বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ করার চেষ্টার অভিযোগে ১১ জন মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষকে ১৯৯৪ সালে টাডা আইনে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ২৭ ফেব্রুয়ারি, দীর্ঘ ২৫ বছর কারাবাসের পর, প্রমাণের অভাবে নাসিক কোর্ট থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। লেখাটির মূল সূত্র সবরং পত্রিকার এই রিপোর্টটি থেকে অনুবাদ করেছেন পৃথা মণ্ডল।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১১ জন মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষকে নাসিক কোর্ট থেকে নির্দোষ হয়ার কারনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় টাডা আইন অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে নাসিক স্পেশাল টাডা কোর্টে কেস করা হয় ১৯৯৪ সালে। যথার্থ প্রমাণের অভাবে বিচারপতি এস সি খেতি তাদের বেকসুর খালাস করেন। এই এগারো জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা ছিল যে তারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ করার চেষ্টা করছে। এই কাজে তারা আরও বেশ কিছু কমবয়সীদের উদ্বুদ্ধও করছে ও তাদের ভুসায়াল আল মাসুদ নামক একটি সংগঠনের সংগে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
একদিকে যেমন এই ঘটনা এই দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব কিছু নয়, অন্যদিকে এঁদের মুক্তি প্রাপ্তি এই কথাও প্রমাণ করে পুলিশ ও বৃহত্তর আইনব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা বোধ।
অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত এই এগারো জনের জীবনের মূল্যবান সময় এই অন্যায় মামলা কেড়ে নিল। জামিয়াত-উলেমা-হিন্দ সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনজীবীরা এদের সপক্ষে মামলা লড়ছিলেন। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনের 153 (B), 120(A) এবং টাডা আইনের section 3 (3), (4)(5), (4)(1) দ্বারা মামলা রুজু করা হয়েছিল।
জামিয়াত-উলেমা-হিন্দ এর আইন উপদেষ্টা গুলজার আজমী Twocircles.net কে জানিয়েছেন যে অভিযুক্তরা সঠিক বিচার পেয়েছেন কিন্তু এদের জীবনের যে মূল্যবান সময় ও সম্মান নষ্ট হল তার দায় কে নেবে? আদালত কি তাদের সময় ও হৃত সম্মানের মূল্য দিতে পারবে? এতদিন ধরে এদের পরিবারও সমানভাবে ভুক্তভোগী এবং বহু প্রিয়জনের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে।
যারা মুক্তি পেয়েছেন তারা হলেন জামিল আহমেদ আব্দুল খান, মহম্মদ ইউনুস, মহম্মদ ইশাক, ফারুক খান, নাজির খান, ইউসুফ খান, গুলাব খান, আয়ুব খান, ইসমাইল খান, ওয়াসিমুদ্দিন, শামসুদ্দিন, শেখ শফী, শেখ আজিজ, আসফাক সৈয়দ মুরতাজা মীর, মুমতাজ সৈয়দ মুরতাজা মীর, মহম্মদ হারুন, মহম্মদ বাফাতিএবং মৌলানা আব্দুল কাদের জৈবি।
জামিয়াত-উলেমা-হিন্দ এর পক্ষে যে আইনজীবীরা ছিলেন তারা হলেন শরীফ শেখ,মাতিন শেখ, রাজ্জাক শেখ, শাহিদ নাদিম আনসারী, মহম্মদ আরশাদ, আনসারী তাম্বোলী ও অন্যান্যরা।
একদিক থেকে দেখতে গেলে, এই মামলাটির মধ্যে বিশেষতঃ সেরকম কিছু নেই। এঁদের মতো বহু মানুষই কারাবাস করতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের জড়ানো হয়েছে মিথ্যা মামলায়। কারণ, তাঁরা মুসলিম। বিশেষতঃ, তাঁরা ভারতীয় মুসলিম পুরুষ। এবং, একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, ভারতীয় রাষ্ট্র ও বিচারব্যবস্থা মুসলিম পুরুষ বিষয়ক একটি আধিপত্যকারী আখ্যান গড়ে তুলেছে। সে আখ্যানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি নির্মিত মুসলিম পুরুষ চরিত্র, যে কিনা সর্বসময়েই “আতঙ্কবাদী”এবং মৌলবাদী মুসলিম। এই বিশেষ কেসটিতেও সেই আখ্যানেরই ছায়া।
লেখক পেশায় শিক্ষক।
Cover Image courtesy The Cognate