কর্পোরেট ইন্ডিয়ার বিপরীতে ঘাম, ভালবাসা আর দ্রোহের আখ্যান–জনতার সাহিত্য উৎসব ২০১৯


  • February 13, 2019
  • (2 Comments)
  • 4480 Views

ফেব্রুয়ারির ১৫ ও ১৬ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জনতার সাহিত্য উত্সব। আলোচনায় অংশ নেবেন ভারত, পাকিস্তান আর বাংলাদেশের শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকরা। লিখছেন সানন্দা দাসগুপ্ত

 

২০১৮ সালে কলকাতার প্রথম জনতার সাহিত্য উত্সব অনুষ্ঠিত হয় ফুলবাগানের সুকান্ত মঞ্চে। খানিক লড়ঝড়ে চেয়ার আর পাখার ঘড়ঘড়ে শব্দের মধ্যেই বক্তব্য রাখেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিকরা, মেঠো সুরে গান ধরেন মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, বিহার থেকে আসা গণসঙ্গীত শিল্পীরা। উত্তর কলকাতার এই মিউনিসিপ্যালিটি হলের দর্শকাসনে দেখা যায় কিছু খেটে খাওয়া মুখ, মূলধারার বাজারি সাহিত্য এবং সাহিত্য উত্সব থেকে ক্রমেই মুছে দেওয়া হয়েছে যে মুখগুলোকে। নয়া উদারনৈতিক বাজার অর্থনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিপুষ্ট শিল্প ও সাহিত্যে যে মুখগুলোকে সচেতনভাবে ব্রাত্য করা হয়েছে বাজারের স্বার্থেই।

 

এবছরও সেই একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জনতার সাহিত্য উত্সব। ফেব্রুয়ারির ১৫ ও ১৬ তারিখ এই মঞ্চে আলোচনায় অংশ নেবেন ভারত, কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, পাকিস্তান আর বাংলাদেশের শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকরা।

 

উৎসবের পোস্টার। সুত্রঃ ফেসবুক, বি এস এন।

 

গত কয়েক দশকে যখন সাহিত্য ও সাহিত্যের উদযাপনকে ক্রমেই বেধে ফেলার চেষ্টা হয়েছে ঝাঁ চকচকে পাঁচতারা হোটেলের লবিতে বা শহরের নামী দামী অডিটোরিয়ামের চৌহদ্দিতে, তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে এমন এক স্থিতাবস্থা যেখানে সাহিত্য শুধুই সমাজের উচ্চকোটির মানুষের বিনোদনের মাধ্যম অথবা বৌদ্ধিক মৈথুনের উপকরণ, উদযাপিত হয়েছে ঠিক সেই সমস্ত কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধ যা প্রশ্ন করেনা, যা গলা ওঠায় না যাবতীয় সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে ঠিক সেই সময়ে এই সমস্ত কিছুর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে নিজেদের সাহিত্য ও শিল্প চর্চা চালিয়ে গেছেন বহু কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও নাট্যকার। যারা প্রায়শই থেকে গেছেন প্রচারে আড়ালে, অথবা সাহিত্য উত্সবে ডাক পেয়েছেন ঠিক ততটুকু বলার জন্য যেটুকু বললে কোথাও কোনও অস্বস্তি তৈরি হয় না, বিঘ্নিত হয় না পেলব আরামের পরিবেশ।

 

গতবারের উত্সবে অংশ নিতে আসা ছত্তিসগড়ের লেখিকা রিনচিন বলছিলেন, “ফুলের তোড়ায় যেমন একটা-দুটো জঙ্গলী ফুল গুঁজে দেওয়া হয় শোভা বাড়ানোর জন্য, আমাদের মতো সাহিত্যিকদেরও সেভাবেই জায়গা জোটে কর্পোরেট সাহিত্য উত্সবগুলিতে”।

 

বাজারের প্রয়োজনে, বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র কাঠামোকে বহাল রাখতে, শাসক শ্রেণীর মতাদর্শকে কায়েম করতে প্রচারিত হচ্ছে থকথকে আঙ্গিক সর্বস্ব নিশ্চিন্ততার সাহিত্য। সাধারণ শ্রমিক কৃষক খেটে খাওয়া মানুষের জীবন থেকে বহু দূরের সেই সাহিত্য। তাদের আনন্দ, দুঃখ, লড়াই, যাপন, ক্ষোভ, ক্রোধ, ভালো থাকা, মন্দ লাগার কোনও স্থান নেই সেই সাহিত্যের পরিসরে। অবদমিতের সাহিত্য, ক্ষুধার্তের সাহিত্য, চাষাভুষোর সাহিত্য, অস্বস্তির সাহিত্য, বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো সম্পর্কে তীব্র সমালোচনামূলক অন্তর্ঘাতী সাহিত্য, লিঙ্গ সচেতনতার, প্রান্তজনের সাহিত্য নির্বাসিত হয়েছে বাজার থেকে। যা কিছু অস্বাছন্দ্যের, তাকেই সচেতনভাবে পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করার প্রয়াস জারি থেকেছে। অন্যদিকে, আদিবাসী, দলিত, শ্রমজীবী, সংখ্যালঘু, নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের জীবন ও লড়াইয়ের আখ্যানকে বেধে ফেলার চেষ্টা হয়েছে এলিট অ্যাকাডেমিক সেমিনারের গন্ডিতে, তাদের জীবন হয়ে উঠেছে শুধুই কিছু পরিসংখ্যান। সেই সব প্রবন্ধ লেখা হয়েছে এমন এক ভাষায় যে ভাষার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও সংযোগ নেই, যে ভাষা পড়ে তার মর্মোদ্ধার করার ক্ষমতা রয়েছে মুষ্টিমেয় উচ্চশিক্ষিতের।

 

সাহিত্যের পণ্যায়নের পাশাপাশিই পণ্যায়িত হয়েছে সাহিত্যের উদযাপন। দেশের তাবড় সাহিত্য উত্সবের পৃষ্ঠপোষক আজ টাটা, ভেদান্ত, এসারের মতো জনবিরোধী কর্পোরেট হাউজ। দক্ষিণপন্থী বাজারি সাহিত্যের পাশাপাশিই সেখানে গুঁজে দেওয়া হয় কিছু ভিন্ন স্বরকে। আর তাই কলিঙ্গনগরে গণহত্যাকারী টাটার মঞ্চে আলোচিত হয় আদিবাসীদের লড়াইয়ের কথা। সাধারণ জনতার থেকে সহস্র যোজন দূরে পাঁচতারা অডিটোরিয়ামের শীতল ঘেরাটোপে কাঁটাছেড়া চলে আদিবাসী সাহিত্যের।

 

সাহিত্য ও সাহিত্য উদযাপনের এহেন পণ্যায়নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দ্রোহ ঘোষণা করেছেন যে সমস্ত শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক ও নাট্যকার, সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণের ভাষ্যে তুলে এনেছেন তাঁদের জীবন, লড়াই, সুখ, দুঃখের আখ্যান সেই সব সাহিত্যিকের কাজ, লেখা, ছবি, কবিতার উদযাপনের লক্ষ্যে জনতার সাহিত্য উত্সবের আয়োজন করে বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (কলকাতা চ্যাপ্টার)। জনতার সাহিত্যকে জনতার দরবারে ফিরিয়ে আনার এই প্রয়াসে সচেতন ভাবে বর্জন করা হয় সমস্ত রকমের কর্পোরেট ও সরকারি ফান্ডিং। মানুষের থেকে চাঁদা তুলে, মানুষের সহযোগিতায় উদযাপিত হবে জনগণের সাহিত্য, উদ্দেশ্য এটুকুই। বহু চেনা-অচেনা মানুষের অকুন্ঠ সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জনতার সাহিত্য উত্সব। প্রয়াস ছিল জনতার সাহিত্য উত্সব যাতে প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠতে পারে সাধারণ মানুষের উত্সব। যেখানে গানে স্লোগানে, ছবিতে, কথায় উঠে আসে সাধারণ শ্রমজীবী, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, নারী ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষের বয়ান।

 

বাজার অর্থনীতি, পণ্যায়ন, ও নয়া উদারনীতির রাজনীতির পাশাপাশিই সামন্ততন্ত্র ও বর্তমান ভারতের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয় এই উত্সব। সোচ্চার হয় কাশ্মীর থেকে মণিপুরে ভারত রাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। গোর্খাল্যান্ডের জাতিসত্ত্বার আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান ওঠে “হ্যান্ড ইন হ্যান্ড উইথ গোর্খাল্যান্ড”, মঞ্চে তখন কবিতা পড়ছেন গোর্খাল্যান্ড থেকে আসা কবি মনোজ বোগাতি।

 

গত বছর স্টেজে “রেলা” সাংস্কৃতিক দল। ছবিঃ সন্দীপন কর

 

জনতার সাহিত্য উত্সবে উদযাপিত হবে সেই সব সাহিত্য, যা সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের দ্বন্দ্বকে এড়িয়ে যায় না, যা আড়াল করেনা সমাজের সংকটকে। সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা সাহিত্যিকরা অংশ গ্রহণ করেন এই উত্সবে। তার মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছেন সমাজের একদম নীচুতলা থেকে উঠে আসা গৃহ পরিচারিকার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা সাহিত্যিক, রয়েছেন ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র দলিত পরিবারের থেকে আসা লেখক ও কবি তেমনই রয়েছেন সচ্ছল উচ্চ শিক্ষিত বিদেশে শিক্ষকতা করা প্রাবন্ধিক, লেখক, শিল্পী। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে এনেছেন দ্বন্দ্ব ও সংকটের কথা, তাঁরা কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের ভাষ্যে, তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন সমাজের অসাম্যের বিরুদ্ধে, তাঁরা লিখেছেন সমাজের প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের কথা।

 

গত বছরের উত্সবে অংশ নিতে আসা কবি ভারাভারা রাও, লেখক, শিল্পী ও অধিকার আন্দোলনের কর্মী অরুণ ফেরেরা এবং প্রাবন্ধিক ও অধিকার আন্দোলন কর্মী ভার্নন গঞ্জালভেসকে জেলবন্দি করেছে ভারত রাষ্ট্র। এই এক বছরে জেল বন্দি হয়েছেন আরও বহু আন্দোলন কর্মী, লেখক ও নাট্যকার। জেল বন্দি হয়েছেন আমাদের সাথী অর্কদ্বীপ গোস্বামী সহ এ রাজ্যের চার গণ আন্দোলন কর্মী। রাতের অন্ধকারে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে আনন্দ তেলতুমবড়ের মতো শিক্ষাবিদ ও সমাজ কর্মীকে। কাশ্মীরে ভারত রাষ্ট্রের আগ্রাসন অব্যাহত থেকেছে। অব্যাহত থেকেছে বস্তার সহ ভারতের মধ্যভাগে আদিবাসীদের ওপর চলা হত্যালীলা।  দলিতদের জীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তোলার চক্রান্ত জারি রেখেছে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা ব্রাহ্মণ্যবাদী ফ্যাসিবাদী শাসক। সংখ্যালঘুদের ওপর তীব্রতর হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। নারী ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষের ওপর জারি থেকেছে সামাজিক আগ্রাসন ও বৈষম্য।

 

এই প্রবল ফ্যাসিবাদী আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েই দিকে দিকে সংগঠিত হচ্ছে মানুষ। রুখে দাঁড়াচ্ছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরও। অন্ধকার এই সময়ে জন্ম নিচ্ছে অন্ধকারের গান। মানুষের ক্ষোভ, ক্রোধ, যন্ত্রণা হয়ে উঠছে কবিতা। ফ্যাসিবাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এই বিদ্রোহই উদযাপিত হবে কলকাতার দ্বিতীয় জনতার সাহিত্য উত্সবে। কর্পোরেট ইন্ডিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে, ফ্যাসিবাদী শাসকের চোখে চোখ রেখে ঘাম, ভালবাসা আর দ্রোহের আখ্যান শোনাবেন ভারত, কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী ও সাহিত্যিকরা।

 

গত বছরের উৎসবে বই দেখার ভিড়। ছবিঃ সন্দীপন কর।

 

ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাহিত্য ও সাহিত্যের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে “বোলকে লব আজাদ হ্যায় তেরে শীর্ষক আলোচনা সভায়, আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন পাকিস্তানের কবি তনভীর অনজুম। স্পষ্ট, দ্বিধাহীন এক নারী ভাষ্যে কবিতা লেখেন তনভীর। আসছেন ভিরাসাম অর্থাত্ রেভলিউশনারি রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সাহিত্যিক পি. ভারালক্ষ্মী। তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাই উঠে আসে তাঁর কলমে, কল্পনাশক্তি পুষ্ট হয় খেটে খাওয়া মানুষের লড়াই থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণায়। তাঁর শাণিত কলম উন্মোচন করে ফ্যাসিবাদ ও নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির যোগ সাজশ। আলোচনায় থাকবেন নারীবাদী ইতিহাসবিদ্ উমা চক্রবর্তী। ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার উমা সমসাময়িক রাজনীতি আর সমাজকে স্থাপন করেন ইতিহাসের প্রেক্ষিতে। তুলে আনেন প্রান্তিকের স্বর। বর্তমান ভারতের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় তিনি লিখেছেন একাধিক গদ্য। এছাড়া থাকবেন দিল্লির শাহ্ আলম খান। শাহ্ আলম খানের প্রথম বই দ্য ম্যান উইথ দ্য হোয়াইট বিয়ার্ড – এর বিষয়বস্তু একইসাথে শিখ দাঙ্গা, গুজরাট দাঙ্গা এবং কন্ধামাল দাঙ্গা। আজকের সঙ্ঘ পরিবার নেতৃত্বাধীব ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি করেছে যে সব রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা তা ভুলে যেতে রাজি নন শাহ্ আলম। পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের শাসনকালেও যেভাবে বারবার বিপন্ন হয়েছে সংখ্যালঘুর জীবন তা বাদ দিয়ে আজকের ফ্যাসিবাদকে বোঝা সম্ভব নয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জোটের নামে এই ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া যে অপরাধ সে কথাই মনে করিয়ে দেয় শাহ্ আলম খানের কলম।

 

বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তু সমস্যা আজ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘর ছাড়া হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, হারাচ্ছেন জমি, জীবিকা, স্বজন, হারাচ্ছেন শিকড়। সেই ভয়াবহতার কিছু টুকরো ছবি কখনও সখনও লেন্সবন্দি করে খানিক সহানুভূতির খেলা খেলে কর্পোরেট মিডিয়া। সমস্যার মূল রাজনীতিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে নিরন্তর। আমাদের দেশ ভারতেও ঘর ছাড়া হতে চলেছেন একটা বড় অংশের মানুষ। আসামের এনআরসি নিয়ে এক নির্মম খেলায় মেতেছে বিভিন্ন সংসদীয় রাজনৈতিক দল। এসেছে বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব বিল। দ্বিতীয় জনতার সাহিত্য উত্সবে “মোদের কোনও দ্যাশ নাই শীর্ষক আলোচনায়, উদ্বাস্তুর সাহিত্য নিয়ে কথা বলবেন আসামের করিমগঞ্জের নাট্যকর্মী ও সাহিত্যিক মলয়কান্তি দে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চায় নিযুক্ত মলয়কান্তির আস্থা থার্ড থিয়েটারে, লেখেন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প, তাঁর কলম সংহত থাকে মার্কসবাদী রাজনীতির চর্চা আর শিক্ষায়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা শরণার্থীদের জীবন মূর্ত হয়ে ওঠে মলয়কান্তির “আসরাফ আলির স্বদেশ গল্পে। আসাম থেকেই আসবেন মিঞা সাহিত্য আন্দোলনের প্রবক্তা ও অগ্রণী কর্মী হাফিজ আহমেদও। মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপমান, বৈষম্য ও লাঞ্ছনার কথা লেখেন হাফিজ আহমেদ, লেখেন দরিদ্র শ্রমজীবী বাস্তুহীন মুসলমানের কথা। তাঁদের সাথে এই আলোচনায় থাকবেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট কবি আফজল আহমেদ সৈয়দ। দুটি দেশভাগ, দুটি গৃহযুদ্ধ পার করে এসেছে আফজল আহমেদের জীবন। আফজল আহমেদের কবিতায় ছাপ রয়ে গেছে সেই অভিজ্ঞতার। উচ্ছেদ হওয়া মানুষের সাহিত্য নিয়ে কথা বলবেন উড়িষ্যা থেকে আসা নারী আন্দোলনের কর্মী ও সাহিত্যিক রঞ্জনা পাড়ি। নারী আন্দোলনের পাশাপাশি, নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ছিনিয়ে আনার লড়াই থেকে শুরু করে ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াই, সমস্ত চলমান গণ আন্দোলনের পরিসরেই অবাধ ও অক্লান্ত যাতায়াত রঞ্জনার। রঞ্জনার বই “Those Who Did Not Die – Impact of the Agrarian Crisis on Women in Punjabতে উঠে এসেছে পিতৃতান্ত্রিক, ধনতান্ত্রিক ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের শিকার  মহিলাদের বেঁচে থাকা আর বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা।

 

উত্সবে আলোচনা হবে ভারতের মূল ভূখণ্ড ও ভারত অধিকৃত কাশ্মীর, মণিপুর, নাগাল্যান্ডে ভারতীয় সেনার আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে তৈরি হওয়া সাহিত্য নিয়ে। “কুচকাওয়াজের তলায় আছে গানের ডায়নামাইট শীর্ষক এই আলোচনায় উঠে আসবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচারে কথা, উঠে আসবে মিলিটারির বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে কী ভাবে তৈরি হয় এক অপরাজেয় লড়াইয়ে আখ্যান। এই আলোচনায় অংশ নিতে কাশ্মীর থেকে আসছেন লেখিকা অনজুম জামারুদ হাবিব। কাশ্মীরের হুরিয়ত কনফারেন্সের সদস্য ও ‘মুসলিম খোয়াতীন মরকজ’ নামে নারী সংগঠনের প্রাক্তন সভানেত্রী অনজুম জামারুদ হাবিবের জীবনের প্রায় পাঁচ বছর কেটেছে ভারত রাষ্ট্রের জেলে। জেল জীবন ও সহ বন্দিদের নিয়ে অনজুম লিখেছেন “কয়দি নম্বর ১০০: ভারতী জিন্দন মে মেরে শব-ও-রোজ কি রুদাদ”। জেল থেকে বেরোনোর পরও আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকেছে অনজুমের জীবন। গড়ে তুলেছেন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দা ফ্যামিলিজ অফ কাশ্মীরী প্রিজনার্স’। অনজুমের সঙ্গে এই আলোচনায় থাকবেন নাগাল্যান্ডের মোনালিসা চাংকিজা। নাগা সমাজের প্রতিদিনে বাস্তবতার ছবি উঠে আসে মোনালিসার কবিতায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র মহিলা সম্পাদক ও প্রকাশক মোনালিসা তাঁর ইংরেজি দৈনিক Nagaland Page-এ লেখেন নাগাল্যান্ডের দৈনন্দিন জীবনের রক্ত, সংঘর্ষ আর প্রতিরোধের কথা। নাগাল্যান্ডের মানুষে আশা আকাঙ্ক্ষা আর তাঁদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের সংগ্রামের কথা উঠে আসে মোনালিসার কলমে। আলোচনায় থাকবেন উড়িষ্যার থেকে আসা আদিবাসী কবি হেমন্ত দলপতি। ব্রাহ্মণ্যবাদ, পুঁজিবাদ ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হেমন্ত লেখেন জল জঙ্গল জমিনের লড়াইয়ের কথা, আর সে লড়াইতে সামিল হওয়া জনগণের কথা। লড়াইয়ের সংহতিতে কবিতা লেখার জন্য সামান্য মাইনের চাকরিটুকুও খোয়াতে হয়েছে হেমন্ত দলপতিকে, তবে তাতে অবশ্য দমেননি হেমন্ত। মূলধারার স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোই তাঁর কলমের প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি।

 

কৃষক, শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষের সাহিত্য নিয়ে কথা হবে “চিমনির মুখে শোনো সাইরেন শঙ্খ/ গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে” শীর্ষক আলোচনায়, কথা হবে চাষাভুষোর সাহিত্য নিয়ে। এই আলোচনায় অংশ নিতে আসছেন তামিলনাড়ুর দলিত নারিবাদী লেখিকা বামা। নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষায় তাঁদের শ্রম, সংস্কৃতি, বিনোদন, বিশ্বাস, ভালবাসা, লড়াই, সংগ্রাম, যন্ত্রণা, যাপন, আশা, স্বপ্ন, আনন্দ আর দুঃখের কথা লেখেন বামা। নিজের লেখায় ব্রাহ্মণ্যবাদী “ভদ্রলোক” এর তামিল ভাষাকে প্রত্যাখান করেন তিনি, লেখেন শ্রমজীবী মানুষের মুখের ভাষায়। বামার সঙ্গে এই আলোচনায় থাকবেন আলপনা মন্ডল ও মহাদেব নস্কর। ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ে দাদা ছাত্রবন্ধু কিনে দিতে পারেনি বলে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয় আলপনার। অভিমানে ঘর ছেড়ে কলকাতা পালায় আলপনা, আর কোনোদিন ছাত্রবন্ধু কেনা হয়নি আলপনার। জীবনের একটা বড় অংশ কাটে কলকাতায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করে। নিজের চেষ্টাতেই একটু একটু করে লেখাপড়া শিখে নিতে চান আলপনা। লিখতে শুরু করেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। আলপনার লেখা প্রকাশিত হয়েছে গুরুচন্ডালী ব্লগে। এছাড়াও অন্যের সাহায্য নিয়ে নিজের ব্লগও শুরু করেছেন আলপনা। গুরুচন্ডালী ব্লগের তাঁর লেখার সংকলন নিয়ে বই “চণ্ডালিনী বৃত্তান্ত” প্রকাশের অপেক্ষায়। আলপনার মতোই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন কবি মহাদেব নস্কর। ছোটবেলায় দিন গুজরান হয়েছে “বাবু”-দের বাড়িতে কাজ করে, পরবর্তীতে রিক্সা চালাতে শুরু করেন মহাদেব। সত্তরের দশকে নকশালবাড়ির রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত মহাদেব রিক্সা চালানো ছেড়ে সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে যোগ দেন বিপ্লবী সংগঠনে। গ্রেফতার হয়ে জেলে যান মহাদেব, সেখানেই হয় অক্ষর জ্ঞান, কবিতা লেখার শুরুও সেখানেই। মহাদেব, আলপনা আর বামার সঙ্গে এই আলোচনায় থাকবেন হায়দ্রাবাদের নারীবাদী রাজনৈতিক কর্মী ও লেখিকা বি. অনুরাধা। অন্ধ্রপ্রদেশের দলিত পরিবারের বি. অনুরাধার রাজনৈতিক জীবন শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। পরবর্তীতে নারী সংগঠনের সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি যুক্ত থেকেছেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজেও। মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চার বছর বিচারাধীন বন্দি হিসেবে হাজারিবাগ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে কাটে বি. অনুরাধার। জেলবন্দি মেয়েদের জীবন নিয়ে ১৮টি ছোট গল্প লেখেন অনুরাধা। পরবর্তীতে ভিরাসামের পক্ষ থেকে সংকলন আকারে প্রকাশিত হয় সেই বই। শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ে সামিল হয়ে তাঁদের জীবন খুব কাছ থেকে দেখেছেন অনুরাধা, জেনেছেন তাঁদের ভাষা, স্বপ্ন, আনন্দ আর যন্ত্রণার কথা।

 

উৎসবের পোস্টার। সুত্রঃ ফেসবুক, বি এস এন।

 

ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রবিরোধী আলোচনা “জাত গেল জাত গেল বলে…”-তে বক্তা হিসেবে থাকছেন অন্ধ্রপ্রদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী মীরা সংঘমিত্রা, এ রাজ্যেরই দলিত সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক কর্মী নল্লুরি রুক্মিণী ও তামিলনাড়ুর নারীবাদী কবি ও চিত্র পরিচালক লীনা মানিমেকালাই। সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোগত হিংসা, বর্ণ বৈষম্যমূলক নিপীড়ন, নারী ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষের ওপর নেমে আসা নিরন্তর আগ্রাসনের প্রতিরোধে জন্ম নেওয়া কবিতা, গল্প, গদ্য, প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করবেন বক্তারা। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী মীরা সংঘমিত্রা নিজেকে পরিচয় দেন নারী হিসেবে। যে সমাজ আজও লিঙ্গবৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয় না সম্মান দেয় নারূপান্তরকামীদের সেখানে এই পরিচয়ই তাঁর রাজনৈতিক হাতিয়ার।   নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনসহ একাধিক লড়াই-আন্দোলনে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন মীরা। লিখেছেন অসংখ্য লিফলেট, প্যামফ্লেট, রিসার্চ রিপোর্ট আর প্রবন্ধ। বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী নল্লুরি রুক্মিণী সত্তরের দশকেই যুক্ত হন ছাত্র রাজনীতিতে। পরবর্তীতে নারী ও দলিতদের ওপর অত্যাচার বিরোধী একাধিক লড়াই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন তিনি। লিখেছেন একাধিক কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস আর প্রবন্ধ। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অপর সাহিত্যিক লীনা কবিতার মাধ্যমে সমাজ-স্বীকৃত পিতৃতান্ত্রিক ভাষাচর্চার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যুদ্ধ, ধর্মীয় মৌলবাদ, জাতীয়তাবাদে নিহিত ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লেখেন লীনা। রেয়াত করেন না প্রগতিশীলতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পৌরুষকেও। লীনার কবিতার বয়ানে উদযাপিত হয় নারীর শরীর ও যৌনতা। পাশাপাশিই প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের অধিকার নিয়েও সরব লীনা। লীনার সিনেমার চরিত্ররাও উঠে সমাজের প্রান্তিকতম অংশ থেকে। তামিলনাড়ুর ব্রাহ্মণ্যবাদ ও সেখানে বাস করা ‘অস্পৃশ্য’ ও ‘অদৃশ্য’ দলিত সমাজের উপর নেমে আসা শোষণ হয়ে ওঠে তাঁর ছবির বিষয়।

 

“খোলা বাজারের হাওয়া চুপিসারে করে ধাওয়া” শীর্ষক আলোচনায় দক্ষিণপন্থী সাহিত্য আর তার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবেন অধ্যাপক মীরা নন্দা, কবি সব্যসাচী দেব ও সাহিত্যিক সুনন্দন রায় চৌধুরি। আলোচনা করবেন সাহিত্যের পণ্যায়ন নিয়ে, আলোচনা হবে বিকিয়ে যাওয়া সাহিত্য নিয়ে। যে সাহিত্যের মাধ্যমে সুচারুভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণপন্থার বীজ। আলোচনা হবে গেরুয়া সাহিত্য নিয়েও। হিন্দুত্ববাদী মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লেখালিখি করছেন মীরা নন্দা। বিজ্ঞানের ইতিহাস বিশ্লেষণ ও যুক্তিবাদী চিন্তা-চর্চার মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইতে একজন অগ্রণী সৈনিক মীরা। বৈদিক বিজ্ঞান ও ছদ্ম-বিজ্ঞানের সমালোচনার পাশাপাশি, তাঁর কলম সরব হয়েছে বিজ্ঞানের উপর উত্তরাধুনিকতার কুপ্রভাব নিয়েও। কবি ও প্রাবন্ধিক সব্যসাচী দেব লেখেন সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের কথা। নকশালবাড়ির রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত সব্যসাচীর লেখনী। আমাদের শহরের বিভিন্ন মিটিং, মিছিল, জনসভায় এক পরিচিত মুখ সব্যসাচী দেব। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার থেকেছে সব্যসাচীর কলম, বিভিন্ন চলমান গণ আন্দোলনের সংহতিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কবি ও কলমচি সুনন্দন রায়চৌধুরির সাম্প্রতিকতম বই “পলিটিক্স, পলিসি অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া” অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আছে “ক্যাম্পাস নেশন: স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিজম অ্যান্ড সোশাল চেঞ্জ ইন স্লোভেনিয়া, পোল্যান্ড, ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ” । সুনন্দন বলবেন নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির প্রকোপে শিক্ষা ও সাহিত্যের পণ্যায়নের কথা।

 

“সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে”- শীর্ষক আলোচনায় সমসাময়িক শিল্পী সোমশংকর বলবেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও তাঁর কাজ নিয়ে। আলোচনার পাশাপাশি প্রতিরোধের গান নিয়ে উপস্থিত থাকবে বাংলাদেশের গানের দল লীলা। ঔপনিবেশিক-বর্ণবাদী-পুঁজিবাদী-পিতৃতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গান বাঁধে লীলা। মোলায়েম-মিহি সুরের গান নয় বরং কখনও তা কর্কশ ও তাল-বেতাল। তাদের গেরিলা বসন্তে আমি বনফুলবা কাকে তুমি প্রেম বল কাকে ইতিহাস গানের সঙ্গে আমরা অনেকই হয়তো ইতিমধ্যেই পরিচিত। এছাড়াও কবিগান গাইবেন গোকুল হাজরা ও তাঁর কবিয়াল দল। কবিগানের চিরাচরিত বিষয় ছেড়ে মানুষের অধিকার, ফ্যাসিবাদ-সহ একাধিক জরুরি বিষয় নিয়ে গান করে তাঁর দল। তাঁর গান হয়ে ওঠে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। সাম্প্রতিক ভাঙড় জমি আন্দোলনেরও সঙ্গী হয় তাঁর গান। থাকবে কলকাতার তরুণ গণসঙ্গীত শিল্পী লাল-অন ব্যান্ডের গানও।

 

২০১৬ সালে বস্তারে নেমে চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে, সেখানকার মানুষের লড়াইয়ের সংহতিতে তৈরি হয়েছিল বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (কলকাতা চ্যাপ্টার)। উদ্দেশ্য ছিল দেশজুড়ে চলা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মানুষের লড়াই, রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দলিত, আদিবাসী, শ্রমজীবী, নারী ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের লড়াইয়ের সংহতিতে দাঁড়নো। এই সামগ্রিকতার অংশ হিসেবেই উঠে আসে জনতার সাহিত্য উত্সব। যে উৎসবে অংশ নেন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিকরা। অংশ নেন সেই সব সাহিত্যিকরা যারা কথা বলেন নিপীড়িতের ভাষায়, যারা তুলে আনেন অবদমিতে ভাষ্য, যাদের কবিতা জন্ম নেয় প্রান্তিকের লড়াইয়ে, যাদের জীবন সম্পৃক্ত থাকে খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রামে। ক্ষমতার সামনে মাথা নোয়াতে নারাজ কবি, সাহিত্যিক আর শিল্পীদের উদযাপন এই উতসব, উদযাপন নিপীড়িতের আখ্যানের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

(সানন্দা দাসগুপ্ত  বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (কলকাতা চ্যাপ্টার) – এর সদস্য। কাভারঃ গত বছরের উৎসবে দেয়ালের পোস্টার। ছবিঃ সন্দীপন কর। )

Share this
Recent Comments
2
Leave a Comment