২০১৯-এর বিপুল নির্বাচনী সাফল্যের পর ভারত-কাশ্মীর সম্পর্কের মূল স্তম্ভ ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারাদুটি রদ করার পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার। গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে তাঁর ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা ঘোষণাও করেছেন। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ সংক্রান্ত আইনগুলির ইতিহাস, সাংবিধানিক বৈধতা এবং কাশ্মীরি স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাসঙ্গিকতা-সহ নানা বিষয় নিয়ে আমাদের এই তিন পর্বের আলোচনা। প্রথম পর্বে, আমরা এই আইনগুলির মূল বক্তব্য ও সাংবিধানিক ইতিহাস নিয়ে কথা বলব। দ্বিতীয় পর্বে, আমরা ৩৫এ ধারা রদের পক্ষে দাখিল করা বিভিন্ন যুক্তির সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিক সারবত্তা নিয়ে আলোচনা করব। কাশ্মীরি স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে ৩৭০ ধারার ভূমিকা আলোচিত হবে তৃতীয় পর্বে। লিখছেন অনিন্দ্য দে।
পর্ব ১ঃ ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা – সংক্ষিপ্ত সাংবিধানিক ইতিহাস
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: একটি পুরনো ইস্যু ও একটি নতুন মামলা
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ভারতবর্ষ অথবা ফরাসি সাম্রাজ্যে আলজিরিয়ার মতই, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে জম্মু-কাশ্মীরের একটি বিশেষ জায়গা আছে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়া এক নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কীভাবে ধাপে ধাপে নিজেই একটি ঔপনিবেশিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে, তার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় বিগত সাত দশকের ভারত-কাশ্মীর সম্পর্কের ইতিহাসে। সামরিক ও বিদেশ নীতি থেকে শুরু করে দেশের সুদূরতম প্রান্তে প্রচারিত রাষ্ট্রপ্রেমের আখ্যান — স্বাধীন ভারতবর্ষের সংসদীয় রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও কথোপকথনের একটি বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে ভারত-কাশ্মীর সম্পর্ককে ঘিরে।
আর এই সম্পর্কের অন্যতম মূল ভিত্তি হল ভারতীয় রাষ্ট্রে জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ — ভারতীয় সংবিধানে যার পরিচয় ‘৩৭০ ধারা’ এবং ‘৩৫এ ধারা’ হিসেবে।
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ইতিহাসেও জম্মু-কাশ্মীর ও ৩৭০ ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ভারতবর্ষের একমাত্র মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ফ্রন্টলাইন বলা চলে। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি সংক্রান্ত যে কোনও আলোচনায় হিন্দুত্ববাদীরা তাদের প্রিয় দুটি বিষয় একসঙ্গে উত্থাপন করার সুযোগ পান — জওহরলাল নেহরুর “রাজনৈতিক অপরিণামদর্শিতা” এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের “মুসলিম-তোষণ”-এর রাজনীতি। এছাড়া, সঙ্ঘ-পরিবারের আখ্যান অনুযায়ী, ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিতে কাশ্মীরে জেল হেফাজতে প্রাণ দিয়েছিলেন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি (একেবারে হালে জম্মুর কাঠুয়ায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তির আবরণ উন্মোচনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং প্রসঙ্গটি আবার তুলেছেন)। তাই আরএসএস ও তার শাখা-সংগঠনগুলির রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিটি একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ বিষয়। নব্বইয়ের দশকে এই শক্তিটির রাজনৈতিক উত্থান যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে বিজেপি-র রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্বের দিক থেকে রামমন্দিরের পরেই ছিল অভিন্ন দেওয়ানি আইন ও ৩৭০ ধারা বিলোপের বিষয় দুটি। আরএসএস এবং তার শাখা-সংগঠনগুলি ছাড়াও দিল্লি-কেন্দ্রিক ইংরাজি ও হিন্দি সংবাদমাধ্যমের একাংশ দীর্ঘ সময় ধরে এই নিয়ে প্রচার চালায়। নব্বইয়ের দশকের শেষে বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মেনে এই দুটি ইস্যুকে সাময়িকভাবে ঠাণ্ডা-ঘরে পাঠানো হলেও, সঙ্ঘ-পরিবারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব কমেনি।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত বিজেপি সরকারের আমলে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা দুটি বিলোপের দাবি আবার জোরদার হয়ে ওঠে। সেই বছরই “We The Citizens” নামের একটি এনজিও সুপ্রিম কোর্টে ৩৫এ ধারাটির সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। প্রত্যাশিতভাবেই, জম্মু-কাশ্মীরের পিডিপি সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে এই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করা হয় জোটসঙ্গী বিজেপির আপত্তি অগ্রাহ্য করে।
২০১৭-র জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী কেকে বেণুগোপাল এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানাতে অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি নিয়ে “বৃহত্তর বিতর্ক’’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। মূলত সরকারি আইনজীবীর সুপারিশেই মামলাটি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জেএস খেহার ও বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়-এর এজলাস থেকে স্থানান্তরিত হয় এক তিন সদস্যের বেঞ্চের হাতে। পরবর্তী শুনানির দিনও পিছিয়ে যায় প্রায় এক বছর। ইতিমধ্যে জম্মু-কেন্দ্রিক ‘ওয়েস্ট পাকিস্তান রিফিউজিস অ্যাকশন কমিটি’ ৩৫এ ধারাটি রদ করার দাবি জানায়। ২০১৭ সালে আইনজীবী চারু ওয়ালি খান্না একটি পৃথক আবেদনে অভিযোগ করেন যে ৩৫এ ধারাটি কাশ্মীরি মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ধারায় প্রতিশ্রুত সমতার অধিকারের পরিপন্থী। ২০১৭-১৮-এ একই দাবিতে আরও দুটি আবেদন দাখিল করেন কালি দাস ও রাধিকা গিল। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পিডিপি ছাড়াও, মূল আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য জমা দেয় ন্যাশনাল কনফারেন্স ও সিপিআই (এম)।
২০১৯-এর চলতি সেশানেই এই সবকটি আবেদনের শুনানি শুরু করেছে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ। লোকসভা নির্বাচনের জন্য পরবর্তী শুনানির তারিখ কয়েক মাস পিছিয়ে গেলেও, পুলওয়ামা-কাণ্ডের পর এই ইস্যুটিকে ঘিরে বিজেপি-র প্রচার তীব্রতর হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক সাম্প্রতিক ব্লগ-পোস্টে ৩৫এ ধারাটিকে ‘অসাংবিধানিক’ ও জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনৈতিক বিকাশের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। আরও একধাপ এগিয়ে পার্টির সভাপতি অমিত শাহ ২০২০ সালের মধ্যেই ৩৭০ ধারা বিলোপ করার কাজ সম্পূর্ণ করার কথা বলেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয় এনডিএ-কে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি এনে দিয়েছে। ফলত আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই ধারাগুলি বাতিল করার চেষ্টা করা হবে – এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
এই রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে, কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি সংক্রান্ত আইনগুলির ইতিহাস, সাংবিধানিক বৈধতা এবং কাশ্মীরি স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাসঙ্গিকতা-সহ নানা বিষয় নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা গড়ে তোলাই আমাদের এই আলোচনার উদ্দেশ্য।
ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা
৩৭০ ও ৩৫এ ধারা দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমে কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তির ইতিহাসটি সংক্ষেপে আলোচনা করা জরুরি। ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’ ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষে প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক নানা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল, যার অন্যতম হল ব্রিটিশ-শাসিত অঞ্চলগুলিকে অনেক বেশি স্ব-শাসনের অধিকার দেওয়া এবং আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের হাতে ভোটাধিকার তুলে দেওয়া। এরই পাশাপাশি, এই আইনে ব্রিটিশ-শাসিত ভারত ও অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি “ফেডারেশন” তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্যের শাসক স্বাক্ষর করবেন একটি “Instrument of Accession”-এর দলিলে, যেখানে এই অন্তর্ভুক্তির প্রধান শর্তগুলি নথিবদ্ধ থাকবে। এই শর্তগুলি আইনের মূল অংশে বলা না-থাকলেও, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি খসড়া দলিল তৈরি করা হয়। বিভিন্ন কারণে, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে, শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই ফেডারেশন গঠন করা সম্ভব হয়নি।
এরপর ১৯৪৭ সালের “ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট” দুটি নতুন সার্বভৌম দেশ ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম দেয়। ভারতের নিজস্ব সংবিধান গৃহীত না-হওয়া পর্যন্ত ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-কে অন্তর্বর্তী সংবিধান হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয় এই আইনে। ১৯৪৭-এর ১৫ অগাস্ট থেকে ১৯৫০-এর ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, ১৯৩৫ সালের আইনটিই ছিল ভারতের মূল সাংবিধানিক কাঠামো। যাই হোক, দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে, সাধারণভাবে ভারত সরকার ১৯৩৫ সালের “Instrument of Accession”-এর পুরনো খসড়া দলিলটিই ব্যবহার করে।
১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে পুঞ্চ অঞ্চলের প্রজাবিদ্রোহ ও আফ্রিদি দখলদারদের আগ্রাসনে বিপন্ন কাশ্মীরের ডোগরা রাজা হরি সিং এরকমই একটি “Instrument of Accession”-এ স্বাক্ষর করেন। একই সঙ্গে, গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে লেখা একটি চিঠিতে হরি সিং কাশ্মীরের জননেতা শেখ আবদুল্লাকে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করার কথা জানান। এই নিয়োগের ফলে জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার হাতে। এই চিঠির উত্তরে, হরি সিংয়ের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি, মাউন্টব্যাটেন বলেন জনমতের ভিত্তিতে কাশ্মীরের রাজনৈতিক সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান করার কথা:
“..it is my Government’s wish that, as soon as law and order has been restored in Kashmir and her soil cleared of the invader, the question of the State’s accession should be settled by a reference to the people.”
গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-এর মূল আইনগত ভিত্তি অনুযায়ী, হরি সিংয়ের স্বাক্ষরিত দলিলটি সুরক্ষা, বিদেশনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা – এই তিনটি বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সদ্য-গঠিত ভারত-রাষ্ট্রের পার্লামেন্টের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু তার বাইরে কাশ্মীরের সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। বর্তমান আলোচনার প্রেক্ষিতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দলিলের এই অংশটি:
“Nothing in this Instrument shall be deemed to commit me in any way to acceptance of any future Constitution of India or to fetter my discretion to enter into arrangements with the Government of India under any such future Constitution.”
ভবিষ্যতে কাশ্মীর ভূখণ্ডে ভারতীয় সংবিধান কীভাবে ও কতখানি প্রযোজ্য হবে, সেটি ভারত ও কাশ্মীরের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট করার কথা বলা হয় এই দলিলে। দিল্লি ও শ্রীনগরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে এই নিয়ে কথাবার্তা চলে ১৯৪৯ সালের দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে। দিল্লির তরফে নেহরু ছাড়াও এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বল্লভভাই প্যাটেলের। ১৫ ও ১৬ মে প্যাটেলের দিল্লির বাসভবনে দুপক্ষের বৈঠকের পর, ১৮ তারিখে শেখ আবদুল্লাকে লেখা একটি চিঠিতে নেহরু দিল্লির (বিশেষ করে তাঁর নিজের এবং প্যাটেলের) অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দেন:
“…. it has been the settled policy of the Government of India, which on many occasions has been stated both by Sardar Patel and me, that the constitution of Jammu and Kashmir State is a matter for determination by the people of the State represented in a Constituent Assembly convened for the purpose.’’
“…. Jammu and Kashmir State now stands acceded to the Indian Union in respect of three subjects, namely Foreign Affairs, Defence and Communications. It will be for the Constituent Assembly of the State, when convened, to determine in what other subjects the state may accede.’’
অর্থাৎ “Instrument of Accession”-এ উল্লিখিত তিনটি বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচিত গণপরিষদ (Constituent Assembly)। ১৯৪৯ সালের নভেম্বরে গৃহীত ভারতীয় সংবিধানে এই রাজনৈতিক ঐকমত্যকে একটি বিধিবদ্ধ রূপ দেয় ‘৩৭০ ধারা’। ধারাটির বিশদ বয়ান নীচে দেওয়া হল:
370. Temporary provisions with respect to the State of Jammu and Kashmir
(1) Notwithstanding anything contained in this Constitution,—
(a) the provisions of article 238 shall not apply now in relation to the state of Jammu and Kashmir;
(b) the power of Parliament to make laws for the said state shall be limited to—
(i) those matters in the Union List and the Concurrent List which, in consultation with the Government of the State, are declared by the President to correspond to matters specified in the Instrument of Accession governing the accession of the State to the Dominion of India as the matters with respect to which the Dominion Legislature may make laws for that State; and
(ii) such other matters in the said Lists as, with the concurrence of the Government of the State, the President may by order specify.
(c) the provisions of article 1 and of this article shall apply in relation to that State;
(d) such of the other provisions of this Constitution shall apply in relation to that State subject to such exceptions and modifications as the President may by order specify:
Provided that no such order which relates to the matters specified in the Instrument of Accession of the State referred to in paragraph (i) of sub-clause (b) shall be issued except in consultation with the Government of the State:
Provided further that no such order which relates to matters other than those referred to in the last preceding proviso shall be issued except with the concurrence of that Government.
(2) If the concurrence of the Government of the State referred to in paragraph (ii) of sub-clause (b) of clause (1) or in the second provision to sub-clause (d) of that clause be given before the Constituent Assembly for the purpose of framing the Constitution of the State is convened, it shall be placed before such Assembly for such decision as it may take thereon.
(3) Notwithstanding anything in the foregoing provisions of this article, the President may, by public notification, declare that this article shall cease to be operative or shall be operative only with such exceptions and modifications and from such date as he may specify:
Provided that the recommendation of the Constituent Assembly of the State referred to in clause (2) shall be necessary before the President issues such a notification.
আইনগত পরিভাষার জটিলতার মধ্যে না গিয়েও ধারাটির মূল বক্তব্য স্পষ্টই বোঝা যায়।
প্রথমত, অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলির প্রশাসনিক বন্দোবস্ত বিষয়ক আইন ২৩৮ ধারা থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে অব্যাহতি দেওয়া হল। ফলত, জম্মু-কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান তৈরি করার পথে কোনও বাধা রইল না।
দ্বিতীয়ত, জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ভারতীয় সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হল ভারত-ভুক্তির দলিলে উল্লিখিত বিষয়গুলির মধ্যে। রাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক নির্দেশের (Constitutional Order) মাধ্যমে এই বিষয়ে যাবতীয় আইন জম্মু-কাশ্মীরে জারি করতে পারবেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ (consultation) করে । কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের আইনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক নির্দেশ ছাড়াও লাগবে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের সম্মতি (concurrence)। এছাড়া, দফা 1(d) স্পষ্টই বলে যে সংবিধানের কোনও কোনও অংশ জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে, অথবা কিছুটা পরিবর্তিত চেহারায় প্রযোজ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতিকে একটি সাংবিধানিক নির্দেশের মাধ্যমে তা ঘোষণা করতে হবে।
তৃতীয়ত, এই সাংবিধানিক নির্দেশগুলিকে অন্তর্বর্তী আদেশ হিসেবে দেখতে হবে — তাদের পূর্ণ সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার দায়িত্ব জম্মু-কাশ্মীর গণপরিষদের। সুতরাং, কোনও আইনের ক্ষেত্রে যদি সরকারি অনুমোদন জম্মু-কাশ্মীরের গণপরিষদ গঠনের আগে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেটি পরিষদের সামনে পেশ করতে হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে ৩৭০ ধারা গৃহীত হওয়ার সময়ে জম্মু-কাশ্মীর গণপরিষদ গঠিত হয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবেই এইরকম একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।
চতুর্থত, শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মীর গণপরিষদের সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি এই ধারাটিকে সংশোধন বা প্রত্যাহার করতে পারবেন। অর্থাৎ একতরফাভাবে ভারত সরকারের পক্ষে এই ধারায় কোনও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে, সংবিধান সংশোধন বিষয়ক আইন ৩৬৮ ধারায় জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত একটি অনুবিধি যোগ করা হয়, যার মূল বক্তব্য হল যে ভারতীয় আইনসভায় পাশ হওয়া সংশোধনীগুলি সরাসরি জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যাবতীয় সংশোধিত আইন সেখানে জারি করতে হবে ৩৭০ ধারার অনুবর্তী সাংবিধানিক নির্দেশের মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ৩৭০ ধারা প্রস্তাবিত ও গৃহীত হওয়ার সময়কালে দিল্লির ক্যাবিনেটে নেহরু ও প্যাটেল ছাড়াও ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের দাবিতে তিনি পদত্যাগ করেননি। ১৯৫২ সালে জম্মু-কাশ্মীর গণপরিষদের এক ভাষণে শেখ আবদুল্লা এই নিয়ে শ্যামাপ্রসাদকে তীব্র কটাক্ষ করেন।
মূল আলোচনায় ফিরে আসি। কাশ্মীরের সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটির একটি ব্যবহারিক রূপ দেখা যায় ৩৭০ ধারার বয়ানে। কিন্তু এখানেও ভারতীয় সংবিধানের কোন কোন ধারা কাশ্মীরে প্রযোজ্য হবে তার কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশ পাওয়া যায় না। ভারত ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই বিষয়ে মোটামুটি ঐকমত্যের বাতাবরণ তৈরি হয় ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ। তারই ফলশ্রুতি ১৯৫২ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত Delhi Agreement। সার্বিকভাবে বলা যেতে পারে যে, Delhi Agreement কাশ্মীরের ‘সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের’ পরিবর্তে ‘আংশিক স্বায়ত্তশাসনের’ একটি রূপরেখা তৈরি করে। জওহরলাল নেহরু ও শেখ আবদুল্লা স্বাক্ষরিত এই সমঝোতার প্রধান কয়েকটি বিষয় ছিল এইরকম:
১) সুরক্ষা, বিদেশনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, এই তিনটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য সব বিষয়ে কাশ্মীরের আইনসভার সার্বভৌমত্ব (residual sovereignity) থাকবে। তবে, ভবিষ্যতে কাশ্মীরের আইনসভা কোনও কোনও বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা ভারতীয় সংসদের হাতে তুলে দিতে পারে। এছাড়া, ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্র, রাজ্য ও সংযুক্ত তালিকায় উল্লিখিত বিষয়গুলির বাইরে নতুন বিষয়ে আইন তৈরি করার ক্ষমতা (residuary power of legislation) কাশ্মীরের আইনসভাকে দেওয়া হবে।
২) জম্মু-কাশ্মীরের বংশানুক্রমিক ডোগরা-শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হবে। রাষ্ট্রপ্রধান বা ‘সদর-ই-রিয়াসত’ নির্বাচন করবেন কাশ্মীরের আইনসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এবং এই পদটি ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারা স্বীকৃত হবে।
৩) জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার হাতে রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দাদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত আইন পাশ করার ক্ষমতা থাকবে।
৪) ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলি কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, তবে সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারটি ভূমি-সংস্কারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
৫) ভারতের রাষ্ট্রপতির আপৎকালীন পরিস্থিতি ঘোষণা করার ক্ষমতা কাশ্মীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আপৎকালীন পরিস্থিতি ঘোষণা করতে হলে রাজ্য সরকারের সম্মতি লাগবে।
৬) কেন্দ্রীয় সরকার অথবা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের মামলা-মোকদ্দমার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা থাকবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে। কাশ্মীরে প্রযোজ্য মৌলিক অধিকার বিষয়ক মামলাগুলির ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের এই এক্তিয়ার থাকবে।
৭) ভারত ও কাশ্মীরের অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে সামগ্রিক ঐকমত্য থাকলেও, তার খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক নিয়ে ভবিষ্যতে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জম্মু-কাশ্মীরের প্রজাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং তাদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার প্রশ্নটি ছিল Delhi Agreement-এ আলোচিত প্রধান বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম । জওহরলাল নেহরুর ব্যক্তিগত নোটস এবং সংসদে Delhi Agreement বিষয়ক ভাষণের লিখিত বয়ান থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে এই ইস্যুটি কাশ্মীরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এই প্রসঙ্গে বলা উচিত যে জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত আইনের ইতিহাস অনেক পুরনো। উনিশ শতকে ডোগরা-শাসনের প্রথম যুগেই বহিরাগতদের জমি ও সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে কঠিন বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা জানা যায়। গত শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকেই কাশ্মীরে “বংশানুক্রমিক প্রজা” (hereditary state subject) একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে দেখা দেয়। কাশ্মীরের সরকারি চাকরিতে বহু সংখ্যক অ-কাশ্মীরি (মূলত পাঞ্জাবি হিন্দু ) প্রার্থীদের নিয়োগ করার প্রতিবাদে “Kashmir for Kashmiris” আন্দোলনের জন্মও এই সময়ে। এই আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল কাশ্মীরের সব সরকারি চাকরি কাশ্মীরিদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।
প্রবল জনমতের চাপে ডোগরা রাজারা ১৯১২ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে এই সংক্রান্ত একাধিক আইন পাশ করেন, যার মধ্যে অন্যতম হল ১৯২৭ সালের Hereditary State Subject Order। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরি ও জমি-সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক প্রজাদের একচ্ছত্র অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়। Delhi Agreement-এর আলোচনায় কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাজ্যের ঐতিহাসিক বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে এই আইনগুলির ধারাবাহিকতা রক্ষা করার পক্ষে সওয়াল করেন। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই অবস্থান মেনে নেন।
ভারতের তরফে এই রাজনৈতিক সমঝোতার সাংবিধানিক রূপই হল সংবিধানের ৩৫এ ধারা। ৩৭০ ধারার আইনগত কাঠামো মেনে, রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ ১৯৫৪ সালে এই মর্মে একটি সাংবিধানিক নির্দেশ জারি করেন, যা পরবর্তীকালে ৩৫এ ধারা হিসেবে সংবিধানের পরিশিষ্ট অংশে স্থান পায়। ধারাটির বয়ান নীচে দেওয়া হল:
Saving of laws with respect to permanent residents and their rights. — Notwithstanding anything contained in this Constitution, no existing law in force in the State of Jammu and Kashmir, and no law hereafter enacted by the Legislature of the State:
(a) defining the classes of persons who are, or shall be, permanent residents of the State of Jammu and Kashmir; or
(b) conferring on such permanent residents any special rights and privileges or imposing upon other persons any restrictions as respects—
(i) employment under the State Government;
(ii) acquisition of immovable property in the State;
(iii) settlement in the State; or
(iv) right to scholarships and such other forms of aid as the State Government may provide,
shall be void on the ground that it is inconsistent with or takes away or abridges any rights conferred on the other citizens of India by any provision of this part.
সহজ কথায়, প্রথমত জম্মু-কাশ্মীর আইনসভার হাতে তুলে দেওয়া হল রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা (permanent resident) কারা তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, সরকারি চাকরি, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় ইত্যাদি বিষয়ে স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধে বরাদ্দ করার ক্ষমতাও রইল আইনসভার হাতেই। ৩৭০ ধারার দফা 1(d)-তে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্ত “exceptions and modifications”-এর কথা বলা হয়েছে, ৩৫এ ধারা তারই অন্যতম উদাহরণ।
ইতিমধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে গৃহীত জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধানে “স্থায়ী বাসিন্দা”-র আইনসিদ্ধ পরিভাষা নির্দিষ্ট করা হয়। সেই পরিভাষা অনুসারে, ১৯৫৪ সালের ১৪ মে বা তার আগে যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের প্রজা (state subject) ছিলেন, অথবা যাঁরা গত দশ বছর (বা তার বেশি সময়) ধরে জম্মু-কাশ্মীরে বসবাস করছেন এবং আইনানুগভাবে স্থাবর সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন, তাঁরাই স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি পাবেন। এরপর, জম্মু-কাশ্মীর আইনসভা স্থায়ী বাসিন্দাদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধেগুলি চিহ্নিত ক’রে একাধিক আইন পাশ করে। এর দ্বারা সরকারি চাকরি, জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনে ভোটাধিকার, সরকারি কলেজে পড়াশোনা ও সরকারি বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ, স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। এছাড়াও জম্মু-কাশ্মীরে স্থাবর সম্পত্তি অধিকার করার ক্ষেত্রে অস্থায়ী বাসিন্দাদের উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এইভাবেই, জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দাদের বিশেষ অধিকারের বিষয়টিকে একটি স্পষ্ট সাংবিধানিক রূপ দেয় ৩৫এ ধারা ও জম্মু-কাশ্মীর সংবিধানের আইনগুলি।
১৯৫২ সালের Delhi Agreement থেকে ১৯৫৬ সালের সংবিধান পাশ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে অবশ্য বড়সড় পালাবদল ঘটে গেছে কাশ্মীরের রাজনীতিতে। ১৯৫৩ সালে শ্রীনগরে একাধিক প্রকাশ্য বক্তব্যে শেখ আবদুল্লা Delhi Agreement নিয়ে তাঁর অসন্তোষের কথা জানান এবং ভারত-ভুক্তির দলিলে উল্লিখিত তিনটি বিষয় বাদ দিয়ে অন্যান্য সব বিষয়ে সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্বের পক্ষে সওয়াল করেন। সেই বছরেরই আগস্ট মাসে, শেখ আবদুল্লাকে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার কোনও সুযোগ না-দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন তৎকালীন সদর-ই-রিয়াসত করণ সিং। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে, কুখ্যাত কাশ্মীর ষড়যন্ত্র মামলায় (Kashmir Conspiracy Case) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ আবদুল্লা এগারো বছর কারারুদ্ধ থাকেন। দিল্লির রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে Delhi Agreement-কে সাংবিধানিক চেহারা দেওয়ার কাজটি পরিচালনা করেন শেখ সাহেবের এক সময়ের সহযোদ্ধা ও জম্মু-কাশ্মীরের নতুন প্রধানমন্ত্রী বক্সি গুলাম মহাম্মদ।
(ক্রমশ…)
লেখক পেশায় পদার্থবিজ্ঞানের গবেষক।
ফিচার ছবির সূত্র ইন্টারনেট।