আন্তর্জাতিক শ্রমসংগঠন বা আই.এল.ও–র ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ৯১তম সম্মেলনে পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য বিষয় আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারিত করা হয়েছে। এই সম্মেলনে প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল বিশ্ব কর্মস্থল নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস পালন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল পেশাজনিত রোগ-ব্যাধি এবং দুর্ঘটনা ও তজ্জনিত কারণে বলি হওয়ার ক্রমবর্ধমান বিপদেৱ প্রতি আন্তর্জাতিক স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলার মানসিকতা বৃদ্ধি করা। সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীদের পেশাগত/নিরাপত্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সংবেদনশীল হয়ে এবং গুরুত্ব সহকারে সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করে এক সুস্থ সংস্কৃতির সূচনা করা যেতে পারে। পেশাগত নিরাপত্তা এবং তৎ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের ক্রমহ্রাসমান হার বর্তমানে অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারত সহ সারা বিশ্বে ঘটনাবলী থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার অনেক কনভেনশন রয়েছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কনভেনশন ১৫০তম কনভেনশন থেকে শুরু হচ্ছে, যাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ও নির্বাচিত প্রয়োগ বিধির উল্লেখ রয়েছে কিন্তু ভারত সহ বেশ কিছু দেশ এসব কনভেনশন অনুমোদন করেনি। যেমন পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ১৯৮১ সালের ১৫৫নং কনভেনশন এবং পেশাগত স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক ১৯৮৫ সালের ১৬১নং কনভেনশন ভারত সরকার অনুমোদন করেনি। ভারত ১৯১৯ সাল থেকেই আইএলও–র গভর্নিং বডির স্থায়ী সদস্য। ব্রিটিশ শাসনকালে ২৮বছরে যেখানে ২২টি কনভেনশনের প্রস্তাব সমুহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে স্বাধীনতার পরবর্তী ৫৫ বছরে মাত্র ১৮টি কনভেনশন অনুমোদিত হয়েছে।
পেশাজনিত মৃত্যু ও দুর্ঘটনা
আইএলও থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ মানুষ সারা পৃথিবীতে নিজ নিজ পেশা বা কাজের কারণে মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে পেশাজনিত রোগে ২০.২ লাখ মানুষ এবং দুর্ঘটনায় ৩.৮ লাখ মানুষ মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। অথাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৫০০’র বেশি মানুষের পেশা জনিত ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটছে। সকালে কাজে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে না-আসা ব্যক্তির সংখ্যা দৈনিক ১০০০। কর্মস্থলে পেশাজনিত রোগে ও দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ বিশ্ব স্তরের জিডিপি’র ৪ শতাংশ।
প্রতি বছর পেশাগত দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৩০ কোটি। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১৬০ লক্ষ শ্রমিক পেশাগত বিপদের শিকার হন। এর মধ্যে অসংগঠিত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের হিসাব নেই।
ভারতের অবস্থা
আইএলও’র সূত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান খুবই কম। কিন্তু ভারত সহ উন্নয়নশীল দেশের থেকে সঠিক পরিসংখ্যানই পাওয়া যায়না। ঝাড়খণ্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যের রিপোর্টেতো সিলিকোসিস জাতীয় পেশাজনিত রোগের অস্থিত্বই যেন নেই। এসব রাজ্য ২ বা ৩ শতাংশ সিলিকোসিস আক্রান্ত অসুস্থতার উল্লেখ করেই দায় সারে। ঝাড়খণ্ড সরকার সিলিকোসিস নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুলীকরণের জন্য একটি কর্মপ্রকল্প তৈরি করেছে। কিন্তু এপর্যন্ত সিলিকোসিস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনোও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে আইএলও যে তথ্য পেশ করছে , প্রকৃত সত্য থেকে তা বহু দূর। ভারতে প্রতি বছর কারখানা গুলোতে পেশাজনিত দুঘর্টনার সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০। এর ফলে প্রতি বছর ১০০০ শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। দেশের ৩০লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পে ১৬৭ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত। এসব শিল্পে কাজের পরিবেশ অনুকূল নয়। নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা না করেই বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়।
দেশের অধিকাংশ পেশাজনিত রোগের কারণগুলির মধ্যে সিলিকোসিস, মাস্কিউলো – স্কেলিটান (পেশি-কঙ্কালতন্ত্রে) আঘাত; কয়লাখনি শ্রমিকদের মধ্যে নিয়ামোকোসিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ লাংস ডিজিজ (স্থায়ী অবরোধ মূলক শ্বাসতন্ত্রের রোগ), অ্যাসবেস্টোসিস, ভিজিনোসিস, কীটনাশক পদার্থের বিষক্রিয়া ইত্যাদি দেখা যায়।
খনি ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে ৩০ লক্ষ এবং নির্মাণ শিল্পে ৭০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত। এঁরা সর্বদাই সিলিকা কণাযুক্ত মিহি ধুলোর সংস্পর্শে কাজ করেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এসব শিল্পে সিলিকোসিস এর মতো দুরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ খুব বেশি। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে পাথর ভাঙা ক্রাশার ও র্যামিং(ramming) মাস উৎপাদনকারী ইউনিট এবং দূষণকারী শিল্পে কাজ করার ফলে সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা ২৫–৩০ লক্ষ। ক্রাশার শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিস পাওয়া গেছে ৫৫ শতাংশ। অপর একটি সমীক্ষায় একটি মারাত্মক তথ্য পাওয়া গেছে, তাহল একটা র্যামিং(rammig) মাস (কোয়ার্টজ পাউডার) উৎপাদনকারী শিল্পে মৃত ও আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ, এক্ষেত্রে গড় আয়ু সীমা ৩৩ বছর।
ঝাড়খণ্ডে ৬০ লাখ শিশু এতে প্রভাবিত হয়েছে, কেননা এদের উপার্জন কারী পিতা বা মাতার সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যু ঘটেছে বা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া নানা ভাবে প্রভাবিত হয়েছে যারা তাদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা, যাদের স্বামী দের অকালমৃত্যু হয়েছে বা তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিণামে এই সব পরিবারের শিশুরা অপুষ্টির শিকার। তাদের পড়াশোনা ছেড়ে বাড়ির চাকর হিসাবে বা শিশু শ্রমিক হিসাবে কোথাও কাজ করতে হচ্ছে।
মহিলা শ্রমিকদের অবস্থা
২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের অনুপাত ৬৮:৩২। ১৯৯১সালের জনগণনায় এই অনুপাত ছিল ৭৮:২২। মহিলা শ্রমিকদের অনুপাত বৃদ্ধি চিন্তা জনক, কেননা বিপজ্জনক শিল্প ক্ষেত্রে তাদের অনুপাতিক বৃদ্ধির ফলে প্রভাবিত হতে হচ্ছে। ফলত, মহিলা শ্রমিকরা বেশি বেশি করে পেশি কঙ্কালতন্ত্রের বিকৃতির শিকার হচ্ছে। কেননা এসব ক্ষেত্রে তাদের যে সকল কাজ করতে হয় তা তাদের শারীরিক গঠনের পক্ষে অনুকূল নয়। তাদের এমন সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হয় যে গুলো পুরুষদের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মস্থলে বৈষম্য ও যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার সমস্যাও রয়েছে।
দেশের ৫৮শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মহিলা। খেত মজুরদের কীট নাশক পদার্থের সংস্পর্শে আসতে হয়। এতে পেশাজনিত বিপদ বাড়ে। বিশেষ করে সন্তান সম্ভবা অবস্থায় অপ্রত্যাশিত গর্ভপাত এবং বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মের সভাবনা থাকে এবং নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিপদও থাকে। বিপজ্জনক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকার জন্য এই আশঙ্কা আরও বেশি হয়।
আমাদের দেশে বছরে কৃষি ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৯,২৫,৭০০; পেশাজনিত রোগে আক্রান্ত ১৯,০২, ৩০০ ও মৃতের সংখ্যা ১,২১,০০০। উত্তর ভারতে কৃষি কাজের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১৭ লক্ষ কৃষিজীবী দুর্ঘটনার শিকার হন, এর মধ্যে ২ লক্ষ মারাত্মক ভাবে জখম হন। ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ বিভিন্ন মেশিন, জিনিসপত্র টানার মেশিন, জিনিসপত্র উঁচুতে তোলার সময় দেহের ওপর পড়ে যাওয়া, মেশিন ভেঙে যাওয়া, অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে দক্ষ শ্রমিকের জন্য নির্ধারিত কাজ করানো প্রধান।
অবহেলা ও মৃত্যু
বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ও কারখানা মালিকদের মধ্যে পেশাক্ষেত্রগত নিরাপত্তা ও তৎ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য বিষয়ে দায়বদ্ধতার অভাব দেখা যায়। ট্রেড ইউনিয়নগুলিও এই সমস্যার প্রতি না মনোযোগ দেয়, না সময় দেয়। বেশির ভাগ নেতা শুধুমাত্র মজুরি বাড়ানো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারেই ব্যস্ত থাকেন।
প্রাণঘাতী ধুলো নির্গমনকারী খনন প্রক্রিয়াকরণ এবং এই জাতীয় শিল্পগুলির মধ্যে অধিকাংশ সংগঠিত শিল্পক্ষেত্রের অন্তর্গত। এর মধ্যে আছে র্যামিং মাস। পাথর ও লৌহ আকর ভাঙার ক্রাশার। তথ্য দপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। এই শিল্পই উনিটগুলি ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড়ো বেসরকারি কিংবা সরকারি হতে পারে। তথ্য দপ্তর সূত্রে পাওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এ বিষয়ে সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের পার্থক্য সংক্রান্ত কোনো নীতি বা পলিসি ও পরিভাষা নেই। ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পর আজ পর্যন্ত সার্টিফাই করতে পারে বা অনুমোদন দিতে পারে এরকম দায়িত্ব প্রাপ্ত কোনো চিকিৎসক নিয়োজিত হননি। যিনি পেশাজনিত রোগ ব্যাধি এবং দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের শংসাপত্র দেবেন।
ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট ১৯৪, দ্য মাইনিং অ্যাক্ট ১৯৫২, এবং সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত আইনি অধিকার, ইএসআই অ্যাক্ট ১৯৪৮ এবং ১৯২৩ সালের ওয়ার্ক মেন কম্পেনসেশন অ্যাক্ট জাতীয় আইনগুলিতে শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অধিকার প্রাপ্য। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ খনিশিল্প পরিচালক এবং সরকারি আধিকারিকরা এই আইন কানুনের তোয়াক্কা করেন না।
বিশ্বায়নের প্রভাব
উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বায়নের প্রভাব শুধুমাত্র শ্রমিকের মজুরির ওপরই পড়েনি বরং পড়েছে পেশাজনিত নিরাপত্তা ও তৎ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থানগুলির (সুযোগ সুবিধা) ক্রমাগত সংকোচন বা উপেক্ষণ এবং এ সম্পর্কিত আইন কানুন নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। এজন্য কারখানা ও খনির শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইন সমূহ যেমন ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট, ১৯৫২ সালের মাইনিং অ্যাক্ট, ১৯২৩ সালের ওয়ার্কমেন কমপেনসেশন অ্যাক্ট সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন শ্রম আইনগুলি সংশোধন করার প্রস্তাব এনেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এই সব সংশোধনগুলিই শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী এবং এতে শুধুমাত্র পরিচালকরাই লাভবান হবে। প্রকৃতপক্ষে এটা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত শ্রমিকের অধিকারের ওপর আক্রমণ।
এটা বোঝা দরকার যে পেশাজনিত অসুখ বা দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর কারণে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪% ক্ষতি হয়। এই খারাপ পেশাগত নিরাপত্তা ও খারাপ পেশাগত স্বাস্থ্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মোট উৎপাদন ২-১৪% ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিচালকবর্গ কর্তৃক উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নের দাবির আসল রূপ এর থেকে প্রকাশ হয়ে পড়ে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে এরূপ লোকসানের বোঝা শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। এটা কোনো ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।
জরুরি পদক্ষেপ
নতুন উদ্যোক্তাদের অপেক্ষাকৃত কমদামি ধুলো নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং তার জন্য নতুন নতুন উপকরণ তৈরি করার জন্য সরকার থেকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। আত্মরক্ষার জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি যেমন পাথর ভাঙা ক্র্যাশারের জন্য উপযুক্ত মাস্ক বা ধুলো প্রতিরোধী যন্ত্র তৈরি করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ধূলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাদি নির্মাণের জন্য প্ল্যান্ট তৈরি করা এবং শিল্প কারখানা গুলিতে নিরাপত্তা ইনসপেক্টর, আধিকারিক, সুপারভাইজার জাতীয় কর্মচারীদের নিয়োগ করতে হবে। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান ও হবে এবং কর্মস্থান নিরাপদ ও হবে।
শ্রমিকের স্বাস্থ্য একটি মৌলিক বিষয়, তাই পেশাগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশ্নজনিত নীতিকে কার্যকর করতে হবে। এই বিষয়টিকে সংবিধানের মৗলিক অধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায় সংগত দাবিগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখার সংস্কৃতি ও ব্যবস্থা গড়ে তুলে শ্রমিকদের জীবনের অধিকার ও মানবাধিকারের অন্য দিকগুলির প্রতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে যাতে উৎপাদন প্রণালী টেকসই ও লাভজনক হয়। এটা পালিত না হলে শ্রমিক শ্রেণি নিজেদের অধিকারর ক্ষার্থে যে আইনি পদক্ষেপ নেবে তা অবশ্য আইনি ভাবে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক হবে।
শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য সরকারি ছুটি এবং গগনভেদী স্লোগান দিয়ে শ্রমিক ঐক্য বজায় রাখার মধ্য দিয়েই সীমাবদ্ধ। মে দিবসকে শ্রমিক দিবস রূপে পালন করার পিছনে কারণ কী ছিল তা এদের কাছে প্রয়োজনীয় নয়। সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পয়লা মে’ কে বিশ্বব্যাপী ‘শ্রমিক দিবস’ রূপে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর থেকে একটি অতি সরলীকৃত একটা ধারণা গড়ে উঠেছে যে এই সমাজকে পাল্টে শ্রমিক রাজ গড়ে তোলার সূত্রপাত মে দিবস থেকে। যদিও এটা সত্য যে মে দিবস বিশ্বের শ্রমিক আন্দোলনে ছিল প্রেরণার উৎস। কিন্তু এর পেছনের চেতনা, সত্য ও ব্যবহারিক দিকগুলির উপলব্ধি করা হয়নি।
আট ঘণ্টা কাজ আট ঘণ্টা বিনোদন আট ঘণ্টা বিশ্রাম —এই তিনটি দাবি শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের প্রশ্নের সাথে যুক্ত ছিল এবং এখনও তা প্রাসঙ্গিক। এটা উপলব্ধি না করতে পারার ফলেই এই দাবি শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠেনি। এইজন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলি শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যে সম্পর্কিত কাজের জন্য ইউনিয়নের বিশেষ সেল তৈরি করে না। কোনো সামাজিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক শ্রেণির রাজ গড়ে তোলার দাবি যারা করে, তারা কেউ এপর্যন্ত সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। এমনকী প্রেস বিজ্ঞপ্তি টুকু জারি করেনা। দুর্ঘটনার শিকার এই শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য কিছু করেনি। আসলে শ্রমিক দিবসের ঐতিহাসিক দিকটিকে উপেক্ষা করে কেবল মাত্র আবেগ তাড়িত হয়ে তাঁরা রাজনৈতিক বিষয়কে জুড়ে দিয়েছেন। এর পরিণতিই আজ দেখা যাচ্ছে।
খনি ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে, সেখানে ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। সারাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে এক বড় অংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। তাঁরা যে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে কাজ করে সে সম্পর্কে তাঁরা অবহিতই নয়। পেশাগত নিরাপত্তা এবং সে সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের অধিকারের কথাই তাঁরা কোনো দিন শোনেননি। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে মালিকরাও এ সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে কর্মস্থলে তাঁরা একেবারেই নিরাপত্তাহীন। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে শ্রমিক, সুপারভাইজার, কারখানার মালিকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জোরদার প্রচার অভিযান চালানো প্রয়োজন।
লেখক অ্যাকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ ঝাড়খণ্ড (ওসাজ)-এর সেক্রেটারি জেনারেল। মূল হিন্দি লেখাটি পাটনার ফিলহাল পত্রিকায় প্রকাশিত। বঙ্গানুবাদ: কিশলয় ব্রহ্ম। Cover image courtesy: অ্যাকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ ঝাড়খণ্ড।