কৃষি মিছিলে পুলিশি হামলা : ৭০,০০০ কৃষক দিল্লী সীমান্তে


  • October 2, 2018
  • (0 Comments)
  • 2099 Views

ইউপি-দিল্লি সীমান্তে পৌঁছলে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী কৃষকদের মিছিলের ওপর লাঠি চালায় এবং জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। গুলি করে ট্রাক্টরের টায়ার ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বহু মানুষ আহত হয়, যাদের মধ্যে দুজন গুরুতর অসুস্থ। প্রতিবাদী কৃষকরা দিল্লি সীমান্তেই অবস্থান করছেন। একটি গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন।  

 

মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ও কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সরকারকে মনে করিয়ে দেবার জন্য উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে প্রায় ৭০০০০ কৃষক মঙ্গলবার রাজঘাট পৌঁছেছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া, হরিদ্বার থেকে উত্তরাখণ্ড পর্যন্ত ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন পরিচালিত এই ক্রান্তি যাত্রা সোমবারে পূর্ব দিল্লী সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের শহর গাজিয়াবাদে পৌঁছয়। প্রতিবাদীরা তাদের ২১ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি কেন্দ্রের হাতে তুলে দিতে এসেছিল যার মধ্যে ছিল স্বামীনাথন কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন , কৃষকদের বিনা খরচে বিদ্যুৎ জোগান, কৃষিঋণ মকুব, ১০ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক্টর বাতিলের নির্দেশ রদ ইত্যাদি।

দিল্লী পুলিশ সোমবার থেকেই পূর্ব দিল্লীতে নানা কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোর্টের সেক্সন ১৪৪ অনুসারে ৫ বা তার বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ হয়েছিল। ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রীত বিহার, শকরপুর, পাণ্ডবনগর, জগৎপুরী, কল্যাণপপুরী, গাজীপুর, মান্দাওলি, মধুবিহার, ময়ূরবিহার ও নিউ অশোক নগরের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ(পূর্ব) পঙ্কজ সিঙের রিপোর্টেও বলা হয়েছিল যে এই বিরাট পরিমাণ প্রতিবাদী কৃষকের পদযাত্রায় পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এবং তাতে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা তাঁরা করছেন।

এমতাবস্থায় পদযাত্রা ইউপি-দিল্লি সীমান্তে পৌঁছলে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী তাদের ওপর লাঠি চালায় এবং জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। গুলি করে ট্রাক্টরের টায়ার ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বহু মানুষ আহত হয়, যাদের মধ্যে দুজন গুরুতর অসুস্থ। গাজিয়াবাদের সিনিয়র পুলিশ সুপার বৈভব কৃষ্ণা বলেন “ওদের কোনোভাবেই দিল্লিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দিল্লি-গাজিয়াবাদ সীমান্ত সাহিদাবাদের কাছে ব্যারিকেড করে সিল করে দেওয়া হয়েছে”।

বিকেইউ এর সভাপতি নরেশ টিকায়েত এএনআইকে বলেন: ” আমাদের এখানে আটকে দেওয়া হল কেন? পদযাত্রা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে এগোচ্ছিল। আমাদের সরকারকে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে না পারলে আমরা কাকে বলব? আমরা কি তবে পাকিস্তান চলে যাব? কিম্বা বাংলাদেশ?”

সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে সংবাদমাধ্যম এই আন্দোলনকে খবরে আনছে না। ৪৫ মিনিট ধরে দিল্লি ঢোকার ব্যর্থ চেষ্টার মধ্যে তিনি দ্যাখেন কৃষকেরা সবুজ ক্যাপ মাথায় অসংখ্য পংক্তিবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মিছিলে হাঁটছেন। শয়ে শয়ে ট্রাক্টর, বাস ও ছোটো ট্রাকে দিল্লিগামী সমস্ত রাস্তা বন্ধ।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন: “বিশ্ব অহিংসা দিবসে, বিজেপির দু বছরব্যাপী গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন শুরু হল দিল্লির শান্তিপূর্ণ কৃষকমিছিলের ওপর বর্বর আক্রমণ দিয়ে”।

আপ নেতা কেজরিওয়াল ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। জানান এ কাজ সম্পূর্ণ অনৈতিক ও তাঁরা কৃষকদের সঙ্গে আছেন। টুইটে জানান: “দিল্লি সবার। কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দেওয়া যাবে না।”

সিপিয়াই(এম) নেতা ইয়েচুরি মোদী সরকারকে কৃষকবিরোধী আখ্যান দেন ও এএনআইকে বলেন: “এই সরকার কৃষকদের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ঋণের বোঝায় আর অবসাদে আত্মহননের চাপে সংকটকে আরো তীব্রতর করে তুলছে। স্বাধীনতার পর এত বড় কৃষিসংকট দেশ দ্যাখেনি”।

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব কৃষকদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির খেলাপের জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন: “গত ৫ বছরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রায় ৫০০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। প্রতিবাদ জানানো কৃষকদের অধিকার। আমরা সর্বশক্তিতে এই আন্দোলনের সঙ্গে আছি”।

দিল্লি-ইউপি সীমান্তে কৃষকদের সাথে কথা বলার পর কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত জানান যে সরকার কৃষকদের দাবিগুলি নিয়ে ভাববে। তিনি বলেন যে এনজিটি অর্ডার বিষয়ে( ১০ বছরের পুরনো ট্রাক্টর বাতিল রদ) সরকার কোর্টে যাবে। তিনি আরো বলেন যে ন্যূনতম মজুরি আইনে সরকার কিছু পরিবর্তন আনবে। তাঁর কথায়: “সরকার কৃষিশ্রমিকদের সমস্যা নিরসনে ৬ জন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি হঠন করেছে। এই কমিটি এমএনআরইজিএ কে কৃষিক্ষেত্রে সংযুক্ত করা নিয়ে কথাবার্তা বলছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিঙের পক্ষ থেকে তিনি কৃষকদের নিশ্চিত করেন যে তিনি এই কমটিতে কৃষকদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং কৃষিকে এমএনআরইজিএর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য যা যা বদল ঘটাতে হয় ঘটাবেন।

প্রতিবাদী কৃষকরা কিন্তু দিল্লি সীমান্তেই অবস্থান করছেন, যেখানে পুলিশ তাদের আটকেছিল। নরেশ টিকায়েতের মতে সরকারের পদক্ষেপে কৃষকরা খুশী নন। তিনি আরো বলেন: “আমরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চাই না। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। পুলিশ ঢুকতে দিলে এগোব, নইলে ফিরে যাব। কোনো হিংসাশ্রয়ী ঘটনা ঘটবে না”। কিন্তু দিল্লি ঢোকার বিভিন্ন প্রবেশপথে তাঁরা অপেক্ষা করবেন। টিকায়েতের কথায়: “আমরা আশা করছি পুলিশ আমাদের ঢুকতে দেবে এবং পরিকল্পনামাফিক আমাদের প্রতিবাদ আমরা জানাতে পারব”।

এই মুহূর্তে রাজধানীতে ঢোকার ছোটো বড় সব সীমান্তে অপেক্ষা করছে ৭০০০০ এর কাছাকাছি বঞ্চিত, প্রবঞ্চিত, ক্ষুধার্ত কৃষকজনতা। তারা আমাদের দেশের মানুষ।

 

ছবি : ভারতীয় কিষান ইউনিয়ান, ফেসবুক  

Share this
Leave a Comment