যে শিক্ষামন্ত্রী একদিন এই আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘অযোগ্য’ বলেছিলেন, সেই তিনিই আজ আন্দোলনের চাপে আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন। এই নৈতিক জয় তো কম নয়। এখন বল সরকারের কোর্টে। আন্দোলনের গ্রাউন্ড জিরো থেকে লিখছেন রাজীব দত্ত।
দিনটা ২৪ জুন। আর পাঁচটা নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রাইমারি স্কুল টিচারের মতো স্কুলে যাওয়ার তাড়া নিয়ে দিনটা আমারও শুরু হতে পারত। কিন্তু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা বেতন বঞ্চনার পাশাপাশি আর্থসামাজিক বঞ্চনার একটা অবসান চাইছিলাম আমিও। তাই, দিনটা ২৪ জুন, শুরু হল অন্যভাবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এই বঞ্চনার কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে আমাদের – এই আশা, এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু ভবিষ্যৎ জানি না। আগেও তো মিছিল করেছি। মানববন্ধন করেছি। প্রশাসনিক নানান দপ্তরে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু কোনও আশার আলো তো দেখিনি। উল্টে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ‘অযোগ্য’ বলে সম্বোধন করেছেন। সেই অপমানে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকারা ২০১৮’র ৩০ অক্টোবর শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে মিছিল করে পৌঁছাতে চেয়েছি রাজ্যের সেই সর্বময় কর্ত্রীর কাছে। কিন্তু ডোরিনা ক্রসিংয়েই আমাদেরকে আটকে শতাধিক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেদিন জেলে বসে গ্রেফতার হওয়া সহকর্মীরা অনশনে বসতে চেয়েছিলেন। জেলের বাইরে থেকে আমরা বলেছিলাম অনশনে বসব। পরিস্থিতি জটিল আকার নিচ্ছে দেখে পুলিশ ছেড়ে দেয় ওঁদের। কিন্তু ওই ওইটুকুই। জল গড়ায়। আমাদের আর্তনাদ পৌঁছায় না ক্ষমতার অলিন্দে। উল্টে রাজরোষ নেমে আসে আমাদের উপর। হুমকি, আক্রমণ এবং রাজ্যজুড়ে নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে চোদ্দজনকে ৬০ থেকে ৬০০ কিমি দূরে ‘কালাপানি’র বদলি।
সে সব স্মৃতি আছে আমাদের। সে সব কথা বলব পরে। তার আগে আমরা পৌঁছাব সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে, যেখানে আমরা জমায়েত হতে এসেছি। ভুল করে একটু ঘুরপথে গিয়ে সেখানে দেরি করে পৌঁছে দেখি কাতারে কাতারে প্রাথমিক শিক্ষক। হাজির শিলিগুড়ি, কোচবিহার থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শিক্ষক-শিক্ষিকা। মেদিনীপুর, পুরুলিয়া থেকে মুর্শিদাবাদ নদিয়ার শিক্ষক-শিক্ষিকা। কোথা থেকে নয়! আমরা বর্ধমানের। গুনে মাথা শেষ করতে না-পারলেও আই বি রিপোর্ট অনুযায়ী নাকি সত্তর হাজার ছাড়িয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গ কেন সারা ভারতের ইতিহাসে এত সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষকের জমায়েত কখনো হয়েছে বলে তো জানা নেই।
কিন্তু আজ ২৪ জুন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকেরা এসেছেন। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সম্পূর্ণ একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ ‘উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ইউ.ইউ.পি.টি.ডব্লিউ.এ’র ডাকে। ভারতের এই পোড়া মাটিতে যেখানে দলীয় রাজনীতির অঙ্গুলিহেলন ছাড়া একটি পাতাও নড়তে ভয় পায়, সেখানে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে এমন সমাবেশ! আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। দেশের তথাকথিত সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্মণগণ্ডিকে টপকে নিজের দাবি-দাওয়া নিয়ে নিজেই মুখর হওয়ার জন্য যে মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন, তাকে সম্বল করে মরে যাওয়ার আগে ঘুরে দাঁড়ানোর এ কোন আশ্চর্য স্পর্ধা?
হ্যাঁ, স্পর্ধা-ই বটে। পতিত ও প্রান্তিক মানুষের স্পর্ধা। স্পর্ধা না-হলে সুদূর বাঁকুড়া থেকে বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষক তার হাতের লাঠিটি নিয়ে চলে আসতেন না এই রাজপথে সকলের সাথে পায়ে পায়ে হাঁটতে, আর সকলের সাথে বলে উঠতেন না ‘আমরা কারা- উস্থিয়ান’, ‘রাজপথেতে – উস্থিয়ান’, ‘বেতন বঞ্চনার হোক- অবসান’। হ্যাঁ, ‘উউপত্বা’র সকল সদস্যরাই নিজেদেরকে ‘উস্থিয়ান’ বলেই পরিচয় দিয়ে থাকি আমরা। আসলে জনা কয়েক তরুণ শিক্ষক শিক্ষিকাকে নিয়ে, তাকে সম্মান দিতেই নিজেদেরকে ‘উস্থিয়ান’ পরিচয়ে একাত্ম অনুভব করা।
তা সেই সত্তর হাজারের এক-আত্মা উস্থিয়ানদের মিছিল এক সময় এগিয়ে চলল। আমি ছিলাম একেবারে পিছনের দিকে, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারেই দাঁড়িয়ে আছি। অগুনতি মাথা তখন পৌঁছে গেছে সেই ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সামনে থেকে কে যেন এসে বললেন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন হয়েছে আমাদের জন্য। কেউ পিছু হটবেন না। আমি আর নির্ঝর পিছন থেকে তখন শ্লোগান তুলে পেছনের সারির শিক্ষকদের নিয়ে এগিয়ে চলেছি। ট্যাবলোর উপরে বর্ধমানেরই রাজেশ, সুমনদা, পুরুলিয়ার সঞ্জীব শতপথি আরও অনেকে। আবার একজন এসে বললেন রানি রাসমণিতে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের পথ আটকে রেখে দিয়েছে। পিছন থেকে তখন অনন্ত পাত্র (বাম জমানায় পিটিটিআই আন্দোলনের আহ্বায়ক ও উউপত্বার রাজ্য কমিটির সদস্য। ওঁকেও বদলি করা হয় হোম সার্কেল থেকে পুরুলিয়াতে। সেই ক্ষোভে গ্রামের মানুষ বিক্ষোভ দেখায় সে সময়। খবরের কাগজে সে সব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এক সময়।) সহ আমাদের নেতৃস্থানীয়রা এগিয়ে গেছেন সামনে। এক সময় জলকামান প্রয়োগ করে পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করল। চালাল ফাইবার স্টিক নিরীহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর। পেছন থেকে প্রথমে হতচকিত হয়ে পড়লেও সকলে রুখে দাঁড়ালাম আমরা। সামনের সারির শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই প্রহার, ওই জলকামানকে ভয় না-পেয়ে এবার শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন ওখানে। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলার শিক্ষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারের কথা বলেন আড়ম্বর করে, বিশ্ব বাংলার কথা বলেন, সেই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীও তো তিনি। তাঁরই পুলিশ লাঠিচার্জ করছে, জলকামান ছুঁড়ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর?
ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলাম না আমরা কেউ-ই। রুখে দাঁড়ালাম সবাই। ততক্ষণে আমাদের একদল শিক্ষক এর প্রতিবাদে চলে যান বিধানসভার সামনে। অধিবেশন চলছে সেখানে। এ কোন গণতন্ত্র? কোন বিচার? সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করতেই পুলিশ টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতার করে তাঁদের। সে খবর রানি রাসমণিতে আসতেই সেই শিক্ষকেরা রাগে ক্ষোভে ঘৃণায় ভেঙে ফেলেন তিন তিনটে ব্যারিকেড। পুলিশ আবার লাঠি চার্জ করে। ওখান থেকেও গ্রেফতার করে বহু শিক্ষককে। দেখি ধরাধরি করে একটু পিছনে নিয়ে আসা হচ্ছে মেদিনীপুরের শিক্ষক সবজান আলি সেখকে। পেটে ফাইবার স্টিক চার্জ করেছে পুলিশ। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আর বলছেন, “পেটের ভিতর নাড়িভুঁড়িগুলো আমার নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে।” তড়িঘড়ি কোনওরকমে বরফ এনে তাঁর পেটে ঘষছে কেউ। আমি অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাম্বুল্যান্স করে চিৎকার করছি। এমন সময় দেখি নির্ঝরকে ধরাধরি করে নিয়ে এল কয়েকজন। এই ভিড়ে সে কখন আমার থেকে দূরে চলে গেছে। অজ্ঞান হতে বসেছে সেও। কোনো স্ট্রেচার পাওয়া গেল না। চ্যাংদোলা করে তুলে সবজানদাকে কোনো একটা গাড়িতে তুলে ক্যালকাটা মেডিকেলে নিয়ে গেলেন আমাদেরই কয়েকজন। আমি নির্ঝরকে নিয়ে একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্সে সোজা পিজি। একটু পরেই দেখি আরও চারজনকে পুলিশ নিয়ে এল পিজিতে। পুরুলিয়ার এক সহযোদ্ধা স্ট্রেচারে শোয়ানো। আমি এবার ছুটে গেলাম ওঁর কাছে। দেখি মেডিক্যাল এন্ট্রিতে ‘আননোন’ হিসেবে ভর্তি করা হয়েছে। সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের শান্তাদি এবং পুলিশের হাতে বেধড়ক মার খাওয়া আর এক শিক্ষক বিশ্বজিত সরদার। বললেন অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময়ও পুলিশ পেটে লাথি মেরেছে ওঁর। শক্ত জান তাই দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা ওই শিক্ষকের মুখ থেকে অস্ফুটে উচ্চারিত শুধু ‘পুরুলিয়া’টুকু বুঝতে পেরে যোগাযোগ করলাম উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে। জানতে পারলাম উনি জয়দীপ চট্টরাজ। তারপর তাঁর আসল নাম এন্ট্রি করা হল। চিকিৎসাও হল। কিছুক্ষণ পর ওঁরা প্রত্যেকে একটু সুস্থ হতেই বললেন রাসমণিতে অবস্থান বিক্ষোভে ফিরে যাব। কী সাংঘাতিক মানসিক দৃঢ়তা!
ওখানকার পরিস্থিতির খবর এইসব গোলমালে নেওয়া হয়ে ওঠেনি এতক্ষণ। শুধু ঐক্যমঞ্চের সুলগ্না পালের ফোনটা এল একবার, “রাজীব, আমি রাসমণিতে পৌঁছে গেছি। তুমি কোথায়?” কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ফোনের নেটও স্লো। আবার যাঁকেই ফোন করি দেখি ফোন বেজে চলেছে। আসলে ওঁরাও হাজতে। পরে একজন বলল শিক্ষামন্ত্রী আমাদের প্রতিনিধিদের ডেকেছেন। গেছেন আমাদের সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস, সঙ্গে সৌগতদা, মানস ও সন্দীপ। আমরাও আনন্দে তখন ফিরে আসি রানি রাসমণির দিকে। এমন সময় খবর পাই জেল থেকে এক সহকর্মীকে পাঠানো হচ্ছে পিজিতে। যতীন শুক্লা। প্রিজন ভ্যানে তুলে পুলিশ ওঁর বুকের পাঁজরে বুটের লাথি মেরেছে। মনে হচ্ছে ওঁর হাড় ভেঙেছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আর ক্যালকাটা মেডিক্যাল থেকে খবর আসে ওখানে মুর্শিদাবাদের মনীশ সহ আরও কয়েকজন ভর্তি এবং মেদিনীপুরের সবজানদার ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়েছে। অবস্থা ভালো না। অবস্থা ভালো না আমাদের আরও অনেকের। পুলিশের লাঠির ঘা খেয়েও যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার শিক্ষকদের স্বার্থে সন্দীপ গেছে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। জল কামানের আঘাতে বুদ্ধর চোখ চলে যেতে পারত একটু হলেই। ওর স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সামলে নিয়েছেন কোনওরকমে। বয়স্ক শিক্ষক সিদ্ধানন্দবাবুও বিধানসভার সামনে পুলিশি টানাহিঁচড়ায় অসুস্থ হয়ে জেলে।
কত কত খবর নেব? শুধু আগুনটা লেলিহান শিখা হয়ে উঠে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে, সমস্ত বৌদ্ধিক স্তর পেরিয়ে। সেই অগ্নিকুণ্ড নিয়েই ফিরে আসি রানি রাসমণি। ওখানে অধীর অপেক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষক। সুখবরের আসায়। বিকেল এগিয়ে আসছে তখন। সূর্যটাকেও এবার রণক্লান্ত লাগে। সেও স্পর্শ পেতে চায় গঙ্গার পবিত্র চরণ। আর আমরা আত্মসম্মানের। সম পদে সম মর্যাদার। যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনের জন্য ‘পে কমিশনের’ আগে ‘পে রিভিউ’। আর আন্দোলন করতে গিয়ে অন্যায় বদলির শিকার সেই চোদ্দজনকে পুরোনো স্কুলে ফিরিয়ে আনা।
অপেক্ষা করতে থাকি। অপেক্ষার মাঝে সূর্যটা আরও একটু ঝুঁকে পড়ে। আর সেই আনত সূর্যের রশ্মিগুচ্ছ ধরে ফিরে আসে সৌগতদারা। ওদের মুখে শুনি শিক্ষামন্ত্রী আমাদের দাবির বিষয়গুলির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন এবং মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ-রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের আর বেতন বৈষম্য রাখবেন না। বদলি হওয়া শিক্ষকদের বিষয়টিও বিবেচনার মধ্যে রেখেছেন। কিন্তু ঠিক কী কী কথা হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে? পরবর্তীতে রাজ্যকমিটিতে দেওয়া সৌগতদার লিখিত বয়ান অনুযায়ী:
প্রথমে আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের ন্যায্য পে স্কেল (৯৩০০-৩৪৮০০)-এর দাবী জানাই। উনি জানান তাহলে সমস্যা আছে কারণ যোগ্যতা অনুযায়ী হাইস্কুলের টিচারদের পে স্কেল এই রাজ্য দেয় : ৯০০০-৪০৫০০। আমারা এও বলি যে ‘এন্ট্রি পে ইন পে ব্যান্ড’ হাইস্কুলের বেশী, ওটা আমরা চাইছি না। এরপর উনি মাদ্রাসা স্কেল-এর গ্রেড পে জানতে চান। আমরা পুরো পি বি থ্রি পে স্কেলটা জানাই। ৭১০০-৩৬৭০০ স্কেল-এ চারটি স্কেল আছে। ওনাকে সিপিসি ৬-এর ২০৮ নং পাতা দেখিয়ে বোঝানো হয় যে মাদ্রাসাতেও কেন্দ্রের মত সবার একই পে স্কেল। তবে নিচেরটা কম কিন্তু ওপরের টা বেশী। অর্থাৎ ৭১০০, ৯৩০০-এর চেয়ে কম কিন্তু ৩৬৭০০, ৩৪৮০০-এর চেয়ে বেশী। এরপর চারটি পে স্কেল বলা হয় এবং এটাও বলা হয় যে পাঁচ বছর হলে মাদ্রাসায় আবার পরিবর্তন হয়। যে চারটি স্কেল জানতে চান এন্ট্রি পে ইন পে ব্যান্ড নিয়ে, সেটা ব্যাখ্যা করা হয়। পে ব্যান্ডগুলি হলো: ১) ৭১০০- ৩২০০, ২) ৭৪৪০-৩৬০০, ৩) ৮৩৭০-৩৯০০ ও ৪) ৮৬৫০-৪১০০। এর মধ্যে ১, ২, ৪ নম্বর স্কেলটি মাদ্রাসায় আছে। কিন্তু তাদের কারোরই ৫০% হায়ার সেকেন্ডারী ও দুবছরের ডি এল এড লাগে না, কিন্তু আমাদের লাগে। ওনাকে এটা বলে ৮৩৭০-৩৯০০ নামের ইউনিক স্কেল দিয়ে বলা হয়, এটাই সর্বনিম্ন ট্রেন্ড টিচার দের জন্য। দেখুন এই স্কেলটাও মাদ্রাসার চেয়ে বেশী, আবার হাইস্কুলের পাশ গ্রাজুয়েটদের চেয়ে অল্প কম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো এই স্কেলের সর্বোচ্চ সীমা কেন্দ্রীয় বেতন কাঠামোর চেয়ে বেশী আর সবাই ট্রেন্ড প্রায়। এবার বল ওনার কোর্টে, আমরা এটা প্রমান করে ছেড়েছি যে পে রিভিউ করতে হয়, পে কমিশনের সাথে স্কেল বাড়ার কোন সম্পর্ক নেই। উনি আমাদের ‘পে প্রোটেকশন’-এর দাবীও মেনে নেন এবং বলেন যে উনি আমাদের সাথে সহমত এবং সেটা মিডিয়াকেও বলেন আর আপনারা প্রত্যেকেই সেটা দেখেছেন। এতেও শেষ নয়, যদি আমাদের কথা উনি না মানেন ও বদলী হওয়া শিক্ষকদের তাদের পূর্ববর্তী স্কুলে না ফেরান তবে আন্দোলন শেষ অবধি চলবে। সব শেষে জানিয়ে আসা হয়েছে যে আমাদের মূল দাবী কিন্তু যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য বেতন কাঠামো।
একজন দুঁদে রাজনৈতিক ব্যক্তির কথাবার্তা যেমন হয় এ-দেশে তার কোনওরকম এদিক ওদিক হল না শিক্ষামন্ত্রীর কথায়। কিন্তু শিক্ষকরা আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মুখের কথায় আর বিশ্বাস করতে চান না। অতীত অভিজ্ঞতাও তো কম নেই সকলের। এই প্রতিশ্রুতির মোয়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কত তো খেয়েছে দেশের সাধারণ নাগরিক। তারপরও এ পোড়া দেশে দারিদ্র দূর হয় না, কৃষক আত্মহত্যা করে, বেসরকারি কারখানায় সামান্য একটু কাজের নামে সাধারণ ছেলেরা নিজেদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করে। নদী চুরি হয়, পুকুর চুরি হয়, মাটি চুরি হয়, জল চুরি হয় আর কাটমানির টাকা চলে যায় চোরাপথে নরক থেকে ক্ষমতার স্বর্গের পারিজাত বাগানের দিকে। এদিকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা আর শিক্ষাঙ্গন রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হয়ে পড়ে। ভেঙে পড়ে সমাজের ভিত। কোমায় চলে যায় মানবিকতার স্পর্শগুলি।
ওদিকে কর্পোরেট হাউসগুলো স্বঘোষিত অবতার হয়ে নেমে আসে আমাদের কাছে। তারপর আদর করে যূপকাষ্ঠে ভরে দেয় আমাদেরই মাথা। কী লাভ এসব মৌখিক প্রতিশ্রুতির? আগুনে আবার ঘি পড়ে। অবস্থান কর্মসূচি জারি থাকে আমাদের। কেউ কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যায় বাড়ির দিকে। চিৎকার করে বলতে থাকে, “সরকার, সরকার – তুমি নরকের দ্বার।” আমি বসে পড়েছি ততক্ষণ। ওই রেলিং ধরে। একটা টাইম মেশিন আমাকে তুলে নিয়ে যায়। কোথা থেকে শুরু হয়েছিল সব? কী আমাদের দাবি? কীভাবেই বা পথ চলেছি আমরা? একটা জায়েন্ট স্ক্রিন ভেসে ওঠে আমার সামনে। তাতে স্ক্রলিং হতে থাকে:
- রিভিশন অব পে অ্যান্ড অ্যালাউন্স বা ‘রোপা ২০০৯’ থেকেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষায় বেতন বৈষম্যের সূত্রপাত হয়। কেন্দ্রীয় ষষ্ঠ বেতন কমিশন ২০০৬–এর রিপোর্ট অনুযায়ী পে স্কেল আপগ্রেড বা বেতন কাঠামো পরিবর্তনের কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে এবং তা বিশেষভাবে প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য। কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন ২০০৬–কে অনুসরণ করেই আমাদের রাজ্যে রোপা ২০০৯ গঠন করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সর্বভারতীয় বেতন কাঠামো (পে ব্যান্ড বা পিবি: ৯৩০০–৩৪৮০০, গ্রেড পে বা জিপি: ৪২০০) মানা হয়নি। পরবর্তীকালে এই রাজ্যের প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকাকে এনসিটিই নির্ধারিত যোগ্যতামান (এইচ এস–এ ৫০% ও দুই বছরের ডিইএলএড) অর্জনে বাধ্য করা হয় কিন্তু পে স্কেল রিভিশন বা বেতন কাঠামোর সংশোধন করা হয়নি। এই বেতন বঞ্চনার অবসানের লক্ষ্যেই ২০১৭ সালে হাইকোর্টে মামলা করা হয়।পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউইউপিটিডব্লিউএ আত্মপ্রকাশ করে। ঐদিন প্রেস ক্লাবে কেন্দ্রীয় হারে বেতনের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
- এরপর ১৮ মার্চ ২০১৮ বিকাশ ভবনে শিক্ষা সচিবকে প্রাথমিক শিক্ষকদের আর্থিক বঞ্চনার দাবিপত্র পেশ করা হয়।
- ১৯ মার্চ ২০১৮ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে দাবিপত্র পেশ করা হয়।
- ২৩ এপ্রিল ২০১৮ দিল্লিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে স্মারকলিপি প্রদান করেন ইউইউপিটিডব্লিউ–এ‘র প্রতিনিধিরা।
- ১ মে ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত জেলায় জেলায় এসআইএস, ডিআই, চেয়ারপার্সনদের কাছে দাবিপত্র পেশ করা হয়।
- ১ জুন ২০১৮ সল্টলেকে উন্নয়ন ভবনের পাশে অ্যাসোসিয়েশন তাদের প্রথম সমাবেশ করে এবং বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
- ১৭ জুলাই ২০১৮ ষষ্ঠ পে কমিশনের দপ্তরে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির স্বপক্ষে আবেদন করা হয়। সমগ্র জুলাই মাস জুড়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিজেপির রাজ্য সম্পাদক দিলীপ ঘোষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন। এছাড়া রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে দাবিপত্র পাঠানোর উদ্দেশ্যে সারা রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালিত হয়।
- ২ আগস্ট ২০১৮ উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর পায়।
- ৭ আগস্ট ২০১৮ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বিরাট পদযাত্রা ও সমাবেশ হয় এবং নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে স্বাক্ষর সমন্বিত দাবিপত্র পেশ করা হয়।
- ইউইউপিটিডব্লিউএ তার নামের সার্থকতা সামাজিক দিক থেকেও বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ কেরলের বন্যা বিধ্বস্ত মানুষদের জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ৩৮০৫০.৫০ টাকা প্রদান করে।
- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ নিজেদের দাবির স্বপক্ষে উত্তরবঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করা হয়। ১ অক্টোবর ২০১৮ উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা এবং দক্ষিণবঙ্গে বিকাশ ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় এবং শিক্ষা সচিবকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
- ২৯ ও ৩০ অক্টোবর শহিদ মিনারের পাদদেশে দু‘দিনের অবস্থান কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘অযোগ্য‘ বলে মন্তব্য করেন এবং তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রায় শতাধিক শিক্ষক –শিক্ষিকা কারাবরণ করেন।
- ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী ফের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির স্বপক্ষে চিঠি পাঠান।
- ১৮ নভেম্বর ২০১৮রাজ্যপালের কাছে সংগঠনের প্রতিনিধিরা দাবি পেশ করেন।
- ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ২৯৪ জন বিধায়ক ও ৪২ জন সাংসদকে দাবিপত্র পেশ করা হয়।
- ১৯ নভেম্বর ২০১৮ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সংগঠনের নেতাদের ডেকে পাঠান এবং দাবি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
- ২৩ নভেম্বর ২০১৮ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ঐতিহাসিক মহামিছিল সংগঠিত করা হয় এবং সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সহ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়।
- ২৪ নভেম্বর ২০১৮ প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনার বিষয়টি তুলে ধরে বিধানসভা অধিবেশনে বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা গণ ওয়াকআউট করেন।
- ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইউইউপিটিডব্লিউএ–এর চাঁদা বয়কট আন্দোলনের চাপে সরকার ক্রীড়াক্ষেত্রে ৪০% বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়।
- এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শিয়ালদহ থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিল করে ও রামলীলা ময়দানের সমাবেশ থেকে সরকারকে বেতন সংক্রান্ত দাবি বিবেচনা করার জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়।
- এরপর ৬ মার্চ ২০১৯ দিল্লির যন্তরমন্তরে একদিনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকেরা অবস্থান করেন এবং এনসিটিই ও মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।এরপর রাজ্য সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে সংগঠনের ১৪ জন শিক্ষককে প্রায় ৪০০–৬০০ কিমি দূরত্বে অনৈতিক ভাবে বদলি করে। যাঁদের মধ্যে দুজন শিক্ষিকাও রয়েছেন।
- ১৯ এপ্রিল ২০১৯, অবৈধ বদলির প্রতিবাদে শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিল করা হয়। অবৈধ বদলির বিষয়ে বিকাশ ভবনে বারংবার ডেপুটেশন দেওয়া হয় এবং শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়।
- এরপর ২৪ জুন ২০১৯ অ্যাসোসিয়েশন চরম আন্দোলনের দিন ঘোষণা করে। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত প্রায় ৭০০০০ শিক্ষক শিক্ষিকার পদযাত্রা…
পদযাত্রা পর্যন্ত আসতেই ফোনটা বেজে ওঠে। সংবিৎ ফেরে আমার। আমাদের আন্দোলনের সহযোদ্ধা সুচিত্রা মাজির ফোন। কাছে যাই। শুনি পুলিশ বলছে বন্দি ৫৮ জন শিক্ষককে ছাড়া হবে না এবং নানারকম ক্রিমিনাল ধারায় ফাঁসানো হবে যদি না আমরা অবস্থান বিক্ষোভ থেকে উঠে যাই।
পণবন্দি! মাথাতে একটাই শব্দ টোকা মারে। ওই পণবন্দির দলে সুচিত্রার স্বামীও আছেন। ভাস্কর ঘোষ। আছেন আমার সার্কেলের সৌমেনদা সহ শান্তনু মণ্ডল, সায়ন মিত্র, অরুণ দাস, প্রকাশ দাসের মতো আমাদের নেতৃস্থানীয়রা। কে নেই? তবু সুচিত্রা বলে যা হবার হবে। আমাদের দাবির পক্ষে নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশিকা না-পেলে উঠব না। নাছোড়বান্দা জেদি সহযোদ্ধাটিকে শান্ত করার চেষ্টা করি। তাছাড়া যে শিক্ষামন্ত্রী একদিন এই আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘অযোগ্য’ বলেছিলেন, সেই তিনিই আজ আন্দোলনের চাপে আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন। এই নৈতিক জয় তো কম নয়। এখন বল সরকারের কোর্টে। এইসব কথা যখন আলোচনা করছি ওঁর সাথে তখন রাত নটার অন্ধকারে মাইকে ভেসে আসে সন্দীপদার কণ্ঠস্বর: “ইউইউপিটিডব্লিউএ-র পক্ষ থেকে সরকারকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এই ব্যাপারে নির্দেশিকা জারির জন্য। ওই সময়ের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে কোনও নির্দেশিকা না আসলে সংগঠনের নেতৃত্বে এই প্রাইমারি শিক্ষকরা আরও আরও কঠিন ও চরম আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।”
হ্যাঁ, পনেরো দিন অর্থাৎ ৯ই জুলাই পর্যন্ত। একটা সরকারে সদিচ্ছা থাকলে, শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতি যদি সত্যিই থাকে তাহলে নির্দেশিকা জারি করতে পনেরো দিন যথেষ্ট। আর তা না হলে? আমি, নির্ঝর কিছু বলে ওঠার আগে সুচিত্রা গেয়ে ওঠে:
‘ওহে শাসক, ওহে শাসক তোমার হাতে লাঠি
কলম আমার সাথে আছে আর আছে সহপাঠী…’
সনৎ ধীবরের লেখা গান। সুচিত্রা গাইছে। ওদিকে ফোনে খবর এল ভাস্কর সহ বাকি ৫৭ জনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। আর আমি দেখছি রানি রাসমণির মূর্তির ওখান থেকে একটা ক্ষীণ আলো ভাসতে ভাসতে সপ্রতিভ করে তুলছে সুচিত্রা মাজি, পৃথা বিশ্বাসদের…
লেখক রাজীব দত্ত একজন প্রাথমিক শিক্ষক।
thanks dear .