রান্তের কথা প্রান্তিকের অনুভবের কথা জানালেন লাবনী জঙ্গী।
একটা পচে গলে যাওয়া ব্যবস্থা, সেখান থেকে নিষ্কৃতির পথ খুঁজছি আমরা অনেকে। এই ব্যবস্থাপনা আমাদেরকে একাকীত্ব, শূন্যতা, খুব ঘেন্না আর হিংসায় দমবন্ধ হয়ে ওঠা যাপন ছাড়া কিছু দেয়নি। পালিয়ে যাবার জন্য রাতের অন্ধকারে বহুবার মৃত্যুকে নিষ্কৃতির পথ ভেবে, শেষ সাহসটুকু আর দেখানো হয়ে ওঠে না। পরের দিন খবরের কাগজে চার নম্বর পাতায় চার-চার লাইনের চারটে খবর পড়ি বধূহত্যা, ডাইনি সন্দেহে হত্যা, গণরোষে মানুষ হত্যা, আত্মহত্যা। এই মৃত মানুষগুলো হয়তো ভাগ্যবান, মৃত্যু তাঁদেরকে আলিঙ্গন করে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
আমরা সুসজ্জিত মিথ্যে নগরে বেঁচে আছি কিছু পচা শরীর ও মন সমেত। কী বীভৎসভাবে বয়ে বেড়াচ্ছি নিজেদের! চারিপাশে মাংস-খেকো পোকা কিলবিলিয়ে উঠছে। বমি পাচ্ছে, আমরা প্রতিদিন আরও আরও অসুস্থ হয়ে উঠছি।
মৃত্যুকে স্বেচ্ছা-আলিঙ্গন করবার সাহস জোটাতে না-পারলে, প্রতিবার নদীর কাছে আশ্রয় খুঁজি। নদী আমার অন্যতম শিক্ষক, যদিও নদীকেও খুন করছি, জেনে আবার কখনো না-জেনে নিজেরাই নিজেদের নিবিড় আশ্রয়গুলো উন্মত্তের মতো ধ্বংস করে চলেছি বহুদিন ধরে। এই সাজানো পরিপাটি ‘সভ্য’ নগরের মানুষের হিংসার বুনট সম্পূর্ণ আলাদা, মাঝে মাঝে আমি বুঝতে পারি না, তাল মেলাতে পারি না, রাস্তা ভুল হয় অথবা আমাদের কোনও রাস্তাই নেই। বিচ্ছিন্ন, গন্তব্যহীন শূন্যতা — এর মাঝ থেকে পালানোর চেষ্টা করি। কোথায়, কেন জানি না, কেবল শ্বাস নেবার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে পালাচ্ছি যেন।
এবারের কিছু দিনের আশ্রয় তিস্তা নদীর পারে বন্ধুর বাড়ি। আমার বন্ধু তিস্তার মতো উচ্ছল, বুকে চরা পড়ছে জেনেও স্রোত স্তব্ধ করতে নারাজ। রাজবংশী ভাষাতে কবিতা লেখে সে। আর ছবি তোলে যে চোখে, সে চোখে তিস্তা তার সব রঙটুকু ঢেলে দিয়েছে। বন্ধু তার তিস্তার পাড়কে চিনতে শেখায়। সে আমাকে তিনবিঘা নিয়ে যায়। সেখানে আমরা দুজনে একসাথে বুঝি বন্দুকের নলের নিয়ন্ত্রণ কতখানি হিংস্র।
একই রাস্তা দিয়ে সাইকেলে, ভ্যানে, কিংবা হেঁটে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ, কেউ কারুর সাথে বিন্দুমাত্র কথা না-বলে। একে অপরের সাথে কথা বলার হালহকিকত জানার ইচ্ছে চোখে থাকলেও, বন্দুকের নলের জোরদার পাহারা মানুষদের নির্বাক করে তুলেছে। তবে সেদিন তিনবিঘার ওই টুকরো জমি আমাদের শিখিয়েছে, পড়শির চোখে পড়শির নিঃশব্দে অপলক তাকিয়ে থাকাটাও কী এক অসম্ভব নতুন ভাষা নির্মাণ করতে পারে। বন্ধু আমাকে তিস্তা বুড়ির গল্প শুনিয়েছে, যে তার সাদা শনের চুল বাতাসে উড়িয়ে অনন্তকাল তিস্তা পার করে চলে। তিস্তা বুড়ির জাতি কী? তিস্তা বুড়ির দেশ কোনটা? তিস্তা বুড়ি যখন সাদা কাশ ফুলের চুল উড়িয়ে লাঠি হাতে তিস্তা পার করে, রাইফেলধারী সীমান্ত রক্ষকেরা তখন তিস্তা বুড়ির পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে কী হবে? সেদিন সারারাত এই ভুল প্রশ্নগুলো মাথাতে ঘুরপাক করে ঘুম নষ্ট করেছে।
বন্ধু আর আমি তিস্তাপাড়ের হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চাদের সাথে একদিন গল্প করেছিলাম, একসাথে আঁকা করেছিলাম। তিস্তাপাড়ের প্রান্তিক মুসলমান ও দলিত হিন্দুবর্ণ থেকে আসা শিশুদের একটা নিজস্ব জগত আছে, নতুন পুরনো সময়ের ছাপ মিলেমিশে সে জগত আমার বোধগম্যের বাইরে। তাঁদের ক্লাস রুমের দেয়ালে গোটা গোটা করে লেখা আছে “ভেঙ্গে ফেলিবার কাজে এক অংশ না দিয়ে গড়ে তুলিবার কাজে সমস্ত অংশ দেওয়া অনেক ভাল” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেদিন তাদের অনেকে নদীর ছবি, ঘরের ছবি আরও কতো হরেক রঙিন ছবি এঁকেছিল, একজন শিশু তিস্তা বুড়িকে নদীর বুকে হাঁটতে দেখার গল্প শুনিয়েছিল আর দুজন শিশু বড় হয়ে আর্মি হবে বলেছিল। তাদের একজন বলেছিল, তার যুদ্ধ, মারপিট ভালো লাগে। অন্যজন বলেছিল, তার দাদার ফোনে একটা গেম দেখে তার আর্মি হবার খুব ইচ্ছে হয়েছে। আর বাকিরা যদিও অনেকেই ভেবে উঠতে পারেনি তারা কী হবে। ফেরার সময় আমি বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিস্তা বুড়ির গল্প পাঠ্যবইয়ে নেই কেন। তিস্তা বুড়িকে নিয়ে শিশুদের জন্য রূপকথা লেখা, কার্টুন বানানো গেল না কেন? আসলে আমরা হেরে যাচ্ছি, মরে যাচ্ছি তিস্তা নদীর মতই একটু একটু করে। আগামী দিনে আর একটি শিশুও ক্লাসে থাকবে না যে তিস্তা বুড়ির গল্প শোনাবে আমাদের। বরং আরও অনেক ছেলের চোখে আর্মি হবার স্বপ্ন বুনে দেবে রাষ্ট্রপাঠ্য।
সে আমাকে তার তিস্তাপাড়ের ফুলকাডাবুরি গ্রাম আর মানুষের যাপন দেখতে শিখিয়েছে ওই কয়েকদিনে। সেই যাপন আমাদের জানা বোঝার ওপারে, যতটা সহজ ততটাই যেন-বা দুর্বোধ্য। আমার বন্ধুর গ্রাম ফুলকাডাবুরি, সেখানে সংখ্যাগুরু রাজবংশী মানুষের বসবাস। তাঁরা নিজেদের গ্রামঠাকুরের নাম রেখেছেন আল্লাঠাকুর! আল্লাঠাকুর তাঁদের গ্রামের নিজস্ব ঠাকুর, আল্লাঠাকুর তাঁদের গ্রামকে সব অপশক্তি থেকে দূরে রাখে। এই গ্রামে ঠাকুরের মূর্তি নেই প্রায়, সদ্য কিছু কিছু বাড়িতে নতুন চল হিসেবে মূর্তি ঢুকছে। প্রচলিত রীতি মোতাবেক গ্রামঠাকুরের থানে মাটির ছোট ঢিপি আর লাল নিশান আছে, আর প্রতিটা বাড়ির যে দেবস্থান সেখানেও মূর্তির বদলে, মাটির ছোট ছোট ঢিপি। আমি এমন ঠাকুর আগে দেখিনি। সন্ধে নামতেই নীলচে আলোতে ওই মাটির ছোট ছোট ঢিপিতে যখন প্রদীপ জ্বেলে আসে গ্রামের কোনও মেয়ে বউ, তখন বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করে, তাঁদের সরল বিশ্বাসগুলোকে। বিশ্বাস করে মনে মনে বলি, অনন্তকাল জুড়ে সহজ মানুষের বিশ্বাস জিতে যাক আরও একবার।
ডাকুর ঘাটের ভৌতিক নড়বড়ে পুল (পূর্বতন এমএলএ, এমপি-রা টাকা মেরে খাওয়াতে পুল মেরামত অসম্পূর্ণ) পেরিয়ে বন্ধু একদিন বাগডোগরার গ্রামের মোটা সন্ন্যাসীর থানে নিয়ে গিয়েছিল। তথাকথিত প্রচলিত ঠাকুর নন, তবে তিনি এই এলাকার খুব আপন। গ্রামঠাকুরের মতোই, রাজবংশীদের লোককথাতে তিনি বাঘছাল পরে রাত্রিবেলাতে ঘোড়া সমেত ঘুঙুর পরে গ্রাম পাহারা দেন। যদিও সময়ের সাথে মোটা সন্ন্যাসী ঠাকুরের মূর্তির সাথে সাথে শিবের মিল করিয়ে, আদি ইতিহাসটা মুছে দেওয়া গেছে। এখন তাঁকে শিবের আরেক রূপ হিসাবে মানা হয়। শিবের বাহন ষাঁড়, মোটা সন্ন্যাসীর বাহন বাঘ। আর গভীরে খুঁজলে হয়তো উঠে আসবে নতুন কোনও আখ্যান।
আমার বন্ধু নিশ্চয় তার মাটির, মানুষের, আর তাঁদের খুব আপন নিজস্ব ঠাকুরের ইতিহাসগুলো একদিন অনেক মানুষকে শোনাবে। সেখানে তার দেশে আছে মা কালীর রুদ্র মূর্তি, মাসান ঠাকুর, আছেন মা মনসা, গঙ্গাদেবী, আর অসংখ্য গ্রামঠাকুর। সৃষ্টি-জীব-সময় আর মাটি-মানুষের সাথে এই ঠাকুরদের নিজস্ব আখ্যান রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্কে জড়িয়ে। তিস্তার চরে আমাদের যিনি গান শুনিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন, লক্ষ্মী-সরস্বতী শিবের মেয়ে তাঁরা বড়ো লোকের ঘরে যায়। মা মনসাও শিবের মেয়ে কিন্তু তিনি তো সকলের ঘরে যান, উঁচু-নিচু হিন্দু- মুসলমানের ভেদ রাখেন না। তিনি তো একই সাথে বিদ্যা ও ধনেরও দেবী।
এই মানুষদের সাথে তাঁদের সহজ বোঝাপড়াগুলো বুঝতে চেয়ে এই বিশ্বাসটুকু দৃঢ় হয় আমরা হারব না, প্রান্তিক মানুষ এবং তাঁদের নিজস্ব মাটির দেবতা এত সহজে হারবে না। এতটাই কি সহজ মানুষের জীবন-যাপন মাটির সম্পর্ককে ধুয়ে মুছে তুলে দিয়ে হনুমান আর রামকে ইম্পোর্ট করা? শস্য বা বংশ উৎপাদনের দেবী মা মনসা, মোটা সন্ন্যাসী, রুদ্র কালী, মাসান ঠাকুর, তিস্তা বুড়ি এঁরা কি তাঁদের জমিন এত সহজে ছেড়ে দেবেন। নাকি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লিপ্সাতে নির্মিত নতুন দেবতার প্রোডাক্টগুলির সাথে সমঝোতা করে জমি ছাড়তে ছাড়তে নিজেদের ইতিহাস মানবমন থেকে বিলুপ্ত করে দেবার রাস্তায় যাবেন। সময় বলবে সেসব কথা।
এই লেখা শেষে নিজস্ব যে প্রাপ্তিটুকু নিয়ে ফিরলাম, সেটুকুর কথা খুব খুব বলতে চাই। বন্ধু আমাকে তার এলাকা ঘোরানোর সময় অসংখ্য যুগলকে দেখিয়েছে। এই প্রেমহীন যান্ত্রিক নিঃস্ব সময়ে দু-চোখ ভরে সেই যুগলদের দেখেছি। আর মনে প্রাণে প্রার্থনা করেছি মরে গিয়ে যদি আবার জন্মাই, তবে যেনও পাকুড় গাছের ঠিক গা-ঘেঁষে বট গাছ হয়ে জন্মাই। দুটি গাছ একসাথে বাড়তে বাড়তে একে অপরকে তাঁদের শাখা প্রশাখা দিয়ে নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করবে। গাছগুলো বৃদ্ধ হবে একসাথে যখন, দুটি গাছের দেহ একে অপরের সাথে এক হয়ে মিশে যাবে। আর অভিন্ন দেহের দুটি বৃদ্ধ যুগল অসংখ্য পাখি, কাঠবেড়ালি, পিঁপড়ে, পোকা নিশ্চিত আশ্রয় হবে। খুব তপ্ত দিনে মানুষদের ছায়া আর শীতল স্নিগ্ধ বাতাস দেবে নি:শর্ত স্নেহে। এই অঞ্চলে প্রচলিত রীতি মেনে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়ে দেন মানুষেরা। আর প্রচলিত বিশ্বাস মেনেই এই বিবাহিত যুগলদের কাটার সাহস হয় না কারো।
এই অঞ্চলে হিন্দু মুসলমান সকলেই এই বট-পাকুড়ের বিয়ে দেন, অংশগ্রহণ করেন এই প্রাচীন লোকপ্রথাতে। বট গাছটি বউ ও পাকুড় গাছটিকে বর সাজিয়ে হিন্দু বা মুসলমান মতে বিয়ে দেয়াও হয় আজও এখানে। এই কাজটি এখানকার মানুষ শুভ বলে ভাবেন। বাড়ি ফিরে মাকে এই অন্যরকম সম্পর্কের কথা গাছেদের বিয়ে নিয়ে প্রবল বিস্ময়ে জানালে, মা বলল, “এত বিস্ময়ের কী আছে আমাদের এখানেও তো এই চল ছিল, ছোটবেলাতে দেখেছি বট-পাকুড়ের বিয়ে।” আমি আমার ছোটবেলা থেকে আজ অবধি দেখিনি এই গাছেদের বিয়ে। মানুষেরা এটাকে কুসংস্কারের লোকবিশ্বাস ভেবে পরিত্যাগ করছে। বিজ্ঞান চেতনা, আধুনিক শিক্ষা বট-পাকুড়ের বিয়েকে কুসংস্কারের নাম দিয়ে বন্ধ করাতে পেরেছে। কিন্তু মোড়ে মোড়ে সিমেন্টের মন্দির, মসজিদগুলোর সাথে বিজ্ঞান চেতনা, আধুনিক শিক্ষা হয়তো এঁটে উঠতে পারেনি। আমার অঞ্চলে এখন প্রবল শ্লোগান সমেত হনুমানের দাপট। মজার বিষয় হল হনুমানগুলো স্কুল-কলেজে আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত। বিজবিজে হিংসার ভিড়ে যদি একটু মাটি গায়ে মানুষের প্রেম আবেগ সমেত নিজস্ব এক সহজ বাঁচা দেখতে পাই, অপার বিস্ময়ে সেই সহজ বাঁচাটুকুকে বুঝতে, তাকে অনন্ত টিকিয়ে রাখতে স্বপ্ন বুনি। এই নির্জীব নিঃস্ব সময়েও লোকপ্রথা মেনেও যদি কিছু মানুষ গাছের সাথে নিজেদের যাপনকে এভাবে মিশিয়ে দিতে পারে। গাছেদেরও তাঁদের জীবনের, ভালো থাকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাবে, আমার কাছে এই বিশ্বাস অমূল্য। এই বিশ্বাস যাতে চিরন্তন হয় সেই দুয়া করি সবসময়ে।
আমি খুবই ব্যক্তিগত লেখা লিখি, কখনো সেসব ছাপার অযোগ্য হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছাড়া রাজনীতি বোধ বা রাজনীতি ব্যক্ত করা আমার কাছে অসম্পূর্ণ। এই অস্থিরতা আমার সময়ের রাজনীতির দান। এই ভোগবাদী সময়ে মানুষ সম্পর্ক বন্ধুত্ব কতটা পলকা, কতটা পণ্য, সে কথা নতুন করে আর বলার প্রয়োজন নেই। তবে এই অদ্ভুত সময়েও মানুষ বেহায়া হয়, মানুষ খোঁজে, বাঁচার নতুন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। তাই লেখাটার শেষে খুব করে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিছু মাস আগে এক অচেনা মানুষ, মনের ভুলে ‘ভুল নাম্বারে’ ফোন করে গভীর রাতে মাঝে মাঝে কিছু কবিতা শুনিয়েছিলেন। অচেনা, অস্থায়ী, ভুল ঠিকানার পরিণাম যা হবার তাই হয়। একদিন ফোন নাম্বারটা হারিয়ে যায়। কিন্তু কবিতাগুলো থেকে যায়। তার মধ্যে একটা গাছের কবিতা ছিল রণজিৎ দাশের লেখা—
গাছ কে লেখা চিঠি
অনেকের ধারণা
গাছের প্রাণ আছে
আমি বিশ্বাস করি না,
যদি সত্যিই প্রাণ থাকতো, তাহলে
কোনও এক মেঘলা দুপুরে
সেই গাছ ছুটে গিয়ে
প্রতীক্ষারত আরেকটি গাছকে
জড়িয়ে ধরত আকস্মিক, অন্ধ আলিঙ্গনে।
—এ ক্ষমতা যার নেই, সে তো নিশ্চিত জড়বস্তু। এ বিষয়ে তোমার কী মত ?
নগর জীবনের অভ্যাসে কবিতাটা কিছুদিন গভীরভাবে আঁচড় কেটেছিল। কিন্তু সত্যিকারের বাস্তবটা তো আলাদা, যেমন এই কবিতাটা তো বাস্তবে খুবই ভদ্রলোকের ক্ষণস্থায়ী আবেগি বহিঃপ্রকাশ। যা ভুল নাম্বার থেকে ফোন আসা অস্থায়ী মানুষটার মিথ্যে কথার প্রলেপের মতো। এই বিশ্বাস নিয়ে শেষদিন পর্যন্ত বাঁচব , গাছের প্রাণ আছে, গাছ জড় বস্তু নয়, আর গাছের মধ্যে কোনও মেঘলা দুপুর বা কড়া রোদে একে অপরকে পরম আদরে জড়িয়ে অথবা নিঃস্বার্থ স্নেহে একত্রে বেঁচে থাকার কত উদাহরণ আছে, কোথাও কোথাও সহজ মানুষের বিস্তীর্ণ জগতে। বরং গাছেরা আধুনিক শিক্ষিত মানুষের মতো স্বার্থবাদী, নির্মম, অ-সংবেদনশীল নয়। অনেক অনেক ঝড়, রোদ, বৃষ্টি একসাথে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকে বা মরে যায় একসাথে। পাশাপাশি বট-পাকুড়ের এক সাথে বাঁচা, বৃদ্ধ হওয়া আমার কাছে এই সময়ে আর কুসংস্কার নয়। তিস্তা বুড়ি বা আল্লাঠাকুর যেমন নয়। আর এই যাত্রাপথের অভিজ্ঞতাগুলো যতটা ব্যক্তিগত ততখানিই রাজনৈতিকও।
ঋণস্বীকার: ভাস্বতীরায়।
লেখক: লাবনী জঙ্গী সেন্টার ফর সোশ্যাল সাইন্স কলিকাতা–র শিক্ষার্থী ও গবেষক।
ছবির সূত্র : লেখক ।
Cultural diversity is our is our strength and this needs to be preserved.