শঙ্কর মুদীঃ ‘একটি রাজনৈতিক ছবি’?


  • April 1, 2019
  • (3 Comments)
  • 3219 Views

নব্বইয়ের দশকে সারা বিশ্বের কাছে ভারতবর্ষের মার্কেট উন্মুক্ত করে দেওয়া, একদিকে নয়া-উদারনীতি এবং মুক্ত বাজার পুঁজিবাদী অর্থনীতি, অন্যদিকে ছোট্ট পাড়ার ছোট্ট পুঁজির চায়ের দোকান কিংবা মুদির দোকান – এই বিরাট রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক ক্যানভাসে ‘শঙ্কর মুদি’ নামক স্বঘোষিত রাজনৈতিক সিনেমার বিস্তার। স্বঘোষিত, কারণ, এযাবৎ আমার দেখা এছবির সবকটি পোস্টার এবং ইউটিউবের ট্রেলারে ‘একটি রাজনৈতিক ছবি’ হিসেবে ‘শঙ্কর মুদী’র বিজ্ঞাপন করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, রাজনৈতিক ছবির প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী দীর্ঘ ইতিহাস, এবং সাথে সাথে আদৌ অরাজনৈতিক ছবি বলে কিছু হয় কীনা, এ জাতীয় প্রশ্ন এই স্বঘোষিত বিজ্ঞাপিত সার্টিফিকেট দেখে মনে আসতে বাধ্য। ছবির কেন্দ্রীয় রাজনীতি এবং অর্থনীতি, এবং যেহেতু স্বঘোষিত ‘রাজনৈতিক’, তাই তার গর্বভরা অভিধার খানিক তদন্ত, এবং সাথে সাথে যেহেতু বিষয়টা আসলে ‘ছবি’ তাই ছবি হিসেবে তার সফলতা বা দুর্বলতা নিয়ে কিছু কথা বলাই আমাদের এ লেখার লক্ষ্য।  লিখেছেন সায়ন্তন দত্ত 

 

নব্বইয়ের দশক থেকে মুক্ত বাজারের অর্থনীতির প্রভাব সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী জানি, আমাদের শিল্প সৃষ্টি, শিল্প ভোক্তা, শিল্প সমালোচক – এই মানুষদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অর্থনীতির গুড় খাওয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণী। ছোট পুঁজির ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়া এবং নাম না জেনে স্থানীয় সিপিএম দাদার এফডিআই বিরোধীতা (ছবি থেকে প্রাপ্ত ঘটনা) – এইসব খুচরো প্রতিরোধ কীংবা প্রতিরোধের নামে নিজের পকেট ভর্তি, এইসবও আমরা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই নিজেদের পাড়ায় একটা একটা করে ফ্ল্যাটবাড়ি ওঠা, স্থানীয় সেলুন ভাঙ্গা পড়া, চায়ের দোকান, মুদির দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া,ঝকঝকে শপিং মল এবং চকচকে রেস্টুরেন্টে প্রথমে প্রবল অস্বস্তি এবং পরে একটু একটু করে মানিয়ে নেওয়া, এও আমরা, নব্বই দশকের দ্বিতীয় ভাগে যাদের জন্ম, তারা প্রচুর দেখেছি। বাংলা সিনেমা, তার ঋতুপর্ণীয় সুরক্ষিত অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে এসব অস্বস্তিকর বিষয় খুব একটা নিয়ে না আসলেও ‘স্থানীয় সংবাদ’ ছবিটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, যতই ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেই প্রযোজক সংস্থা ব্ল্যাক ম্যাজিক মোশন পিকচার্সের দোকান উঠে যাক না কেন। অতএব ‘শঙ্কর মুদী’ ছবি দেখতে যাওয়ার আগে আমাদের সযত্নে লালিত ধারণা অনেক, এক, ছবির বিষয়; যা সমকালীন বাংলা ছবি উচ্চবিত্তের বৈঠকখানায় সেঁদিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাংলা সিনেমা থেকে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। দুই, ছবির ইতিহাস, যা, আশ্চর্যজনক ভাবে ক্ষুদ্র – আমার স্মৃতিতে কেবলমাত্র ‘স্থানীয় সংবাদ’।

 

কবীর সুমন, ছবিটির সঙ্গীত পরিচালক, প্রোমোশনাল ভিডিওতে নিজেদের কাজকে নিজেরাই সার্টিফিকেট দেন ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের প্রবন্ধ উদ্ধৃতি দিয়ে। ‘দ্য অথর অ্যাজ প্রোডিউসার’ প্রবন্ধে বেঞ্জামিনের বক্তব্য ছিল, শিল্পের শিল্পমূল্যই তার রাজনৈতিক মূল্যকে নির্ধারণ করে। অর্থাৎ  চিত্তাকর্ষক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিষয় ছবির কনটেন্ট হিসেবে থাকলেও, বিষয়টা যেহেতু ছবি, একধরণের শিল্প, কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দলিল নয়, তাই শিল্পের পাঠক হিসেবে আমাদের কর্তব্য আইডিয়াকে কতটা সার্থকভাবে ছবিটি নিজস্ব শরীরে বুনে নিতে পেরেছে, কতটা মুন্সীয়ানায় বিষয়ের গঠনে ছবিটি আদতে একটি ছবি হয়ে উঠতে পেরেছে, তা পড়ার চেষ্টা করা। সেই বিচারে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাংলা সমকালীন মূলধারার ছবির নিরিখে ব্যতিক্রমী বিষয় হলেও, ছবি জুড়ে সমকালীন বাংলা ছবির কয়েকজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, কৌশিক গাঙ্গুলী, শাশ্বত চ্যাটার্জী, রুদ্রনীল সেনগুপ্ত, কাঞ্চন মল্লিক, অঞ্জন দত্ত প্রমুখ’র অভিনয়, কবীর সুমনের সুর এবং গান থাকলেও, ‘রাজনৈতিক ছবি’ নামক গর্বভরা অভিধা ভুলে গেলেও, শিল্পের বিচারে, ক্রাফটের বিচারে, গঠনের বিচারে, আর্টের বিচারে, দুঃখিত কবীর সুমন, ‘শঙ্কর মুদী’ তার সমকালীন অন্যান্য ছবির তুলনায় এগিয়ে তো নয়ই, বরং সামান্য কিছু মূলধারার ভালো ছবির ধারে কাছেও নয়, বরং খারাপ, বেশ খারাপ।

 

ধ্রূপদী হলিউডের যুগে বিলি ওয়াইল্ডার তাঁর জগৎবিখ্যাত ছবি ‘ডবল ইনডেমনিটি’র সহ-চিত্রনাট্যকার রেমন্ড শ্যান্ডলারের প্রতি গাল পেড়েছিলেন, শ্যান্ডলার ভালো লেখক হয়েও ছবির ‘কন্সট্রাকশান’ ঠিকঠাক করতে পারেননি। ‘কনস্ট্রাকশন’ শব্দটি, ইচ্ছাকৃত ইংরেজী ব্যবহার করলাম, কারণ কাছাকাছি বাংলা, ‘গঠন’ শব্দে ‘কনস্ট্রাকশন’র সম্পূর্ণ দ্যোতনা হয় না। অর্থাৎ ফ্রি মার্কেট ক্যাপিটালিজমের দাপটে ছোট পুঁজির ধ্বংস হয়ে যাওয়া ব্যবসা যদি আমার ছবির বিষয় হয়, তবে এ সম্পর্কিত কিছু ক্লিশে, দুর্বল স্টুডিও সেটে কলোনিপাড়া, মুদির দোকান, চায়ের দোকান, পাড়ার মাতাল অথচ ভালো দাদাদের দল, উঠতি বাজরের গুড় খাওয়া ভিলেন সিপিএম – ইত্যাদি দেখালেই হয় না, বরং প্রতিটি বিষয়কে, আইডিয়াকে, গল্পের কাঠামোয় বুনে দিতে হয়। এ ছবির প্রচুর আইডিয়া এবং দৃশ্যের কথা বলা যায়, যা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন দৃশ্য হিসেবে, বা বৃহত্তর আইডিয়ার গোঁজামিল প্রকাশ হিসেবে থেকে গেছে, গল্পে যার কোনো প্রভাব নেই। যেমন, ধরা যাক প্রথম অংশে দেখা আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়েটি, যাঁকে শঙ্কর মুদীর চেনা বিশ্বের বাইরের কেউ হিসেবে আনা হয়, বাকি ছবি জুড়ে তার আর কোনো ভূমিকা নেই। যীশু অভিনীত মাতাল কর্মহীন রাতে বাড়ি ফেরা যুবকটি, মোটিফের মত তিনবার তাকে দেখা গেলেও বাকি গল্পের সাথে সেই চরিত্রের কী সম্পর্ক, স্পষ্ট নয়। নানান ইমেজ, ক্লোজশট, ছোট ছোট বেখাপ্পা দৃশ্য ছবি জুড়ে আছে, গল্পের বুননে মুন্সীয়ানা নেই, তার সাথে না-বুননের একধরণের শৈল্পিক মূল্য থাকে, এ ছবিতে তাও নেই।

 

ছবির ‘ছবি’ হয়ে ওঠার আরেকটি জরুরী এলিমেন্ট, গ্লোবালাইজেশন পূর্ব পাড়াকে দেখা, সেই পাড়ার সংস্কৃতিকে ইমেজে, সাউন্ডে নিয়ে আসা, সিনেমাটিক স্পেস নির্মাণ করা, এ জাতীয় কোনো সিনেমাটিক মুন্সীয়ানাও ছবিতে কোথাও স্থান পায়নি। ২০১৯ সালে বসে ২০০৫-০৯ সালের পাড়ার গল্প দেখাতে গেলে, ইমেজ-সাউন্ড লোকেশনের একধরণের সিনেমাটিক পরিশ্রমী দলিল লাগে। ‘স্থানীয় সংবাদ’ ছবি, যে মুন্সীয়ানায় এই একই সময়ের কলোনিপাড়ার দৃশ্য এবং শব্দের আর্কাইভ হয়ে ওঠে, এবং যার ফলে, যে সময়ের গল্প সে বলছে, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা যায়, এ ছবিতে নেই তার ছিঁটেফোঁটাও। অথচ, স্থানীয় সংবাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কী এই ছবিটি অচেতন? আমি অনেকাংশে নিশ্চিত, উত্তর না, কারণ ছবিটির শেষ হয় স্থানীয় সংবাদ ছবিরই একটি ডিভাইস ব্যবহার করে। অর্থাৎ, সেই পরিচিত প্রিটেনশাসনেস, কাজের বেলায় লবডঙ্কা। একটি প্রেডিক্টেবল ক্লিশে গল্প, গ্লোবালাইজেশনের ফলে ব্যবসায় মন্দা হওয়ার স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা, – গল্পটি তার সময়ের সাথে, লোকেশনের সাথে, স্পেসের সাথে যথেষ্ট অর্গানিক ভাবে আর যুক্ত থাকেনা, বরং সময়কে ব্যবহার করে (এক্সপ্লয়েট করে বলা যায় কী? সম্ভাবনাটি পরে খতিয়ে দেখব), সময়কে প্রেক্ষাপট করে ইতস্তত বলা হয়েছে। ফলে যে সময় এবং স্পেসের প্রতি ছবিটি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারত, তার প্রতিই, ছবিটি হয়ে পড়েছে অসৎ এবং কপট।

 

অথচ সম্ভাবনা যে একেবারেই ছিল না, তা নয়। যে কোনো ছবির একটি প্রাথমিক স্তম্ভ, অভিনয়, এই ছবির বোধহয় একমাত্র প্রাপ্তি। পারফরমেন্সের নিরিখে, ছবির অন্তর্গত গড়গাছা পাড়ার প্রত্যেকে, শঙ্কর মুদী হিসেবে কৌশিক গাঙ্গুলী, তাঁর স্ত্রী শ্রীলা মজুমদার, প্রবীণ স্কুল শিক্ষক হিসেবে অঞ্জন দত্ত, স্থানীয় সিপিএম দাদা শান্তিলাল মজুমদার, পাড়ার দাদা শাশ্বত চ্যাটার্জী, বহুরূপী রুদ্রনীল ঘোষ, দর্জি অঙ্কিতা চক্রবর্তী – সবাই, কমবেশী পারফরমেন্সের ব্যপারে সার্থক। এরা কেউই শ্রেণীগত ভাবে এরকম অংশের বাসিন্দা নন, কিন্তু মেকাপ এবং পরিবেশনায় এদের কারও কাজ স্টুডিও সেট, অথবা সময় বা স্পেসের মত অসৎ লাগেনি। চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, আবহ – কেউ আলাদা করে ভালো খারাপ কিছুই নয়, কারণ ছবির সাপেক্ষে কাউকে আলাদা করে চোখে পড়েনি।

 

পরিশেষে আরেকটি জরুরী প্রসঙ্গ। শুরুতেই যার কথা বলেছি, ছবিটি তার বিজ্ঞাপনের স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ‘একটি রাজনৈতিক ছবি’, এই পরিধা ঘোষণা করে। অরাজনৈতিক ছবি বলে কিছুই হয় না, এই বৃহত্তর এবং গভীরতর তর্কে সময়ের অভাবে আমাদের প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু, আমরা বুঝতে পারি, একধরণের তরল এবং সরল অর্থে ছবিটি রাজনৈতিক, অর্থাৎ ছবিটি একটি গল্প বলে যার প্রেক্ষাপটে একটি রাজনৈতিক বিষয় আছে। একদিক থেকে এও মিথ্যাচার, কারণ তথাকথিত রাজনৈতিক বিষয় নয়, এমন ছবিও সার্থক ভাবে রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে, (যেমন পৃথিবী বিখ্যাত নিউ ওয়েভ ছবি, ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ) তাই ‘রাজনৈতিক’ অভিধার সাথে সরাসরি গল্প বা প্রেক্ষাপটের কোনো অবিচ্ছেদ্দ সম্পর্ক নেই। সময় এবং প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে নিজেকে ‘রাজনৈতিক’ দাবি করা একধরণের ঔদ্ধত্ব, যা আরেক রকমের রাজনীতি, শিল্পের বিচারে যা রাজনীতি, সেই রাজনীতিকে প্রায় অস্বীকার করে যায়। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, কোনো শিল্প তখনই রাজনৈতিক হয়, যখন তা বক্তব্য বিষয়কে, তার থিম এবং আইডিয়াকে রাজনৈতিক ভাবে দেখে, রাজনৈতিক ভাবে আলোচনা করে। অর্থাৎ, শুধু ‘কি?’, বিষয়টিই রাজনৈতিক হলে হয় না, বরং ‘কি ভাবে?’, বিষয়ের ট্রিটমেন্ট – তাকেও, বরং ‘তাকেই’ রাজনৈতিক হতে হয়। এ ছবির ক্ষেত্রে, ছবিটি যে সময়কে দেখছে, তাকে কি রাজনৈতিক ভাবে দেখে? ঘটনাকে, ঘটনার কারণকে কোথাও কি রাজনৈতিক ভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে? যে পরিবর্তন ছবির মূল বিষয়, অর্থাৎ একদিকে শপিং মল এবং আরেকদিকে মুদির দোকান, এই দুইকে শুধু বাস্তববাদী পুনর্নিমাণ করলেই কি ঘরণায় (মুদির দোকানের দুর্বল স্টুডিও সেট, সেসব বাদ দিলাম) রাজনৈতিক হয়? যে সময় এবং মানুষের পক্ষে ছবিটি, অর্থাৎ কলোনি পাড়া, তার অন্তর্হিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি, চায়ের দোকান, পাড়ার মোড়, অন্ধকার রাস্তা – এ সবের ভয়াবহ মেল (male) অস্তিত্ব, পুরুষের দৃষ্টি (male gaze), এসব নিয়ে কি ছবিটা আদৌ সমালোচনামূলক, অতএব রাজনৈতিক? ছবিটি কি স্থানীয় পাড়ার দাদার সংলাপ, ক্ষয়ে আসা বৃদ্ধের সিম্বলিক হাহাকার এবং বয়স্ক প্রফেসরের বিলাপ, দীর্ঘশ্বাস ছাড়া দুই ধরণের অর্থনৈতিক অবস্থা (অর্থাৎ নব্বইয়ের আগে এবং পরে, ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ পুঁজি) নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক, কোনো সন্দর্ভ তৈরী করে? অর্থাৎ, ছবিটি কি ফর্মে রাজনৈতিক? উত্তর না – না – বিরাট কতগুলো না।

 

উল্টে, যে অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির প্রতিরোধ ছবিটি করে, যে অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির পথ ধরেই ছবিটি নির্মিত হয়। শপিং মলের বিরোধীতা করা ছবি সেই শপিং মলের আইনক্সে বসেই আমাদের দেখতে হয়। মূলধারার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্গত নির্মাণ, বিশেষ কৃতজ্ঞতায় শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের নাম, আইনক্সের থিয়েটারে মুক্তি – মানুষ শপিং মলের বীভৎস উজ্জ্বল দাঁত বের করা পুঁজিবাদের সামগ্রী কিনতে কিনতে গোটা শপিং মল পরিক্রমা করে গভীরে গিয়ে সর্বোচ্চ তলায় তবেই আইনক্সে পপকর্ন খেতে খেতে শপিং মলের বিরোধীতা দেখবেন। সেন্টিমেণ্টে সুড়সুড়ি দিয়ে স্টুডিও সেটের ভিতর একধরণের সিন্থেটিক কলোনিপাড়ার ক্ষয়ে যাওয়ার গল্প, খানিকটা নকশাল আন্দোলন বিষয়ে কালবেলা’র মত, তাঁদের বিক্রী করা হবে। ছবিটি নয়া উদারনীতি এবং ফিন্যান্স ক্যাপিটালের একধরণের মিনমিনে প্রতিবাদ বিক্রী করবে নয়া উদারনীতি এবং ফিন্যান্স ক্যাপিটালের পাহাড়ে বসেই, সেই পাহাড়ের পুঁজিকে ব্যবহার করেই।

 

অবশ্য বাংলা মূলধারার ছবির কাছে, এর বেশী প্রত্যাশা করার অর্থ উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে প্রতিদিন সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় দেখার প্রত্যাশা করার মত। ‘শঙ্কর মুদী’ তাতে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করে, গ্লোবালাইজেশনের বিরোধীতা এবং বেশ কিছুক্ষণ স্ক্রীন টাইম লাল পতাকায় ঢেকে দিয়ে একধরণের মিনমিনে রাজনীতি বিক্রী করে। আর কেউ বলতে পারব না, মূলধারার বাংলা ছবি ‘সিরিয়াস বিষয়’ নিয়ে কথা বলে না। তা করতে গিয়ে ছড়িয়ে লাট করে কি না, সে অবশ্য অন্য কথা।

 

সায়ন্তন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচনা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ সায়ন্তনের নেশা। ‘আফটার আসিফা’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি সায়ন্তনের পরিচালিত।

Share this
Recent Comments
3
Leave a Comment